লড়াই করেও শেষ মুহূর্তের গোলে নর্থইস্টের কাছে হার মানতে হল মহমেডানকে
গত মরশুমে আই লিগজয়ী মহমেডান এসসি প্রত্যাশার চেয়েও ভাল ও লড়াকু পারফরম্যান্স দেখায়। সদ্য ডুরান্ড কাপ জিতে আসা নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে চেনা ছন্দে ফিরতে দেয়নি তারা।
ইন্ডিয়ান সুপার লিগ অভিষেকে অপরাজিত থেকে তাকে স্মরণীয় করে রাখার সব ব্যবস্থাই করে ফেলেছিল কলকাতার মহমেডান এসসি। গোলশূন্য ড্রয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছেও যায় তারা। কিন্তু ম্যাচের শেষ লগ্নে গোল খেয়ে শূন্য হাতেই আইএসএল অভিযান শুরু করতে হল সাদা-কালো ব্রিগেডকে। মরশুমের শুরুতে পাওয়া সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ১-০ জয় দিয়ে আইএসএল শুরু করল নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি।
সোমবার কলকাতার কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে শুরুর দিকে ছন্দে না থাকলেও দুই দলই ক্রমশ লড়াকু হয়ে ওঠে। সারা ম্যাচে কোনও দলই দু’টির বেশি শট গোলে রাখতে পারেনি। ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচে বল পজেশনে মহমেডান এগিয়ে (৬০-৪০) থাকলেও একাধিক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে তারা। নর্থইস্টও কম সুযোগ তৈরি করেনি। কিন্তু প্রতিটিতেই ব্যর্থ হয় তারা। অবশেষে স্টপেজ টাইমের চার মিনিটের মাথায় ম্যাচের সর্বশেষ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে মরক্কোর পরিবর্ত ফরোয়ার্ড আলাদ্দিন আজারেই একমাত্র গোলটি করে দলের জন্য তিন পয়েন্ট অর্জন করে নেন।
মহমেডানের আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড অ্যালেক্সি গোমেজ এ দিন দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। কিন্তু একাধিক সুযোগ নষ্ট করেন সঠিক ফিনিশিংয়ের অভাবে। গত মরশুমের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন মহমেডান এ দিন প্রত্যাশার চেয়েও ভাল ও লড়াকু পারফরম্যান্স দেখায়। সদ্য ডুরান্ড কাপ জিতে আসা নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে ম্যাচের কোনও সময়েই ছন্দে ফিরতে দেয়নি সাদা-কালো ব্রিগেড।
এ দিন ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটে কোনও দলই গোলে বা গোলের বাইরে কোনও শট নিতে পারেনি। একে অপরকে পরখ করার দিকেই বেশি মন দেয় দু’পক্ষ। তবে নর্থইস্টের খেলায় আক্রমণের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। মহমেডানের ডিফেন্ডারদের কয়েকবার পরীক্ষার মুখে ফেলে তারা। বাঁ দিক দিয়ে জিথিন এম এস, পার্থিব গগৈরাই বেশি আক্রমণ তৈরির চেষ্টা করেন। তবে প্রথমার্ধে কোনও দলকেই স্বচ্ছন্দে পাওয়া যায়নি।
মহমেডান এসসি প্রথম ইতিবাচক আক্রমণ শানায় ২২ মিনিটের পরে, যার জেরে তারা পরপর দু’টি কর্নার পায়। দু’বারই গোলের সুযোগ তৈরি করেন উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার মিরজালল কাসিমভ। কিন্তু সফল হননি। তাদের দুই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার আর্জেন্টিনার অ্যালেক্সি গোমেজ ও কাসিমভ ক্রমশ নিজেদের মেলে ধরার চেষ্টা করেন। তবে দলের প্রধান অ্যাটাকার সিজার মানজোকির সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ঠিকমতো হয়নি। ম্যাচের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও উন্নতি করেন গোমেজ। ভাল ভাল পাসও বাড়ান সতীর্থদের। কিন্তু ফরোয়ার্ডরা সেগুলি কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে নর্থইস্টের জিথিন ও স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড গিলেরমো হিয়েরোর বোঝাপড়া এ দিন মহমেডানকে কয়েকবার বিপদে ফেলে। ৩০ থেকে ৩৫ মিনিটের মধ্যে দু-দু’বার গোলের সুযোগ পান গিলেরমো ও জিথিন। কিন্তু প্রথমবার আটকে দেন গোলকিপার পদম ছেত্রী ও পরেরবার অল্পের জন্য বারের ওপর দিয়ে বল উড়ে যায়। জিথিনকে এ দিন দফায় দফায় দিক বদলে খেলতে দেখা যায়। নর্থইস্টের নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার নেস্টর আলবিয়াখের মধ্যে চেনা তৎপরতা দেখা যায়নি। পার্থিব মাঝে মাঝে তৎপর হয়ে ওঠেন। ফলে প্রথমার্ধে তাদের আক্রমণে তেমন ধার ছিল না।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দেয় মহমেডান এসসি। ৫০ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া গোমেজের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটেই মাকান চোঠে বাঁদিক থেকে কাট ব্যাক করে বক্সের মধ্যে বল পাঠালেও সেখানে পৌঁছতে পারেননি গোমেজ।
