গোয়া ছাড়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না, বলছেন লিস্টন কোলাসো
ঘর ছেড়ে ভুল করেননি তা হলে। এত দিন পরে কেন মনে হচ্ছে লিস্টন কোলাসোর? আসলে নিজের শহরের ক্লাবে খেলার সময় সাফল্যের মুখ দেখতে না পেয়ে অন্য শহরে গিয়ে সেখানকার ক্লাবের জার্সি গায়ে যখন সাফল্য পান, তা ছিল প্রায় অভাবনীয়। সে জন্যই বোধহয় এটিকে মোহনবাগানের তারকা ফরোয়ার্ডের এখন এই কথা মনে হচ্ছে।

ঘর ছেড়ে ভুল করেননি তা হলে। এত দিন পরে কেন মনে হচ্ছে লিস্টন কোলাসোর?
আসলে নিজের শহরের ক্লাবে খেলার সময় সাফল্যের মুখ দেখতে না পেয়ে অন্য শহরে গিয়ে সেখানকার ক্লাবের জার্সি গায়ে যখন সাফল্য পান, তা ছিল প্রায় অভাবনীয়। সে জন্যই বোধহয় এটিকে মোহনবাগানের তারকা ফরোয়ার্ডের এখন এই কথা মনে হচ্ছে।
গোয়া থেকে উঠে আসা এই ২৩ বছর বয়সি ফরোয়ার্ড গত হিরো আইএসএলে ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল করেন। দেশের এক নম্বর লিগে সুনীল ছেত্রী ছাড়া একই মরশুমে মোট আট গোল আর কখনও করেননি কোনও ভারতীয় ফুটবলার। এর আগের হিরো আইএসএলের আসরগুলিতে যেখানে সুনীলই হতেন ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা, সেখানে গত মরশুমে এই সন্মান অর্জন করে নেন কোলাসো।
এই পারফরম্যান্সের পর ভারতীয় দলেও তিনি নিয়মিত সদস্য হয়ে উঠেছেন। এটিকে মোহনবাগানে সই করার আগে ২০২০-২১ মরশুমে তিনি হায়দরাবাদ এফসি-তে যোগ দেন। সেখানকার কোচ মানুয়েল মার্কেজের হাতে পড়ে তখন থেকেই তাঁর খেলায় ক্রমশ উন্নতি হতে শুরু করে।
কিন্তু তার আগের অধ্যায়টা একেবারেই মনে রাখার মতো নয়। ২০১৭ থেকে ২০১৯— এই দুই মরশুমে নিজের শহরের ক্লাব এফসি গোয়ায় ছিলেন যখন, তখন সর্বসাকুল্যে মাত্র পাঁচটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন কোলাসো। মাঠে আরও বেশিক্ষণ থাকার সুযোগ পেতে মরিয়া হয়ে ২০১৯-২০-তে তিনি লোনে হায়দরাবাদ এফসি-তে যোগ দেন এবং সেখানে সাতটি ম্যাচ খেলেন ও দু’টি গোল করেন।
পরের মরশুমে হায়দরাবাদ তাঁকে পাকাপাকি ভাবে চুক্তিবদ্ধ করে এবং সারা মরশুমে ১৯টি ম্যাচ খেলেন কোলাসো। যদিও সে বছর দু’টির বেশি গোল করতে পারেননি এবং তিনটি গোলে মদত দেন। কিন্তু তাঁর পারফরম্যান্সে যথেষ্ট উন্নতি দেখা যায়। সেই পারফরম্যান্স দেখেই এটিকে মোহনবাগান তাঁকে বিশালাঙ্কের ট্রান্সফার ফি দিয়ে নিজেদের শিবিরে নিয়ে আসে এবং তার ফল পায় হাতেনাতে।
গত মরশুমে ফুটবল জীবনের সেরা ফর্মে ছিলেন কোালাসো এবং আগেরবারের চেয়ে চারগুন গোল করেন সে বার। তার মধ্যে কয়েকটি গোল ছিল বিশ্বমানের এবং অনবদ্য। একজন ভারতীয় ফরোয়ার্ডের পা থেকে এমন সব অবিশ্বাস্য গোল দেখে বিস্মিত হয়ে যান দেশের ফুটবল বিশেষজ্ঞ ও ফুটবলপ্রেমীরা। তাই এখন তাঁর মনে হচ্ছে তিন বছর আগে ঘর ছেড়ে ভুল করেননি।
