সুপার কাপ: প্রতিপক্ষদের হারানো ছাড়া কোনও লক্ষ্য নেই দুই প্রধানের
নক আউট পর্বে উঠতে গেলে মঙ্গলবার জেতা ছাড়া উপায় নেই ইস্টবেঙ্গলের। কাপ জয়ের দিকে পা বাড়াতে বাগান-বাহিনীরও চাই তিন পয়েন্ট।
সুপার কাপের শুরুতে পয়েন্ট অর্জন করলেও কলকাতার দুই প্রধান কিন্তু কঠিন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তবে প্রথম ম্যাচের পর ইস্টবেঙ্গল এফসি -র চ্যালেঞ্জ মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট-এর চেয়ে একটু বেশিই কঠিন হয়ে পড়েছে।
গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে আইএসএলের চেনা প্রতিপক্ষ চেন্নাইন এফসি-কে হারিয়ে যেখানে তিন পয়েন্ট অর্জন করে গ্রুপ শীর্ষে রয়েছে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, সেখানে আই লিগের ক্লাব ডেম্পো এসসি-র বিরুদ্ধে ড্র করে এক পয়েন্ট নিয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে লাল-হলুদ বাহিনী।
ফলে নক আউট পর্বে উঠতে গেলে মঙ্গলবার তাদের দ্বিতীয় ম্যাচে জেতা ছাড়া উপায় নেই ইস্টবেঙ্গলের। শুধু তা-ই নয়, শুক্রবার গ্রুপের শেষ ম্যাচ কলকাতা ডার্বিতেও জিততে হবে তাদের। কারণ, গ্রুপ থেকে একটিই দল সেমিফাইনালে উঠবে।
অন্যদিকে, প্রথম ম্যাচে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও যদি ডেম্পোকে হারাতে পারে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, তা হলে সেমিফাইনালের দিকে অনেকটা এগিয়ে যাবে সবুজ-মেরুন বাহিনী। তা হলে শুক্রবারের ম্যাচেও অনেক চাপমুক্ত হয়ে সামলাতে পারবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের।
জয়ই একমাত্র উপায় লাল-হলুদের
মঙ্গলবার জিএমসি অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গলের প্রতিপক্ষ চেন্নাইন এফসি, গত আইএসএলে যাদের হারিয়েছিল কলকাতার লাল-হলুদ বাহিনী। প্রথম লিগে ২-০-য় জেতার পর ফিরতি লিগে অবশ্য দক্ষিণের দলের কাছে ০-৩-এ হারে তারা। আইএসএল টেবলে ইস্টবেঙ্গলেরও (৯) নীচে ছিল চেন্নাইন এফসি (১১)। তাই এ বার ভারতীয় কোচ ক্লিফোর্ড মিরান্ডার হাতে দলের দায়িত্ব দিয়ে নতুন ভাবে শুরু করতে চায় চেন্নাইন এফসি। তবে দলে কোনও বিদেশি ফুটবলার নিয়ে সুপার কাপে খেলছে না তারা।
অন্য দিকে, ইস্টবেঙ্গল শিবিরে রয়েছেন ছয় বিদেশি। ডিফেন্ডার কেভিন সিবিল, মিডফিল্ডার মিগেল ফিগেরা, সল ক্রেসপো, মহম্মদ রশিদ এবং দুই স্ট্রাইকার হিরোশি ইবুসুকি ও হামিদ আহদাদ। তবে গত শনিবার সুপার কাপের প্রথম ম্যাচে এত জন বিদেশি নিয়েও পুরোপুরি দেশীয় তরুণদের নিয়ে গড়া দল ডেম্পো এসসি-কে হারাতে পারেনি। ম্যাচের প্রায় শেষ পর্যন্ত ২-১-এ এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও ৮৯ মিনিটের মাথায় গোল খেয়ে দুই পয়েন্ট খোয়ায় তারা।
The boss' pre-match thoughts before #CFCEBFC. 💭#JoyEastBengal #AIFFSuperCup | Oscar Bruzon pic.twitter.com/zFNhuTPLLs
— East Bengal FC (@eastbengal_fc) October 27, 2025
তবে সে দিনের ম্যাচে আধিপত্য বজায় রেখেছিল ইস্টবেঙ্গলই। গোলের সুযোগও প্রচুর তৈরি করেছিল তারা। সেগুলি ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে অনেক আগেই ম্যাচ শেষ করে দিতে পারত তারা। কিন্তু প্রচুর গোলের সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হয় তাদের। মঙ্গলবার চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে সেই খেলা বজায় রাখতে পারলে এবং গোলের সুযোগগুলিকে আরও ভাল ভাবে কাজে লাগাতে পারলে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে লাল-হলুদের।
