গত দশ বছরে ভারতীয় ফুটবল কোনদিকে গিয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ শুরুর পর থেকে ভারতীয় ফুটবলে যে ভাবে ধাপে ধাপে উন্নতি হয়েছে, তা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। তবে ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রী সম্প্রতি যা বলেছেন, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

২০১৫ থেকে সুনীল ছেত্রী আইএসএলে খেলছেন। প্রথমে মুম্বই সিটি এফসি-র হয়ে খেলেন, পরে যোগ দেন বেঙ্গালুরু এফসি-তে। আজ পর্যন্ত এই দুই ক্লাবের হয়েই খেলে ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন তিনিই। নয় মরশুমে ১৩০-এর বেশি ম্যাচ খেলেছেন তিনি।

সেই সুনীল যখন বলেন, “গত দশ বছরে ভারতীয় ফুটবলে অনেক ভাল ভাল ঘটনা ঘটেছে। তবে সবচেয়ে ভাল ঘটনাটি অবশ্যই ইন্ডিয়ান সুপার লিগ শুরু হওয়া। এই লিগ শুরুর ফলে দেশের প্রতিটি কোণে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে ভারতীয় ফুটবল। দেশের কোনও শিশুকে যখন আশা দেওয়া হয়, সে ভাল ফুটবল খেলতে পারলে একদিন আইএসএলে খেলতে পারবে, তখন তার চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে? আইএসএল এটাই করেছে”। সম্প্রতি ‘কার্লি টেলস’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন সুনীল।

সন্দেশ ঝিঙ্গন থেকে সহাল আব্দুল সামাদ, লালেঙমাউইয়া রালতে, নাওরেম রোশন সিংদের মতো প্রতিভাদের উঠে আসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আইএসএল। তবে সুনীল মনে করেন একেবারে শিশু বয়স থেকে প্রতিভাদের খুঁজে বের করে তাদের তালিম দেওয়া প্রয়োজন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যত কম বয়সে একটি ছেলে বা মেয়ের প্রতিভা অণ্বেষণ করে তাকে যথোপযুক্ত পরিকাঠামো দিয়ে, সঠিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে, ফুটবলার হিসেবে গড়েপিঠে নেওয়া যাবে, ততই ভাল হবে”।

তবে জনপ্রিয়তার দিক থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের লিগের চেয়ে যে অনেক পিছিয়ে রয়েছে আইএসএল, এ কথাও জানাতে ভোলেননি সুনীল। বলেন, “কারও কাছে যদি সারা দিনে টিভি দেখার জন্য ঘণ্টাদুয়েক সময় থাকে, তা হলে সে আইপিএল দেখবে। কারণ, এখানে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়রা খেলে। এ ভাবেই কেউ যদি ফুটবল দেখার জন্য দিনে দু’ঘণ্টা পায়, তা হলে সে প্রিমিয়ার লিগ, বুন্দেশলিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ছেড়ে অন্য কিছু দেখার কথা ভাববেই বা কেন? কারণ, সেখানে মেসি, রোনাল্ডোদের খেলা দেখা যাবে। আমি তাদের দোষ দিই না। আমাদের, ভারতীয় ফুটবলারদের দায়িত্ব দেশের মানুষকে ক্রমশ আমাদের ফুটবলের দিকে টেনে নিয়ে আসা”।

এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “ফুটবল এমন একটা খেলা, যা বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয়। কারণ, এটাই সেরা খেলা। কেউ এই খেলা দেখতে বসলে সে উপভোগ করবেই। কিন্তু দেশের ফুটবলপ্রেমীদের ঘরোয়া ফুটবলের দিকে টেনে আনা কঠিন কাজ। তবে এটাই ধীরে ধারে হবে। গত দশ বছরে অনেক কিছু বদলেছে, সময় লাগলেও আরও হবে”।

তাঁর শোকেসে দুটি আই লিগ খেতাব, দুটি ফেডারেশন কাপ খেতাব, একটি ডুরান্ড কাপ খেতাব এবং একটি আইএসএল খেতাব জ্বলজ্বল করছে। ৩৯ বছর বয়সেও তিনিই তাঁর ক্লাব দলে ও জাতীয় দলে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। নিজের ফুটবল জীবন নিয়ে সুনীল এই অনুষ্ঠানে বলেছেন, “কেউ ক্রীড়াবিদ হতে চাইলে তাকে যথেষ্ট বুদ্ধিমান হতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। তবে আমার ফুটবল জীবন যে শেষ হতে চলেছে, এই স্বপ্নের দৌড় যে শেষ পর্বে চলে এসেছে, তা নিজেকে প্রায়ই বলি এবং খারাপ লাগে। গত পাঁছ-ছ’বছর ধরে বেঙ্গালুরু এফসি-তে ফিরে এসে এই কথাই বলেছি। কারণ, আমি ব্যাপারটা বুঝি। এটা আমাকে উজ্জীবিতও করে”।

খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারার রোমাঞ্চ ও আনন্দ নিয়ে তিনি বলেন, “এটা দারুন একটা অভিজ্ঞতা। প্রতি ম্যাচের আগে ওই যে অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ, এর কোনও বিকল্প নেই। আমি কী হলাম, কত টাকা রোজগার করলাম, কত বিখ্যাত হয়ে উঠলাম, এ সব কোনও ব্যাপারই নয়। যখন কোনও ম্যাচ শুরুর আগে আর কোনও উত্তেজনা অনুভব করব না। তখন আর জীবনে কীই বা থাকবে”?

পুরো সাক্ষাৎকার দেখুন এখানে