ডুরান্ড কাপ: নবাগত হামিদের গোলে নামধারি-কে হারিয়ে শেষ আটে ইস্টবেঙ্গল
এক ঝাঁক গোলের সুযোগ পেয়েও সেই সুযোগগুলি কাজে লাগাতে না পারায় গোলের ব্যবধান বাড়াতে পারেনি লাল-হলুদ বাহিনী।

ডুরান্ড কাপের গ্রুপ ‘এ’ থেকে শীর্ষস্থানীয় দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা পাকা করে ফেলল গতবারের কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট ইস্টবেঙ্গল এফসি। বুধবার কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে তারা পাঞ্জাবের নামধারি স্পোর্টস অ্যাকাডেমিকে ১-০-য় হারিয়ে শেষ আটে জায়গা করে নিল লাল-হলুদ বাহিনী।
সারা ম্যাচে রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে এ দিন জয় পায় লাল-হলুদ বাহিনী। এক ঝাঁক গোলেরও সুযোগ পায় তারা। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় গোলের ব্যবধান বাড়াতে পারেনি নাওরেম মহেশ বাহিনী। যেহেতু নতুন কম্বিনেশন নিয়ে মাঠে নেমেছিল তারা, ফলে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ারও সমস্যা হয়। বহু চেষ্টার পর ৬৮ মিনিটের মাথায় লাল-হলুদ জার্সিতে প্রথম মাঠে নামা মরক্কোর ফরোয়ার্ড হামিদ আহদাদ গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে জয় এনে দেন।
নামধারি তিন ম্যাচে ৬ পয়েন্ট পেয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করল। গ্রুপে ইস্টবেঙ্গলের আরও একটি ম্যাচ বাকি রয়েছে। সেই ম্যাচে তারা যদি নাও জিততে পারে, তা হলেও কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে তারা। দু’নম্বরে থাকা নামধারিকে হারানোর সুবাদেই এই জায়গা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে তাদের। তবে সব গ্রুপের দ্বিতীয় সেরাদের মধ্যে প্রথম দুইয়ে থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে পাঞ্জাবের দলটির।
গোলের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও? 🔥
— East Bengal FC (@eastbengal_fc) August 6, 2025
A debut goal for আমাগো Moroccan 🇲🇦 মুসাফির ❤️💛#JoyEastBengal #EmamiEastBengal #EEBFCNAM #134thEditionofIndianOilDurandCup pic.twitter.com/XqXgj8Ac2M
এ দিন চার বিদেশি ফুটবলার নিয়ে নামা ইস্টবেঙ্গল শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে। একের পর এক আক্রমণে নামধারির খেলোয়াড়দের ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন নাওরেম মহেশরা। এ দিনই প্রথম লাল-হলুদ জার্সি গায়ে নেমেছিলেন দুই মিডফিল্ডার ব্রাজিলীয় মিগেল ফিগেরা ও মার্কিন মুলুক থেকে আসা মহম্মদ বাসিম রশিদ। রিজার্ভ বেঞ্চে ছিলেন দুই বিদেশি।
কলকাতার দলের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তৈরি হয়েই নেমেছিল নামধারি। বিশেষ করে তাদের গোলকিপার নিরজ কুমার। একাধিক অবধারিত গোল বাঁচান তিনি। বাঁ দিকের উইং দিয়ে বারবার আক্রমণের ঝড় তোলেন বিপিন সিং। ১৬ মিনিটের মাথায় তাঁর এক অসাধারণ ক্রসে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ পান দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস। কিন্তু তিনি বলে পৌঁছনোর আগেই প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডার তাঁর সামনে চলে আসেন।
রক্ষণে এ দিন কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলে নামধারি। তা সত্ত্বেও ক্রমশ চাপ বাড়িয়ে তোলে ইস্টবেঙ্গল। ২৩ মিনিটের মাথায় মিগেলের হেড পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলও তিনি গোলের দিকে পাঠালে, সেটাও পোস্টে লাগে। প্রথমার্ধের শেষ দিকে মিগেলের জোরালো হেড বারে লাগে।
প্রথমার্ধের মাঝখানেই হ্যামস্ট্রিংয়ে টান ধরে নিরজ কুমারের। তা সত্ত্বেও তিনি নামধারির গোল সামলান। খেলা আধ ঘণ্টা গড়ানোর পর মহেশের গোলমুখী শট অনবদ্য সেভ করেন তিনি। ৩৮ মিনিটের মাথায় বাঁ দিকের উইং থেকে নেওয়া মহেশের ফ্রি কিকে দুর্দান্ত হেড করে বল গোলের দিকে পাঠান সউল ক্রেসপো। এ বারও দলকে বাঁচান নিরজ। এই সেভের পরেই ফের ব্যথা শুরু হয় তাঁর। তবু খেলা চালিয়ে যান।
দ্বিতীয়ার্ধেও নামধারির গোলকিপার ছিলেন স্বমহিমায়। শুরুতেই মহেশের নিখুঁত ক্রস গোলের সামনে গিয়ে পড়লে দিমির পায়ে পড়ার আগেই বলের দখল নেন তিনি। এর আগেও একাধিকবার গোল মিস করেন দিমি। হয়তো সেই কারণেই ৬১ মিনিটের মাথায় তাঁকে তুলে মরক্কো থেকে আসা নবাগত ফরোয়ার্ড হামিদ আহদাদকে নামান ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোন এবং তিনিই শেষ পর্যন্ত গোলের দরজা খুলে ফেলেন। ৬৮ মিনিটের মাথায় মিগেলের কর্নার দ্বিতীয় পোস্টের সামনে গিয়ে পড়লে সেখান থেকে অসাধারণ হেড করে বল জালে জড়িয়ে দেন হামিদ (১-০)। তাঁর কাছে বল যাওয়ার আগে নিরজ বলের দখল নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এই গোলের পরেই মিগেলের জায়গায় ইতালিয়ান ডিফেন্ডার কেভিন সিবিলকে নামায় ইস্টবেঙ্গল। সঙ্গে এডমন্ড লালরিন্ডিকাও মাঠে নামেন। ম্যাচের শেষদিকে নন্দকুমার শেকর ও শৌভিক চক্রবর্তীও নামেন। তুলে নেওয়া হয় মহেশকে। তাঁরা নামার পর ব্যবধান বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে লাল-হলুদ বাহিনী। তবে নামধারির দুর্ভেদ্য রক্ষণ ও প্রতিপক্ষের গোলের সামনে ইস্টবেঙ্গল অ্যাটাকারদের একাধিক ভুল সিদ্ধান্তের জন্য তা সম্ভব হয়নি।
সংযুক্ত সময়ে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢোকা এডমন্ড পোস্টের প্রায় সামনে থেকে হামিদকে ক্রস দেন যা তিনি বারের ওপর দিয়ে পাঠান। এডমন্ড নিজে গোলে শট নিলে হয়তো দলকে দ্বিতীয় গোলটি এনে দিতে পারতেন।