হিরো আইএসএল ২০২২-২৩-এ কোন বঙ্গ তারকারা মনে দাগ কাটলেন? জেনে নিন
বরাবরের মতো হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ২০২২-২৩ মরশুমেও একঝাঁক বাংলার ফুটবলার অংশ নিয়েছেন।
বরাবরের মতো হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ২০২২-২৩ মরশুমেও একঝাঁক বাংলার ফুটবলার অংশ নিয়েছেন। কেউ সবে কেরিয়ার শুরু করছেন, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। কেউ মধ্যগগণে, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সকলের মন জয় করে নিয়েছেন এবং তার ফলে জাতীয় শিবিরেও ডাক পেয়েছেন। আবার কারও ফুটবলজীবন প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রায় জনাকুড়ি বঙ্গ ফুটবলারের মধ্যে এ বারের হিরো আইএসএলে যাঁরা সমর্থকদের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছেন, তাঁদের নিয়েই এই প্রতিবেদন।
প্রীতম কোটাল (রাইট ব্যাক, স্টপার, এটিকে মোহনবাগান): ৩৬
ম্যাচ- ২৪, মিনিট- ২২২০, ক্রস- ৬, পাস- ১১৩৮, নিখুঁত পাস- ৭৮.৬৪%, ট্যাকল- ৫১, ইন্টারসেপশন- ৪৮, ক্লিয়ারেন্স- ৭২, ব্লক- ২৭, ফাউল- ৯, হলুদ কার্ড- ৪।
সবুজ-মেরুন জার্সিতে ৩১টি ম্যাচ খেলেছেন সারা মরশুমে। এটিকে মোহনবাগান রক্ষণে হয়ে ওঠেন অন্যতম ভরসা। হিরো আইএসএলে চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে দু’টি ম্যাচ বাদে বাকি ২২টি ম্যাচেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ২৯ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার। দেশের সেরা লিগে ৫১টি ট্যাকল, ৪৮টি ইন্টারসেপশন, ৭২টি ক্লিয়ারেন্স ও ২৭টি ব্লক রয়েছে তাঁর পারফরম্যান্সের খতিয়ানে। সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে পেনাল্টি শুট আউটে তাঁর গোলেই জিতে ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে এটিকে মোহনবাগান।
ঋত্বিক দাস (লেফট উইঙ্গার, মিডফিল্ডার, ফরোয়ার্ড, জামশেদপুর এফসি) ১৯৯
ম্যাচ- ১৮, মিনিট- ১২৬১, গোল- ৬, অ্যাসিস্ট-০, গোল কনভারশন রেট- ২৪%, শট ২৫, ক্রস- ২১, সুযোগ তৈরি- ২১, পাস-৩৮৬, নিখুঁত পাস- ৭৫.৬৪%, ফাউল- ৬, হলুদ কার্ড- ০।
জামশেদপুর এফসি-র আক্রমণ বিভাগের অন্যতম ভরসা হয়ে ওঠেন ঋত্বিক। ড্যানিয়েল চিমা, হ্যারি সয়্যার, জে এমানুয়েল থমাস, ইশান পন্ডিতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন আসানসোলের ঋত্বিক। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গোল করে দলের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন তিনি। দুটি ম্যাচে তিনি ছিলেন রিজার্ভ বেঞ্চে। বাকি সব ম্যাচেই মাঠে নেমেছেন তিনি। প্রথম এগারোয় ছিলেন ১৪টি ম্যাচে। পরিবর্ত হিসেবে নামেন চারটি ম্যাচে। এ বারের লিগের প্রথম এক ডজন ম্যাচে কোনও গোল না পেয়েও হতাশ হননি ঋত্বিক। চেষ্টা চালিয়ে যান এবং ১৩ নম্বর