ডুরান্ড কাপ: ডায়মন্ড হারবারের বিরুদ্ধে পাঁচ-তারা জয়ে শেষ আটে বাগান বাহিনী
কিবু ভিকুনার দলকে এ দিন কৌশলে মাত করেন তাঁরই স্বদেশীয় বাগান-বাহিনীর কোচ হোসে মোলিনা।

গত দুই ম্যাচে দশ গোল করা নবাগত ডায়মন্ড হারবার এফসি-কে পাঁচ গোল দিল ইন্ডিয়ান সুপার লিগে জোড়া খেতাব জয়ী ও গতবারের ডুরান্ড কাপ ফাইনালিস্ট মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ৫-১-এ জিতে চলতি ডুরান্ড কাপের শেষ আটে পৌঁছে গেল তারা।
এ মরশুমে এ দিনই প্রথম মাঠে দেখা যায় সবুজ-মেরুন শিবিরের দুই অস্ট্রেলীয় তারকা জেমি ম্যাকলারেন ও জেসন কামিংসকে। মরশুমের প্রথম ম্যাচেই ভাল পারফরম্যান্স দেখানোর পাশাপাশি একটি করে গোলও পান তাঁরা। গত দুই ম্যাচে দু’টি করে গোল পাওয়া লিস্টন কোলাসো এ দিন ফের পেনাল্টি থেকে গোল পান। এ ছাড়া সহাল আব্দুল সামাদও গোল পান এদিন, দু’টি গোলে অ্যাসিস্টও করেন তিনি। তবে সবার আগে গোলের খাতা খোলেন অনিরুদ্ধ থাপা।
একটি গোল শোধ করেন ডায়মন্ড হারবারের স্লোভেনিয়ান তারকা লুকা মাজেন। ম্যাচের কিছু কিছু সময়ে তারা ভাল খেলার চেষ্টা করলেও ধারবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি। মোহনবাগানের প্রাক্তন স্প্যানিশ কোচ কিবু ভিকুনার দলকে এ দিন কৌশলে মাত করেন তাঁরই স্বদেশীয় বাগান-বাহিনীর বর্তমান কোচ হোসে মোলিনা। সারা ম্যাচে যেখানে চারটি শট গোলে রাখে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, সেখানে একটির বেশি শট গোলে রাখতে পারেনি ডায়মন্ড হারবার।
শুরু থেকেই এ দিন প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা করে ডায়মন্ড হারবার। তবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট যখন পাল্টা আক্রমণে উঠতে শুরু করে, তখন তারা উল্টে চাপে পড়ে যায়। তবে প্রথম ১৫ মিনিটে কোনও পক্ষই গোলের ভাল সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।
ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় প্রথম সুবর্ণ সুযোগটি পান জেমি ম্যাকলারেন, কিন্তু তাঁর অবধারিত গোলের শট দুর্দান্ত দক্ষতায় সেভ করেন সুশান্ত মালিক। এর চার মিনিট পরেই ফের সুযোগ আসে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কাছে। এ বার সেই সুযোগ হাতছাড়া করেননি অনিরুদ্ধ থাপা। সহালের দেওয়া পাসে বক্সের মাথা থেকে বাঁক খাওয়ানো শট নেন থাপা, যা গোলকিপারকে পরাস্ত করে জালে জড়িয়ে যায় (১-০)।
তবে সবুজ-মেরুন বাহিনীর এই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই, ২৪ মিনিটের মাথায় সমতা আনেন ডায়মন্ড হারবারের তারকা লুকা মাজেন। বাগান-রক্ষণের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে মাজেন যখন ঢুকে পড়েন প্রতিপক্ষের গোল এরিয়ায়, তখন বিশাল কয়েথ ছাড়া আর কেউই ছিলেন না তাঁর সামনে। অভিজ্ঞ স্লোভেনিয়ান এই অবস্থা থেকে অনেক গোল করেছেন। তাই এই সুযোগ পেয়ে ভুল করেননি, গোলে বল ঠেলে দেন (১-১)।
সমতা আসার পর থেকে দুই দলই ফের ব্যবধান তৈরির মরিয়া চেষ্টা শুরু করে। এই দুই দলেরই রক্ষণ বিভাগকে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়। উত্তেজনাও ক্রমশ বাড়তে থাকে। ৩৫ মিনিটের মাথায় এই লক্ষ্যে সফল হন জেমি ম্যাকালারেন। এ বারও ডায়মন্ড হারবারের রক্ষণের ভুল কাজে লাগিয়ে গোল পেয়ে যান তিনি (২-১)। এই ব্যবধান নিয়েই বিরতিতে যায় গতবারের ফাইনালিস্টরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই জোড়া উপহার পেয়ে যায় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। ৫০ মিনিটের মাথায় গোলমুখী লিস্টন কোলাসো ঠেলে ফেলে দেন ডায়মন্ড ডিফেন্ডার নরেশ সিং। যার জেরে পেনাল্টির বাঁশি তো বেজেই ওঠে, এমনকী নরেশকে লাল কার্ডও দেখানো হয়। এই পেনাল্টি থেকে গোল করতে কোনও ভুল করেননি কোলাসো (৩-১)। চলতি ডুরান্ড কাপে এই নিয়ে পাঁচ গোল করলেন তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ফের পিছিয়ে পড়ায় কিছুটা হতাশা দেখা যায় ডায়মন্ড হারবারের ফুটবলারদের মধ্যে। এই সময় থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ নিয়ে নেয় আইএসএল চ্যাম্পিয়নরাই। ৬১ মিনিটের মাথায় কোলাসোর অসাধারণ একটি গোলমুখী শট বাঁচিয়ে দলকেও বাঁচান গোলকিপার সুশান্ত।
তবে ৬৪ মিনিটের মাথায় গোলের সামনে থেকে নেওয়া সহালের শট আটকাতে পারেননি তিনি। কোলাসো, কামিংস ও সহালের ত্রয়ী নিজেদের মধ্যে নিখুঁত পাস খেলে এই সুযোগটি তৈরি করেন। কোলাসোর কাছ থেকে বল পেয়ে বক্সের বাঁদিকে কামিংসকে বল দিয়ে গোল লাইনের দিকে এগিয়ে যান সহাল। দুই ডিফেন্ডারকে ধোঁকা দিয়ে নিখুঁত লো ক্রসে সহালের কাছে বল পাঠান কামিংস। সহালের প্রথম শট সুশান্ত আটকে দিলেও ফিরতি বল জালে জড়িয়ে দিতে ভুল করেননি কেরলের তারকা (৪-১)।
ওই গোলের পরই মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের জয় অর্ধেক নিশ্চিত হয়ে যায়। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগে তা সুনিশ্চিত করেন এই মরশুমে প্রথম মাঠে নামা অস্ট্রেলীয় তারকা কামিংস। এই গোলেও অ্যাসিস্ট করেন সহাল। তাঁরই পাস পেয়ে বক্সের ডি-এর মাথা থেকে সোজা গোলে শট নেন কামিংস এবং তাঁর গোলার মতো শটের নাগালও পাননি গোলকিপার সুশান্ত (৫-১)। এই গোলের পরে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি গত দুই ম্যাচে দশ গোল করা ডায়মন্ড হারবার।