এশিয়ান কাপ বাছাই পর্ব: শেষ মুহূর্তের পেনাল্টির গোলে হংকং-এর কাছে হার ভারতের
যথারীতি এ দিনও সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন ভারতীয় অ্যাটাকাররা। দুর্বল ফিনিশিংই ফের ডোবায় তাদের।
সারা ম্যাচে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার পরও ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে, সংযুক্ত সময়ে ভারতের কাছ থেকে যে পেনাল্টি আদায় করে নেয় হংকং, সেই পেনাল্টিই মঙ্গলবার এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ঘরের মাঠে জয় এনে দিল তাদের। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পরিবর্ত ফরোয়ার্ড স্তেফান পেরেইরার স্পট কিকে ভারতের ৯০ মিনিটের লড়াই, পয়েন্ট অর্জনের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ, বাছাই পর্বে দুই ম্যাচ খেলা হয়ে যাওয়ার পরেও ভারতের ঝুলিতে এল না কোনও পয়েন্ট। তিন পয়েন্ট পেয়ে সি গ্রুপের শীর্ষে উঠে এল হংকং।
প্রায় ৪৩ হাজার সমর্থকে ঠাসা নবনির্মিত কাই তাক স্পোর্টস স্টেডিয়ামের গ্যালারি লালে লাল হয়ে উঠলেও ভারতীয় ফুটবলাররা এ দিন উজ্জীবিত ফুটবল খেলেন। প্রথমার্ধে সুনীল ছেত্রী মাঠে না থাকলেও একাধিক গোলের সুযোগ তৈরিও করে তারা। কিন্তু যথারীতি এ দিনও সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন ভারতীয় অ্যাটাকাররা। দুর্বল ফিনিশিংই ফের ডোবায় তাদের। বিরতির পর খেলা দশ মিনিট গড়ানোর পর সুনীল মাঠে নামলেও ছবিটা খুব একটা বদলায়নি।
প্রাক্তন অধিনায়ক নিজেই একটি সহজ সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি। ফলে কোনও গোল পায়নি ভারত। উল্টে সংযুক্ত সময়ে গোলের সম্ভাবনা বানচাল করতে গিয়ে বক্সের মধ্যে এগিয়ে এসে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে আঘাত করে বসেন গোলকিপার বিশাল কয়েথ। অনিচ্ছাকৃত হলেও এই ফাউলের জন্য পেনাল্টির বাঁশি বাজান লেবাননের রেফারি শেখ আহমেদ আলাদিন। বিশালকে হলুদ কার্ডও দেখান। এই পেনাল্টি কিকে বিশালকে ধোঁকা দিয়ে বল গোলে ঢোকাতে কোনও ভুল করেননি পেরেইরা। এর পরেই গ্যালারিতে শব্দের বিস্ফোরণ ঘটে।
এ দিন সুনীল ছেত্রীকে বেঞ্চে রেখে লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতেকে নাম্বার নাইন হিসেবে প্রথম এগারোয় রাখেন ভারতের কোচ মানোলো মার্কেজ। লিস্টন কোলাসো ও আশিক কুরুনিয়ানকে দুই উইং দিয়ে আক্রমণে ওঠার দায়িত্ব দেন। ছাঙতেকে পিছন থেকে সাহায্য করেন ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ।
ঘরের মাঠে গ্যালারিতে ঠাসা সমর্থক পেয়ে শুরুতেই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে হংকং। তাদের খেলায় গতি, লক্ষ্য ও আগ্রাসনের ছাপ ছিল স্পষ্ট। দুই উইং দিয়ে আক্রমণে উঠে ভারতের রক্ষণভাগকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তারা। তবে বল দখল ও গতিতে এগিয়ে থাকলেও অ্যাটাকিং থার্ডে কার্যকরী আক্রমণ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয় লাল-বাহিনী।
ভারতের রক্ষণভাগকে এ দিন নেতৃত্ব দেন অভিজ্ঞ সন্দেশ ঝিঙ্গন ও তরুণ অনোয়ার আলি, হংকংয়ের একের পর এক আক্রমণ প্রতিহত করে তাঁরা বুঝিয়ে দেন গোল না খাওয়ার সংকল্প করেই মাঠে নেমেছিলেন এ দিন। ফলে হংকং দূরপাল্লার শটে গোলের চেষ্টা শুরু করে। গোলরক্ষক বিশাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাথা ঠাণ্ডা রেখে গোল আটকান। কিছু মুহূর্তে যখন হংকং ভারতের রক্ষণের ফাঁক গলে গোলের দিকে বল বাড়ায়, তখন দ্রুত লাইনের বাইরে এসে প্রতিপক্ষের সেই চেষ্টাগুলি বানচাল করে দেন।
