এএফসি কাপ গ্রুপ লিগের প্রথম ম্যাচে নামার আগেই সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, গোকুলম কেরালা এফসি-র বিরুদ্ধে নিজেদের ফেভারিট বলতে কখনওই রাজি নন। সদ্য হিরো আই লিগ জয়ী দলের প্রশংসাও করেন তিনি। বুধবার বিকেলে কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রমাণ হয়, একেবারেই ভুল বলেননি এটিকে মোহনবাগানের স্প্যনিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো। বুধবার অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ৪-২-এ জিতে এএফসি কাপের অভিষেক স্মরণীয় করে রাখে গোকুলম কেরালা এফসি।

এ দিন প্রথমার্ধে একাধিক অবধারিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করার মাশুলই দিতে হয় হিরো আইএসএল সেমিফাইনালিস্টদের। প্রথমার্ধের শেষ দিকে নির্ভরযোগ্য স্প্যানিশ সেন্টার ব্যাক তিরি চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই তাদের রক্ষণে যে ফাটল তৈরি হয়, সেই ফাটলকে কাজে লাগিয়েই একের পর এক গোল দেয় গোকুলম।

এএফসি কাপ গ্রুপ লিগের শুরুতেই এমন অপ্রত্যাশিত ধাক্কা খেয়ে অবশ্য বিচলিত নন এটিকে মোহনবাগান কোচ। ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানিয়ে দেন, এখন দলের ফুটবলারদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা করাই তাঁর প্রধান কাজ। তার পরে আসন্ন ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করবেন। তা ছাড়া নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার তিরির চোটের জন্যই যে এ দিন তাঁদের হারতে হল, এই যুক্তিও মানতে রাজি নন সবুজ-মেরুন কোচ।

ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে ফেরান্দো বলেন, “তিরির চোট লাগার ফলে আমাদের পরিকল্পনা বদলাতে হয়। তবে তিরির চোটের জন্যই যে আমরা হেরেছি, এ কথা মানতে রাজি নই আমি। বিপক্ষও তাদের খেলা বদলে ফেলে। ওঠা-নামা অনেক দ্রুত শুরু করে। ঘন ঘন ক্রস দিতেও শুরু করে। এত উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে আমাদের উইলিয়ামস, কাউকোরাও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তবে কোনও অজুহাত দিতে চাই না। আমাদের ওঠা-নামা তেমন ভাল হয়নি। প্রথমার্ধে অনেকগুলো সুযোগ পেয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত গোল পাইনি। এই হার থেকে শিক্ষা নিতে হবে আমাদের। তবে এটা এখন অতীত”।

ম্যাচের প্রথমার্ধে আক্রমণাত্মক এটিকে মোহনবাগানকে আটকে রাখার পরে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই খেলার স্টাইল পাল্টে বিপক্ষকে চাপে ফেলে দেয় গোকুলম কেরালা। শুরুতেই গোল পেয়ে যান স্লোভেনিয়ান ফরোয়ার্ড লুকা মাজেন। দলের তৃতীয় গোলটিও তাঁর। এ ছাড়া নবাগত ও পরিবর্ত ফরোয়ার্ড রিশধ পুথানভিতিল ও পরিবর্ত হিসেবে নামা অপর ফরোয়ার্ড জিতিন সুব্রন গোল করে দলের জয় সুনিশ্চিত করেন। এটিকে মোহনবাগানের অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার প্রীতম কোটাল ও লিস্টন কোলাসো ব্যবধান কমালেও শেষ পর্যন্ত কোনও লাভ হয়নি তাদের।

এই হারের মধ্যে এটিকে মোহনবাগান শিবিরে আরও খারাপ খবর, তিরির চোট বেশ গুরুতর এবং আগামী সাত-আট মাস হয়তো তাঁকে মাঠে দেখা যাবে না। অর্থাৎ আসন্ন হিরো আইএসএলে হয়তো অনিশ্চিত তিনি। এই ব্যাপারে ফেরান্দো সাংবাদিকদের বলেন, “দলের ডাক্তার, ফিজিওরা বললেন, তিরির চোটটা গুরুতর। খুব দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপারটা। সারা মরশুমেই চোট আঘাতের সমস্যায় ভুগেছি আমরা। কার্ল ম্যাকহিউকে হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছিল, হুগো বুমৌস, রয় কৃষ্ণার মতো একাধিক নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়েরও চোট লেগেছিল। আমাদের জানতে হবে, কেন এত চোট হচ্ছে”।

