এ বারেই প্রথম ইন্ডিয়ান সুপার লিগে খেলতে চলেছে তারা। গতবার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে এ বার আইএসএলে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে কলকাতার মহমেডান স্পোর্টিং। প্রথমবারেই যে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়ে সবাইকে চমকে দেবে, এমন স্বপ্ন দেখছেন না দলের খেলোয়াড়, কোচেরা। কিন্তু প্রথম আইএসএলে ভাল ফুটবল খেলতে চান দলের কোচ আন্দ্রেই চেরনিশভ, যাতে সমর্থকেরা হতাশ না হন। 

রাশিয়ান কোচ মনে করেন, সাফল্য আসুক বা না আসুক, ভাল ফুটবল উপহার দিতে হবে তাদের, যাতে ফুটবলপ্রেমীদের এমন ধারণা হয় যে, তাঁরা ভাল ফুটবল খেলতে পারেন। 

কলকাতায় আইএসএল আয়োজিত মিডিয়া ডে-তে দলের তিন ডিফেন্ডারকে নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হয়ে চেরনিশভ বলেন, “প্রতি ম্যাচেই লড়াই করতে হবে। আমাদের দলে অনেক তরুণ খেলোয়াড় আছে। তাদের উপলব্ধি করতে হবে, তারা দেশের সবচেয়ে বড় লিগে খেলার সুযোগ পেয়েছে। এই সুযোগ এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে তাদের। প্রথম মরশুমেই হয়তো বিশাল কিছু করতে পারব না। কিন্তু মনে ছাপ ফেলার মতো পারফরম্যান্স দেখাতে হবে আমাদের, যাতে অন্তত ৫-৬ নম্বরেও থাকতে পারি”।

তাড়াহুড়ো না করে প্রতি ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চান মহমেডান কোচ। বলেন, “একটা ম্যাচে খেললেই বোঝা যাবে আমরা কোথায় এসে পড়েছি। আমরা পেশাদার। শুধু আনন্দের জন্য খেলি না। আমাদের কাছে সাফল্য খুবই জরুরি। এবং আমরা সিরিয়াস ফুটবল খেলি। সে জন্য আমাদের পুরোপুরি প্রস্তুত হতে হবে। সমর্থকদের বোঝাতে হবে কতটা শক্তিশালী হয়ে আইএসএলে নেমেছি আমরা”।

তিনি বেশি খুশি ক্লাবের সমর্থকদের জন্য। কলকাতার অপর দুই প্রধানের মতো মহমেডানেরও লক্ষাধিক সমর্থক রয়েছে সারা দেশজুড়ে। তাদের উদ্দেশ্যে কোচ বলেন, “আইএসএলের অঙ্গ হতে পেরে ভাল লাগছে। গত মরশুমে আই লিগে আমরা দারুন খেলেছি। গত মরশুমে আমাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যই ছিল। তবে আমি আরও বেশি খুশি আমাদের সমর্থকদের জন্য। তারা আমাদের পাশে থেকেছে সব সময়। এ বার তারা আমাদের বিরুদ্ধে ভাল ভাল খেলোয়াড়দের খেলতে দেখতে পারবে। সমর্থকেরা ট্রফি চাইবে এটাই স্বাভাবিক। সেটাই হওয়া উচিত। কিন্তু সব ম্যাচে তো জেতা যায় না। তবে ভাল খেলা যায়। ফুটবল এ রকমই। সমর্থকদের এটাই বোঝাতে হবে যে আমরা ভাল ফুটবল খেলতে পারি। তারা আমাদের প্রেরণা জোগায়। তার বদলে আমাদের কিছু ফিরিয়েও দিতে হবে তাদের। আমাদের সব দিক থেকেই ভাল হতে হবে। শারীরিক, মানসিক, কৌশল সব দিক থেকেই। এটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা প্রস্তুতির বেশি সুযোগ পাইনি। মাসখানেক সময়ের মধ্যে একটা শক্তিশালী দল গড়ে তোলা মোটেই সোজা নয়। ২-৩ মাস লাগে। তবে আমাদের খেলোয়াড়রা ভাল। তারা ভাল ফুটবল খেলবে”। 

আই লিগের সঙ্গে আইএসএলের তফাৎ যে অনেক, তা স্বীকার করে নিয়ে চেরনিশভ বলেন, “আই লিগ আর আইএসএলের মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে। এমন অনেক ভাল ভাল দেশীয় ও বিদেশী খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে খেলতে হবে আমাদের, যারা নিয়মিত জাতীয় দলের হয়ে খেলে। কেরালার মতো ফুটবল পাগল রাজ্যে গিয়ে ৪০-৫০ হাজার সমর্থকদের সামনে খেলতে হবে। এক নতুন অভিজ্ঞতা হতে চলেছে আমাদের। আইএসএল অনেক দীর্ঘ এবং শক্তিশালী দলে ভরা এক লিগ। রাশিয়ান লিগ, ম্যাসিডোনিয়ান লিগেও কাজ করে এসেছি আমি। আইএসএল তাদের মতোই শক্তিশালী লিগ। সে জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে”। 

