নবাগত পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে আইএসএল অভিযান শুরু করছে চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান এসজি
গত মরশুমে আই লিগ জয়ের সুবাদে তারা এ বার আইএসলে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে পাঞ্জাব এফসি। আইএসএলের শুরুটাই তারা করছে এ বারের লিগের সবচেয়ে শক্তিশালী দলগুলির অন্যতম মোহনবাগান এসজি-র বিরুদ্ধে। তাও আবার ঘরের মাঠে নামবে সবুজ-মেরুন শিবির। তাই পাঞ্জাব এফসি-র কাজটা বেশ কঠিন।

গত মরশুমের নক আউট চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট শনিবার ঘরের মাঠে তাদের আইএসএল অভিযান শুরু করছে নবাগত পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে। এ বারেই প্রথম ইন্ডিয়ান সুপার লিগে অংশ নিচ্ছে পাঞ্জাবের দলটি। গত মরশুমে আই লিগ জয়ের সুবাদে তারা এ বার আইএসলে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। আইএসএলের শুরুটাই তারা করছে এ বারের লিগের সবচেয়ে শক্তিশালী দলগুলির অন্যতম মোহনবাগান এসজি-র বিরুদ্ধে। তাও আবার সবুজ-মেরুনের ঘরের মাঠে। তাই পাঞ্জাব এফসি-র কাজটা বেশ কঠিন হয়ে উঠতে চলেছে এই ম্যাচে। ডুরান্ড কাপ জয়ী মোহনবাগান মরশুমের প্রথম কলকাতা ডার্বিতে হারার পর থেকে আর পিছন ফিরে তাকায়নি। এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে দাপুটে ফুটবল খেলে ওডিশা এফসি-কে ৪-০-য় হারায় তারা।
All eyes on our ISL 2023-24 opener tomorrow! 💚♥️
— Mohun Bagan Super Giant (@mohunbagansg) September 22, 2023
Watch LIVE on Sports18 and JioCinema ⚽️#MBSG #JoyMohunBagan #আমরাসবুজমেরুন pic.twitter.com/hsZeVCmn53
খাতায় কলমে ফেভারিট মোহনবাগানই। মরশুমের শুরুতে গত অগাস্টে ডুরান্ড কাপে দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। সেই ম্যাচে ২-০-য় জেতে মোহনবাগান। পাঞ্জাবের ডিফেন্ডার মেলরয় আসিসি-র নিজগোল ও হুগো বুমৌসের গোলে জেতে সবুজ-মেরুন বাহিনী। ডুরান্ড কাপে তিনটি ম্যাচের মধ্যে একটিও জিততে পারেনি পাঞ্জাব এফসি। মরশুমের শুরুটা মোটেই ভাল করতে না পারলেও আইএসএলের আগে তাদের কোচ বলেছেন, তখন দল পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল না বলে এমন ফল হয়েছিল। আসন্ন আইএসএলে পুরো প্রস্তুতি নিয়ে নামবে এবং অন্য চেহারায় দেখতে পাওয়া যাবে তাদের। সত্যিই যদি তা হয়, তা হলে মোহনবাগানকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে শনিবারের ম্যাচে।
এমনিতেই আশিক কুরুনিয়ান চোট পেয়ে কার্যত পুরো মরশুমের বাইরে। তার ওপর শনিবার প্রথম ম্যাচে অনিরুদ্ধ থাপা খেলতে পারবেন না ডুরান্ড কাপের ফাইনালে লাল কার্ড দেখার জন্য। তাই মাঝমাঠে তারা কিছুটা হলেও দুর্বল হয়েই নামবে। তবে সেই দুর্বলতা কাটাতে সম্ভবত লিস্টন কোলাসো ও মনবীর সিং দুজনকেই শুরু থেকে মাঠে দেখা যেতে পারে। পাঞ্জাব এফসি অবশ্য পুরো শক্তির দল নিয়েই মাঠে নামবে বলে জানিয়েছেন তাঁদের কোচ।
দুই শিবিরের লক্ষ্য
মোহনবাগান এসজি: মরশুমের শুরুতে যে ছন্দে ছিল তারা, সেই ছন্দ ধরে রাখাই লক্ষ্য মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের। গত মরশুমের নক আউট চ্যাম্পিয়নরা যে ভাবে বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারিয়ে কাপ জিতেছিল, সেই মেজাজ ধরে রাখতে হলে তাদের শনিবার জিততে হবে। এ বার আইএসএল চলাকালীন এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচেও খেলতে হবে মোহনবাগানকে। তাদের দলের একাধিক খেলোয়াড়কে জাতীয় কর্তব্য পালনের জন্য লিগ চলাকালীন ভারতীয় দলে যোগ দিতেও হবে। ফলে চোট বাঁচিয়েও খেলাটা জরুরি।
পাঞ্জাব এফসি: মরশুমের শুরুতে যে বিপর্যস্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে তাদের, সেই অবস্থা থেকে নিজেদের বের করে আনতে হবে পাঞ্জাব এফসি-কে। সে জন্য মোহনবাগানের বিরুদ্ধে জয় বা নিদেনপক্ষে ড্র করা দরকার তাদের। ডুরান্ড কাপে যে ভুলগুলো করেছে তারে, সেগুলো শুধরে আইএসএলের শুরু থেকেই নিজেদের মেলে ধরা প্রয়োজন। অবশ্যই ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চায় তারা। শুরুতেই এক কঠিন প্রতিপক্ষের মুখে পড়তে চলেছে তারা। তাই নিজেদের দূর্গ সামলে তার পরে প্রতিপক্ষের এলাকায় হানা দেওয়াই উচিত। না হলে বিপদে পড়তে হতে পারে তাদের। মনে রাখতে হবে লিগের সেরা আক্রমণ বিভাগ নিয়ে নামবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স