প্রথম ম্যাচে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের বিরুদ্ধে কার্যত মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেনি চেন্নাইন এফসি। বৃষ্টির জন্য মাঠে জল জমে যাওয়ায় বাগান ফুটবলাররা খেলায় তেমন গতি আনতে পারেননি বলে তাদের আটকাতে সুবিধা হয় চেন্নাইনের। তা সত্ত্বেও দু’গোলে হারে তারা। আবহাওয়া ও মাঠ ঠিক থাকলে হয়তো আরও বেশি গোল খেত তারা। এই দলকে চাপে রাখতে পারলে তিন পয়েন্ট ঘরে তোলা সম্ভব ইস্টবেঙ্গলের।
ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ
প্রথম ম্যাচেই মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট বুঝিয়ে দিয়েছে, কাপ জয়ের লক্ষ্য নিয়েই এই টুর্নামেন্টে খেলতে এসেছে তারা। দুরন্ত ফর্মে রয়েছে তারা। প্রথম ম্যাচে প্রাকৃতিক বাধা না থাকলে হয়তো আরও বেশি গোলে জিতে গোলপার্থক্য বাড়িয়ে রাখতে পারত তারা। মঙ্গলবার ফতোরদায় একটু ভাল আবহাওয়া ও মাঠ পেলে ডেম্পোকে হয়তো সহজেই হারাতে পারে তারা।
ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ২-২ ড্র করলেও ডেম্পো খুব একটা আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। তবে তারা মাঝে মধ্যে এমন বিপজ্জনক আক্রমণে ওঠে যা, যে কোনও বড় প্রতিপক্ষকেও সমস্যায় ফেলে দিতে পারে। মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট রক্ষণকে তাই সচেতন থাকতে হবে। তাদের প্রথম ম্যাচে চেন্নাইন এফসি গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করে। গোলকিপার বিশাল কয়েথ অবধারিত গোল বাঁচিয়ে দলকে বিপদের হাত থেকে বাঁচান।
Matchday 𝘮𝘪𝘯𝘶𝘴 𝘰𝘯𝘦. Energy levels 𝗽𝗹𝘂𝘀 𝗼𝗻𝗲. ⚡🔋#MBSG #JoyMohunBagan #আমরাসবুজমেরুন #AIFFSuperCup #MBSGDSC pic.twitter.com/umvfVRlnJi
— Mohun Bagan Super Giant (@mohunbagansg) October 27, 2025
ডেম্পোকে সে রকম সুযোগ দিলে যে তারা তা কাজে লাগাতে প্রস্তুত, তা ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচেই তারা প্রমাণ করেছে। তারাও বিদেশি ফুটবলার ছাড়াই এই টুর্নামেন্টে খেলতে নেমেছে। প্রথমে রিয়েল কাশ্মীরের খেলার কথা ছিল। কিন্তু তারা হঠাৎ নাম প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ডেম্পো এসসি-কেই সুপার কাপে খেলার আমন্ত্রণ জানায় আয়োজক সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। খুব বেশিদিন প্রস্তুতির সুযোগ না পেলেও দলের তরুণ ফুটবলাররা যে নিজেদের প্রমাণ করতে মরিয়া, তা প্রথম ম্যাচেই বুঝিয়ে দিয়েছেন।
এই গ্রুপ থেকে কোন দল সেমিফাইনালে উঠতে পারে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে মঙ্গলবারের দুই ম্যাচে। ইস্টবেঙ্গল যদি জিততে না পারে, তা হলে তারা শেষ চারে ওঠার লড়াইয়ে যে অনেকটাই পিছিয়ে পড়বে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট জয়হীন থাকলে এই গ্রুপের লড়াই জমজমাট হয়ে উঠবে। দুই প্রধানই এ দিন জয়ের হাসি মুখে নিয়ে মাঠ ছাড়লে অবশ্য শুক্রবারের কলকাতা ডার্বির দামামা বেজে উঠবে সেই রাতেই।













