এএফসি কাপ: বসুন্ধরা কিংসের ঘরের মাঠে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট
মোহনবাগান এসজি-কে এই ম্যাচে জিততেই হবে। না হলে এই গ্রুপ থেকে পরবর্তী পর্যায়ে ওঠা নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে তারা। চলতি ইন্ডিয়ান সুপার লিগে যদিও তারা চারটির মধ্যে চারটি ম্যাচেই জিতেছে। লিগের আর কোনও দলেরই একশো শতাংশ সাফল্য নেই এখন পর্যন্ত। কিন্তু এএফসি কাপে পরিস্থিতিটা সে রকম নয়।
বিজয়া দশমীর রাতে বসুন্ধরা কিংসের কাছে ২-২-এ আটকে যাওয়ার পরে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের রাস্তা কিছুটা হলেও কঠিন হয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের। তার ওপর চোট-আঘাতের সমস্যায় নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার আনোয়ার আলি আর খেলতে পারছেন না। আশিক কুরুনিয়ান তো আগেই দলের বাইরে চলে গিয়েছেন। এ মরশুমে তাঁর মাঠে ফেরার সম্ভাবনা কম। এই অবস্থায় তারা ফের বসুন্ধরা কিংসের মুখোমুখি হতে চলেছে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। ঢাকার কিংস এরিনায় এই ম্যাচে বসুন্ধরা কিংস কলকাতার দলের বিরুদ্ধে তাদের প্রথম জয়ের জন্য মরিয়া। কারণ, এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পেলে তারা গ্রুপ শীর্ষে তাদের প্রতিদ্বন্দীদের ধরে ফেলবে।
মোহনবাগান এসজি-কে তাই এই ম্যাচে জিততেই হবে। না হলে এই গ্রুপ থেকে পরবর্তী পর্যায়ে ওঠা নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে তারা। চলতি ইন্ডিয়ান সুপার লিগে যদিও তারা চারটির মধ্যে চারটি ম্যাচেই জিতেছে। লিগের আর কোনও দলেরই একশো শতাংশ সাফল্য নেই এখন পর্যন্ত। কিন্তু এএফসি কাপে পরিস্থিতিটা সে রকম নয়।
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে তারা বসুন্ধরা কিংসের বিরুদ্ধে ২-২ ড্র করে। সে দিন মোহনবাগানের পক্ষে দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ও আশিস রাই গোল করেন। বসুন্ধরা কিংসের পক্ষে ডোরি ও রবিনহো গোল করে সমতা ফেরান। দু’বার এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসতে পারেনি গত আইএসএল-এর কাপ চ্যাম্পিয়নরা। মোহনবাগান এসজি এই মরশুমে টানা আটটি ম্যাচে জয়ের পর সে দিনই প্রথম ড্র করে।
সে দিন অন্য ম্যাচে মলদ্বীপের মাজিয়া এসআরসি-কে ৬-১-এ হারায় ওডিশা এফসি। ফলে তিন ম্যাচে সাত পয়েন্ট পেয়ে মোহনবাগান এসজি এখন গ্রুপশীর্ষে। বসুন্ধরা কিংস এক পয়েন্ট পেয়ে উঠে আসে দুই নম্বরে। আর ওডিশা এফসি তিনে। মঙ্গলবার ওডিশা এফসি মালে-তে খেলবে মাজিয়া এফসি-র বিরুদ্ধে। ফর্মে ফিরে আসা ওডিশা যদি সেই ম্যাচে মাজিয়াকে আবার হারাতে পারে, তা হলে তাদের পয়েন্ট সংখ্যা দাঁড়াবে ছয়। অর্থাৎ একই সঙ্গে এই দুই দল মোহনবাগানের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলবে। এই চাপ এড়াতে মঙ্গলবারের ম্যাচ জেতা ছাড়া কোনও উপায় নেই মোহনবাগানের সামনে।
কিন্তু কী ভাবে? গত ম্যাচে যে ভাবে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল বসুন্ধরা, তাতে তারা এই ম্যাচে আরও কড়া চ্যালেঞ্জ ছোড়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। সে জন্যই এ দিন ঢাকায় সাংবাদিকদের কাছে ফেরান্দো স্বীকার করে নেন, “এএফসি কাপ টুর্নামেন্টই বেশ কঠিন। আমাদের কাছে কালকের ম্যাচটাও যথেষ্ট কঠিন। বাংলাদেশকে সে ভাবে না জানলেও এটুকু জানি যে বসুন্ধরা এখানকার চ্যাম্পিয়ন দল এবং ভাল দল। এই দলের অনেকেই জাতীয় দলে খেলে। আমরা প্রতিপক্ষকে সন্মান করি। তবে আমাদের এই ম্যাচে জিততেই হবে এবং সে জন্য সেরাটা দিতেই হবে”।
