শুক্রবার ঘরের মাঠে যে লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, সেই লক্ষ্যপূরণ হয়েছে। তাই জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ৩-০ জয়ের পর দলের পারফরম্যান্স নিয়ে খুশি তাদের কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস।

শুক্রবার যুবভারতীতে প্রথমার্ধে দুই দল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করলেও দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতার দ্বিতীয় গোল করার পরই খেলা থেকে কার্যত হারিয়ে যায় জামশেদপুর এফসি। সাত মিনিটের মধ্যেই গোল করে দলকে এগিয়ে দেন মোহনবাগানের অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। দ্বিতীয়ার্ধে, ৬৮ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়িয়ে নেন তাঁর স্বদেশীয় বিশ্বকাপার জেসন কামিংস। ৮০ মিনিটের মাথায় তৃতীয় গোল করেন আলবানিয়ান স্ট্রাইকার আরমান্দো সাদিকু।

এই জয়ের ফলে খুশি কোচ হাবাস ম্যাচের পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের দল দারুন উন্নতি করেছে। আজ দলের খেলায় আমি খুশি। এর আগে আমাদের যা ভুল হয়েছে, তা দারুন ভাবে শুধরে নিয়েছে আমাদের ছেলেরা। আজ আমরা অন্য সিস্টেমে, অন্য পরিকল্পনা নিয়ে খেলেছি। সব ম্যাচে একই ভাবে খেলা সম্ভব না। তা হলে প্রতিপক্ষ আমাদের পরিকল্পনা সহজেই বুঝে যাবে। আজ আমাদের প্রতিপক্ষ ভাল খেলেছে। অনেক সুযোগও তৈরি করেছে ওরা। আমরা ৭৫ মিনিট ভাল খেলেছি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে কিছু ভুলভ্রান্তি হয়েছে আমাদের। বাকি সময়টা আমরাই আধিপত্য করেছি। যার ফলে স্কোরও সে রকমই হয়েছে”।

এ দিনের জয়ের ফলে ১৬ ম্যাচে ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে মুম্বই সিটি এফসি-কে টপকে টেবলের দু’নম্বরে চলে এল তারা। একটি ম্যাচ বেশি খেলে তাদের চেয়ে দু’পয়েন্ট এগিয়ে থাকায় এক নম্বরে রয়েছে ওডিশা এফসি। তবে মোহনবাগানের সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে ৩২ পয়েন্ট পেয়ে মুম্বইয়ের দল রয়েছে তিন নম্বরে। এক নম্বরের দৌড়ে টিকে থাকতে গেলে এর পরের ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল এফসি-র বিরুদ্ধে জিততে হবে তাদের।

অবশ্য ফিরতি ডার্বি এখনও ন’দিন পরে। হাতে সময় রয়েছে। তাই এখনই এই নিয়ে ভাবনা শুরু করতে রাজি নন হাবাস। দলের ছেলেদের শারীরিক ও মানসিক বিশ্রামও দিতে চান তিনি। বলেন, “আজ আমাদের জয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই লক্ষ্যপূরণ হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবার সময় পাইনি। ডার্বিতে অন্য ম্যাচ, অন্য প্রতিপক্ষ। আমরা এখন এই ম্যাচের জয় উপভোগ করতে চাই। পরের ম্যাচ নিয়ে পরের সপ্তাহে ভাবা যাবে”।

জনি কাউকো যে একজন ভাল নেতা, তা স্বীকার করে নিয়ে বাগান কোচ বলেন, “জনি কাউকো যথেষ্ট ভাল ও পেশাদার ফুটবলার। ওকে আমাদের অবশ্যই দরকার। তবে আমার দলে একজন নেতা নয়, কুড়িজন নেতা চাই আমি। কারণ, দলে যদি মাত্র একজন নেতা থাকে, সে যখন কোনও কারণে অনুপস্থিত থাকবে, তখন গোটা দলটাই দিশাহারা হয়ে যাবে। একাধিক নেতা থাকলে, সেই সমস্যা হবে না”।

এ দিন সেরা ফর্মে ছিলেন মনবীর। প্রথম দু’টি গোলে তিনি অ্যাসিস্ট করেন। তৃতীয় গোলটিও হয় তাঁর পরোক্ষ মদতে। গত ম্যাচেও দু’টি গোলে অ্যাসিস্ট করেছিলেন তিনি। ফলে চলতি লিগে অ্যাসিস্টের তালিকায় সবার ওপরে চলে গেলেন মনবীর। স্বাভাবিক ভাবেই ম্যাচের সেরার খেতাবও জিতে নেন তিনি।

দলের অন্যতম সেরা উইঙ্গারকে নিয়ে হাবাস বলেন, “মনবীর তো অবশ্যই ভাল খেলেছে। কিন্তু দলের বাকিরাও যথেষ্ট ভাল খেলেছে। মনবীর যে ভারতের অন্যতম সেরা ফুটবলার হয়ে উঠতে পারে, অনেক আগেই এ কথা বলেছিলাম আমি। এখন সেটাই প্রমাণ করছে ও। বিভিন্ন পজিশনে খেলতে পারে ও । তবে আমাদের দলে ও দুই উইং দিয়েই সবচেয়ে ভাল খেলে। ফিটনেস ও দক্ষতার দিক থেকে মনবীর যথেষ্ট ভাল জায়গায় রয়েছে”।

মনবীর নিজে অবশ্য বললেন, “আমি নিজের খেলা উপভোগ করছি। কোচ যেখানে, যে ভাবে খেলার নির্দেশ দেন, সে ভাবেই খেলার চেষ্টা করি ও নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি”।

আসন্ন কলকাতা ডার্বি নিয়ে মনবীর বলেন, “ডার্বি দুই ক্লাবের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখন ভাল অবস্থায় রয়েছি। আমরা একশো শতাংশ দিয়ে ম্যাচটা জেতার চেষ্টা করব”। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে মহাম্যাচের আগে যে ন’দিন সময় পাবেন, সেই সময়টাকে ভাল ভাবে কাজে লাগাতে চান তারকা উইঙ্গার।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ডার্বির আগে আমরা এই দিনগুলোকে কাজে লাগাতে চাই। নিজেদের ফের তরতাজা করে তোলার জন্য তো বটেই। কৌশল নিয়েও কাজ হবে। এ ছাড়া নিজেদের ভুলগুলো শোধরানোর সুযোগও পাব। এতে ভালই হবে”।