লিস্টন কোলাসোর জোড়া গোল, সহাল আব্দুল সামাদ ও মনবীর সিংয়ের গোলে ডুরান্ড কাপে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। প্রথম ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মহমেডান এসসি-কে ৩-১-এ হারিয়েছিল গতবারের ফাইনালিস্টরা। সোমবার কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের বিরুদ্ধে (বিএসএফ) ৪-০-য় জিতল তারা

মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের এই জয়ের ফলে ডুরান্ড কাপের ‘বি’ গ্রুপ থেকে বিএসএফ ও মহমেডান এসসি-র বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল। দু’টি করে ম্যাচ জিতে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড ও ডায়মন্ড হারবার এফসি ছয় পয়েন্ট পেয়ে প্রথম দু’টি স্থানে রয়েছে। তবে গোল পার্থক্যের বিচারে বাগান-বাহিনীর (৬) চেয়ে এগিয়ে থাকায় ডায়মন্ড হারবার (৮) এক নম্বরে রয়েছে

গ্রুপের শেষ রাউন্ডের খেলায় মুখোমুখি হবে এই দুই শীর্ষস্থানীয় দল। সেই ম্যাচেই ফয়সালা হবে কারা নক আউটে যাবে। তবে ওই ম্যাচে ফয়সালা না হলে ডায়মন্ড হারবারই এক নম্বর দল হিসেবে নক আউটে উঠবে। সেক্ষেত্রে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে দ্বিতীয় সেরাদের মধ্যে প্রথম দুইয়ে থেকে শেষ আটে উঠতে হবে।

এ দিন সীমান্তবাহিনীর বিরুদ্ধে আগাগোড়া আধিপত্য বিস্তার করে জয় পায় বাগান ব্রিগেড। ২৪ মিনিটের মাথায় সদ্য চোট সারিয়ে মাঠে ফেরা, মরশুমের প্রথম ম্যাচ খেলা মনবীর গোলের খাতা খোলেন। দ্বিতীয়ার্ধে পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে পরপর দু’টি গোল করে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেন কোলাসো। তাঁর দ্বিতীয় গোলের তিন মিনিট পরেই চতুর্থ গোল করে জয় সুনিশ্চিত করেন সহাল। এই নিয়ে দুই ম্যাচে সাত গোল করল আইএসএলের জোড়া খেতাবজয়ীরা

এ দিন সারা ম্যাচে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট যেখানে সাতটি শট গোলে রাখে, সেখানে বিএসএফের মাত্র একটি শট লক্ষ্যে ছিল। প্রথম ম্যাচে বিদেশিহীন দল নামালেও এই ম্যাচে প্রথম এগারোয় ডিফেন্ডার টম অলড্রেডকে রাখে সবুজ-মেরুন বাহিনী। তাদের স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনাও এ দিন ডাগ আউটে ছিলেন। তিনিই দল সাজান, যে দলে প্রথম সারির দলের ফুটবলাররা।

মনবীর এ দিন শুরু থেকেই বেশ তৎপর ছিলেন, যার প্রমাণ তিনি দেন ২৪ মিনিটের মাথায়। বাঁ দিক দিক ওঠা তরুণ ডিফেন্ডার রোশন সিং অসাধারণ একটি ক্রস পাঠান বক্সের মাঝখানে। যেখান থেকে এক অনবদ্য হেডে জালে বল জড়িয়ে দেন মনবীর (১-০)। প্রতিপক্ষের রক্ষণের একাধিক খেলোয়াড় তাঁর ধারেকাছে থাকলেও তাঁরা আটকাতে পারেননি তারকা উইঙ্গারকে।

এর দু’মিনিট পরেই বক্সের সামনে থেকে নেওয়া ডিরেক্ট ফ্রিকিকে প্রায় গোল পেয়েই যাচ্ছিলেন কোলাসো। কিন্তু বিএসএফ গোলকিপার হরপ্রীত সিংয়ের তৎপরতায় সেই সুযোগ হারান তিনি। গত ম্যাচে এ ভাবেই একটি গোল পেয়েছিলেন গোয়ানিজ তারকা।

প্রথমার্ধে সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হলেও দ্বিতীয়ার্ধে পাওয়া সুযোগগুলি আর নষ্ট করেননি কোলাসো। দ্বিতীয়ার্ধে পরিবর্ত হিসেবে নামা সহালের কাছ থেকে বল পেয়ে তাঁর সঙ্গে প্রায় লেগে থাকা ডিফেন্ডারদের ধোঁকা দিয়ে বক্সের সামনে এসে সোজা গোলে শট নেন তিনি, যা আটকাতে পারেননি হরপ্রীত (২-০)।

এর পাঁচ মিনিট পরে ফের গোল পান কোলাসো, যা চলতি ডুরান্ড কাপে তাঁর তৃতীয় গোল। এ বার নিজেই বাঁ উইং দিয়ে উঠে আক্রমণ তৈরি করেন তিনি এবং বাঁ দিক দিয়েই বক্সে ঢুকে কোণাকুনি শটে গোলে বল পাঠান। গোলকিপার হরপ্রীত সামনে থাকলেও তাঁর পায়ের ফাঁক দিয়ে বল চলে যায় গোলে (৩-০)।

এই গোলের পরই মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে তা সুনিশ্চিত করেন সহাল। কোলাসোর দ্বিতীয় গোলের তিন মিনিট পরই, অর্থাৎ, ৬১ মিনিটের মাথায় দলের চতুর্থ গোলটি করেন তিনি। বল নিয়ে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢোকেন তিনি এবং গোলকিপার এগিয়ে আসেন সাহালকে বাধা দেওয়ার জন্য। তাঁকে পরাস্ত করে গোলের দিকে বল ঠেলে দেন কেরালার তারকা ফুটবলারটি। গোললাইনে দাঁড়িয়ে এক ডিফেন্ডার বল আটকানোর চেষ্টা করেও সফল হননি (৪-০)।

শেষে ৩০ মিনিটে পাঁচ গোলে জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে মেরিনাররা। সহাল, কোলাসোরা চেষ্টা করেও পাঁচ নম্বর গোলটি করতে পারেননি। পরিবর্ত হিসেবে নামা আর এক বিদেশি ডিফেন্ডার আলবার্তো রড্রিগেজ সংযুক্ত সময়ে বক্সের মাথা থেকে একটি দুর্দান্ত শট নেন গোলে। সেই শট যে রকম দর্শনীয় ছিল, তার চেয়েও দর্শনীয় ছিল হরপ্রীতের সেভ। তবে তিনি অসাধারণ গোল বাঁচালেও তাঁর দল ততক্ষণে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছে।

আগামী শনিবার মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও ডায়মন্ড হারবার এফসি মুখোমুখি হবে এই গ্রুপের এক নম্বর দল হিসেবে কারা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে, তার ফয়সালা করার জন্য। ওই ম্যাচের আগে দলের ছেলেদের পরখ করে নিলেন সবুজ-মেরুন কোচ মোলিনা। গ্রুপ পর্বের শেষ ও সবচেয়ে কঠিন ম্যাচে তিনি আক্রমণ বিভাগেও বিদেশিদের নামাতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।