গত ম্যাচে শুরুতে মোহনবাগানের দাপটই ছিল বেশি। বল দখল এবং গোলে শটের দিক থেকে তারাই এগিয়ে ছিল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশের সেরা দলটি এবং পাল্টা চাপে ফেলে দেয় কলকাতার দলকে। ম্যাচের শেষে দেখা যায় দুই দলই চারটি করে শট গোলে রাখে। মোট শটে মোহনবাগান সামান্য (১৪-১২) এগিয়ে ছিল। বল দখলেও মোহনবাগান এমন কিছু আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। ৫৩-৪৭-এ এগিয়ে ছিল তারা। ক্রসের দিক থেকে সামান্য এগিয়ে ছিল বসুন্ধরা (১৬-১৪)। বোঝাই যাচ্ছে, সে দিন কেউ কাউকে একটুও জমি ছাড়তে রাজি ছিল না।
মঙ্গলবারও সে রকমই একটা ম্যাচ হতে চলেছে, যেখানে বসুন্ধরা কিংসের সমর্থকই থাকবেন গ্যালারির বেশির ভাগ জুড়ে। এএফসি-র ক্লাব টুর্নামেন্টে যেহেতু ছ’জন করে বিদেশি মাঠে নামানোর নিয়ম চালু করা হয়েছে, তাই মোহনবাগান তাদের ছয় বিদেশিকেই দলে রাখতে পারে। তবে গত ম্যাচে মোহনবাগান এসজি প্রথম এগারোয় পাঁচ বিদেশিকে রাখে। ডিফেন্ডার ব্রেন্ডান হ্যামিল ও হেক্টর ইউস্তে, মাঝমাঠে হুগো বুমৌস এবং দুই স্ট্রাইকার পেট্রাটস ও জেসন কামিংস। এছাড়াও আনোয়ার আলি, লিস্টন কোলাসো, আশিস রাই, সহাল আব্দুল সামাদ ও গ্ল্যান মার্টিন্স ছিলেন। গোলে যথারীতি বিশাল কয়েথ।
কিন্তু এই ম্যাচে আনোয়ারকে পাবে না সবুজ-মেরুন বাহিনী। বসুন্ধরার বিরুদ্ধে ম্যাচেই তাঁর পায়ে চোট লাগে এবং তিনি আপাতত অন্তত মাস খানেকের জন্য মাঠের বাইরে চলে গিয়েছেন বলে মনে করছেন কোচ ফেরান্দো। তাঁর জায়গায় সম্ভবত খেলবেন শুভাশিস বোস। তবে আনোয়ারকে না পাওয়াটা বড় সমস্যা বলে মানতে চান না কোচ। তাঁর মতে, “ফুটবলে তো চোট হয়েই থাকে। আমি খুশি যে আমাদের দলে অনেক ভাল ভাল খেলোয়াড় রয়েছে, যারা যে কোনও সময়ে মাঠে নামার জন্য তৈরি। তাই কারও চোট হলে তার বিকল্প খুঁজে পাওয়া নিয়ে তেমন সমস্যা হয় না”।
অ্যাওয়ে ম্যাচ বলে তেমন কোনও অসুবিধা হবে না বলেই মনে করেন দলের অন্যতম অধিনায়ক শুভাশিস বোস। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “এখানে আমরা জেতার মানসিকতা নিয়েই খেলতে এসেছি। জানি এটা অ্যাওয়ে ম্যাচ। এখানে প্রতিপক্ষকেই বেশিরভাগ দর্শক সমর্থন করবেন। তবে অ্যাওয়ে ম্যাচে আমাদেরও সমর্থক কিছু থাকে। আর দেশে বা শহরে যারা আমাদের খেলা দেখছেন, তাদের কথা ভেবেও মাঠে নামব। তাদের জন্য আমাদের জিততে হবে। তাই নিজেদের সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করব এখানে”।
অ্যাওয়ে ম্যাচকে অবশ্য কঠিন বলেই মনে করেন কোচ ফেরান্দো। তিনি বলেন, “বসুন্ধরা যে তাদের ঘরের মাঠে শক্তিশালী, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। যে কোনও টুর্নামেন্টেই অ্যাওয়ে ম্যাচ হোম ম্যাচের চেয়ে কঠিন হয়। তবে আমাদের একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। যে পরিকল্পনা কার্যকরী করলে আমরা তিন পয়েন্ট পেতে পারি। এটাই আমাদের মানসিকতা। এখন আমাদের গ্রুপ পর্বের শেষ তিন ম্যাচে জিততেই হবে। বসুন্ধরারও পরের রাউন্ডে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তাই আমাদের এই ম্যাচে জিততেই হবে”।
বসুন্ধরার ব্রাজিলীয় উইঙ্গার রবিনহো মোহনবাগানের রক্ষণের কাছে ত্রাস হয়ে উঠতে পারেন। ড্রিবলিংয়ে ও মার্কারকে ফাঁকি দেওয়ার ব্যাপারে ইনি বিশেষজ্ঞ। বসুন্ধরার গতিময় ওঠানামায় এই উইঙ্গার নেতৃত্বও দেন প্রায়ই। এ ছাড়া গোলে জোরালো শট নেওয়ার ব্যাপারেও তিনি যথেষ্ট দক্ষ। রবিনহো ছাড়াও ইয়ালদাশেভ, গফুরভ, দিদিয়ে ব্রসু, মিগুয়েল ফিগুয়েরা ও ডোরি-কেও নজরে রাখতে হবে পেট্রাটসদের।
এ পর্যন্ত তিনবারের সাক্ষাতে ওপার বাংলার সেরা দল কখনও হারাতে পারেনি এ পার বাংলার ঐতিহ্যবাহী ক্লাবকে। মঙ্গলবার সেই চিরআকাঙ্খিত জয় পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে বসুন্ধরা, এটাই ধরে নেওয়া যায়। তাদের এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা কী ভাবে করে আইএসএলের সেরারা, সেটাই দেখার।
এএফসি কাপ, ২০২৩-২৪ গ্রুপ লিগ
ম্যাচ- বসুন্ধরা কিংস বনাম মোহনবাগান এসজি
ভেনু- কিংস এরিনা, ঢাকা
কিক অফ- ৭ নভেম্বর, সন্ধ্যা ৭.৩০
সম্প্রচার- ফ্যানকোড অ্যাপ













