ভারতের ফুটবল সম্পর্কে এর আগে তেমন কিছু না শুনলেও এক ভারতীয় ক্লাবে খেলার প্রস্তাব পেয়ে তাতে রাজি হয়ে যান, এখানকার ফুটবল সম্পর্কে জানার আগ্রহে। এটিকে মোহনবাগানের নতুন বিদেশি ডিফেন্ডার ফ্লোরেন্তিন পোগবা তাই এ দেশে এসেছেন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে। ভারতে পা রাখার দিনই সাংবাদিক বৈঠকে এই কথা জানিয়ে দিলেন তিনি।

ঐতিহ্যবাহী সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে মাঠে নেমে তিনি যে শুধু নিজের দক্ষতা মেলে ধরতে চান, তা নয়। এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবকে ঐতিহাসিক কীর্তি স্থাপনেও সাহায্য করতে চান। আজ পর্যন্ত এএফসি কাপে যা পারেনি কোনও ভারতীয় ক্লাব, এটিকে মোহনবাগানকে সেই চ্যাম্পিয়নের খেতাব এনে দিতে চান লিওনেল মেসির ভক্ত ও পল পোগবার দাদা।

না, ভাই পলের সঙ্গে তাঁর এই ভারত অভিযান নিয়ে কোনও কথা হয়নি। শুধু জেনেছেন তাঁর এই সিদ্ধান্তে খুশি সদ্য জুভেন্তাসে যোগ দেওয়া এই তারকা ফুটবলার। তবু কলকাতার ক্লাবে খেলতে আসা তাঁর বড়দা ফ্লোরেন্তিন মনে করেন, পল যেমন ব্যস্ত তাঁর ফুটবল কেরিয়ার নিয়ে, তিনিও নিজের ফুটবল নিয়ে কম ব্যস্ত থাকেন না।

ফ্রান্সের দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাব সোশোতে খেলতেন যিনি, সেই ৩২ বছর বয়সি সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার এটিকে মোহনবাগানের সঙ্গে দুবছরের জন্য যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন, তা জানা যায় গত জুনে। সোশোতে সই করার আগে তিনি লিগ ওয়ানের ক্লাব স্যাঁ এতিয়েনে ছবছর ছিলেন। গত দুই মরশুমে সোশোর হয়ে ৬৩টি ম্যাচ খেলেছেন এই পোগবা।

২০১৮-য় তুরস্কের ক্লাব লিগে খেলতে যান। পরে আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারেও খেলেন আটলান্টা ইউনাইটেডের হয়ে। তাদের ইউএস ওপেন কাপ ও ক্যাম্পিওনেস কাপ জয়ী দলে ছিলেন তিনি। ফ্রান্সের সোশোতে এক বছরের চুক্তি বাকি ছিল তাঁর। সেখান থেকেই দুবছরের চুক্তিতে কলকাতার ক্লাবে যোগ দিলেন ফ্লোরেন্তিন পোগবা।

রবিবার কলকাতায় পা রেখে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে যে ভাবে এক ঝাঁক প্রশ্ন সামলালেন, তার উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হল এখানে।     

ভারতে এসে এটিকে মোহনবাগানের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?

সিদ্ধান্তটা খুব তাড়াতাড়ি নিয়েছি। একদিন এজেন্টের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ও আমাকে জানাল এটিকে মোহনবাগানের একজন সেন্টার ব্যাক প্রয়োজন। কারণ, একজন খেলোয়াড় গুরুতর চোট পেয়েছে। আমাকে জিজ্ঞেস করল, আমি আগ্রহী কি না? তখন আমি বললাম, কেন নয়? নতুন দেশ দেখার ও নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ। তাই রাজি হলাম। খুব তাড়াতাড়িই ওদের সবুজ সঙ্কেত এসে যায় আমার কাছে। (নিকোলাস) আনেলকা ও (রবার্ট) পিরেস, যারা এর আগে ভারতে খেলে গিয়েছে, তাদের কাছেও শুনেছি এ দেশের লিগের কথা। ভাল ভাল খেলোয়াড়রা খেলে গিয়েছে এখানে। আমি নিজে এখানকার ফুটবল লিগ নিয়ে তেমন কিছু জানতাম না। তাই জানতে এসেছি সত্যিই কেমন এখানকার ফুটবল। তা ছাড়া এর আগে আমার স্ত্রী ভারতে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল একবার। এ বার ওকে বলেছি, তোমার ইচ্ছাপূরণ হতে চলেছে। তুমিও চলো আমার সঙ্গে। 

এখানে আসার আগে কি আপনার ভাই পল পোগবার কাছ থেকে কিছু পরামর্শ নিয়ে এসেছেন? কী ভাবে একটা অজানা দেশে এসে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেবেন, ইত্যাদি নিয়ে?

