আমার কাজ বেশি গোল করে দলকে ম্যাচ জেতানো: ক্লেটন সিলভা
“গত মরশুমে আমাদের দলের কয়েকজন খেলোয়াড় কতটা উন্নতি করেছিল, সে তো দেখেইছিলেন। সবচেয়ে ভাল উদাহরণ মহেশ। ও গত দেড় বছরে দারুন উন্নতি করেছে। আমি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে ওদের গাইড করার চেষ্টা করি”।
আন্তর্জাতিক ফুটবলের জন্য দীর্ঘ অবকাশের পর শনিবার ফের ইন্ডিয়ান সুপার লিগের অভিযান শুরু করতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল এফসি। পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জিতে লাল-হলুদ শিবির এখন লিগ তালিকার দশ নম্বরে। শেষ ম্যাচে তারা ঘরের মাঠে কেরালা ব্লাস্টার্সের কাছে। কেরালার দল সেই ম্যাচে জেতে ২-১-এ। ৩২ মিনিটের মাথায় তারা এগিয়ে যায় দাইসুকে সাকাইয়ের সুযোগসন্ধানী গোলে। ৮৮ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়িয়ে নেন দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস।
এই গোলের আগেই পেনাল্টি থেকে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন যিনি, সেই ক্লেটন সিলভা স্টপেজ টাইমের একেবারে শেষ দিকে ফের পেনাল্টির সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি গোল শোধ করেন। আইএসএলে এই নিয়ে কলকাতায় ১৪টি ম্যাচ খেলেছে তারা। তার মধ্যে ন’টিতেই হার। এ পর্যন্ত ঘরের মাঠে তারা মাত্র তিনবার জয় পায়। বাকি দু’বার ড্র হয়েছে।
বেঙ্গালুরু এফসি-র হয়ে ২০২০-২১-এ হিরো আইএসএলে সাত গোল ও পরের মরশুমে ন’গোল করার পরে লাল-হলুদ শিবিরে যোগ দেন তিনি। গোলের যে আশা নিয়েই তাঁকে সই করানো হয়, সেই আশা পুরোপুরি ভাবে পূর্ণ করেন তিনি। গত মরশুমই ছিল তাঁর সেরা। কিন্তু তাঁর দল লিগ টেবলে অনেকটা পিছিয়ে পড়ে। লিগ শেষ হওয়ার পরেই ক্লেটনের চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ায় ইস্টবেঙ্গল।
এ বছর শুরুর দিকে কিছুটা শ্লথ হলেও আইএসএলে দলের পাঁচটি গোলের মধ্যে তিনটিই করেছেন ক্লেটন। মরশুমের একমাত্র জয়ে তাঁরই অবদান ছিল সর্বাধিক। হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে ২-১ জয়ে তিনিই দু’টি গোল করেন। গত মরশুমে লাল-হলুদ বাহিনীকে ১৪টি গোল এনে দিয়েছিলেন এই ব্রাজিলীয়। এ ছাড়াও চারটি গোলে অ্যাসিস্টও করেন এই সুযোগসন্ধানী ফরোয়ার্ড। এ মরশুমে তিনি সবচেয়ে দেরি করে দলের প্রাক মরশুম শিবিরে যোগ দেন। তার আগে পাঁচটি ম্যাচে ১৩৬ মিনিটের জন্য তাঁকে মাঠে নামিয়েছিলেন কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। একটিও গোল করতে পারেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর গোলেই প্রথম ও একমাত্র জয় পায় দল।
সম্প্রতি indiansuperleague.com কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লাল-হলুদ শিবিরের আক্রমণে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এই ব্রাজিলীয় তারকা চলতি আইএসএলে এ পর্যন্ত দলের ও তাঁর পারফরম্যান্স যা বললেন, তাঁর উল্লেখযোগ্য অংশ নীচে তুলে ধরা হল।
প্রশ্ন: ইস্টবেঙ্গল শিবিরে আপনি সবার শেষে যোগ দেন। তার আগে দেশে আপনি নিজেকে ফিট রাখার জন্য কী কী করতেন?
ক্লেটন সিলভা: ব্রাজিলে আমার নিজস্ব ট্রেনিং গ্রাউন্ড রয়েছে। সেখানে আমাকে সাহায্য করার জন্য কিছু লোকজন থাকে। ক্লাবের মেডিক্যাল ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগ অফ সিজনে সবসময়ই আমাকে গাইড করেছে। এ ছাড়া ওখানে আমার বন্ধুর জিম রয়েছে। ওরাও অফ সিজনে আমাকে ফিট থাকতে খুব সাহায্য করেছে।
এ মরশুমে আপনাদের দলে গত বছরের তুলনায় বেশি অ্যাটাকিং প্লেয়ার আছে। তাদের সঙ্গে কী ভাবে মানিয়ে নিয়েছেন এবং দলের সঙ্গে তাদের মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী সমস্যার সন্মুখীন হতে হয়েছে?
আমি দলের তরুণ অ্যাটাকারদের সবসময়ই পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করি। তরুণদের গাইড করতে পছন্দও করি। গত মরশুমে আমাদের দলের কয়েকজন খেলোয়াড় কতটা উন্নতি করেছিল, সে তো দেখেইছিলেন। সবচেয়ে ভাল উদাহরণ মহেশ। ও গত দেড় বছরে দারুন উন্নতি করেছে। আমি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে ওদের গাইড করার চেষ্টা করি। গত ১৮ বছর ধরে পেশাদার ফুটবল খেলছি। তাই জানি, তরুণ খেলোয়াড়দের সাহায্য করা কতটা জরুরি।
কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে আপনাদের হারটা খুবই হতাশাজনক। সেই ম্যাচের পর কোচ আপনাদের কী বলেছিলেন?
কোচ কার্লস খুবই ইতিবাচক ব্যক্তিত্ব। উনি সব সময়ই আমাদের পাশে থাকেন, আমাদের গাইড করেন। আমরা যদি নিজেদের শুধরে নিতে পারি, তা হলে ঘুরে দাঁড়াতেও পারব।
প্রথম পাঁচ ম্যাচের পর আপনারা লিগ তালিকায় দশ নম্বরে। আপনার দলের সেরা ছয়ে থাকার সম্ভাবনা কতটা বলে মনে করেন?
আমরা এখন শুধু পরের ম্যাচের দিকে মনোনিবেশ করছি। তার পরে কী হবে, তা নিয়ে এখন ভাবছি না।
গত মরশুমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সব দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে আপনিই আপনার দলকে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট এনে দিয়েছেন। এই পরিসংখ্যান নিয়ে কী বলবেন? এ ছাড়াও আপনি কি মনে করেন, চাপের মুখে আপনিই ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম প্রধান ভরসা?
আমি কোনও চাপ অনুভব করি না। বরং প্রধান ভরসা হয়ে উঠতে পারলে আমি খুশিই হই। আমি জানি, আমি একটা বড় ক্লাবের হয়ে খেলি। যখনই যে ক্লাবে খেলেছি, নিজের সেরাটা দিয়ে সেই ক্লাবকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। আমার কাজ গোল করে যাওয়া। যত গোল করব, তত আমাদের জেতার সম্ভাবনা বাড়বে। ইস্টবেঙ্গল এফসি-তে আমি বেশ খুশি। কোচ, ম্যানেজমেন্ট, দলের সতীর্থদের কাছ থেকে যে সহযোগিতা আমি পেয়ে আসছি, তা অসাধারণ। আমার কাজ যথাসম্ভব বেশি গোল করে দলকে ম্যাচ জেতানো। এতেই আমি বেশি আনন্দ পাই।













