পরপর দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট খোয়ালেও মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোচ হোসে মোলিনা তাঁর দলের ফুটবলারদের ওপর আস্থা রাখছেন। মঙ্গলবার চেন্নাইয়ে গোলশূন্য ড্রয়ের পরও তাই বলেন, দলের পারফরম্যান্সে তিনি খুশি।

মঙ্গলবার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ম্যাচ গোলশূন্য রেখে ঘরের মাঠ ছাড়ে মোলিনার দল। ফলে পরপর দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট খোয়াল গতবারের শিল্ডজয়ীরা, যা লিগের শেষ পর্যায়ে তাদের চাপে ফেলতে পারে। তবে মোহনবাগান কোচ মনে করছেন, এই দুই ড্রয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ার মতো কিছু হয়নি। এখনও তাঁরা শিল্ড জয়ের দৌড়ে এগিয়েই আছেন।

তবে প্রথম দলের চার খেলোয়াড়কে রিজার্ভ বেঞ্চে রেখে এ দিন তাঁর দল নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, যার ব্যাখ্যা দিয়ে মোলিনা বলেন, “জামশেদপুর ম্যাচের পর খেলোয়াড়দের রিকভারির জন্য বেশি সময় ছিল না। তাই আজ এই দলটাই আমার হাতে থাকা সেরা এগারো মনে হয়েছিল। আমার মনে হয় ব্যাপারটা কার্যকরী হয়েছে। প্রথমার্ধে চেন্নাইনকে আমরা সে ভাবে খেলতেই দিইনি। তবে আমাদের ফাইনাল পাস, ফিনিশিং, এগুলো গোল করার পক্ষে যথেষ্ট ছিল না”।

গোলের সুযোগ হাতছাড়া করার জন্যই জন্য পয়েন্ট খোয়ালেন তাঁরা, তা স্বীকার করে নিয়ে মোলিনা বলেন, “আমরা আজ প্রতিপক্ষের চেয়ে সব দিক থেকে এগিয়ে ছিলাম। ম্যাচের শেষ দিকে আমাদের প্রথম দলের খেলোয়াড়দের নামাই এবং গোলের সুযোগও পাই। কিন্তু ওরাও গোল করতে পারেনি। চেন্নাইন শক্তিশালী দল, আগ্রাসী ফুটবল খেলে। এটা ঠিকই যে এই ম্যাচ থেকে আমরা তিন পয়েন্ট পাব আশা করেছিলাম। কিন্তু এক পয়েন্ট তো পেয়েছি”।

পয়েন্ট খোয়ানোয় হতাশ নন ঠিকই, তবে লড়াই যে কঠিন হল, তা বলছেন বাগান-কোচ। বলেন, “এটা ঠিকই যে শেষ দুই ম্যাচে আমরা ছ’পয়েন্ট পেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পেয়েছি মাত্র দু’পয়েন্ট। তাই আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। লিগ জেতা তো মোটেই সোজা কাজ নয়। অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তাও আমরা দুই নম্বর দলের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে আছি এখনও। আমাদের লিগের শেষ পর্যন্ত লড়তেই হবে”।

সবুজ-মেরুন বাহিনী যে তাদের সেরা ছন্দে ছিল না, স্পষ্টতই ক্লান্তির ছাপ ছিল তাদের পারফরম্যান্সে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সারা ম্যাচে আটটি গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা। প্রতিপক্ষের বক্সে মাত্র ১৫ বার বল ধরে বাগান-বাহিনী। এই পরিসংখ্যানগুলি থেকেই বোঝাই যাচ্ছে, এ দিন তারা তেমন আক্রমণের মেজাজে ছিল না।

তবু দলের পারফরম্যান্সে খুশি স্প্যানিশ কোচ। বলেন, “সব ম্যাচেই গোল করতে চাই আমরা। শেষ দু’ম্যাচে আমরা বেশি গোল করতে পারিনি ঠিকই। তবে দলের পারফরম্যান্সে আমি খুশি। চেন্নাইন আজ ভাল ডিফেন্স করেছে। তাও আমরা আজ গোলের সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু শেষ মুহূর্তের ভুলে গোল পাইনি। শেষ দুটো ম্যাচ মোটেই সহজ ছিল না। তবে দল ভালই পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। আমাদের আরও পরিশ্রম করে যেতে হবে”।

বাগানের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই: প্রীতম

মোহনবাগানের প্রাক্তন অধিনায়ক প্রীতম কোটাল, যিনি কেরালা ব্লাস্টার্স ছেড়ে আসার পর এ দিনই চেন্নাইনের হয়ে প্রথম মাঠে নামেন, তাঁর মুখেও মোহনবাগানের প্রশংসা। বলেন, “লিগ যত এগোবে, ততই সবার লড়াই কঠিন হবে। তবে মোহনবাগানের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কারণ, ওদের দলের খেলোয়াড়দের প্রায় প্রত্যেকেরই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মানসিকতা রয়েছে। প্রত্যেক খেলোয়াড়ই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। গত দু’দিন ধরে আমি ওদের খেলা ভাল করে দেখেছি এবং আমাদের খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলেছি। পরিকল্পনা করেছি। লিস্টন, মনবীর শেষ দিকে এসে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারত। সে জন্য আজকের মতোই প্রতি ম্যাচে আমাদের ৯০ মিনিট পর্যন্ত সমান ভাবে খেলতে হবে, এটাই বলেছিলাম সবাইকে”।

পছন্দের সেন্টার ব্যাকের জায়গা ছেড়ে নতুন দলে রাইট ব্যাক হিসেবে খেলা নিয়ে প্রীতম বলেন, “আমাদের কোচ আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। উনি চেয়েছিলেন যাতে আমি রক্ষণে সব ভূমিকাই পালন করতে পারি। আমি সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করেছি। আমার প্রিয় জায়গা সেন্টার ব্যাক। তবে কোচ যদি আমাকে রাইট ব্যাক হিসেবে খেলাতে চান, নিশ্চয়ই খেলব। দলগত ভাবে আমাদের ভাল খেলতে হবে। কারও ব্যক্তিগত দক্ষতায় দল দাঁড়িয়ে থাকে না”।