আক্রমণে গতি আনার জন্য ৫৭ মিনিটের মাথায় আলবিয়াখের জায়গায় মরক্কোর ফরোয়ার্ড আলাদ্দিন আজারেইকে নামায় নর্থইস্ট এবং তিনি নামার পরই পরপর দু’বার গোলের সুযোগ তৈরি করে নেয় তারা। প্রথমবার গোলকিপার ছেত্রীর তৎপরতায় রক্ষা পায় মহমেডান। পরের বার মহম্মদ আলি বেমামেরের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৬৪ মিনিটের মাথায় ডানদিক দিয়ে ওঠা জিথিন বাঁ দিকে কাট ইন করে গোলে শট নিলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরবর্তী মিনিটেই বাঁ দিক থেকে গিলেরামোর ক্রসে বল পেয়ে ফের গোলে শট নেন তিনি। এ বারও বল বারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
এই সময় থেকে দুই দলই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ৭১ মিনিটের মাথায় গোমেজের পাসে বল পেয়ে বক্সের সামনে থেকে গোলের উদ্দেশে শট নেন মাকান চোঠের জায়গায় নামা বিকাশ সিং। কিন্তু অল্পের জন্য তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। আক্রমণে তীব্রতা বাড়ানোর উদ্দেশে ৭২ মিনিটের মাথায় মানজোকির জায়গায় ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড কার্লোস ফ্রাঙ্কাকে নামায় মহমেডান। অল্প হলেও আক্রমণে ধার বাড়ে মহমেডানের।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আট মিনিট আগে বক্সের মাথা থেকে গোমেজ হাল্কা চিপ করে দ্বিতীয় পোস্ট দিয়ে বল গোলে রাখার চেষ্টা করলেও পোস্টের কয়েক ইঞ্চি বাইরে দিয়ে বল বেরিয়ে যায়। গোমেজই ছিলেন এই ম্যাচের সবচেয়ে তৎপর ফুটবলার। কিন্তু ৮৬ মিনিটের মাথায় চার ডিফেন্ডারকে ধোঁকা দিয়ে আদিঙ্গাকে গোলের বল দিতে গিয়ে তিনি চোট পেয়ে যান। প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে মহমেডান অধিনায়ক দূরপাল্লার শট গোলে রাখলেও তা আটকে দেন গোলকিপার গুরমিত। স্ট্রেচারে শুয়ে মাঠ ছাড়েন গোমেজ।
আট মিনিটের বাড়তি সময়ের শুরুতেই ডানদিকে দিয়ে বক্সে ঢুকে গোলের পাস দেওয়ার চেষ্টা করেন বিকাশ, যা ব্লক করে দেন নর্থইস্ট অধিনায়ক মিগুয়েল জাবাকো। এই সময়ে অমরজিৎ সিং কিয়ামকে তুলে নেয় মহমেডান। কিন্তু তাঁর জায়গায় নামা মহম্মদ ইরশাদ মাঠে নেমে নিজেকে থিতু করার আগেই সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করে ফেলে নর্থইস্ট।
বাড়তি সময়ের চতুর্থ মিনিটে বক্সের ভিতর বাঁদিক থেকে থোই সিংয়ের বাড়ানো ক্রস পেয়ে বক্সের মাঝখান থেকে বাঁ পায়ে গোলে শট নেন আজারেই। প্রথমে সেই শট ব্লক করার চেষ্টা করেন ইরশাদ। গোলকিপার ছেত্রী ব্যর্থ হওয়ায় গোল লাইন সেভ করার চেষ্টা করেন জোসেফ আজারেই। কিন্তু দু’জনেই ব্যর্থ হন (১-০)। বক্সের ডান দিক থেকে থোইকে ক্রস পাঠিয়েছিলেন বেমামের। শেষ চার মিনিটে গোল শোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে মহমেডান। বক্সের সামনে ফ্রি কিকও পায় তারা। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
মহমেডান এসসি দল (৪-৩-৩): পদম ছেত্রী (গোল), জুডিকা, গোরব বোরা, জোসেফ আজেই, জোডিংলিয়ানা রালতে আদিঙ্গা (অ), অমরজিৎ সিং কিয়াম (মহম্মদ ইরশাদ-৯২), মিরজালল কাসিমভ, অ্যালেক্সি গোমেজ (আঙ্গুসানা লুয়াং-৯২), লালরেমসাঙ্গা ফানাই, সিজার মানজোকি (কার্লোস ফ্রাঙ্কা-৭২), মাকান চোঠে (বিকাশ সিং-৬৬)।
পরিসংখ্যানে ম্যাচ
বল পজেশন: মহমেডান এসসি ৬০.২% - নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি ৩৯.৮%, সফল পাসের হার: ৮১%-৭০%, গোলে শট: ২-২, ফাউল: ১৩-১৭, ইন্টারসেপশন: ৫-৮, ক্রস: ১২-১০, কর্নার: ৩-৪, হলুদ কার্ড: ৩-৩।
ম্যাচের সেরা: জিথিন এমএস (নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি)