প্রথম ৪৫ মিনিটের আধিপত্য ও দ্বিতীয়ার্ধে হঠাৎ খেলার ধরন পাল্টে ফেলেই সোমবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে বাজিমাত করল মুম্বই সিটি এফসি— বিশেষজ্ঞরা এ রকমই মনে করছেন। দুই দলের কোচেরাও কার্যত সেটাই স্বীকার করে নিলেন। প্রথমার্ধের দাপটই সারা ম্যাচে এগিয়ে রেখেছিল মুম্বইয়ের দলকে।

এ দিন ফতোরদায় দুই দলের ফুটবলাররা মুখোমুখি হলেও আসলে দুই স্প্যানিশ কোচের মস্তিষ্কের লড়াই ছিল। সোমবার রাতে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে এটিকে মোহনবাগানে কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস বলেন, “আমার দলের প্রথমার্ধের পারফরম্যান্স দেখে আমি মোটেই খুশি হতে পারিনি। খেলার জন্য বেশি জায়গাই তৈরি করতে পারেনি আমাদের ছেলেরা। দ্বিতীয়ার্ধে ওরা অনেক ভাল খেলেছে। গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচটা আমরা ড্র রাখতে পারতাম”।

প্রথমার্ধে যে তাঁর দল অনেকটাই এগিয়ে ছিল, এই ব্যাপারে একমত মুম্বই সিটি এফসি-র কোচ সের্খিও লোবেরা। তিনি বলেন, “আমাদের ফুটবলার আজ যথেষ্ট ভাল খেলেছে। বিশেষ করে প্রথম ৪৫ মিনিটে। একাধিক সুযোগও পেয়েছি আমরা। আমাদের বিরতির আগেই এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল”।

তবে এ দিন সারা ম্যাচেই মুম্বই আধিপত্য বিস্তার করে ছিল, এই মত মেনে নিতে রাজি নন হাবাস। তিনি বলেন, “আজ দুই দলের খেলায় কোনও পার্থক্য ছিল বলে আমার মনে হয় না। ওরা যত সুযোগ তৈরি করেছে, আমরাও প্রায় ততগুলো সুযোগই তৈরি করতে পেরেছি। আমরা সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারিনি, ওরা পেরেছে, তফাৎ হয়তো এখানেই হয়েছে”।

এই নিয়ে তিনি আরও বলেন, “প্রথমার্ধে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলার কোনও পরিকল্পনা ছিল না আমাদের। খেয়াল করে থাকবেন, শুরুতেই কিন্তু আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করেছিলাম আমরা। ছেলেরা হয়তো সেটা বজায় রাখতে পারেনি। তবে বিপক্ষকে প্রথম ৪৫ মিনিটে একটার বেশি সুযোগ তৈরিও করতে দিইনি আমরা”।

সোমবার এটিকে মোহনবাগানকে ১-০ গোলে হারিয়ে লিগ টেবলে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখে মুম্বই সিটি এফসি। একমাত্র গোলটি করেন তাদের তারকা ফরোয়ার্ড বার্থোলোমিউ ওগবেচে। ৬৯ মিনিটের মাথায় ফরাসি মিডফিল্ডার হুগো বুমৌসের পাস থেকে দর্শনীয় গোলটি করে দলকে জেতান তিনি। চলতি লিগে এই নিয়ে আট নম্বর জয় আরব সাগরপাড়ের ক্লাবের। দ্বিতীয় হার গঙ্গাপাড়ের ক্লাবের।

এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হেরেও অবশ্য অনেক ইতিবাচক দিকের কথা শোনালেন হাবাস। বলেন, “আমরা খেলায় উন্নতি করেছিলাম। ওপেন প্লে-তে গোল করেছে ওরা। আগের তিনটে গোল আমরা খেয়েছি সেট পিস থেকে। আজ কিন্তু বিপক্ষকে সেট পিস থেকে গোল করতে দিইনি”।

