মোহনবাগান ও এটিকে এফসি-র মৈত্রীচুক্তি নিয়ে খুশির হাওয়া সারা দেশের ফুটবল মহলে। প্রাক্তন ফুটবলার থেকে শুরু করে কোচ, বর্তমান ফুটবলার প্রায় সবারই ধারণা, ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যতের পক্ষে এটা খুবই ভাল খবর। বিশেষ করে আরও খুশি মোহনবাগানে খেলা প্রাক্তন তারকারা।

কিন্তু সমর্থকদের একাংশ এই চুক্তিতে তেমন খুশি হতে পারেনি বলেই শোনা যাচ্ছে। অনেকেই চিন্তিত, ১৩০ বছরের পুরনো ক্লাব মোহনবাগানের ঐতিহ্য নিয়ে। তাঁদের বক্তব্য, এই চুক্তির ফলে এই শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের ঐতিহ্যে আধুনিকতার আঁচড় লাগতে পারে। যে সংস্থা মোহনবাগানের এই নতুন সংষ্করণের ৮০ শতাংশ মালিকানা নিয়েছে, সেই আরপিএসজি-র কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা অবশ্য কথা দিয়েছেন, এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের গর্বে যাতে কোনও দাগ না লাগে, সে কথা মাথায় রাখা হবে। এ বার মোহনবাগানের দুই শীর্ষকর্তা দেবাশিস দত্ত ও সৃঞ্জয় বসুও বললেন, ক্লাবকে আধুনিকতার মোড়কে মুড়তেই এই সিদ্ধান্ত। এতে গর্ব কমবে তো না-ই, বরং আরও বাড়বে।

শনিবার মোহনবাগানের দুই শীর্ষকর্তা যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এসেছিলেন এটিকে এফসি বনাম এফসি গোয়া ম্যাচ দেখার জন্য। যে ম্যাচ এটিকে ২-০ গোলে জেতে। ম্যাচ দেখার ফাঁকে indiansuperleague.com-কে দেবাশিস বলেন, “মোহনবাগান গত ১৩০ বছর ধরে ভারতীয় ফুটবলের মহীরুহ হয়ে রয়েছে। এটিকে-ও আইএসএলের মাধ্যমে এদেশের ফুটবলের একটা বড় শক্তি হয়ে উঠেছে। মাত্র ছ’বছরের মধ্যে দু’বার আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। এ বারও শীর্ষে রয়েছে। আরপিএসজি যে পেশাদার দক্ষতায় ক্লাবটা চালাচ্ছে এবং তাদের যে পরিকল্পনা রয়েছে, তাতে আমরা ভেবে দেখলাম, বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি ওদের এই পেশাদার দক্ষতা ও মোহনবাগান নামক শক্তি যদি এক হয়ে যায়, তা হলে আমরা একসঙ্গে ফুটবল খেলাটাকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যেতে পারি। কারণ, পরবর্তী প্রজন্মের সমর্থকেরা আমাদের ক্লাবকে শুধু ভারতের নয়, এশিয়ারও অন্যতম সেরা ফুটবল শক্তি হিসেবে দেখতে চায়। এই দুই সংস্থা এক হয়ে যাওয়ার পরে এ বার আমরা শুধু ক্লাব ফুটবল নয়, ভারতীয় ফুটবলকেও পরবর্তী স্তরে নিয়ে যেতে পারি”।

মোহনবাগানের অপর শীর্ষকর্তা সৃঞ্জয় বলেন, “মোহনবাগান ক্লাব আসলে সমর্থকদের জন্য। এ রকম একটা ক্লাবের কর্পোরেট সহযোগিতার খুবই প্রয়োজন।  বিশেষ ভাবে কোনও ভাল ও বড় কিছু করতে চাইলে প্রচুর অর্থের জোগান থাকা অবশ্যই দরকার। সেটার জন্যই আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন ছিল। প্যাশন ও অর্থের এই মিশ্রণেই আশা করি, আমাদের ফুটবলকে পরবর্তী স্তরে পৌঁছে দিতে পারব। তা ছাড়া এটিকে এবং মোহনবাগান বরাবরই যুব ফুটবলের পৃষ্ঠপোষক। যুব ফুটবলের আরও উন্নতির মাধ্যমে আমরা মিলিত ভাবে ভবিষ্যতের জন্য ফুটবলার তৈরি করে দেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারি”।

দেবাশিস আরও বলেন, “১৮৮৯ থেকে মোহনবাগান ফুটবল খেলে আসছে দেশের ফুটবলকে সাহায্য করার উদ্দেশ্য নিয়ে। সেটা আমরা করেও এসেছি। বিশ্বফুটবল এখন আরও উঁচু স্তরে চলে গিয়েছে। তাই আমাদেরও এখন সেই জায়গায় পৌঁছতে হবে। আমাদের এখন মিলিত ভাবে এগোতে হবে যুব ফুটবলের উন্নতির জন্য। শুধু বাংলায় নয়, সারা দেশের সেরা প্রতিভাদের নিয়ে এসে তাদের তৈরি করব আমরা। যে নতুন ক্লাব হবে, তার ভবিষ্যতের জন্য খেলোয়াড় তৈরি তো করবই, তারা যাতে পরবর্তী স্তরের ফুটবলে দক্ষ হয়ে দেশের প্রতিনিধিত্বও করতে পারে, তাও সুনিশ্চিত করব আমরা”। 

গত বৃহস্পতিবার জানা যায়, আগামী বছর থেকে এটিকে ও মোহনবাগান— দুই দল একত্রিত হয়ে হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগে অংশগ্রহণ করবে। এটিকে এফসি-র মালিকপক্ষ আরপিএসজি-র হাতে থাকবে নতুন এই ক্লাবের ৮০ শতাংশ মালিকানা।  মোহনবাগান ফুটবল ক্লাব (ইন্ডিয়া) প্রাইভেট লিমিটেডের কাছে থাকবে বাকি ২০ শতাংশ।  দুই সংস্থা মিলিত হয়ে যে ক্লাব গঠিত হবে, তার নামে এটিকে ও মোহনবাগান দুই ব্র্যান্ডই থাকবে।

বাংলার দুই সেরা ফুটবলখেলিয়ে ক্লাবের এই মৈত্রীতে যে এ রাজ্যের ফুটবলে আরও সাফল্য আসবে, এমনই মনে করছে দেশের ফুটবল মহল। ভারতীয় ফুটবলে যখন উন্নতির জোয়ার আসতে চলেছে, দেশের ফুটবলকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগে যখন সারা দেশের ফুটবল প্রশাসক ও পৃষ্ঠপোষকেরা হাত মিলিয়েছেন, সেই সময়ে এই ঘটনা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।  এক সময় দশকের পর দশক ভারতীয় ফুটবলের মক্কা কলকাতা দেশের ফুটবলে আধিপত্যে করেছে। আশা করা যায়, বাঙালির ফুটবলের সেই সুদিন আবার ফিরে আসবে এই ঐতিহাসিক চুক্তির ফলে। ভারতীয় ফুটবলকেও আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে দুই সফল ক্লাবের এই মৈত্রীচুক্তি।