না সে রকম কোনও কথা হয়নি ওর সঙ্গে। আমি এখানে খেলতে আসায় ও খুশি এবং সে জন্য শুভেচ্ছাও জানিয়েছে। কিন্তু এখানকার লিগ বা ক্লাব নিয়ে কোনও কথা বলেনি। ও নিজের ফুটবল কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত থাকে, আমি আমার কেরিয়ার নিয়ে থাকি। ওকে অনুসরণ করি ঠিকই। তবে ওর ফুটবল কেরিয়ার নিয়ে আমি বেশি কথা বলি না।

এখানে আসার আগে কলকাতা ডার্বি নিয়ে কিছু শুনেছেন? এই ম্যাচে নামার জন্য আপনি তৈরি?

ডার্বি মানেই দুর্দান্ত ম্যাচ। আমি আগেও ডার্বি খেলেছি। ফ্রান্সের স্যাঁ এতিয়েন ও লিয়ঁ-র মধ্যে যে ডার্বি হয়, তাতে খেলেছি। এ সব ম্যাচে পরিবেশ রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই ম্যাচও নিশ্চয়ই সে রকমই উত্তেজনাময় থাকবে। আমি অপেক্ষা করে আছি এই ডার্বির জন্য।

ফ্রান্সে বড় হওয়া সত্ত্বেও আপনি গিনির জাতীয় দলের হয়ে খেলেন কেন?

ছোটবেলা থেকেই আমি গিনির জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলার স্বপ্ন দেখতাম। তবে ফ্রান্সের অনূর্ধ্ব ২০ দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাই এবং ভাল খেলি। অনূর্ধ্ব ২৩ দলেও ডাক পাই এবং তাদের হয়ে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে খেলি। তখন গিনি দলের ম্যানেজার আমাকে তাদের জাতীয় দলের হয়ে খেলার অনুরোধ করেন। গিনি-ই আমার হৃদয় জুড়ে রয়েছে। তাই  গিনির হয়ে খেলারই সিদ্ধান্ত নিই। আমি জানি, ফ্রান্সের জাতীয় দলে খেলার যোগ্যতা আমার আছে। কিন্তু হৃদয়ের ডাকে সাড়া দিয়েই গিনির হয়েই খেলি।

আপনার প্রিয় ফুটবলার কে?

মেসিই আমার সবচেয়ে প্রিয় ফুটবলার। অবিশ্বাস্য প্রতিভা। টেকনিক বলুন বা গতি, সব দিক থেকেই ও নিখুঁত। তাই ওকেই সবচেয়ে ভাল লাগে।

কিন্তু আপনি তো একজন ডিফেন্ডার?

ফুটবল জীবনের শুরুর দিকে কিন্তু আমি একজন স্ট্রাইকারই ছিলাম। দশ নম্বর জার্সি পরে খেলতাম। উইঙ্গার হিসেবেও খেলেছি। কিন্তু একবার দলের এক সতীর্থ ডিফেন্ডারের গুরুতর চোট লাগায় কোচ আমাকে তার জায়গায় খেলতে বলেন। আমি ডিফেন্সে চলে যাই এবং দল টানা জিততে শুরু করে। তখন কোচ আমাকে রক্ষণেই খেলে যেতে বলেন।

কলকাতায় প্রথম দিন অনুশীলনে এসে আপনার কেমন লাগল? বিশেষ করে সমর্থকদের?

সমর্থকেরাই তো সব কিছু। যখন আমি স্যাঁ এতিয়েনে খেলতাম, তখন সমর্থকেরা রোজ অনুশীলন দেখতে আসত, খেলা দেখতে এসে তুমুল চিৎকার করত। এখানকার সমর্থকেরাও তেমনই। ফুটবলে সমর্থকেরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি ওদের খুবই পছন্দ করি।

আপনার নতুন দলে এক ফরাসি তারকা রয়েছেন, হুগো বুমৌস। যিনি নাকি আপনার ভাল বন্ধুও। ওঁর সঙ্গে কি আপনার কথা হয়েছে ভারতীয় ফুটবল নিয়ে?

হ্যাঁ, কথা হয়েছে দু-একমাস আগে। আমাদের এজেন্টও একই। ও তো খুবই ভাল ফুটবলার। দলকে সাফল্য পেতে প্রচুর সাহায্য করে। এ বারেও আশা করি ওর জন্য দল একাধিক টুর্নামেন্ট ও লিগে সাফল্য পাবে। আমারও লক্ষ্য একই থাকবে।

আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য কী?

লিগের সেরা ডিফেন্ডার হতে চাই। দলকে লিগ (হিরো আইএসএল) জেতাতে চাই। এখন পর্যন্ত ভারতের কোনও ক্লাব এএফসি কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়নি। ক্লাবকে সেই খেতাব জেতানোই আপাতত আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ।

আপনি শেষ ম্যাচ কবে খেলেছেন? এখানে ম্যাচ খেলার জন্য কতটা তৈরি আছেন এখন?

আমি ফিটই আছি। অফ সিজনেও টানা ট্রেনিং করি আমি। বড়জোর এক সপ্তাহ ছুটি নিই হয়তো স্ত্রীর অনুরোধে। কিন্তু ট্রেনিংয়ে ঘাটতি হয় না। এক সপ্তাহ পরেই যদি মাঠে নামতে বলা হয় আমাকে, আমি সে জন্য তৈরি আছি।