কলিঙ্গ সুপার কাপ ফাইনাল প্রিভিউ: এশীয় মঞ্চে যোগ্যতা অর্জনের লড়াই গোয়া, জামশেদপুরের মধ্যে
দুই দলই আইএসএল সেমিফাইনালে হেরে যায়। ফলে তাদের কাছে ট্রফি জিতে মরশুম শেষ করার এটাই সবচেয়ে বড় ও শেষ সুযোগ।

প্রায় দু’সপ্তাহের লড়াইয়ের পর কলিঙ্গ সুপার কাপ ২০২৫-এর ফাইনালে শনিবার মুখোমুখি হতে চলেছে ২০১৯-এর চ্যাম্পিয়ন এফসি গোয়া এবং প্রথম বার ফাইনালে ওঠা জামশেদপুর এফসি। যারা টুর্নামেন্টের বাকি ১৩টি দলকে পিছনে ফেলে খেতাবি লড়াইয়ে নামার যোগ্যতা অর্জন করেছে। শনিবারের এই ফাইনালের বিজয়ী দল ২০২৫-২৬ এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ ২-এর প্রাথমিক পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। ফলে দুই দলের কাছেই এই ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এক দিকে, এই খেতাব জয় করে মহাদেশীয় ফুটবলে চার বছরের অনুপস্থিতি কাটিয়ে উঠতে মরিয়া এফসি গোয়া। তাদের একমাত্র এশিয়ান অভিযান ছিল ২০২১ সালে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে। অন্য দিকে, জামশেদপুর এফসি এক নতুন ঐতিহাসিক মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে। সুপার কাপে দু’বার সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ার পর এ বারই প্রথম ক্লাবের ইতিহাসে কোনও ফাইনালে পৌঁছেছে তারা। ২০২৩-এ প্লে-অফে হেরে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার সুযোগ হারানোর পর এ বার আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ তাদের সামনে।
সে জন্যই জামশেদপুর এফসির প্রধান কোচ খালিদ জামিলের গলায় শোনা গেল প্রত্যয়ের সুর। শুক্রবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "আমাদের সামনে এশিয়ান প্রতিযোগিতায় প্রথমবার খেলার সুযোগ। আমরা আমাদের সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করব"।
অন্য দিকে, এফসি গোয়ার কোচ মানোলো মার্কেজের বক্তব্য, "যখন এশীয় ক্লাব ফুটবলের আসরে খেলার এমন সুযোগ সামনে থাকে, সেটাই অনেক বড় অনুপ্রেরণা। এফসি গোয়া আগেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলেছে। জামশেদপুর এখনও খেলেনি। তবে দুই দলই এই প্রতিযোগিতায় খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে চায়"।
জামশেদপুর চলতি সুপার কাপে এখনো পর্যন্ত একটিও গোল হজম করেনি। জামিলের দল হায়দরাবাদকে ২-০, নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে টাইব্রেকারে এবং মুম্বই সিটিকে সেমিফাইনালে ১-০-য় হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে। অন্যদিকে, গোকুলাম কেরালা এফসি-কে ৩-০, পাঞ্জাব এফসিকে ২-১ ও মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকেকে ৩-১-এ হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছেছে এফসি গোয়া। দুই দলই আইএসএল সেমিফাইনালে হেরে যায়। ফলে তাদের কাছে ট্রফি জিতে মরশুম শেষ করার এটাই সবচেয়ে বড় ও শেষ সুযোগ।
মানোলো মার্কেজ মনে করেন, তাদের সামনে বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাঁর মতে, "১৫টি দল এই টুর্নামেন্ট জিততে এসেছিল। আমরা জানতাম যে চারটি ম্যাচ জিততে হবে এবং তার মধ্যে তিনটি ইতিমধ্যেই জিতেছি। এখানে কোনও ম্যাচই সহজ নয়। দেখা যাক কী হয়"।
