আইএসএলে অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি: অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে বলছেন ব্রেন্ডান হ্যামিল
‘প্রতি ম্যাচেই সমর্থকের ঢল নামে গ্যালারিতে। রাস্তায় বেরলেই সমর্থকেরা ঘিরে ধরে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ারের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। ওরা ভালবাসতে জানে। বিমানবন্দরে নামলেই টের পাওয়া যায়’।

অস্ট্রেলিয়া থেকে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে খেলতে আসা ফুটবলারের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে দেখে অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন সে দেশের ফুটবলাররা ভারতের এক নম্বর ফুটবল লিগকে এত পছন্দ করেন? শুধুই কি প্রচুর উপার্জনের উদ্দেশ্যে তাঁরা দলে দলে ভারতে পাড়ি জমাচ্ছেন?
গতবার মোহনবাগান সুপার জায়ান্টে খেলে যাওয়া অস্ট্রেলীয় সেন্টার ব্যাক ব্রেন্ডান হ্যামিল দেশে ফিরে গিয়ে ‘এ’ লিগের ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের সেরা ফুটবল লিগের যে রকম ভূয়ষী প্রশংসা করেছেন, তা জানলেই পেয়ে যাবেন এর উত্তর। হ্যামিলের স্মরণীয় অভিজ্ঞতার কথা জেনে সে দেশের বহু ফুটবলারই আইএসএলে আসার জন্য প্রবল উৎসাহিত হয়ে উঠতে পারেন।
গত বছর পর্যন্ত মোহনবাগানে থাকার পর হ্যামিল দেশে ফিরে যোগ দিয়েছেন মেলবোর্ন ভিক্ট্রি-তে। গত দুই মরশুমে তিনি আইএসএলে ৩৪টি ম্যাচ খেলেন। গত বছর মোহনবাগানের ডুরান্ড কাপ ও আইএসএল শিল্ড চ্যাম্পিয়ন দলেও ছিলেন তিনি। আইএসএলে খেলেছিলেন ১৪টি ম্যাচ। একটি গোল ও একটি অ্যাসিস্টও ছিল তার মধ্যে। মেলবোর্ন ভিক্ট্রির হয়ে অস্ট্রেলিয়ান কাপ জেতার পর ২০২২-এ মোহনবাগানে যোগ দেন হ্যামিল। গত মরশুমের পর মোহনবাগান ছেড়ে সেখানেই আবার ফিরে গিয়েছেন তিনি।
গত মরশুমে দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ও জেসন কামিংসের সঙ্গে সবুজ-মেরুন শিবিরে তাঁর ফুটবলের জীবনের একাংশ কাটানো প্রসঙ্গে এ লিগের ওয়েবসাইটকে হ্যামিল বলেন, “ভারতের সংস্কৃতি, জীবনযাপন, ফুটবল, ফুটবলারদের মানসিকতা, ব্যবসা সব কিছুই অনন্য। আমাদের সঙ্গে ওদের সংস্কৃতির অনেক ফারাক। ওখানে গিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন না করলে এগুলো উপলব্ধি করা যায় না। ওখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। ওখানে আমি আমার পরিবার নিয়ে দু’বছর ছিলাম। সবাই যে ভাবে আমাদের অভ্যর্থনা জানিয়েছিল, তা দেখে চমকে গিয়েছিলাম। আমার সব কিছুর খেয়াল রাখত ওরা”।
তিনি যোগ দেওয়ার পর প্রথম বছর আইএসএল কাপ ও পরের বছর শিল্ড জেতে মোহনবাগান। ফলে তিনি হয়ে ওঠেন সবুজ-মেরুন শিবিরের ‘লাকি ম্যাসকট’। এই সাফল্য যে তাঁর ফুটবল জীবনেও এক উজ্জ্বল অধ্যায়, তা স্বীকার করে হ্যামিল বলেন, “অসাধারণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি ভারতে। সম্পুর্ণ এক ভিন্ন সংস্কৃতির দেশে গিয়ে ফুটবলে সাফল্য পাওয়াটা ছিল আমার কাছে বিরাট ব্যাপার। (আইএসএলে) এক বছর চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা, আর এক বছর প্লেট জেতা, এএফসি কাপে বেশিরভাগ সময়ই খেলার সুযোগ পাওয়া, এগুলো আমি দারুন উপভোগ করেছি। সব মিলিয়ে খুব ভাল একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার”।
Nothing could have prepared Brendan Hamill for his time at the "biggest team in India" 🤯
— Isuzu UTE A-League (@aleaguemen) September 11, 2024
Full interview with @gomvfc's new signing: https://t.co/LIRooSSlBU pic.twitter.com/1ruMhNLsaU
