হিরো আইএসএলে দ্রুততম একশো গোলের নয়া নজির, ভারতীয় গোলদাতার সংখ্যাতেও বৃদ্ধি
গোলের ঝড় উঠেছে যেন চলতি হিরো আইএসএলে। হু-হু করে বেড়ে চলেছে গোলের সংখ্যা। ১৪ ম্যাচে ৫০ গোলের নতুন মাইলফলক তৈরি হওয়ার পরে এ বার মঙ্গলবার জামশেদপুর এফসি বনাম ওডিশা এফসি ম্যাচে ১০০ গোলের আরও এক নয়া নজির তৈরি হল দেশের এক নম্বর ফুটবল লিগে।


গোলের ঝড় উঠেছে যেন চলতি হিরো আইএসএলে। হু-হু করে বেড়ে চলেছে গোলের সংখ্যা। ১৪ ম্যাচে ৫০ গোলের নতুন মাইলফলক তৈরি হওয়ার পরে এ বার মঙ্গলবার জামশেদপুর এফসি বনাম ওডিশা এফসি ম্যাচে ১০০ গোলের আরও এক নয়া নজির তৈরি হল দেশের এক নম্বর ফুটবল লিগে। জামশেদপুর এই ম্যাচে ৪-০-য় জেতায় চলতি হিরো আইএসএলে গোলের সংখ্যা দাঁড়াল ১০১। এ দিন ২১ মিনিটের মাথায় জামশেদপুরের বিদেশি তারকা গ্রেগ স্টিউয়ার্ট তাঁর হ্যাটট্রিকের দ্বিতীয় গোলটি করার সঙ্গে সঙ্গে দেশের সেরা লিগের দ্রততম একশো গোলের মাইলস্টোন তৈরি হয়ে যায়।
মঙ্গলবারের মতো গত সোমবারও বাম্বোলিমে ছ’গোলের ম্যাচ দেখেছেন ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা, যে ম্যাচে হায়দরাবাদ এফসি ৫-১-এ হারায় নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে, তেমনই গত বৃহস্পতিবার ফতোরদায় মুম্বই-জামশেদপুর (৪-২), তার দু’দিন আগে এফসি গোয়া-এসসি ইস্টবেঙ্গল (৪-৩), চলতি মাসের প্রথম দিন এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে মুম্বই সিটি এফসি-র ৫-১ জয় দেখেছে তারা।
এ বারের উদ্বোধনী ম্যাচেই হাফ ডজন গোল হয়েছিল। সেই ম্যাচে ৪-২-এ এটিকে মোহনবাগান হারিয়েছিল কেরালা ব্লাস্টার্সকে। দ্বিতীয় ম্যাচেও একই ব্যবধানে বেঙ্গালুরু এফসি হারিয়েছিল নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-কে। এসসি ইস্টবেঙ্গলকে ৬-৪-এ হারায় ওডিশা এফসি। শুরু থেকেই এমন গোলের বন্যা কখনও দেখা যায়নি দেশের সেরা ফুটবল লিগে। এ বার ২৯ ম্যাচে একশো গোল হয়ে গেল হিরো আইএসএলে।
এ বার লিগের প্রথম ২৭টি ম্যাচে ৯১টি গোল হয়েছে, যা হিরো আইএসএলের আট মরশুমের ইতিহাসে নজির। গত সাত মরশুমে প্রথম ২৭ ম্যাচের হিসেবে সবচেয়ে বেশি গোল হয়েছিল ২০১৮-১৯ মরশুমে।
- ২০১৮-১৯-এ মোট ৭৬টি গোল হয় প্রথম ২৭ ম্যাচে। সেই মরশুমে গড়ে প্রতি ম্যাচে ২.৮১ গোল হয়। এ বারে ২৭ তম ম্যাচ পর্যন্ত প্রতি ম্যাচে গড়ে ৩.৩৭ গোল হয়।
- তবে ২০১৯-২০ মরশুমে প্রথম ২৭ ম্যাচে যে সংখ্যক (৩৬৯) গোলে শট নেওয়া হয়েছিল, এ বারের সেই তুলনায় কমই শট নেওয়া হয়েছে (২০৪)।
- এ বার প্রথম ২৭ ম্যাচে শট অ্যাকিউরেসি ৩২.১২%। অর্থাৎ যত শট নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ৩২.১২ শতাংশই গিয়েছে গোলের দিকে।
- শট অ্যাকিউরেসির দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে ২০১৫ মরশুম, যে বার প্রথম ২৭ ম্যাচে শট অ্যাকিউরেসি ছিল ৫৫.৩২%।