এফসি গোয়ার অধিনায়ক ও ডিফেন্ডার ওদেই ওনাইন্দিয়া বলেন, "প্রথম থেকেই বলেছিলাম, আমরা এই টুর্নামেন্ট জিততে চাই। এখন আমরা ফাইনালে এবং জেতার জন্য প্রস্তুত। আমরা জানি, ওরা খুব ভাল একটা দল এবং এ মরশুমে দুর্দান্ত খেলেছে। ওদের খেলোয়াড়দের গুণগত মান জানি। তাই কঠিন লড়াইয়ের জন্য আমরাও প্রস্তুত।"
সুপার কাপে এফসি গোয়া ও জামশেদপুর চতুর্থবার মুখোমুখি হতে চলেছে। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ তাদের মধ্যেই হতে চলেছে। দুই দলের মধ্যে গত তিন ম্যাচে মোট ২১টি গোল হয়েছে। শনিবারের ম্যাচেও এ রকমই উত্তেজনাপূর্ণ লড়াই আশা করা যেতে পারে।
গোয়া ২০১৮-য় কোয়ার্টার ফাইনালে ৫-১ ও ২০১৯-এও সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ৪-৩-এ জিতেছিল। ২০২৩-এ কোঝিকোডে-তে গ্রুপ পর্বে জামশেদপুর ৫-৩ গোলে জয় পায়। তবে এ মরশুমের আইএসএলে গোয়ার বিপক্ষে দুই লেগেই জেতে জামশেদপুর। ফাতোরদায় ২-১-এ ও ঘরের মাঠে ৩-১ ব্যবধানে জেতে ইস্পাতবাহিনী।
The #KalingaSuperCup Final 🏆: @FCGoaOfficial and @JamshedpurFC's ultimate hurdle for the golden ticket to Asia 🎫
— Indian Football Team (@IndianFootball) May 2, 2025
Read final preview 🟠🆚🔴 🔗 https://t.co/z72fRIKi4m
Buy tickets on https://t.co/4E7vohwzei
Watch LIVE 📺 tomorrow at 19:30 on @JioHotstar & #StarSports3#FCGJFC… pic.twitter.com/BYq3oqfewb
তবে গত দুই ম্যাচের ফলকে এখন গুরুত্ব দিতে নারাজ গোয়ার কোচ। তিনি বলেন, "প্রতিটি ম্যাচ আলাদা। আমরা লিগে দ্বিতীয় হয়েছি আর জামশেদপুর আমাদের থেকে ১০ পয়েন্ট কম পেয়ে লিগ শেষ করেছে। তবুও আমরা দুই ম্যাচেই হেরেছি। জামশেদপুরে ওরা অনেক ভাল খেলেছিল। গোয়ায় প্রথমার্ধে আমরা ভাল খেলেছিলাম, ওরা দ্বিতীয়ার্ধে। এখন এটা সুপার কাপের ফাইনাল, অতীত এখানে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়"।
এই ব্যাপারে খালিদ জামিলও একমত। তিনি বলেন, "এটা সত্যিই একেবারে অন্য রকমের ম্যাচ। আমাদের শক্ত থাকতে হবে। আমরা জানি, ওরা খুব ভাল দল। ওদের প্রতি শ্রদ্ধা আছে। কারণ, টেকনিকে ওরা খুবই শক্তিশালী। তাই আমাদের সেরা খেলা খেলতেই হবে"। খালিদ আরও বলেন, "ফাইনালে কোনও পূর্বাভাস হয় না। সবাই জানে, এটা দুই দলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। তাই আমাদের ইতিবাচক ফল পেতে হবে। আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে"।
এই টুর্নামেন্টে গত ম্যাচগুলিতে যে ভাবে ৯০ মিনিটে ম্যাচ ড্র হলে সরাসরি পেনাল্টিতে (টাই ব্রেকার) গিয়েছে, ফাইনালে তা হবে না। ফাইনালের নিষ্পত্তি হবে হয় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলায়, নয় পেনাল্টি শুট আউটে। ইতিমধ্যেই টাইব্রেকারে একটি ম্যাচ জিতেছে জামশেদপুর। মার্কেজ অবশ্য ২০২১-২২ মরশুমে হায়দরাবাদের কোচ হিসেবে পেনাল্টিতে আইএসএল কাপ জিতেছিলেন।
পেনাল্টিতে ম্যাচের নিষ্পত্তি হওয়া নিয়ে গোয়ার কোচ বলেন, "পেনাল্টির সম্ভাবনা সবসময় থাকে। যারা বলে এটা ভাগ্যের খেলা, তাদের সঙ্গে আমি একমত নই। যদি ভাল গোলকিপার থাকে এবং কোনও খেলোয়াড় ক্লান্ত থাকে, তাহলে শান্ত থাকতে হয়। তখন গুণমান দেখাতে হয় এবং সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়"।
শনিবার কলিঙ্গ সুপার কাপ ফাইনালের সরাসরি সম্প্রচার হবে স্টার স্পোর্টস ৩ এবং লাইভ স্ট্রিমিং হবে জিওহটস্টার-এ। সন্ধ্যা ৭.৩০ থেকে।