বর্তমান ফুটবল প্রজন্মকে বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছে আইএসএল: শুভাশিস বোস
“মোহনবাগান জনতার সামনে খেলার মুহূর্তগুলো খুব উপভোগ করি আমি। যখন ম্যাচের ৭০-৮০ মিনিট পরে ক্লান্ত হয়ে যাই, তখন ওদের চিৎকারে আরও শক্তি পেয়ে যাই এবং উজ্জীবিত হয়ে আরও ভাল ফুটবল খেলি”।

ভারতীয় ফুটবলে তিনি এখন এক বিখ্যাত ব্যক্তি। যাঁরা নিয়মিত ভারতীয় ফুটবল দেখেন বা ফুটবল নিয়ে চর্চা করেন, তাঁরা শুভাশিস বোসকে চিনবেন না, এমন সম্ভাবনা বেশ কম। দীর্ঘ ফুটবল জীবনে যেমন দেশের একাধিক নামী ক্লাবের জার্সি গায়ে তিনি খেলেছেন, তেমনই ভারতীয় দলেরও নিয়মিত সদস্য তিনি।
দেশের হয়ে ৩৪টি ম্যাচ খেলা শুভাশিস ইন্ডিয়ান সুপার লিগে মুম্বই সিটি এফসি, বেঙ্গালুরু এফসি-র হয়ে খেলার পর এখন তাঁর প্রিয় ক্লাব মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের এক নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার। এই ক্লাবের হয়ে আইএসএলে কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, ডুরান্ড কাপেও সেরার খেতাব জিতেছেন। ভারতীয় দলের হয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও খেতাব অর্জন করেছেন।
দশ বছরে পড়া ইন্ডিয়ান সুপার লিগের প্রশংসা করে সুভাশিস বলেছেন, “আইএসএল এ দেশের তরুণ প্রজন্মকে বুঝিয়েছে যে, ফুটবলকেও পেশা হিসেবে নেওয়া যায়। আমরা যখন শুরু করেছিলাম, তখন ফুটবল ছিল আমাদের নেশা। ফুটবলকেই পেশা হিসেবে নেব কি না, এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম না। কিন্তু আইএসএল এখনকার প্রজন্মকে বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছে। তারা পেশাদার ফুটবলার হতে চাইছে। প্রিয় ক্লাবের হয়ে এবং দেশের হয়ে খেলারও স্বপ্ন দেখছে তারা। এ সবই সম্ভব হচ্ছে আইএসএলের জন্য”। সম্প্রতি Indiansuperleague.com কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কথাগুলি বলেন শুভাশিস।
ছোট থেকেই আদ্যান্ত মোহনবাগানপ্রেমী শুভাশিস এই ক্লাবের সমর্থকদের ভূয়ষী প্রশংসা করে বলেন, “এই ক্লাবের সমর্থকেরা এ দেশের মধ্যে সেরা। ওদের জন্যই মোহনবাগানের হয়ে মাঠে নামতে এত পছন্দ করি। গত মরশুমে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের হয়ে আইএসএল ট্রফি জেতা আমার ফুটবল জীবনের অন্যতম সেরা ঘটনা। কয়েক বছর ধরে মরিয়া চেষ্টার পর ওই ট্রফিটা হাতে তুলতে পেরেছিলাম আমরা। সেই জন্যই ওটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত। এ ছাড়া বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে মাঠে নেমে ভারতের সেরা গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধুর বিরুদ্ধে গোল করা— এটাও কম স্মরণীয় নয়। মোহনবাগান জনতার সামনে খেলার মুহূর্তগুলো খুব উপভোগ করি আমি। যখন ম্যাচের ৭০-৮০ মিনিট পরে ক্লান্ত হয়ে যাই, তখন ওদের চিৎকারে আরও শক্তি পেয়ে যাই এবং উজ্জীবিত হয়ে আরও ভাল ফুটবল খেলি”।
বঙ্গ ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকার সঙ্গে কথাবার্তায় কলকাতা ডার্বির প্রসঙ্গ উঠে আসবে না, তা আবার হয়? শতাধিক বর্ষের এই ফুটবল দ্বৈরথের প্রসঙ্গ ওঠায় শুভাশিস বলেন, “ছোটবেলা থেকে ডার্বির দিন বা তার আগে পরে আমার ইস্টবেঙ্গল সমর্থক বন্ধুদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা বন্ধ করে দিতাম। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আমি মনে করি, এই ধরনের চিরপ্রতিদ্বন্দিতাগুলো একটা দেশের ফুটবলকে বেড়ে উঠতে খুব সাহায্য করে। তবে এই প্রতিদ্বন্দিতা ম্যাচের ৯০ মিনিট, মাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাই ভাল। আমার ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক বন্ধুদের সঙ্গেও আমার সম্পর্কটা সে রকমই। খেলার সময় আমাদের শত্রুতা। বাকি সময়ে আমরা একে অপরের সঙ্গে বেড়াতে যাই, খাওয়াদাওয়া করি, আনন্দ করি”।
শুভাশিস মনে করেন, ভারতীয়রা ক্রমশ দেশের ফুটবলের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করেছে। তাঁর মতে, “ভারতীয় ফুটবলের ভক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আগে লোকে শুধু ইউরোপিয়ান ফুটবল দেখত, বিশেষ করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। কিন্তু এখন অনেকেই ভারতীয় ফুটবলও নিয়মিত দেখেন। আর মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের চিরপ্রতিদ্বন্দিতার জন্যই তো কলকাতাকে ভারতীয় ফুটবলের মক্কা বলা হয়”।
এক সময়ে তিনি ছিলেন প্রতিভাবান তরুণ ফুটবলার। এখন তিনি ভারতীয় ফুটবলের এক প্রতিষ্ঠিত ও নির্ভরযোগ্য তারকা। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ যে তাঁকে এই জায়গায় আসতে অনেক ভাবে সাহায্য করেছে, তা স্বীকার করে শুভাশিস বলেন, “গত এক দশকে ভারতীয় ফুটবল ও এ দেশের ফুটবলারদের উন্নতিতে দারুন ভাবে সাহায্য করেছে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। বিদেশি কোচেদের তত্ত্বাবধানে খেলে ও স্প্যানিশ, ফরাসি ও অন্যান্য দেশের ফুটবলাররা, যারা তাদের জাতীয় দলের হয়েও খেলেছে, তাদের সঙ্গে খেলে ব্যক্তিগত দক্ষতাতেও অনেক উন্নতি করেছি আমরা। এই কারণেই ক্লাবের হয়ে বলুন বা দেশের হয়ে, আমরা এখন অনেক ভয়ডরহীন ফুটবল খেলতে পারছি।”