“নিজের শহর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া একেবারেই সহজ ছিল না। তবে পেশাদারদের এ রকম ত্যাগস্বীকার করতেই হয়। এখন মনে হয়, আমার গোয়া ছাড়ার সিদ্ধান্তটা সঠিকই ছিল”, এত দিন পরে বলছেন কোলাসো। সম্প্রতি ইংরাজি দৈনিক ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কথাগুলি বলেছেন তিনি।
গোয়া ছাড়ার কারণ সম্পর্কে কোলাসো বলেন, “যথেষ্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছিলাম না বলেই গোয়া ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই আমি। এটাই ছিল প্রধান কারণ। বাড়ি থেকে ম্যাচ খেলতে এসে মাঠের বাইরে বসে খেলা দেখা মোটেই পছন্দ ছিল না আমার। মাঠে নামার জন্য ছটফট করতাম। সেই জন্যই গোয়া ছেড়েছিলাম”।
তবে গোয়া ছাড়ার সময়ও যে খুব একটা শান্তিতে ছিলেন কোলাসো, তাও নয়। বলেন, “শুরুর দিকে নিশ্চিত ছিলাম না, সাফল্য পাব কি না। কারণ, তার আগে পর্যন্ত কখনও গোয়ার বাইরে গিয়ে খেলিনি আমি। তবু মানসিক ভাবে নিজেকে তৈরি করে বেরিয়ে পড়ি। যা হওয়ার হবে, এই ভেবে। গত দুই মরশুমে যেহেতু জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থেকে খেলতে হয়েছিল, তাই কোনও প্রভাব আমার ওপর পড়েনি”।
ক্লাব ফুটবলে সাফল্যের পরে এ বার কোলাসোর লক্ষ্য আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেকে উজ্জ্বল করে তোলা। ভারতীয় দলের হয়ে নিয়মিত খেললেও এখনও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে এক ডজন ম্যাচে নেমে একটিও গোল পাননি তিনি। আগামী বছরেই এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলতে চলেছে ভারতীয় দল। সেই টুর্নামেন্টে দেশের হয়ে গোল করতে চান তিনি।
এই প্রসঙ্গে এটিকে মোহনবাগানের ফরোয়ার্ড বলেন, “দেশের হয়ে গোল করতে চাই আমি। ক্লাবে আমরা মাসের পর মাস একসঙ্গে অনুশীলন করি। কিন্তু ভারতীয় শিবিরে সেই সুযোগ হয়ে ওঠে না। কিন্তু জাতীয় দলে একে অপরের মধ্যে ভাল বোঝাপড়া গড়ে তোলার জন্য আরও অনুশীলন প্রয়োজন। না হলে উন্নতি হবে কী করে? আশা করি (ভারতের) আসন্ন ম্যাচগুলোতে গোল পাব”।
এ বার ঘরোয়া ক্লাব মরশুম দীর্ঘ হচ্ছে। যার ফলে নিশ্চয়ই সুবিধাই পাবেন কোলাসো। ১৬ অগাস্ট ডুরান্ড কাপ দিয়ে শুরু হচ্ছে ভারতের আসন্ন ক্লাব মরশুম। ডুরান্ড কাপের পরে হবে হিরো আইএসএল ও সুপার কাপ। ফলে এশিয়ান কাপের আগে যথেষ্ট সংখ্যক ম্যাচ পেয়ে যাবেন কোলাসো ও তাঁর ভারতীয় দলের সতীর্থরা। গত কয়েক মরশুমে তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সের পরে আগামী মরশুমে নিশ্চয়ই আরও উন্নত লিস্টন কোলাসোকে দেখার আশায় রয়েছেন দেশের ফুটবলপ্রেমীরা।