অতীতের সাফল্যের কথা মনে রেখে আর আইএসএলের মাঠে নামতে চান না মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোচ হুয়ান ফেরান্দো। গত ছ’মাসে দু’টি ট্রফি জিতেছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। গতবারের আইএসএল কাপ জয়ের পর তারা ডুরান্ড কাপেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই শনিবার আইএসএলের প্রথম ম্যাচে পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে নামছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। 

প্রথম ম্যাচে নামার আগে শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে ফেরান্দো জানালেন, “কাল নতুন টুর্নামেন্ট শুরু হবে। ডুরান্ড কাপে কী হয়েছে বা এএফসি কাপে কী হয়েছে তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে আমাদের। ঘরের মাঠে আইএসএল অভিযান শুরু করছি আমরা। অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। পাঞ্জাব ভাল দল। ওরা গতবারের আইলিগ চ্যাম্পিয়ন। ভাল ম্যাচ হবে। ৯০ মিনিটই ফোকাস ধরে রাখতে হবে আমাদের”। 

প্রথম ম্যাচকেই ফাইনালের মতো দেখতে চান ফেরান্দো। বলেন, “কালকের ম্যাচের জন্য দলকে প্রস্তুত করাই আমার লক্ষ্য। কম সময়ে অনেক ম্যাচ খেলতে হয়েছে আমাদের। তাই কিছু খুঁটিনাটি ব্যাপার নিয়ে আমরা বেশি চর্চা করতে পারনি। সেগুলো এখন করছি। ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচ হলেও এই ম্যাচকে ফাইনালের মতোই দেখতে হবে। প্রত্যেককে তৈরি থাকতে হবে। সবাইকে মানসিক ভাবেও নিখুঁত থাকতে হবে”। 

ডুরান্ড কাপ বা এএফসি কাপের ম্যাচে যে পরিকল্পনা নিয়ে দল নামিয়েছিলেন, তাতে পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়ে রাখলেন সবুজ-মেরুন কোচ। বলেন, “কাল আমাদের অন্যরকম সিস্টেমে খেলতে হবে। ডুরান্ড কাপ ফাইনাল বা এএফসি কাপের গত ম্যাচে যেমন খেলেছিলাম, তার চেয়ে আলাদা। কারণ, প্রতিপক্ষ অন্যরকমের। তবে ঘরের মাঠে একটু আধটু ঝুঁকি নিয়ে খেলা যায়। সেটাই করার চেষ্টা করতে পারি”। 

কার্যত সারা মরশুমের জন্য ছিটকে গিয়েছেন আশিক কুরুনিয়ান। ডুরান্ড কাপের ফাইনালে লাল কার্ড দেখায় খেলতে পারবেন না অনিরুদ্ধ থাপাও। তবে তাদের অনুপস্থিতি নিয়ে খুব একটা চিন্তিত মনে হল না কোচকে। বলেন, “আমার দল নিয়ে আমি খুবই খুশি। আমাদের দলে হয়তো অনেকেই অনেক ম্যাচে খেলতে পারবে না। কেউ চোট পাবে, কারও হয়তো কার্ড সমস্যা থাকবে। কিন্তু তাদের বদলে খেলার মতো বিকল্প ভাল ফুটবলার আমাদের আছে। তারাই খেলবে। তাই এই নিয়ে চিন্তিত নই। আমি আমার পরিকল্পনা বদলাব না। দলের সবাই ভাল খেলার জন্য তৈরি। সামনে লম্বা মরশুম। সব ম্যাচেই ভাল খেলতে হবে আমাদের”। 

তবে আশিকের চোট নিয়ে হতাশ স্প্যানিশ কোচ। বলেন, “আশিকের চোটটা গুরুতর, খুব হতাশাজনক। ও কবে ফিরবে বলা মুশকিল। এই সময়ে ওর পাশে থাকতে হবে দলের সবাইকে, পরিবারের লোকেদের মতো। তবে লিস্টনের মতো দলের অন্যদের ওপরও আমার ভরসা আছে”। 