তবে প্রতিপক্ষের গোলটি নিয়ে খুব একটা খুশি মনে হল না তাঁকে। বললেন, “গোলটার আগেই এডুকে ফাউল করা হয়েছিল। ও মাঠে পড়ে ছিল। আমাদের একজন কমে যায়। এই অবস্থায় খেলা চালিয়ে যাওয়াটা উচিত হয়েছে বলে মনে হয় না আমার। ম্যাচের শেষ দিকে আরও গোল না খেয়ে সমতা আনার উদ্দেশ্যে মনবীর সিংয়ের জায়গায় প্রবীর দাসকে নামান কোচ। এই প্রসঙ্গে বলেন, দ্বিতীয়ার্ধে প্রবীরকে নামাই, কারণ, প্রতিপক্ষ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলছিল। এই পরিস্থিতিতে মনবীর সিংকে মাঠে রাখার কোনও প্রয়োজন ছিল না”। তবে এই পরিবর্তন করেও কোনও লাভ হয়নি তাদের।

এই হারের কথা ভুলে এখন সামনের দিকে তাকাতে চান সবুজ-মেরুন কোচ। বলেন, “এখন আমাদের ছেলেদের যথাসম্ভব দ্রুত রিকভার করতে হবে ও এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে পরের ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে”। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় ফের বাধ সাধতে শুরু করেছে চোট-আঘাত সমস্যা। কয়েক দিন আগে তাঁর দলের চোটের তালিকা ফাঁকা হয়ে গেলেও ফের তাতে ঢুকে পড়েছেন মিডফিল্ডার কার্ল ম্যাকহিউ। সোমবারের ম্যাচে চোটের জন্য তাঁকে স্কোয়াডেই রাখা হয়নি। হাবাস জানালেন, “কার্ল ম্যাকহিউয়ের চোট রয়েছে। হয়তো এক সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে ওকে”। 

স্বদেশীয় প্রবীন কোচকে ফুটবলের কৌশলে কিস্তিমাত দেওয়ার পরে লোবেরা বলেন,  “এটিকে মোহনবাগান খুবই বিপজ্জনক দল। ওদের খুব ভাল ভাল স্ট্রাইকার রয়েছে। ওদের দলের ভারসাম্যও যথেষ্ট। তবে আমার মনে হয় আক্রমণ ও রক্ষণের মধ্যে ভারসাম্যের দিক থেকে আমরা আজ এগিয়ে ছিলাম বলেই ম্যাচটা জিতেছি। এটিকে মোহনবাগানের মতো একটা দলের বিরুদ্ধে গোল না খাওয়া ও গোল করতে পারাটা যথেষ্ট কৃতিত্বর ব্যাপার। তাই আমাদের দলের পারফরম্যান্সে আমি খুবই খুশি”।

এই জয়ের ফলে ১০ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা এটিকে মোহনবাগানের চেয়ে পাঁচ পয়েন্টের দূরত্ব তৈরি করে নিল মুম্বই। তিন নম্বর দল হায়দরাবাদ এফসি-র থেকে দশ পয়েন্ট এগিয়ে তারা। পাঁচ পয়েন্ট এগিয়ে গেলেও তাতে এখনই সন্তুষ্ট হতে রাজি নন লোবেরা। বাস্তববাদী কোচ বলেন, “আমরা এখন সবে মরশুমের অর্ধেকটা পেরিয়ে এসেছি। এই জয়টা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই। কিন্তু মারাত্মক কিছু নয়। এখনও দশটা ম্যাচ খেলতে হবে আমাদের। আরও কঠিন সময় আসছে। কখনও সাত দিনে, কখনও ন’দিনে তিনটে ম্যাচ খেলতে হচ্ছে। আমাদের এই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে হবে। আরও অনেক পরিশ্রম করতে হবে। লিগ শুরুর আগেও বলেছিলাম, এই মরশুমটা একেবারে অন্যরকম, বিশেষ ধরনের। এই পরিস্থিতি, পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়াটা মোটেই সোজা নয়। কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এটা। এখনও সেটা করে যেতে হবে অনেক দিন। আমাদের লক্ষ্য ট্রফি জয়, লিগের সেরা হওয়া। আমার মনে হয়, সব দলেরই সেটাই লক্ষ্য”।