মাঠ বদল। অন্যরকম পরিস্থিতি। দলের অবস্থায় পরিবর্তন। তাই চলতি হিরো আইএসএলের প্রথম ম্যাচ যে রকম হয়েছিল, রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এটিকে এফসি বনাম কেরালা ব্লাস্টার্স ম্যাচটা তার চেয়ে একেবারে আলাদা হবে বলেই মনে করেন দুই দলের কোচ। 

এ বারের হিরো আইএসএলের উদ্বোধনী ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ৬ মিনিটের গোলে এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ১-২ হেরে যায় কলকাতার দল। সে দিন যে ফুটবল খেলেছিল এটিকে এফসি, এ বার ঘরের মাঠে তার চেয়ে অনেক উন্নত পারফরম্যান্স দেখাবেন, বিশ্বাস দলের প্রধান কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের।

অন্য দিকে, কেরালার কোচ এলকো শাতোরি বলছেন, এ বার আরও আটঘাট বেঁধে নামতে পারবে দল। তাই এটিকে-কে ফের হারাতে তাঁরা  প্রস্তুত। রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে নামতে চলেছে এটিকে এফসি। তার ২৪ ঘণ্টা আগে সাংবাদিকদের কোচ আন্তোনিও লোপেস হাবাস জানিয়ে দিলেন, “আমরা যে প্রতি দিনই উন্নতি করছি, এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি টিমটাকে আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে চাই। লিগের প্রথম ম্যাচে ওরা ৬০ মিনিট ভাল খেলেছিল। কিন্তু পরের ম্যাচগুলোতে সেই ধারাবাহিকতা ওরা বজায় রাখতে পারেনি। তখনকার চেয়ে এখন আমরা অনেক ভাল ফুটবল খেলছি। অনেক ভাল ছন্দে রয়েছি। খেলোয়াড়দের মানসিকতাও এখন অনেক উন্নত। এখন লক্ষ্যে পৌঁছতে গেলে প্রত্যেকটা দিন আমাদের লড়াই করতে হবে”।

অন্যদিকে কেরালার কোচ শাতোরি যুবভারতীর প্রেস কনফারেন্স রুমে হাবাসের চেয়ারে বসেই বলেন, “প্রথম ম্যাচটাতে পরষ্পরের সম্পর্কে কারও কিছু জানা ছিল না দুই দলের। এই ম্যাচে ওদের দুর্বলতাগুলো আমার জানা আছে। সে গুলো কী ভাবে কাজে লাগাতে হবে, তাও জানি। আমাদের একটা ভাল গেমপ্ল্যান আছে। আর গত সপ্তাহে আমরা পাঁচ গোলে জিতেছি। তাতে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে ছেলেদের। তা ছাড়া এটিকে-র বিরুদ্ধে (২০১৬-র পর থেকে) আমরা হারিনি। গত বছর ড্র হয়েছে, এ বার একটা ম্যাচে জিতেছি। ফের একটা ম্যাচে জিততে চাই”।

শাতোরি বিপক্ষের যে দুর্বলতাগুলির দিকে ইঙ্গিত করছেন, শনিবার তার প্রধান হয়ে উঠতে পারে অস্ট্রেলিয়ান গোলমেশিন ডেভিড উইলিয়ামসের অনুপস্থিতি। গত শনিবার মুম্বইয়ে হ্যামস্ট্রিং সমস্যা দেখা দেওয়ায় যিনি আপাতত বিশ্রামে। শনিবারও দলের অনুশীলনে দেখা যায়নি তাঁকে। মিডফিল্ডার প্রণয় হালদারেরও একই সমস্যা। তিনিও উইলিয়ামসের মতো রবিবার মাঠে নামতে পারবেন না। তবে হাবাসের কথা শুনে মনে হচ্ছে এই নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন তিনি। বলেন, “ডেভিড কাল খেলবে কি না, তা কাল সকালের আগে চূড়ান্ত ভাবে জানা যাবে না। তবে প্রয়োজনে দলে পরিবর্তন করতে হলে হবে। অন্য আর একজন সুযোগ পাবে। তবে তাতে খেলায় খুব একটা পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। আমার ফুটবল-দর্শনটা আসলে দলভিত্তিক, ব্যক্তি-কেন্দ্রিক নয়”। দলের কোনও নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় চোট পেয়ে বসে গেলে তাঁর জন্য হা-হুতাশ করতে রাজি নন হাবাস। বলে দিলেন, “আমি কান্নাকাটিতে বিশ্বাসী নই। ফুটবল এমনই। যারা খেলার মতো অবস্থায় আমার হাতে রয়েছে, তাদের নিয়েই খেলতে হবে। আগামী কালের দিকে তাকিয়ে খেলতে হবে। যারা আছে, তাদের ওপর ভরসা করতেই হবে। তাই এই নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করতে চাই না”।