ম্যাচের সময় নিয়ে আগে থেকেই দ্বিধায় ছিল এটিকে মোহনবাগান দল। আগে ঠিক ছিল দুপুর দুটোয় ম্যাচ হবে। কিন্তু ক্লাবের অনুরোধে তা পিছিয়ে বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নেয় এএফসি। বুধবার ম্যাচ শুরুর সময় তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৩৫ ডিগ্রি। তবে আবহাওয়ার প্রভাব তাঁর দলের পারফরম্যান্সে পড়ে বলে মনে করেন না সবুজ-মেরুন কোচ। বলেন, না, তা ঠিক নয়। আমাদের প্রতিপক্ষকেও তো একই আবহাওয়ায় ও একই সময়ে খেলতে নামতে হয়েছে। কোনও দল ৩-১-এ পিছিয়ে পড়লে সেই দলের মানসিকতা সমান থাকে না। যে দল ৩-১-এ এগিয়ে থাকে, যত গরমই হোক, তারা দৌড়বেই। কিন্তু যারা পিছিয়ে থাকে তাদের পক্ষে পরিস্থিতিটা কঠিন হয়ে পড়ে। আবহাওয়ার চেয়ে মানসিকতার প্রভাব আমাদের ওপর বেশি পড়েছে

প্রথম ম্যাচেই অপ্রত্যাশিত হারের পরে দলকে হতাশার অন্ধকার থেকে বার করে আনতে চান ফেরান্দো। জানান ফুটবলারদের মানসিকতায় আমূল পরিবর্তন আনাটাই এখন তাঁর প্রধান কাজ। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এখন আমাদের বসুন্ধরার বিরুদ্ধে পরের ম্যাচ নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। হাতে দু’দিন রয়েছে। এই ৪৮ ঘণ্টায় দলের মানসিকতা বদলাতে হবে আমাকে। এখন দলের ছেলেদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আশা করি, বসুন্ধরার বিরুদ্ধে আমাদের দল আরও ভাল পারফরম্যান্স দেখাবে”।

অন্য দিকে, এএফসি কাপের অভিষেকে দলের এই অসাধারণ সাফল্য নিয়ে গোকুলম কেরালা এফসি-র কোচ ভিনসেঞ্জো আলবার্তো উচ্ছ্বসিত। বলেন, “আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ীই খেলেছি। কৌশল ও গতির দিক থেকে আমরা আজ ওদের চেয়ে অনেক বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিলাম। ওদের দলে যেমন গোল করার ভাল স্ট্রাইকার আছে, তেমন আমাদের দলেও লুকার মতো ভাল ফরোয়ার্ড আছে, যে একাই দুই দলের মধ্যে ফারাক গড়ে দিতে পারে। এই টুর্নামেন্টে আমরা ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছি। এটিকে মোহনবাগান ভাল দল, ওদের দলে একাধিক জাতীয় দলের খেলোয়াড় রয়েছে ঠিকই। আমাদেরও এ বার নিজেদের এই আন্তর্জাতিক মঞ্চে এ দেশের অন্যতম সেরা দল হিসেবে প্রমাণ করার পালা। আশা করি, তা পারব”। জোড়া গোলের নায়ক লুকা বলেন, “এই ম্যাচে আমাদের কিছু হারানোর ছিল না। এই সাফল্য আমাদের কাছে এবং আমাদের সমর্থকদের কাছে অনেক কিছু”।

এটিকে মোহনবাগানের পরের ম্যাচ যাদের বিরুদ্ধে, সেই বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস বুধবার রাতে তাদের প্রথম গ্রুপ ম্যাচে মলদ্বীপের মাজিয়া এসআর-কে ১-০-য় হারিয়ে ইতিবাচক সূচনা করে। একমাত্র গোলটি করেন দলের গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড নুহা মারঙ। ৩৩ মিনিটের মাথায় তাঁর দেওয়া এই একমাত্র গোলে জেতে বসুন্ধরা।

যেহেতু এই গ্রুপ থেকে সেরা দলই নক আউট পর্বে উঠবে, তাই এটিকে মোহনবাগানের সামনে এখন পরের দু’টি ম্যাচই জেতা ছাড়া কোনও উপায় নেই। শনিবার তাদের আরও এক কঠিন লড়াইয়ে নামতে হবে বসুন্ধরার বিরুদ্ধে। গত বছর তাদের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করেছিল সবুজ-মেরুন শিবির। এ বার জয় ছাড়া কোনও উপায় নেই তাদের। তবে প্রথম ম্যাচেই বসুন্ধরা বুঝিয়ে দিয়েছে, কাজটা ফেরান্দোর দলের পক্ষে মোটেই সোজা হবে না। অন্যদিকে, পরের ম্যাচে মাজিয়াকে হারাতে পারলেই নক আউট পর্বের দিকে অনেকটা এগিয়ে যাবে গোকুলম কেরালা এফসি।