মোহনবাগান সুপার জায়ান্টে খেলা ছিল আমার স্বপ্ন: দীপেন্দু বিশ্বাস
‘কখনও ভাবতে পারিনি, মোহনবাগানের প্রধান দলে ঢুকতে পারব। তাই এটা আমার কাছে খুব গর্বের ব্যাপার’।

শুরু করেছিলেন ক্রিকেট খেলা। পাড়ার দাদাদের দেখে ফুটবলে সরে আসেন। তখন থেকেই চম্পাহাটির দীপেন্দু বিশ্বাস স্বপ্ন দেখতেন প্রিয় দল মোহনবাগানের ও ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলছেন। একটা স্বপ্ন সত্যি হয়েছে তাঁর। তরুণ ডিফেন্ডার দীপেন্দু বিশ্বাস এখন আইএসএলের জোড়া খেতাবজয়ী মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সদস্য। তাঁর পারফরম্যান্সের জন্য অনূর্ধ্ব ২৩ ভারতীয় দলেও ডাক পেয়েছেন। এখন লক্ষ্য জাতীয় সিনিয়র দল। তিনি জানেন, সে জন্য তাঁকে আরও উন্নতি করতে হবে। স্বপ্নপূরণই এখন তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ। যা বেশ কঠিন।
ছোট থেকেই পাড়ার বন্ধুরা থেকে শুরু করে পরিবারের সদস্যরা— একঝধাঁক মোহনবাগান সমর্থকদের মধ্যে বেড়ে ওঠা তাঁর। তাই নিজেও ক্রমশ মোহনবাগান সমর্থক হয়ে ওঠেন দীপেন্দু। একসময় যে ক্লাবের খেলোয়াড়দের গ্যালারিতে বসে সমর্থন করতেন তিনি, এখন সেই ক্লাবেরই অন্যতম তারকা। অসাধারণ এই অনুভূতি নিয়ে দীপেন্দুর বক্তব্য, “যে ক্লাবের সমর্থক আমি, সেই ক্লাবের হয়েই খেলতে পেরে খুবই ভাল লাগে। আমি কখনও ভাবতে পারিনি, মোহনবাগানের প্রধান দলে ঢুকতে পারব। তাই এটা আমার কাছে খুব গর্বের ব্যাপার”। ক্লাবের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল মোহনবাগান টিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কথাগুলি বলেছেন দীপেন্দু।
এক সময় নিয়মিত ময়দানে মোহনবাগানের খেলা দেখতে যেতেন কাদা, জল মাড়িয়ে। সেই স্মৃতি ফিরিয়ে তিনি এই সাক্ষাৎকারে বলেন, “ছোটবেলায় মোহনবাগান মাঠে খেলা দেখতে যেতাম কাদা, বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে। যখন প্রিয় দল জিতত, খুবই ভাল লাগত। সমর্থকেরা দলের খেলোয়াড়দের প্রচুর উৎসাহ জোগাত। দলের জন্য চেচাঁত, জিতলে উল্লাস করত। ওদের দেখে আরও মোহনবাগানের হয়ে খেলার আশা জেগেছিল মনে”।
এখন সেই স্বপ্নের মোহনবাগানেরই ফুটবলার তিনি। কেমন লাগে? “মোহনবাগানের মতো একটা বড় ক্লাবে খেলছি বলে বাড়ির লোক, পাড়ার লোক খুবই খুশি। কারণ, এখানে সবাই মোহনবাগানের সমর্থক”, বলেন দীপেন্দু।
অথচ এই দীপেন্দুর খেলোয়াড় জীবন শুরু ক্রিকেট মাঠে। কী করে এলেন ফুটবলে? কী করেই বা পৌঁছলেন এতদূর? এই নিয়ে ২২ বছর বয়সী তারকা বলেন, “আমি প্রথমে ক্রিকেট খেলতাম, কিন্তু পাড়ার দাদারা বেশিরভাগই ফুটবল খেলত। ওদের দেখেই ফুটবল শুরু করি। শরৎ সঙ্ঘ ক্লাবের মাঠে জুনিয়রদের অনুশীলনেই প্রথম যোগ দিই। ওখান থেকে শ্যামবাজারের হয়ে নার্সারি লিগে খেলি। এর পর সিসিএফসি-র হয়ে প্রথম ডিভিশন লিগে খেলি এবং ওখান থেকেই মোহনবাগানে। একটা স্বপ্ন ছিল বড় টিমে খেলতে হবে, জাতীয় স্তরে খেলতে হবে। আস্তে আস্তে সেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে”।