ম্যাচে জোড়া গোল করে দলের সন্মান বাঁচান। চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে তাঁর জোড়া গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরেও জামশেদপুর ২-২ ড্র করে। পরের ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল এফসি-র বিরুদ্ধে ২-১ জয়ে দ্বিতীয় গোলটি তিনিই করে দলকে জেতান। এ ছাড়া নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি, হায়দরাবাদ এফসি ও ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধেও গোল করেন ঋত্বিক।
রহিম আলি (সেন্টার ফরোয়ার্ড, মিডফিল্ডার, চেন্নাইন এফসি) ১১৯
ম্যাচ- ১৫, মিনিট- ৭৯৭, গোল- ৩, অ্যাসিস্ট-১, গোল কনভারশন রেট- ১৬%, শট ১৯, ক্রস- ১০, সুযোগ তৈরি- ৯, পাস-২৬৮, নিখুঁত পাস-৬৯.৭৭%, ফাউল- ১৩, হলুদ কার্ড- ১।
চেন্নাইন এফসি-র আক্রমণ বিভাগে তাঁকে নিয়মিত দেখা গিয়েছে। গত মরশুমের তুলনায় এ বার তাঁর পরিসংখ্যানে সামান্য উন্নতি হয়েছে ঠিকই। তবে একজন সেন্টার ফরোয়ার্ডের কাছ থেকে যতটা নিখুঁত ফুটবল এবং আক্রমণাত্মক মেজাজ প্রত্যাশা করা হয়, ততটা পাওয়া যায়নি। গতবার হিরো আইএসএলে যেখানে দুটি গোল করেছিলেন, সেখানে এ বার তিনটি করেছেন। লিগের প্রথম ম্যাচে এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ২-১ জয়ে দলের হয়ে জয়সূচক গোলটি তিনিই করেন। তবে এর পরে টানা ১৬ ম্যাচে তাঁর পা থেকে কোনও গোল আসেনি। এর মধ্যে অবশ্য পাঁচটি ম্যাচে মাঠেই নামার সুযোগ পাননি। লিগের একেবারে শেষ দিকে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ফিরতি লিগে ২-০ জয়ে দ্বিতীয় গোলটি তিনিই করেন। শেষ ম্যাচে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ৪-৩ জয়ে তাঁরও একটি গোলের অবদান ছিল। তাঁর এই পারফরম্যান্স দেখে ব্যারাকপুরের রহিমকে ভারতীয় দলের শিবিরে ডেকে নেন ভারতীয় দলের হেড কোচ ইগর স্টিমাচ।
শুভাশিস বোস (লেফট ব্যাক, স্টপার, এটিকে মোহনবাগান) ১০০
ম্যাচ- ২৩, মিনিট- ২০৩৭, গোল-১, ক্রস- ২৮, পাস- ১১৩২, নিখুঁত পাস- ৭৪.৫৫%, ট্যাকল- ১১৬, ইন্টারসেপশন- ৪১, ক্লিয়ারেন্স- ৪৬, ব্লক- ৩৬, ফাউল- ২৫, হলুদ কার্ড- ৫।
হিরো আইএসএলে ২৩টি ম্যাচে দলের হয়ে নামেন তিনি। হিরো আইএসএলে একটি গোলও করেন নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র বিরুদ্ধে। গত লিগে রক্ষণ ছাড়াও প্রায়ই আক্রমণেও অংশ নিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ১৪টি শট নিয়েছেন ও ২৮টি ক্রস দিয়েছেন। ১৩টি গোলের সুযোগও তৈরি করেছেন। দলের অলরাউন্ড ফুটবলার হয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন সারা মরশুমে এবং সফলও হয়েছেন।
প্রবীর দাস (রাইট ব্যাক, মিডফিল্ডার, বেঙ্গালুরু এফসি) ২৪
ম্যাচ- ২০, মিনিট- ১৫৮১, অ্যাসিস্ট- ১, ক্রস- ৩২, পাস- ৫২৯, নিখুঁত পাস- ৬০.৩%, ট্যাকল- ৫০, ইন্টারসেপশন- ২২, ক্লিয়ারেন্স- ৪৫, ব্লক- ২৮, ফাউল- ১৬, হলুদ কার্ড- ২।
