মোহনবাগান সুপার জায়ান্টে খেলে ছেলেবেলার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে: দীপক টাঙরি
'কলকাতায় ফুটবলের প্রতি আবেগ একেবারে আলাদা। মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ভারতের সেরা দল, এই ক্লাবের সমর্থকেরাও সেরা, আর পরিবেশও অসাধারণ'।

চার বছর আগে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টে যোগ দেওয়ার পর থেকে ক্লাবের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তাঁর চার বছরের কেরিয়ারে এখন পর্যন্ত তিনি ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) ৬৬টি ম্যাচ খেলেছেন এবং ক্লাবের সঙ্গে দু'টি লিগ শিল্ড ও দু'টি আইএসএল কাপ জয় করেছেন।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের মতো প্রথিতযশা ক্লাবের গৌরবময় ইতিহাসের জন্যই যে সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে খেলতে পারা তাঁর কাছে স্বপ্নপূরণ হওয়া, তা জানাতে দ্বিধা করেননি দীপক টাঙরি। ২৬ বছর বয়সী এই পাঞ্জাবজাত মিডফিল্ডার চণ্ডীগড় ফুটবল অ্যাকাডেমি থেকে নিজের ফুটবল জীবন শুরু করেন এবং পরে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের যুব অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন।
যুব দল থেকে সিনিয়র দলে উঠে আসা প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "আমি আগে দুর্গাপুরে অ্যাকাডেমিতে ছিলাম, তখন আমরা মোহনবাগান মাঠে আসতাম। আমি যখন ড্রেসিংরুম, জার্সি, আর সমর্থকদের দেখতাম, তখন মনে হত, আমিও এখানে খেলতে চাই"।
এমবিএসজি টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টাঙরি বলেন, "আমি তখন চেন্নাইন এফসিতে ছিলাম, আর যখন মোহনবাগান থেকে প্রস্তাব এল, আমি আর আমার বাবা-মা খুব খুশি হয়েছিলাম। এই জার্সি গায়ে তোলা আর ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করাটা আমার স্বপ্ন ছিল। কারণ, এখানে (কলকাতায়) ফুটবলের প্রতি আবেগ একেবারে আলাদা। মোহনবাগান হল ভারতের সেরা দল, এই ক্লাবের সমর্থকেরাও সেরা, আর পরিবেশটাও অসাধারণ"।
সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে চাপানো থেকে শুরু করে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের সঙ্গে ধারাবাহিক সাফল্যের স্বাদ পাওয়া — দীপক টাঙরির কাছে এ যেন এক শৈশবের স্বপ্নপূরণ। গত মরশুমে মেরিনারদের জোড়া খেতাব জয় ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
২০২৪-২৫ মরশুম শুরুর আগে দলের হাল ধরেন স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনা। এই সাক্ষাৎকারে টাঙরি তুলে ধরেছেন, কীভাবে এই অভিজ্ঞ কোচের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পরিবর্তন দলের খেলায় বিশাল প্রভাব ফেলে। বলেন, “আমাদের কোচ একজন উঁচু স্তরের খেলোয়াড় ও কোচ ছিলেন। তাই তিনি সব সময় আমাদের বলেন, কী ঠিক আর কী ভুল। আর শৃঙ্খলার ওপর তিনি খুব গুরুত্ব দেন”।
গত মরশুমে দলের প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, “প্রাক-মরশুম অনুশীলনের সময় বল নিয়ে খুব ভাল ট্রেনিং হয়েছিল। বিশেষ করে মাঝমাঠে খুব উন্নতি হয়েছিল – বেশি পাসিং, থ্রু বল, আর লং বল। কোচ আমাদের শেখাতেন কীভাবে বল পাওয়ার আগে পেছনে তাকাতে হয়, ভিশন বাড়াতে হয় এবং পাসিং ভাল করতে হয়। এই শিক্ষাগুলো সারা মরশুম জুড়ে আমাদের অনেক সাহায্য করেছে”।
২০২৪-২৫ মরশুমে মোহনবাগানের ঐতিহাসিক ‘ডাবল’ জয়ে শক্তিশালী বেঞ্চ ও খেলোয়াড়দের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ককেই সাফল্যের অন্যতম মূল কারণ হিসেবে দেখেছেন টাঙরি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
“কেউ বেঞ্চে থাকুক বা মাঠে খেলুক, সবার অবদান সমান। কোচ জানেন, যদি একজন খেলোয়াড় না থাকে, অন্য কেউ এসে ঠিক একই দায়িত্ব পালন করবে। এই কারণেই আমরা ট্রফি জিততে পারি”।
“প্রত্যেক খেলোয়াড় জানে, কী করা উচিত আর কী নয়। এমনকি কেউ যদি কার্ডও দেখে, বেঞ্চে ঠিকই কেউ না কেউ প্রস্তুত থাকে। এটাই আমাদের দলের সবচেয়ে ভাল দিক — মাঠে হোক বা মাঠের বাইরে, আমাদের পরিবেশটা দারুণ। আমরা সবাই পরিবারের মতো থাকি, আর ড্রেসিং রুমের পরিবেশ সব সময়ই দুর্দান্ত,” বলেন টাঙরি।
মোহনবাগান সমর্থকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই তারকা মিডফিল্ডার। কারণ, তারা সব সময় দলের পাশে থেকেছেন। “আমাদের সমর্থকরা — ভাল সময়ে হোক কিংবা খারাপ সময়ে — সব সময় আমাদের পাশে থাকেন। তারা আমাদের প্রেরণা দেন, আমাদের জন্য সবকিছু করেন, আর সেই প্রেরণাটাই অনেক বড় ব্যাপার। আমরা অন্তর থেকে তা অনুভব করি এবং তাদের জন্য কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই। কারণ ক্লাবের সঙ্গে তাদের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কের মূল্য অনেক”, জানান টাঙরি।