মোহনবাগান এসজি: ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল এফসি-কে টাই ব্রেকারে হারিয়ে ডুরান্ড কাপে চ্যাম্পিয়ন। তার আগে গ্রুপ পর্বে ইস্টবেঙ্গলের কাছে হার সত্ত্বেও বাংলাদেশ আর্মি ও পাঞ্জাব এফসি-কে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে তারা। কোয়ার্টার ফাইনালে মুম্বই সিটি এফসি-কে হারায়, যা ছিল মুম্বইয়ের ক্লাবের বিরুদ্ধে তাদের সর্বপ্রথম জয়। সেমিফাইনালে এফসি গোয়াকেও হারায় তারা। মরশুমের প্রথম ডার্বিতে হারের পর এখন পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের একটিও ম্যাচে হারেনি তারা। এর মধ্যে এএফসি কাপের প্লে-অফ, প্রাথমিক পর্বে জিতে গ্রুপ পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দোর দল। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করে ৪-০-য় জেতে। সুতরাং পিছন ফিরে তাকানোর কিছু নেই।
পাঞ্জাব এফসি: গত মরশুমে আইলিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যারা এ বার প্রথম আইএসএলে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে, তাদের পারফরম্যান্স এই মরশুমের শুরুতে মোটেই ভাল না। ডুরান্ড কাপের প্রথম ম্যাচে মোহনবাগান এসজি-র কাছে ০-২ হারের পর তারা বাংলাদেশ আর্মির বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে। শেষে ইস্টবেঙ্গল এফসি-র কাছে ০-১-এ হেরে ডুরান্ড কাপ থেকে ছিটকে যায়। তিনটি ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট পায় তারা। নিজেরা একটিও গোল করতে পারেনি। তবে খেয়েছে তিনটি গোল।
পরিসংখ্যানবিদরা কী বলছেন?
গত আইএসএল মরশুমে এরিয়াল বল দখলের লড়াইয়ে সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে মোহনবাগান এসজি। ৫১৭টির মধ্যে ২৯১টিতে, অর্থাৎ ৫৬.৩% এরিয়াল বল দখলে তারা সফল হয়েছে। তাদের গোলকিপার বিশাল কয়েথ গত মরশুমে মোট ১১টি ক্লিন শিট রেখে লিগের এক মরশুমে সবচেয়ে বেশি ক্লিন শিটের নজির তৈরি করেন। তিনি ছাড়া একমাত্র গুরপ্রীত সিং সান্ধুর (২০১৯-২০) এই নজির রয়েছে।
পাঞ্জাব থেকে এই প্রথম কোনও দল ইন্ডিয়ান সুপার লিগে অংশ নিচ্ছে। পাঞ্জাব এফসি-র আগে দিল্লি ডায়নামোজ উত্তর ভারত থেকে প্রতিনিধিত্ব করত। ২০১৯-২০ মরশুম থেকে তারা আর খেলেনি। ২০২২-২৩-এর আই লিগে তারা ১৬টি ম্যাচ জিতে ও মাত্র দু’টি ম্যাচে হেরে মোট ৫২ পয়েন্ট অর্জন করে চ্যাম্পিয়ন হয়। পাঞ্জাব এফসি সেই দলগুলির তালিকায় ছ’নম্বরে থাকার লক্ষ্য নিয়ে শনিবার মাঠে নামবে, যারা আইএসএলে তাদের অভিষেক ম্যাচে জয় পেয়েছে। অন্য পাঁচটি দল হল এটিকে, বেঙ্গালুরু এফসি, চেন্নাইন এফসি, মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও নর্থইশ্ট ইউনাইটেড এফসি।
নজরে যাঁরা
দিমিত্রিয়স পেট্রাটস: গত মরশুমে সবুজ-মেরুন বাহিনীর সেরা গোলদাতা পেট্রাটস। ২৩টি ম্যাচে ১২টি গোল ও সাতটি অ্যাসিস্ট করেন তিনি। তবে যে পরিমান গোলের সুযোগ তৈরি করেন এই অস্ট্রেলীয় বিশ্বকাপার, তা বিস্ময়কর। পরিসংখ্যান বলছে প্রতি ম্যাচে গড়ে ২.৬৫টি করে গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি (৬১), যা আইএসএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় সেরা। এর মধ্যে সাতটি থেকে তিনি গোল পান। এই তালিকায় গ্রেগ স্টুয়ার্টের (২.৬৭) পরেই রয়েছেন তিনি। চলতি মরসুমে ইতিমধ্যেই সবুজ-মেরুন জার্সি পরে তিনটি গোল ও দুটি অ্যাসিস্ট করা হয়ে গিয়েছে তাঁর। এ বার আইএসএল অভিযান তিনি কী ভাবে শুরু করেন, সেটাই দেখার।
লুকা মাজেন: গত মরশুমে আই লিগে ১৬টি গোল করেছিলেন স্লোভেনিয়ার এই ফরোয়ার্ড। আই লিগে একই মরশুমে সবচেয়ে বেশি গোলের নজির গড়েন তিনি। গড়ে প্রতি ১০৪ মিনিট অন্তর গোল করেন তিনি। তিনটি ম্যাচে জোড়া গোল ছিল তাঁর। তবে আই লিগের চেয়েও কঠিন লড়াইয়ে এ বার নামতে হচ্ছে তাঁকে। সে ভাবেই তৈরি হয়েই নিশ্চয়ই নামবেন। মোহনবাগান ডিফেন্ডাররা তাঁকে হালকা ভাবে নিলে সমস্যায় পড়তে পারেন। কতটা সফল হতে পারবেন লুকা, তা নজরে রাখতেই হবে।