ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ২-২-এ ড্র করতে পারায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে মোহনবাগান শিবির। বুধবার ঘরের মাঠে ওডিশার কাছে হারের মুখে চলে এসেছিল সবুজ-মেরুন বাহিনী। কিন্তু সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ড্র করে তারা।

প্রথমার্ধে ৩১ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে ও স্টপেজ টাইমের তৃতীয় মিনিটে গোল করে ওডিশাকে এগিয়ে দেন মরক্কোর মিডফিল্ডার আহমেদ জাহু। বিরতির পর ৫৮ মিনিটের মাথায় ও ইনজুরি টাইমের চতুর্থ মিনিটে দুটি গোলই শোধ করে দেন আলবানিয়ান ফরোয়ার্ড সাদিকু। শেষ পর্যন্ত না হারার মানসিকতাই এ দিন তাদের এক পয়েন্ট এনে দেয়।

এ দিন চোট পেয়ে বিরতির পর আর খেলতে পারেননি সবুজ-মেরুন শিবিরের দুই নির্ভরযোগ্য তারকা সহাল আব্দুল সামাদ ও অনিরুদ্ধ থাপা। ম্যাচের আগেই ওয়ার্ম-আপ করার সময় হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান হুগো বুমৌস। থাপার জায়গায় নামা গ্ল্যান মার্টিন্সও চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। এই অবস্থার মধ্যেও শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়াই ছাড়েনি মোহনবাগান এসজি। তারা দ্বিতীয়ার্ধে হার না মানার সংকল্প বজায় রাখে।

এমনিতেই তাদের আশিক, আনোয়ার, মনবীর, পেট্রাটস চোট পেয়ে মাঠের বাইরে। এ বার সহাল, থাপা, মার্টিন্সও সেই তালিকায় নাম লেখালে পরবর্তী ম্যাচে কাদের নামাবেন, তা নিয়ে অনেক ভাবতে হবে কোচ হুয়ান ফেরান্দোকে।

এই ড্র নিয়ে মোহনবাগানের সহকারী কোচ ক্লিফোর্ড মিরান্ডা বলেন, “আমরা শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করেছি। প্রথমার্ধে একটা ক্রসের জন্যই ওরা পেনাল্টি পায় ও গোল করে, যেটা দুর্ভাগ্যবশত আমাদের শুভাশিসের হাতে লাগে। ওদের দ্বিতীয় গোলটা কী ভাবে হয়েছে, তা সবাই দেখেছে। প্রথমার্ধে আমরা বেশি সুযোগ তৈরি করেছি। আমাদেরই এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফুটবল এ রকমই। কখনও সাফল্য আসে, কখনও আসে না। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়াই। প্রথম থেকেই আজ আমরা জেতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম”।

ম্যাচের পর বিপক্ষের খেলোয়াড়দের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ে লাল কার্ড দেখতে হয় মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দোকে। ফলে পরবর্তী ম্যাচে তিনি দলের ডাগ আউটে থাকতে পারবেন না। উত্তেজনার পারদ এতটাই চরমে উঠেছিল যে ওই ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড তথা লাল কার্ড দেখতে হয় ওডিশার ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড দিয়েগো মরিসিওকেও। অর্থাৎ তিনিও পরের ম্যাচে খেলতে পারছেন না। সে জন্যই এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে আসেন মিরান্ডা।

ছিলেন জোড়া গোলের নায়ক সাদিকুও। তিনি বলেন, “আমরা দুগোলে পিছিয়ে থেকে ড্রেসিং রুমে ফিরে যাই। কোচ আমাদের বলেন, বিরতির পর প্রত্যেককে একশো শতাংশ দিতে হবে। গোলকিপার কোচ বলেন, প্রতিপক্ষ এ বার সময় নষ্ট করার চেষ্টা করবে। আমরা যদি পাঁচ মিনিটও বেশি পাই শেষে, আমি জানি, আমরা তাতেও গোল করতে পারব। আমার খুব ভাল লাগছে। সমর্থকেরা আমার কাছ থেকে যা চেয়েছিলেন, তা দিতে পারায়। তবে আমাদের দলে চোট পাওয়া খেলোয়াড়ের সংখ্যা এত বেশি, তা চিন্তার বিষয়। তবে কোচ যে রকম বললেন, আমাদের প্রত্যেককে পরষ্পরের প্রতি আস্থা রাখতে হবে”।

নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে সাদিকু বলেন, “প্রতি ম্যাচেই নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। কখনও নিজে গোল করি, কখনও গোলের পাস দিই। যখনই গোল করতে পারি, খুশি হই। দলের জন্য একশো শতাংশ দিতে পেরে ভাল লাগছে। দলের জন্য এক পয়েন্ট আনাটাই আমার কাছে সেরা প্রাপ্তি। আলাদা করে কোনও গোলের কথা বলব না”।

প্রথমার্ধে প্রচুর সুযোগ তৈরি করেও কোনও গোল না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আলবানিয়ান ইউরো কাপার বলেন, “প্রথমার্ধে আমরা বেশ কয়েকটি বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। সেখান থেকেই ওরা বল পেয়ে আক্রমণ করে। আমি ঠিকমতো দেখিনি যদিও। তবে মনে হয় ওটা পেনাল্টি ছিল না। আমাদের খোয়ানো বলগুলো খুব ভাল ভাবে ছিনিয়ে নিচ্ছিল ওরা। তা সত্ত্বেও যে আমরা দুগোল পেলাম, এটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে দামী মুহূর্ত। দু’গোলে পিছিয়ে থেকেও তা শোধ করে খেলায় ফিরে আসা মোটেই সোজা কাজ নয়। তবু আমরা নিজেদের সাহসিকতার পরিচয় দিতে পেরেছি বলেই ম্যাচে ফিরে আসতে পেরেছি। তাই আমি খুশি”।

এ দিন ম্যাচের আগে ও মধ্যে একাধিক মোহনবাগান খেলোয়াড় চোট পান। সেই নিয়ে সহকারী কোচ মিরান্ডা বলেন, “ম্যাচের আগে ওয়ার্ম-আপেই হুগোর চোট লেগে যায়। তার পরে সহাল ও থাপা। এগুলো পেশীর চোট নয়, ওদের আঘাত করা হয়েছে। কারণ, খেলার ওপর ওদের নিয়ন্ত্রণ ভাল ছিল। কিয়ানের পেশীতে টান ধরে। তবে ফুটবলে এ রকম হয়ই। সহালের চোটের ব্যাপারে বিস্তারিত এখনও কিছু জানি না। মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে কথা বলে জানতে হবে। এত চোট-আঘাত নিয়ে খেলে যাওয়াটা খুবই কঠিন। তবে এমন যে হতে পারে, তা আমাদের ভাবনায় ছিল। তাই একটা ভাল দল গড়েছি আমরা। অন্য খেলোয়াড়রাও রয়েছে, যারা শূন্যস্থান পূরণ করতে পারে। আশা করি, ওরাও ভাল খেলবে”।

শততম ম্যাচ খেলা গোলকিপার বিশাল কয়েথের প্রশংসা করে মিরান্ডা বলেন, “শেষের দিকে যে গোলটা বাঁচাল বিশাল, সেটা অসাধারণ। ওটা না বাঁচালে হয়তো আমরা ম্যাচটা হেরে যেতাম। কিন্তু আমাদের পুরো দল আজ যেভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে, তা অসাধারণ। এমনকী বেঞ্চে থাকা খেলোয়াড়রাও যে ভূমিকা পালন করেছে, তাতে গর্বিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে আমাদের”।