দুই, তিন বা চার নয়, এক নম্বরে থেকেই লিগ  শেষ করতে চান মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের হেড কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। শনিবার বিকেলে ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে নামার আগে এই কথাই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন তিনি। 

গত মরশুমে মোহনবাগান ইন্ডিয়ান সুপার লিগের নক আউট চ্যাম্পিয়ন হলেও লিগ টেবলে তারা কোনও বারই এক নম্বরে থেকে শেষ করতে পারেনি। এ বার সেই লক্ষ্যেই তারা এগোচ্ছেন বলে দাবি হাবাসের। শীর্ষে থাকা ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে তাঁর দল মাঠে নামার আগে হাবাস জানিয়ে দিলেন, “সম্প্রতি অনুশীলনের সময় দলের ছেলেদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। সেখানে আমি ছেলেদের কখনও বলিনি যে, আমরা তৃতীয় হতে চাই। এ অসম্ভব। খেলোয়াড়দের সেরা হওয়ার মানসিকতা ও লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামা উচিত। প্রতি দিনই এই লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েই লড়াই করতে হবে আমাদের”।

শনিবার ওডিশা এফসি-কে হারাতে পারলে চলতি আইএসএল টেবলে শীর্ষে পৌঁছে যাবে সবুজ-মেরুন বাহিনী। কিন্তু ওডিশার মতো শক্তিশালী দলকে হারানো যে মোটেই সোজা নয়, তা খুব ভাল করেই জানেন হাবাস। গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতে জেতা ও একটিতে ড্র করা ওডিশার প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাও রয়েছে তাঁর। প্রতিপক্ষ সম্পর্কে কোচ বলেন, “ওডিশা দলে যেমন ভাল ভাল ফুটবলার আছে, তেমনই ওদের একজন ভাল কোচও আছেন। খুব ভাল দল ওরা। এই ম্যাচটা জেতাই আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু প্রতিপক্ষের প্রতি আমরা যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। সারা মরশুমেই ওরা ভাল খেলেছে”। 

শনিবার প্রতিপক্ষে পাবেন একসময়ে তাঁর ভরসার পাত্র রয় কৃষ্ণাকে। ইদানীং দুর্দান্ত ফর্মেও রয়েছেন রয়। একদা প্রিয় শিষ্যকে আটকানোর জন্য আলাদা করে কোনও বিশেষ পরিকল্পনা করেছেন কি না, জানতে চাইলে তাঁর প্রাক্তন গুরু বলেন, “রয় কৃষ্ণা যদি আমার দলে খেলত, তা হলে না হয় ওকে নিয়ে আলদা করে কোনও পরিকল্পনা করা যেত। রয় অসাধারণ খেলোয়াড়। ওর সঙ্গে কাজ করে খুবই আনন্দ পেয়েছি আমি। এখন ও আমার প্রতিপক্ষ। কিন্তু ফুটবলে এ রকমই হয়। ওকে আটকানোর জন্য বিশেষ কোনও পরিকল্পনা নেই। আমরা কোনও খেলোয়াড়কে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা করি না। রয় এবং পুরো ওডিশা দলটাই যথেষ্ট ভাল অবস্থায় আছে”। 

সের্খিও লোবেরার দলের মাঝমাঠের অন্যতম সেরা অস্ত্র আহমেদ জাহু কার্ড সমস্যার জন্য শনিবার খেলতে পারবেন না। তবে এই নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই সবুজ-মেরুন কোচের। বলেন, “প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের নিয়ে আলাদা করে কথা বলতে আমি পছন্দ করি না। ওদের সেন্ট্রাল মিডফিল্ড খুবই ভাল অবস্থায় রয়েছে। এখানে কোনও দল এক দিন তাদের সেরা খেলোয়াড়কে খেলাতে পারলেও পরের দিন হয়তো কোনও কারণে তাকে খেলাতে পারে না। এ চলতেই থাকে। তা সত্ত্বেও যারা ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে, তারাই লিগে চ্যাম্পিয়ন হবে। প্রত্যেক দলের কাছেই বিভিন্ন বিকল্প পরিকল্পনা থাকাটা খুবই জরুরি। ওদেরও নিশ্চয়ই আছে”। 

এ পর্যন্ত ২৮টি গোল করেছে দুই দলই। কিন্তু ওডিশা এফসি যেখানে ১৪টি গোল খেয়েছে, সেখানে মোহনবাগান ১৮টি গোল হজম করেছে। রয় কৃষ্ণাদের বিপজ্জনক আক্রমণ বিভাগ নিয়েও আলাদা করে চিন্তিত নন হাবাস। কারণ, তাঁর নিজের দলের আক্রমণ বিভাগও যথেষ্ট ধারালো। এই প্রসঙ্গ উঠলে তিনি বলেন,  “প্রতিপক্ষের আক্রমণ বিভাগ নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই। কারণ, গত ম্যাচে প্রতিপক্ষের দু গোলের জবাবে আমরা চার গোল দিয়েছি। যদি ওদের দুগোলের জবাবে আমাদের ছেলেরা কোনও গোল দিতে না পারত, তা হলে আমার উদ্বেগের কারণ ছিল। এটাই ফুটবল। ওডিশা কতটা শক্তিশালী দল, তা আমরা জানি। আমাদের কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে হবে এবং তার পরে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করতে হবে”। 