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে হাজার ষাটেক সমর্থকের মধ্যে আইএসএলের শেষ লিগ ম্যাচে খেলা ও তা জিতে লিগ শিল্ড নিয়ে সতীর্থ ও সমর্থকদের সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছ্বাসে ভাসার অভিজ্ঞতার কথা এই সাক্ষাৎকারে আলাদা করেই উল্লেখ করেছেন হ্যামিল। বলেন, “কী উন্মাদনা! মরশুমের শেষ ম্যাচে আমাদের সামনে শিল্ড জেতার হাতছানি এবং ভরা গ্যালারির সামনে লিগ জেতার অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ। যেখানেই হোক, এমন অভিজ্ঞতা সারা জীবনে কখনও ভোলা যায় না”।
এ বছর আইএসএলে ছ’জন অস্ট্রেলীয় আইএসএলে খেলছেন। তার মধ্যে তিনজনই মোহনবাগানের ফুটবলার। দিমি পেট্রাটস ও জেসন কামিংস তো আগেই ভারতে এসেছেন। এ বছর তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন এ লিগের সর্বকালের সেরা গোলদাতা, কিংবদন্তি জেমি ম্যাকলারেনও। অস্ট্রেলীয় না হলেও ব্রিসবেন রোর-এর প্রাক্তন অধিনায়ক টম অ্যালড্রেডও এসেছেন সবুজ-মেরুন বাহিনীতে।
এ ছাড়াও আলেকজান্দার জোবানোভিচ, জর্ডান মারে, রায়ান উইলিয়ামসও এ বারের আইএসএলে খেলছেন। এর আগে লিগের দশটি মরশুমে ডেভিড উইলিয়ামস, এরিক পার্তালু, জোয়েল চিয়ানিজ, ডিলান ফক্স, রস্টিন গ্রিফিথ, স্কট নেভিল, টিম কাহিল-সহ বহু অস্ট্রেলিয়ান খেলে গিয়েছেন আইএসএলে। অতীত ও বর্তমান মিলিয়ে এই তালিকায় ৩১ জনের নাম রয়েছে। আগামী দু-তিন মরশুমের মধ্যে সংখ্যাটা ৫০ ছাড়িয়ে যেতেই পারে। প্রতি মরশুমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০-২১, ২২-২৩ ও ২৩-২৪ মরশুমে দশজন করে অস্ট্রেলীয় ফুটবলার আইএসএলে খেলেছিলেন, যা প্রথম মরশুমে অংশ নেওয়া অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলারদের সংখ্যার পাঁচ গুণ।
মোহনবাগানের ভূয়ষী প্রশংসা করে হ্যামিল বলেছেন, “ওরাই ভারতের বৃহত্তম ক্লাব। সবচেয়ে বেশি সমর্থক ওদেরই। আমার মতো মনে হয় গত মরশুমে পূর্ব এশিয়ায় ওদের ম্যাচেই গড় দর্শকসংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি, প্রতি ম্যাচে প্রায় ৩০ হাজার। প্রতি ম্যাচেই সমর্থকের ঢল নামে গ্যালারিতে। রাস্তায় বেরলেই সমর্থকেরা ঘিরে ধরে। ভারতে গেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ারের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। ওরা ভালবাসতে জানে। বিমানবন্দরে নামলেই তা টের পাওয়া যায়। এমনকী অ্যাওয়ে ম্যাচগুলোতেও ঝাঁক ঝাঁক সমর্থক যায় এবং প্রিয় খেলোয়াড়দের নানা উপহার দেয়”।
সমর্থকদের তৈরি টিফোরও প্রশংসা করে হ্যামিল মন্তব্য করেন, “ওদের টিফোগুলো অনেক উঁচু স্তরের”। একবার হলিউডের বিখ্যাত ছবি ‘থর’-এর অস্ট্রেলীয় অভিনেতা ক্রিস হেমসওয়ার্থের আদলে হ্যামিলের ছবি এঁকে তার টিফো তৈরি করে নিয়ে এসে গ্যালারিতে ঝুলিয়েছিল সবুজ-মেরুন জনতা। সেই ঘটনাও মনে আছে তাঁর। বলেন, “আমি একটা গোল করার পর থরের হেমসওয়ার্থের হাতুড়ি মারার স্টাইলে সেলিব্রেশন করেছিলাম। তার পর দেখি হেমসওয়ার্থের মতো আমাকে সাজিয়ে সেই ছবি-সহ টিফো, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ছেয়ে গিয়েছে। টিফোতেই ওদের উন্মাদনা স্পষ্ট ফুটে ওঠে। রীতিমতো পাগলামি। ‘হ্যাটস অফ’ ওদের”।
অনুশীলনে সমর্থকের ঝাঁক দেখেও অবাক হয়ে যেতেন বলে জানান হ্যামিল। বলেন, “যখনই অনুশীলনে নামতাম আমরা, দেখতাম অন্তত একশো সমর্থক সেখানে হাজির। সবারই সেলফি আর সই চাই। ওখানে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় দিমি (পেট্রাটস)। আমিও কম ভালবাসা পাইনি। সমর্থকদের উন্মাদনা অবিশ্বাস্য। ওই শহরের দুই ক্লাব মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের চিরশত্রুতাও প্রায় ধর্মযুদ্ধের পর্যায়ে পড়ে”।