এ বার আসা যাক ভারতীয়দের পারফরম্যান্সে। হিরো আইএসএলে কী ভাবে ভারতীয় ফুটবলারদের ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে, তা এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাবে। এ বারই ভারতীয় ফুটবলারদের গোলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রথম ২৭ ম্যাচের হিসেবই দেখা যাক। এ পর্যন্ত ৬২ গোল করেছেন বিদেশিরা। ২৫টি গোল করেছেন ভারতীয়রা।
- ২০১৮-১৯ মরশুমে প্রথম ২৭ ম্যাচে ২৪টি গোল করেছিলেন ভারতীয় ফুটবলাররা। সে বার তখন ৫১ গোল জমা পড়েছিল বিদেশিদের খাতায়।
- তবে মোট গোলের শতকরা হিসেবের দিক থেকে ভারতীয়রা প্রথম ২৭ ম্যাচে সবচেয়ে বেশি শতাংশ গোল করেছিলেন ২০১৮-১৯-এই। সে বার মোট গোলের ৩১.৫৮% গোল করেছিলেন ভারতীয়রা।
- এ বার সেই তুলনায় ২৭.৪৭% গোল এসেছে ভারতীয়দের পা বা মাথা থেকে। এ বার ভারতীয় গোলস্কোরারদের গড় বয়স এখন পর্যন্ত ২৪ বছর। যা অন্যান্য বারের তুলনায় সবচেয়ে কম।
- গত তিন বারে এই পর্যায়ে ভারতীয় স্কোরারদের গড় বয়স ছিল ২৪.৭১, ২৪.৮৭ ও ২৫.২৯ বছর। তার আগের তিন বার প্রতি বছরই এই গড় বয়স ছিল ২৬-এর ওপর। যা ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির সূচক হিসেবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যাসিস্টের ক্ষেত্রেও এ বার ভারতীয়রা অন্যান্যবারের তুলনায় সবার চেয়ে এগিয়ে।
- গত তিনবারে প্রথম ২৭ ম্যাচে ভারতীয় ফুটবলারদের অ্যাসিস্ট যেখানে ছিল যথাক্রমে ১৯, ২০ ও ১৯, সেখানে এ বার তার সংখ্যা ২৪। বিদেশিরা ৩৪টি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন।
- শুধু গতবারেই প্রথম ২৭ ম্যাচে ৩২ গোলের মধ্যে বেশিরভাগ অ্যাসিস্ট আসে ভারতীয়দের পা থেকে। সে বার বিদেশিরা অ্যাসিস্ট করেছিলেন ১৩টি গোলে।
অনূর্ধ্ব ২৩ ভারতীয় ফুটবলারদের সংখ্যা ও তাদের করা গোলের দিক থেকেও ক্রমশ যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে দেশের সেরা ফুটবল লিগে।
- এ বার মোট ৬৪ জন অনূর্ধ্ব ২৩ ফুটবলার খেলছেন হিরো আইএসএলে। তাঁরা ১২টি গোল করেছেন প্রথম ২৭ ম্যাচে। ৯টি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন তাঁরা।
- গতবারও ৬৫জন অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলার খেলেছিলেন এই লিগে। প্রথম ২৭ ম্যাচে তাঁদের গোলসংখ্যা ছিল মাত্র তিন। এ বারে তা ১২।
- ২০১৪-য় প্রথম হিরো আইএসএলে ২৪জন অনূর্ধ্ব ২৩ ফুটবলার খেলেছিলেন। এ বার সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪।
বিদেশি তারকারা এ বারেই সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন। প্রথম ২৭ ম্যাচের হিসেব ধরলে এ বার তাদের গোলের সংখ্যা ৬৪।
- গত সাতবারে বিদেশিরা প্রথম সাত ম্যাচে যথাক্রমে ৫০, ৪৭, ৪৪, ৫২, ৫১, ৪৮ ও ৪৭ গোল করেন। এ বার স্বাভাবিক ভাবেই সংখ্যাটা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে।