ডার্বি থেকে তিন পয়েন্ট পেয়ে বেশি খুশি ম্যাকলারেন, শুভাশিস, গ্রেগরা
‘ওরা দশজন হয়ে যাওয়ার পর আমাদের আরও মরিয়া হয়ে ওঠা উচিত ছিল। আত্মতুষ্ট হয়ে পড়া উচিত হয়নি। এই সমস্যাগুলো এ বার আমাদের শোধরাতে হবে’।

শনিবার আইএসএলের ফিরতি মোহন-ইস্ট ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জিতে লিগ ডাবল করলেও মাত্র এক গোলে তাদের হারিয়ে খুব একটা খুশি নন মোহনবাগানের ফুটবলাররা। আরও বড় ব্যবধানে যে জিততে পারতেন তাঁরা, এই ব্যাপারে একমত প্রায় সবাই। তবে জয় এক গোলে আসুক বা পাঁচ গোলে, জিতলে তিন পয়েন্টের বেশি তো আর জেতা যায় না। সেই তিন পয়েন্টের লক্ষ্যে নেমে সফল হওয়ায় খুশি তারা।
শনিবার গুয়াহাটিতে তারা ইস্টবেঙ্গলকে হারায় ১-০-য়। তবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বৈরথে যে আগুন দেখার আশায় ছিলেন দুই দলের সমর্থকেরা, তা তেমন দেখা যায়নি। এমন তীব্রতাহীন ডার্বি আইএসএলে কখনও দেখা গিয়েছে বলে মনে পড়ে না। এর আগে লিগের কোনও মোহন-ইস্ট ডার্বিতে মাত্র এক গোল হয়নি। শনিবার দু’মিনিটের মাথায় যে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন অস্ট্রেলীয় বিশ্বকাপার জেমি ম্যাকলারেন, সেই গোলেই ম্যাচ জিতে নেয় গতবারের শিল্ড চ্যাম্পিয়নরা।
ম্যাচের পর স্টেডিয়ামের মিক্সড জোনে এই জয়ের নায়ক অস্ট্রেলীয় তারকা ফরোয়ার্ড ম্যাকলারেন সাংবাদিকদের বলেন, “ম্যাচের দু’মিনিটের মধ্যে গোল করে দলকে জেতাতে পেরে আমি খুশি। তবে আরও বেশি গোলে জিততে পারতাম আমরা। সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে ৪-১ বা ৩-১-এ ম্যাচটা জিততাম আমরা। তবে স্কোর যাই হোক, তিন পয়েন্টই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ”।
তবে কলকাতায় নিজেদের ঘরের মাঠ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এই জয়টা পেলে আরও ভাল লাগত বলে জানান ম্যাকলারেন। বলেন, “কলকাতায় এই জয়টা পেলে আরও ভাল লাগত। গত ডার্বিতে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের সামনে গোল করেছিলাম। অথচ সেই একই ডার্বিতে এ বার দু’হাজারের বেশি লোক গ্যালারিতে ছিল না, এ জন্য খারাপ লাগছে। তবে জানি, কলকাতায় সমর্থকেরা আজ উৎসবে মেতেছে। তারা আজ রাতে ভাল করে ঘুমোবে। এ জন্যই তো আমরা খেলি”।
মাত্র দু’মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যান ম্যাকলারেন, যা আইএসএল ডার্বির ইতিহাসে দ্রুততম গোল। এ মরশুমে এটি দ্বিতীয় দ্রুততম। নিজের এই গোল নিয়ে তিনি বলেন, “এত তাড়াতাড়ি গোল পেয়ে যাব ভাবিনি। তবে এই গোলের জন্য শুরুটা আমরা ভাল করতে পেরেছি, যার প্রভাব পুরো ম্যাচেই পড়েছে। একসঙ্গে ক্লিন শিট ও তিন পয়েন্ট পাওয়াটা বড় ব্যাপার। আমাদের রক্ষণও খুব ভাল হয়েছে। বিশাল তো দুর্দান্ত খেলেছে”।
ম্যাচের শুরুতে তারা গোল খেয়ে যাওয়ায় এবং দ্বিতীয়ার্ধে মিডফিল্ডার শৌভিক চক্রবর্তী লাল কার্ড দেখায় শেষের প্রায় আধ ঘণ্টা ইস্টবেঙ্গলকে দশ জনে খেলতে হওয়ায় তাদের যাবতীয় মরিয়া ভাব প্রায় উবে যায়। এই পরিস্থিতি থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লাল-হলুদ বাহিনী।
শৌভিক লাল কার্ড দেখার পর তাদের আরও মরিয়া হয়ে ওঠা উচিত ছিল বলে মনে করেন সবুজ-মেরুন বাহিনীর সেরা অ্যাটাকার। বলেন, “ওরা দশজন হয়ে যাওয়ার পর আমাদের আরও মরিয়া হয়ে ওঠা উচিত ছিল। আত্মতুষ্ট হয়ে পড়া উচিত হয়নি। এই সমস্যাগুলো এ বার আমাদের শোধরাতে হবে। তবে যাই হোক, যে ভুলই হোক, ডার্বি জিতে তিন পয়েন্ট নিয়ে যে কলকাতায় ফিরতে পারছি, এটাই সবচেয়ে ভাল খবর”।
এ বার সামনের দিকে তাকাতে চান ম্যাকলারেন। বলেন, “আমাদের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। সব সময় ইতিবাচক থাকতে হবে। বেঙ্গালুরুও আজ হেরে গিয়েছে শুনলাম। এতে লিগশীর্ষে আমাদের অবস্থান আরও দৃঢ় হল। আর পিছন ফিরে তাকানোর কিছু নেই। এখন আমাদের শুধু সামনে তাকাতে হবে”।
শনিবার তাদের দুই তারকা উইঙ্গার মনবীর সিং কিছুটা নিষ্পৃহ ছিলেন। একাধিক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি। মনবীরের এই ফর্ম নিয়ে ম্যাকা বলেন, “মনবীরের মতো মানের খেলোয়াড়ের কাছ থেকে সবাই গোল চায়। ও আজ আমাকে অনেকগুলো গোলের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এই ম্যাচে। আমি ওকে বলছিলাম, দৌড়ে যাও, পজিটিভ থাকো, সুযোগ আসবেই। পরের ম্যাচগুলোতে ও গোল পাবেই। আমাদের যে-ই গোল করুক না কেন, তিন পয়েন্ট তো এসেছে”।
দলের অধিনায়ক শুভাশিস বোসও ম্যাকলারেনের সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, “আমরা খুশি। পয়েন্ট টেবলে আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম। ম্যাকা খুব ভাল গোল করেছে। তবে আমরা আজ আরও বেশি গোলে জিততে পারতাম। হয়তো ডার্বির একটা নতুন ইতিহাস গড়া হয়ে যেত। গোলের অনেক সুযোগ আমরা পেয়েছিলাম। তবে এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পেয়েছি, এ জন্যই খুশি। সতীর্থদের জন্য গর্বিত”।
যুবভারতীতে খেলতে না পারায় বাগান-অধিনায়কও হতাশ। বলেন, “কলকাতায় ডার্বির উন্মাদনা অন্যরকম। আর কলকাতায় খেললে আরও উৎসাহিত হতাম আমরা। সমর্থকদের সঙ্গে এই জয়টা আরও ভাল ভাবে উদযাপন করতে পারতাম। দুর্ভাগ্য যে, সেটা হয়নি। আশা করি, পরের ডার্বি কলকাতাতেই হবে। তবে যারা টিভিতে খেলা দেখেছেন এবং আজ যারা মাঠে এসেছিলেন, তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। সবার শুভেচ্ছা থাকলে এ বারেও আমরা লিগ জিততে পারব”।
ম্যাচের ৭৫ মিনিটের মাথায় কামিংসকে তুলে গ্রেগ স্টুয়ার্টকে নামায় সবুজ-মেরুন বাহিনী। তিনি নামার পরেই ফের চাঙ্গা হয়ে ওঠে দল। দশ জনে খেলা ইস্টবেঙ্গল রক্ষণেরর দুর্বলতাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা শুরু করেন ম্যাকলারেন, স্টুয়ার্টরা। তবে বাগান-আক্রমণে সেই মরিয়া ভাব দেখা যায়নি। মিনিট কুড়ি মাঠে থেকে দু’বার গোলে শট নিয়েও ব্যর্থ হন স্টুয়ার্ট। ম্যাচের পর তিনি বলেন, “আজ দল খুব ভাল খেলেছে। তাই আমাকে বেঞ্চে বসে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়, যেমন জেমি, জেসনদেরও করতে হয়েছে আগে। তিন পয়েন্ট পাওয়াটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেটা অর্জন করতে পেরে আজ আমরা খুশি। কলকাতা নিজেদের মাঠে খেলতে না পারাটা অবশ্যই হতাশাজনক। তবে জানতাম কলকাতায় বসে হাজারো সমর্থক আমাদের খেলা দেখবে। তাদের জন্য ভাল লাগছে। ওরা আজ নিশ্চয়ই পার্টি করবে”।
গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট অর্জন করাই স্টুয়ার্টের কাছে সবচেয়ে খুশির খবর। তিনি বলেন, “এ রকম গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন ম্যাচে জেতা বিশাল ব্যাপার। আমাদের কাছে খুবই সন্তোষজনক। ইস্টবেঙ্গল আগের ম্যাচের চেয়ে অনেক উন্নতি করেছে। তবে ওদের একজন কমে যাওয়ার পর আমাদের গোলের জন্য আরও মরিয়া হয়ে ওঠা উচিত ছিল। তবে দিনের শেষে যে তিন পয়েন্ট তুলতে পেরেছি, আমরা খুশি”।
এ বার ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চান তিনি। বলেন, “এ বার আমাদের এগোনোর পালা। এখনও অনেক ম্যাচ বাকি আমাদের। এখন আমাদের জামশেদপুর-ম্যাচে মনোনিবেশ করতে হবে। তার পরে চেন্নাইন। দুটোই পরপর কঠিন অ্যাওয়ে ম্যাচ”।