হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দীর্ঘদিন খেলে আসছেন তাঁরা। ফলে ভারত তাঁদের কাছে এখন সেকেন্ড হোম। তাই ভারতীয় ফুটবল নিয়েও তাঁদের আগ্রহ কম নয়। সম্প্রতি ভারতীয় দল দুবাইয়ে গিয়ে যে জোড়া ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলে এল, তাতেও নজর ছিল এটিকে মোহনবাগানের ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড মার্সেলো পেরেইরা ও এফসি গোয়ার স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড তথা ক্যাপ্টেন এডু বেদিয়া। এই দুই ম্যাচ দেখার পরে তাদের প্রতিক্রিয়া, ভারতীয় ফুটবলে প্রচুর সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে। তবে সেগুলোকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে গেলে অনেক পরিশ্রম দরকার।

দুবাইয়ে প্রথম ম্যাচে ওমানের বিরুদ্ধে লড়াকু ফুটবল খেলে ১-১ ড্র করলেও সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর বিরুদ্ধে তারা ছগোলে হেরে যায়। হিরো আইএসএলে ৩৩টি গোলের মালিক মার্সেলো পেরেইরা বা মার্সেলিনহো এই দুই ম্যাচই দেখার পরে বলছেন, এতে ভেঙে পড়ার কিছু নেই। ভারতীয় ফুটবলারদের পাশেই রয়েছেন বলে পেলে, রোনাল্ডো, রবার্তো কার্লোসের দেশের এই ফুটবলার তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে লিখেছেন।

মার্সেলিনহো টুইটারে লেখেন, আরব আমিরশাহীর দুজন বিদেশি খেলোয়াড় রয়েছে (ফাবিও লিমা ও সেবাস্তিয়ান তাগলিয়াবু), যাদের স্থানীয় পাসপোর্ট রয়েছে। ওরাই এই ম্যাচে সবচেয়ে বড় ফারাক গড়ে দেয়। আমি মনে করি ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ যথেষ্ট উজ্জ্বল। প্রত্যেক বছর যে এগিয়ে যাচ্ছে এই দেশের ফুটবল, এটা তো সত্যিই

এই দুই ম্যাচে ভারতীয় দলের ক্রোয়েশিয়ান কোচ ইগর স্টিমাচ প্রায় এক ডজন ফুটবলারকে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেকের সুযোগ দেন। প্রথম ম্যাচেই দশজন একসঙ্গে প্রথম ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামেন। সেই ম্যাচে প্রথমার্ধে এক গোলে পিছিয়ে থাকার পরে দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। এটিকে মোহনবাগানের তারকা ফরোয়ার্ড মনবীর সিং একটি দুর্দান্ত গোল দেন মুম্বই সিটি এফসি-র বিপিন সিংয়ের সহায়তায়।

কিন্তু তার চার দিন পরেই আমিরশাহীর বিরুদ্ধে ছন্দপতন ঘটে এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর কাছে এত বড় ব্যবধানে হারে ভারত, যা গত দশ বছরে আর কখনও হয়নি। ২০১০-এর নভেম্বরে কুয়েতের কাছে ১-৯ গোলে হারের পর এই প্রথম এমন বড় ব্যবধানে হারল ভারতের সিনিয়র দল।

আমিরশাহীর কাছে এই হার নিয়ে ভারতীয় দলের কোচ স্টিমাচ সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি বলেছেন, আমিরশাহীর সেরা দলের বিরুদ্ধে আমরা আমাদের দলের শক্তি পরখ করে দেখছিলাম। আমিরশাহীর এই দলটা অনেকদিন ধরে একসঙ্গে খেলছে। আমি দেখে অবাক হচ্ছি যে এই ফলটা নিয়ে চারদিকে তুমুল হইচই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের চারপাশে একটা খারাপ আবহাওয়া তৈরির চেষ্টা করছে অনেকে

প্রাক্তন বিশ্বকাপার স্টিমাচ আরও বলেন, এই সফরটা আয়োজনই করা হয়েছিল দলের তরুণ ফুটবলারদের পরখ করে নেওয়ার জন্য। এই ধরনের চাপের মুখে তারা নিজেদের কতটা মেলে ধরতে পারে, তা দেখার জন্য। তাই প্রত্যেককেই মাঠে নামার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ওমানের বিরুদ্ধে ম্যাচটা সহজ ছিল। কারণ, ওরা ওদের চেনা ছন্দে ছিল না। কিন্তু আমিরশাহীর বিরুদ্ধে ম্যাচটা ছিল একেবারে অন্য রকম। ওরা ওদের সেরা দল, পূর্ণ শক্তি নিয়ে নেমেছিল

ভারতীয় ফুটবলের এই পরিস্থিতি নিয়ে এফসি গোয়ার অধিনায়ক স্প্যানিশ তারকা এডু বেদিয়াও উদ্বিগ্ন। তবে তিনি পাশাপাশি আশাবাদীও। ইনস্টাগ্রামে নিজের পোস্টে তিনি লিখেছেন, গত চার বছরে আমাকে বহুবার প্রশ্ন করা হয়েছে ভারতীয় ফুটবল ও ইউরোপিয়ান ফুটবলের মধ্যে এত তফাৎ কেন? কী করেই বা এ দেশের ফুটবলের মানোন্নয়ন করা যাবে? প্রত্যেকবারই আমি একই উত্তর দিয়েছি। ভারতের এই দুই ম্যাচে যা দেখলাম, তার পরে নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে অনেকেই একমত হবেন

বেদিয়া আরও লেখেন, এই (আমিরশাহী) ম্যাচটা ভারতীয় ফুটবলের কাছে বাস্তবের একটা বড় ধাক্কা। ভারতীয় কোচ তরুণদের দেশের জার্সি গায়ে খেলার সুযোগ দিয়ে খুবই ভাল করেছেন বলে আমার মনে হয়। তবে আসল কথাটা হল বিশ্বের ৮০ নম্বর দলের মান অনেকটা ওপরে। ফলটা এখানে বড় কথা নয়। কিন্তু ওরা (আমিরশাহী) যে ভাবে টেকনিক্যাল কোয়ালিটি বলুন, ট্যাকটিক্স বলুন বা স্পেস কন্ট্রোল-- সব দিক থেকেই দমিয়ে রাখল ভারতকে, তা খুবই যন্ত্রনাদায়ক

ভারতের বিশ্বকাপ মূলপর্বে খেলার সম্ভাবনা নিয়ে বেদিয়ার বক্তব্য, এই প্রশ্ন আমাকে অনেক সাংবাদিকই করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয়, এখনই এই নিয়ে না ভাবাই ভাল। ওই জায়গায় পৌঁছতে গেলে এখন অনেকগুলো বছর অ্যাকাডেমি, তৃণমূল ও যুব স্তরের ফুটবলারদের নিয়ে প্রচুর কাজ করতে হবে

আগামী জুনে ভারতের তিনটি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ রয়েছে, যেগুলি তারা খেলবে কাতার, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। তাতে কেমন ফল আশা করছেন, এই প্রশ্নে স্টিমাচ বলেছেন, আট দিনের মধ্যে তিনটে কঠিন ম্যাচ খেলা মোটেই সহজ হবে না। তবে আমাদের এই চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি হতে হবে। সময় এর উত্তর দেবে। তবে এটুকু প্রতিশ্রুতি দিতে পারি, আমরা নিজেদের সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করব ও সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করব। সঠিক দূরপাল্লার পরিকল্পনা ও কঠোর পরিশ্রম শেষপর্যন্ত আনন্দই এনে দেয়