আইএসএলের প্রথম ম্যাচেই তাদের প্রতিপক্ষ সদ্য ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন নর্থইস্ট ইউনাইটেড। তবে সেই ম্যাচ নিয়ে এখনই ভাবনাচিন্তা করে উঠতে পারেননি বলে জানালেন সাদা-কালো ব্রিগেডের হেডস্যার। বলেন, “এই ম্যাচ নিয়ে এখনও ভাবনা শুরু করিনি। এখন দলটাকে তৈরি করার দিকে মন দিয়েছি। তবে প্রথম ম্যাচ সব সময়ই স্পেশ্যাল। আইএসএলের প্রথম ম্যাচ জিততে পারলে সেটা ঐতিহাসিক হবে। চার পাঁচটা ম্যাচ খেলার পর হয়তো আমাদের কাজটা কিছুটা সোজা হবে। কিন্তু প্রথম ম্যাচ সব সময়ই কঠিন”।

আইএসএলে যে যথেষ্ট চাপে থাকবেন, তা স্বীকার করে নিয়ে কোচ বলেন, “চাপ তো সব সময়ই থাকে। ফুটবলে এটা নতুন কিছু নয়। চাপ সামলাতে হবে আমাদের। এই চাপটা থাকা আবার ভালও। চাপ সামলাতে ভালও লাগে। কারণ, সে জন্য নিজেদের শক্তিশালী করে তুলতে হয়”। 

বাংলার ডিফেন্ডার সামাদ আলি মল্লিক তাকিয়ে আছেন জোড়া ডার্বির দিকে। বলেন, “এ বছর আমাদের দল খুব ভাল হয়েছে। আইএসএলে খেলব, ভাল লাগছে। এখানে আমাদের অনেক সমর্থক। এ বছর দুটো বড় ম্যাচ খেলতে হবে আমাদের। সেগুলো জেতার চেষ্টা করব। বিশেষ করে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে মুখিয়ে আছি। সেরা ছয়ে থাকাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য”। 

আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আইএসএলে তাদের চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন হতে চলেছে, তা স্বীকার করে নিলেন সামাদও। বলেন, “আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে একটা চ্যালেঞ্জ তো আমাদের সামনে অবশ্যই আছে। দুটো আলাদা লিগ। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। কোচ যে ভাবে আমাদের পরামর্শ দিচ্ছে, সে ভাবেই এগোচ্ছি। সমর্থকেরা যে ভাবে আমাদের পাশে ছিলেন, সে ভাবেই থাকুক, এটাই আমরা চাই”।

ঘানার ২৯ বছর বয়সী ডিফেন্ডার জোসেফ অ্যাডজেই ভারতের এক নম্বর ফুটবল লিগে খেলতে পেরে রোমাঞ্চিত। বলেন, “আমি খুবই রোমাঞ্চিত। সামাদ খুব ভাল ও অভিজ্ঞ ফুটবলার। ওর সঙ্গে খেলতে পারলে খুবই ভাল লাগবে। আইএসএলে প্রচুর সমর্থক ও দর্শকের সামনে খেলতে হবে আমাদের, এটা দারুন একটা অভিজ্ঞতা হতে চলেছে”। 

ডিফেন্ডার হিসেবে দল যাতে যথাসম্ভব কম গোল খায়, তা দেখার দায়িত্ব তাঁরও। তবে গোল না খাওয়াটাই তাঁর একমাত্র কাজ নয় বলে জানান জোসেফ। বলেন, “ক্লিন শিট বজায় রাখাই একমাত্র লক্ষ্য নয় আমাদের। দলের ভাল খেলাটাই আসল কথা। আমাদের ভাল খেলার আত্মবিশ্বাস আছে। আমরা একে অপর মোটিভেট করি। পরীক্ষা যতই কঠিন হোক, আমরা নিজেদের সেরাটা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করব”।  

আইএসএলে তাঁর বড় স্বপ্ন, “মুম্বই সিটি এফসি-র ঘরের মাঠে গিয়ে ওদের হারাতে চাই। ওরা আমাদের ডুরান্ড কাপে হারিয়েছিল। এ বার প্রতিশোধ নিতে চাই”। 

অপর ডিফেন্ডার জোডিংলিয়ানা রালতে মহমেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবে খেলার সুযোগ পেয়ে খুশি ও গর্বিত। বলেন, “আমি এই ক্লাবে খেলতে পেরে খুবই খুশি। গতবার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে। অনেক পরিশ্রম করে এখানে পৌঁছেছি আমরা। আশা করি, এই মরশুমেও ভাল খেলব”। 

ডার্বির দিকেও তাকিয়ে এই মণিপুরী ফুটবলার। বলেন, “কলকাতা ডার্বি ভারতের সবচেয়ে বড় ডার্বি। কলকাতার দলের মধ্যে আইএসএলে মোহনবাগান বরাবরই ভাল খেলে এসেছে। আমরা ডার্বি খেলার জন্য মুখিয়ে আছি। আশা করি, নিজেদের সেরাটা দিয়ে সমর্থকদের আনন্দ দিতে পারব”। কলকাতায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের পাশাপাশি ও কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের ভরা গ্যালারির সামনেও খেলতে চান তিনি।