আইএসএলের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত পরপর দু’বার কোনও দল ট্রফি জিততে পারেনি। এ বার তাঁরা পারবেন কি না, এই প্রশ্ন উঠলে ফেরান্দো বলেন, “ট্রফি ধরে রাখা মোটেই সোজা নয়।  যে দলগুলি খেলছে, প্রতিটিই শক্তিশালী। প্রতিটি ম্যাচই কঠিন হবে। সব দলেরই পরিকল্পনা আলাদা হবে। এসব ঠিকমতো সামলাতে পারলে তার পর কলকাতায় ট্রফি আনা যাবে”। 

তবে প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ পাঞ্জাব এফসি এই প্রথম আইএসএলে খেলছে বলে তাঁরা বাড়তি সুবিধা পাবেন বলে মনে করেন না ফেরান্দো। বলেন, “ঘরের মাঠে খেলা সব সময়ই  ভাল ব্যাপার। কোভিডের পরে ঘরের মাঠে খেলার সুযোগ পাওয়াটা আমাদের কাছে বড় ব্যাপার। সমর্থকেরা কছাকাছি থাকে।  তাতে অনেক সুবিধা হয়। বাড়তি সময় বলতে এটুকুই। ওরা প্রথম খেলছে, সেটা আমাদের বাড়তি কোনও সুবিধা দেবে বলে মনে হয় না। সব দলই প্রায় সমান সমান। হয়তো উনিশ-বিশ তফাৎ রয়েছে। সবাই শক্তিশালী কারও বিরুদ্ধেই কোনও বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না”। 

এই মরশুমে আক্রমণাত্মক ফুটবলও চালিয়ে যাবে মোহনবাগান, তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন তিনি, “ম্যাচ জেতাই আমার লক্ষ্য। ম্যাচ জিততে গেলে তো আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতেই হবে। কখনও আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে সাফল্য আসে, কখনও আসে না। ম্যাচ ধরে ধরে আমাদের উন্নতি করতে হবে। আমরা সবসময়ই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে ভালবাসি। আগ্রাসী ফুটবলও খেলি। গত ম্যাচে যেমন আমরা অনেক সুযোগ তৈরি করেছিলাম, গত মরশুমেও কম সুযোগ তৈরি করিনি আমরা। এ বারও তাই করব”। 

ফেরান্দোর সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে আসা লিস্টন কোলাসো গত ছ’মাসে জোড়া ট্রফি জয় নিয়ে বলেন, “ট্রফি জিততে কার না ভাল লাগে? গত কয়েক মাসে আমরা দুটো ট্রফি জিতেছি। এতে আমরা যথেষ্ট উজ্জীবিত হয়েছি। তাই এ বারেও ট্রফি জেতার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামছি”। 

আশিক কুরুনিয়ান চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় তাঁর জায়গায় লিস্টনকেই খেলতে হবে। এই প্রসঙ্গে গোয়ানিজ তারকা বলেন, “আশিকের খবরটা খুবই খারাপ। দলের প্রতি পজিশনেই যারা খেলে, প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। আমাকে সুযোগ দেওয়া হলে, আমি তা কাজে লাগানোর ভরপুর চেষ্টা করব”। 

গত মরশুমের খারাপ ফর্ম নিয়ে অবশ্য তিনি খুব একটা চিন্তিত নন। বলেন, “গতবার ভাল করতে পারিনি। তবে সবারই ভাল ও খারাপ সময় যায়। আমি কখনও ভাবিনি যে আমার ফর্ম খারাপ যাচ্ছে। কারণ, নিজের ওপর আস্থা হারানোর অভ্যাস আমার নেই। আত্মবিশ্বাস বজায় রাখাটা খুবই জরুরি। এ বার ডুরান্ড কাপ ও এএফসি কাপে গোল পেয়েছি। এই মরশুমেও আমি আমার মতোই খেলে যেতে চাই”। 

এই মরশুমে যে এএফসি কাপ এবং আইএএলের লিগশিল্ড ও কাপ—তিনটিই জিততে চায় মোহনবাগান, তা জানিয়ে দিয়ে লিস্টন বলেন, “সব ট্রফিই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সে লিগশিল্ড হোক বা কাপ। এখন আমাদের ফোকাস এএফসি কাপ জয়। তার পরে আইএসএল। আমরা এই মরশুমে তিনটেই জিততে চাই”।