কঠিন ম্যাচ, তবে এই ম্যাচটাকেই ফাইনালের মতো গুরুত্ব দিতে রাজি নন মোহনবাগান কোচ। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “ফাইনাল একটাই হয়। সেখানে আর দ্বিতীয় কোনও সুযোগ পাওয়া যায় না। আমাদের সামনে আরও পাঁচটা ম্যাচ আছে। ফাইনাল ফাইনালের দিন হবে। আর ফাইনাল এখনও এক মাস দেরি আছে। এই ম্যাচ থেকে আমাদের তিন পয়েন্ট পেতে হবে। এটা ফাইনাল বলে ধরার কোনও কারণ নেই।  

দলের অন্যতম উইঙ্গার মনবীর সিং-ও দলকে এক নম্বরেই নিয়ে যেতে ও রাখতে চান। তিনি বলেন, “খেলোয়াড় হিসেবে আমরা সব সময়ই এক নম্বরে থাকতে চাই। সে জন্যই মাঠে নেমে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে চাই। আমাদের কাছে এই ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমর্থকদের কাছেও। তো আমরা একশো শতাংশ দিয়ে ম্যাচটা জেতার চেষ্টা করব”।

মরশুমের শুরুতে এএফসি কাপে এই ওডিশা এফসি-কে ৪-০-য় হারিয়েছিল মোহনবাগান। সেই ফলের জন্য তাঁরা এই ম্যাচে মনস্তাত্বিকভাবে এগিয়ে থেকে নামবেন, এই ধারনার সঙ্গে একমত নন মনবীর। বলেন, “গত ম্যাচে ৪-০ হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু এটা সম্পুর্ণ আলাদা একটা ম্যাচ। এই ম্যাচেও জয় পাওয়াই আমাদের লক্ষ্য থাকবে”। 

তাঁর নিজের লক্ষ্য নিয়ে মনবীর বলেন, “যথাসম্ভব বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে ও গোল করতে চাই আমি। দলের জন্য ও নিজের জন্য। আমি জানি যে, গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারলে গোল আসবেই। সেটাই করে যাচ্ছি আমি”। 

শনিবার কঠিন ম্যাচে জেতার জন্য কোচের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চান মনবীর। বলেন, “কোচ যে ভাবে বলবেন, সে ভাবেই নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। তিনি যে কৌশল অবলম্বন করতে বলবেন, সেই কৌশলই অনুসরণ করার চেষ্টা করব আমরা সবাই। এই ম্যাচটা জিতলে আমরা লিগ টেবলের শীর্ষে পৌঁছে যাব। তাই ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ”। 

আগের চেয়ে তাঁদের দল এখন অনেক শক্তিশালী ও তৈরি বলেও মনে করেন মনবীর। বলেন, “এখন আমাদের দলে সবাই চলে এসেছে, যেটা আমাদের বাড়তি মোটিভেশন জোগাচ্ছে। প্রত্যেকেই মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত। তাই আশা করি, এই ম্যাচে আমরা খুব ভাল খেলব এবং ম্যাচটা জিতে এক নম্বরে ওঠার লক্ষ্য পূরণ করতে পারব। এটা আমাদের কাছে বাড়তি মোটিভেশন”। 

ফিনল্যান্ডের মিডফিল্ডার জনি কাউকো চোট সারিয়ে প্রায় ১৬ মাস পরে মাঠে ফিরে এসেছেন ও ভাল ফর্মে আছেন। গত ম্যাচে চারটি গোলের মধ্যে তিনটিতেই অ্যাসিস্ট করেন তিনি। তাঁর সম্পর্কে মনবীর বলেন, “জনি আমাদের দলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ও কী ভাবে ফিরে এসেছে, তা সবাই দেখেছেন। ও এই দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়”। 

গত কয়েকটি ম্যাচে দেখা গিয়েছে, নিজেদের সেরা ছন্দ পেতে সময় নিচ্ছে মোহনবাগান। এটি তাদের কৌশল না সমস্যা, জানতে চাইলে মনবীর ব্যাখ্যা দেন, “আমরা নিজেদের সেরা জায়গায় আসতে সময় নিচ্ছি, এ কথা ঠিক নয়। ফুটবলে যে কোনও সময়, যে কোনও ঘটনা ঘটতে  পারে। যে কেউ গোল করে দিতে পারে। আমরা আগে প্রতিপক্ষকে আটকানোর চেষ্টা করি, তার পরে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করি”।