হিরো আইএসএলের ২০১৯-২০ মরশুমে যে ধারালো ফর্মে ছিলেন প্রবীর, গত তিন মরশুমে ততটা ধারালো লাগেনি তাঁকে। কোচেরা হয়তো তাঁকে সেই ভূমিকা পালনের দায়িত্ব দিচ্ছেন না বলেই তাঁর ফর্ম কিছুটা হলেও ফিকে হয়ে গিয়েছে। তবে এই মরশুমে যে ভূমিকায় তাঁকে দেখা গিয়েছে, তাতে যথেষ্ট ভালই পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন সোদপুরের এই তারকা ফুটবলার। হিরো আইএসএলের লিগপর্বে ১৩টি ম্যাচে তিনি প্রথম এগারোয় ছিলেন। বেঞ্চে ছিলেন তিনটি ম্যাচে এবং তিনটিতে পরিবর্ত হিসেবে নামেন। নক আউট পর্বে ফাইনাল-সহ চারটি ম্যাচেই তাঁকে পুরো সময় মাঠে রাখেন বেঙ্গালুরুর কোচ। প্রত্যাশা অনুযায়ীই পারফরম্যান্স দেখান তিনি।
কিয়ান নাসিরি (সেন্টার ফরোয়ার্ড, এটিকে মোহনবাগান) ২৪৩
ম্যাচ- ১৬, মিনিট- ৩৬১, গোল- ০, অ্যাসিস্ট-০, শট ৯, ক্রস- ৭, সুযোগ তৈরি- ৭, পাস-১২২, নিখুঁত পাস-৬৫.৫৭%, ফাউল- ৭, হলুদ কার্ড- ১।
গত মরশুমে ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করে হিরো আইএসএল অভিযান শুরু করা কিয়ান নাসিরি এ মরশুমে তিনটি গোল করলেও হিরো আইএসএলে একবারও প্রতিপক্ষের জালে বল জড়াতে পারেননি। সবুজ-মেরুন জার্সিতে হিরো আইএসএলে সব মিলিয়ে ৩৬১ মিনিট মাঠে ছিলেন। যথেষ্ট গতি ও ক্ষিপ্রতা দেখা গিয়েছে তাঁর পারফরম্যান্সে। কিন্তু গোলের সামনে গিয়ে বারবার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এই সুযোগসন্ধানী ফরোয়ার্ড। অভিজ্ঞতার ঝুলি বড় হলে হয়তো আরও পারফেকশন আসবে তাঁর খেলায়। অদূর ভবিষ্যতে এককালের তারকা ফরোয়ার্ড জামশিদ নাসিরির পুত্র তাঁর বাবার মুখ উজ্জ্বল করবেন, এমন আশা করেন অনেকেই। সেই ইঙ্গিতই পাওয়া গিয়েছে এই মরশুমে।
সার্থক গলুই (সাইড ব্যাক, সেন্টার ব্যাক, ইস্টবেঙ্গল এফসি) ১২১
ম্যাচ- ১৩, মিনিট- ৯৬১, গোল-১, ক্রস- ২০, পাস- ৩৮৮, নিখুঁত পাস- ৬২.৮৮%, ট্যাকল- ৫০, ইন্টারসেপশন- ২০, ক্লিয়ারেন্স- ৪৯, ব্লক- ৩০, ফাউল- ৯, লাল কার্ড- ১।
সারা মরশুমে তিনটি টুর্নামেন্টে মোট ১৭টি ম্যাচ খেলেছেন ২৫ বছর বয়সী এই বঙ্গ ডিফেন্ডার। হিরো আইএসএলে একটি গোলও করেন তিনি, এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচে। হিরো আইএসএলে ৫০টি ট্যাকল, ২০টি ইন্টারসেপশন, ৪৯টি ক্লিয়ারেন্স, ৩০টি ব্লক ছিল তাঁর। দলের রক্ষণে ভরসা হয়ে উঠলেও ধারাবাহিক ভাবে সব ম্যাচে তাঁকে খেলাননি ইস্টবেঙ্গল এফসি-র কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন। হিরো আইএসএলে মোট ১৭টি ম্যাচে স্কোয়াডে ছিলেন তিনি। প্রথম এগারোয় ছিলেন দশটি ম্যাচে। পরিবর্ত হিসেবে খেলেন তিনটি ম্যাচে। লাল কার্ড দেখায় একটি ম্যাচে খেলতে পারেননি। সম্ভবত ধারাবাহিকতার অভাবের জন্য তাঁকে নিয়মিত মাঠে নামার সুযোগ দেননি কোচ।