বিপক্ষের এই সমস্যা গুরুতর নাও হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন শাতোরি। তিনি স্বীকার করেন, “সব দলেই চোট-আঘাত  হয়ে থাকে। তবে এটিকে-র পরিবর্ত প্লেয়াররাও এত ভাল যে, কারও চোট হলে তাতে কোনও গুরুতর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। ওদের জবি জাস্টিন আছে, বলবন্ত সিং আছে। ওরাও যথেষ্ট ভাল”।

এটিকে শিবিরের কাছে খুশির খবর হল, দুই স্প্যানিশ ডিফেন্ডার ম্যান্ডি সোসা ও ভিক্টর মনজিল দু’জনেই সদ্য দলে যোগ দিলেও তাঁর কিন্তু সতীর্থদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে একেবারেই সময় নেননি। ভিক্টর তো প্রথম দিন থেকেই ভাল পারফরম্যান্স দেখাচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে হাবাস বলেন, “ম্যান্ডি ও মনজিল দুজনেই ভাল খেলোয়াড় ও শৃঙ্খলাবদ্ধ খেলোয়াড়। ভাল খেলোয়াড় দলে পাওয়াটা কোচের পক্ষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ওদের নিয়ে আমি খুশি। ওরা চলে আসায় দলে যে চারিত্রক দৃঢ়তা ও শক্তি এসেছে, সেটা আমাদের পক্ষে খুবই ভাল”।

দলের ভারতীয় ডিফেন্ডার প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাস, সুমিত রাঠিদের সঙ্গে বোঝাপড়া নিয়ে ম্যান্ডি বলেন, “প্রীতম যথেষ্ট ভাল ফুটবলার। অরিন্দম, প্রবীর, এরা কেউই মোটেই খারাপ নয়। আসলে ভাল খেলোয়াড়দের সঙ্গে সহজেই বোঝাপড়া তৈরি করে নেওয়া যায়”। তরুণ ডিফেন্ডার সুমিত রাঠিরও প্রশংসা করে অস্ট্রেলিয়ান লিগে রয় কৃষ্ণা ও উইলিয়ামসের সতীর্থ হিসেবে খেলে আসা স্প্যানিশ তারকা বলেন, “সুমিতের দক্ষতা ও মানসিক শক্তি যথেষ্ট ভাল। আমার মনে হয়, আরও দু-তিনটে ম্যাচ খেলার পরে হয়তো ভারতীয় দলেও ডাক পাবে ও”।  

প্রথম ম্যাচে এটিকে-কে হারানোর পরে টানা ন’টি ম্যাচে জয় পায়নি শাতোরির দল। গত সপ্তাহে হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে ম্যাচে সদ্য জয়ে ফিরেছে তারা। দলের এই বেহাল দশার কারণ জানতে চাইলে শাতোরি বলেন, “আমরাই একমাত্র দল, যাদের সাতজন বিদেশি আছে। তবে তাদের মধ্যে ৬ জন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রায়ই চোট পেয়ে মাঠের বাইরে থেকেছে। এটা আমাদের ব্যর্থতার একটা বড় কারণ। ডিফেন্স নিয়ে আমাদের খুবই ভুগতে হয়েছে, সমানে মাঝমাঠে ও রক্ষণে খেলোয়াড় বদলাতে হয়েছে। এ বারের লিগে একই একাদশ নিয়ে পরপর দুটো ম্যাচ খেলতে পেরেছি বলে মনে পড়ে না”।

দলের দুই বিদেশী স্ট্রাইকার ওগবেচে ও মেসি বৌলি নিয়মিত গোল করে গেলেও দল কিন্তু টানা সাফল্যের মুখ দেখেনি। এর কারণ হিসেবে কেরালা কোচ বলেন, “আমরা বেশিরভাগ গোলই খেয়েছে সেটপিস থেকে, ডিফেন্সের দোষে। এই জায়গাটা শুধরে নেওয়াই যায়। এ ছাড়া ডিফেন্সে তেমন কোনও গলদ আছে বলে মনে হয় না। গত বছর আমাদের ডিফেন্স  ছিল অন্যতম সেরা। কিন্তু এ বার বারবার খেলোয়াড় বদল হওয়ায় বোঝাপড়াটা ঠিকমতো তৈরি হয়নি হয়তো”।  তবে এখনও প্রথম চারে যাওয়ার আশা ছাড়তে রাজি নন তিনি। বলেন, “লিগ টেবলে আমাদের ( ৮ নম্বর) আর চার নম্বর দলের মধ্যে তফাৎ মাত্র পাঁচ পয়েন্টের। এখনও লিগ ওপেন আছে। কী হবে, এখন কিছুই বলা যায় না”।