ক্রমশ ম্যাচে ফিরতে শুরু করে ভারত এবং প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে ছন্দ খুঁজে পায় তারা। রক্ষণাত্মক শৃঙ্খলার উপর নির্ভর করে কোলাসো, ছাঙতে ও আশিকের ত্রয়ীর গতি নির্ভর প্রতি আক্রমণ শুরু করে তারা। মাঝমাঠ থেকে ব্র্যান্ডন সচেতনভাবে বল সরবরাহ শুরু করেন এবং দলের আক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন।
প্রথমার্ধে ভারতের সবচেয়ে ভাল সুযোগটি আসে ৩৫তম মিনিটে। একটি ভুল পাস কেড়ে নিয়ে ব্র্যান্ডন বাঁ দিক থেকে বল দেন কোলাসোকে। নিখুঁতভাবে গোলের সামনে বল বাড়ান তিনি এবং সময়মতো দৌড়ে এসে শট নেন আশিক। কিন্তু তাঁর শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
এর ছ’মিনিট পরে বিপদে পড়ে ভারত। সোয়ারেস জুনিয়র ওয়াল্টারের নেওয়া একটি ফ্রি-কিক বিপজ্জনকভাবে বক্সে ভেসে আসে এবং অলিভার বেঞ্জামিন গারবিগের কাছে পৌঁছে যায়। তাঁর ফ্লিক শট রুখে দেন বিশাল, যিনি দ্রুত লাইনের বাইরে এসে ব্লক করেন এবং অনোয়ার আলি বলটি ক্লিয়ার করে দেন।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও আগ্রাসী লাগে ভারতকে। বক্সের বাইরে থেকে একটি সুযোগ পান আশিক। কিন্তু ফের শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। আক্রমণের ধার বাড়াতে কোচ মার্কেজ ম্যাচের এক ঘণ্টা পার হওয়ার পরই সুনীল ছেত্রীকে মাঠে নামান।
ছেত্রী মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গেই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা শুরু করেন। তিনি নীচে নেমে এসে সতীর্থদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির চেষ্টা করেন এবং একাধিক সুযোগ তৈরি করেন। ৮২তম মিনিটে ডানদিক দিয়ে ওঠা ছাঙতে এক নিখুঁত কাটব্যাক দেন সুনীলের জন্য। ছেত্রীর শট গোলমুখী থাকলেও প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের শরীরে তা আটকে যায়।
শেষ দিকে যখন মনে হচ্ছিল ম্যাচটি ভারতকে ফের গোলশূন্য ড্র এনে দেবে, তখনই বিপর্যয় ঘটে। ইনজুরি টাইমে এক লম্বা বল ভারতের বক্সের দিকে উড়ে আসে। এগিয়ে এসে সেই উড়ন্ত বল ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন বিশাল। কিন্তু টাইমিং মিস করেন তিনি এবং বলে পাঞ্চ না করতে পেরে হংকংয়ের পরিবর্ত ফরোয়ার্ড মাইকেল উদেবুলুজরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান। রেফারি নির্দ্বিধায় পেনাল্টি দেন।
হংকংয়ের রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামা পেরেইরা ঠাণ্ডা মাথায় নীচু শটে গোলে বল পাঠিয়ে দেন। বলের গতিপথ বুঝতে না পেরে উল্টোদিকে ডাইভ দেন বিশাল।
ভারতীয় শিবির স্বভাবতই হতাশ। কারণ, এ দিন ৯০ মিনিট ধরে তুমুল লড়াইয়ের পরও এখন জয়ের জন্য অক্টোবরে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে পরবর্তী ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের।
ভারতের একাদশ: বিশাল কয়েথ (গোলরক্ষক), অনোয়ার আলি, সন্দেশ ঝিঙ্গন (অধিনায়ক), আশিস রাই (বরিস সিং, ৭৯), লিস্টন কোলাসো, সুরেশ সিং ওয়াংজাম, ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ (নাওরেম মহেশ সিং, ৫৮), লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে (রাহুল ভেকে ৯০+১), লালেঙমাউইয়া রালতে আপুইয়া, তেকচাম অভিষেক সিং, আশিক কুরুনিয়ান (সুনীল ছেত্রী, ৫৮)।