তাঁর বড় ফুটবলার হয়ে ওঠার পিছনে যে রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশন ডেভলপমেন্ট লিগ বা আরএফডিএল-এর অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ, তা স্বীকার করতে কোনও দ্বিধা নেই দীপেন্দুর। বলেন, “প্রথম ডিভিশনে খেলার সময়ই আমার মনে হয়েছিল, আমি দ্রুত উন্নতি করছি এবং আরও উন্নতি করতে হবে। যখন মোহনবাগানের রিজার্ভ টিমের হয়ে আরএফডিএল-এ খেলি, তখন থেকেই মনে একটা জেদ চেপে গিয়েছিল, ভারতীয় দলে খেলার সুযোগ পেতে হবে”।
দেশের সবচেয়ে বড় ডেভলপমেন্ট লিগেই উন্নতির মন্ত্র পেয়েছিলেন বলে জানান তিনি। বলেন, “আরএফডিএলে যখন খেলতে যাই, তখন কোচেরা বলতেন, এখানে ভাল খেললে সিনিয়র টিমে খেলার সুযোগ পাওয়া যাবে। আমার ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। আমার ছোটবেলার কোচও বলতেন, তুমি যখন নিজের একশো শতাংশ মাঠে দেবে, তখনই তুমি উন্নতি করতে পারবে। দলে জায়গা পাওয়ার জন্য খুব পরিশ্রম করেছি। শেষ পর্যন্ত জায়গাও পেলাম। যখন প্রথম খেলা শুরু করি, তখন আমি গোলকিপার হিসেবে খেলতাম। তার পরে সাইড ব্যাকে খেলা শুরু করি। ওখান থেকে স্টপার হিসেবে খেলছি”।
এ বার তাঁর লক্ষ্য ভারতের সিনিয়র দলের হয়ে খেলা। সম্প্রতি অনূর্ধ্ব ২৩ ভারতীয় দলের হয়ে মাঠে নামেন তিনি। তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তানের অনূর্ধ্ব ২৩ দলের বিরুদ্ধে দু’টি ম্যাচও খেলেন। প্রথম ম্যাচে ৮১ মিনিট মাঠে ছিলেন ও দ্বিতীয় ম্যাচে বিরতির পর মাঠে নামেন। তাজিকিস্তানের কাছে হারলেও কিরগিজস্তানের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে ভারত।
সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে দীপেন্দু বলেন, “ভারতের হয়ে খেলা স্বপ্নের মতো ছিল। কখনও ভাবিইনি ভারতের জার্সি গায়ে দেব। এটা আমার স্বপ্ন ছিল। যখন জাতীয় সঙ্গীত হচ্ছিল, তখন নিজের মধ্যে একটা আবেগ কাজ করছিল, মনে হচ্ছিল ম্যাচটা জিততেই হবে। মাঠে জাতীয় সঙ্গীত বাজলে আর প্রতিপক্ষকে দেখলে ভিতরে ভিতরে উজ্জীবিত হয়ে উঠি। এটা বরাবরই হয় আমার”। সিনিয়র দলের জার্সি অর্জন করতে গেলে তাঁকে কী কী করতে হবে, তা ভাল করেই জানেন দীপেন্দু। বলেন, “নিজেকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। স্ট্যামিনা তো বাড়াতেই হবে। মাথা ঠাণ্ডা করে খেলতে হবে”।
অঘটন না ঘটলে সম্ভবত আসন্ন মরশুমেও সবুজ-মেরুন বাহিনীতেই থাকছেন তরুণ ডিফেন্ডার। প্রিয় ক্লাবের সন্মান বজায় রাখতে চান তিনি। জার্সিতে ক্লাবের লোগো দেখিয়ে বলেন, “মোহনবাগানের জার্সি যখন পেয়েছি, তখন তার মান রাখতেই হবে। এ শুধু ক্লাব নয়, মায়ের মতো। যেমন সমর্থকদের কাছে, তেমনই আমার কাছেও। জার্সিকে মর্যাদা দিতে হবে। আরও ভাল খেলতে হবে। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া আরও বাড়াতে হবে এবং দলটা যাতে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে”।