কলিঙ্গ সুপার কাপ: দাপুটে ফুটবলে জামশেদপুরকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন এফসি গোয়া
এই জয়ের ফলে ২০২৫-২৬ এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ ২-এর প্রাথমিক পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল এফসি গোয়া। মহাদেশীয় ফুটবলে চার বছরের অনুপস্থিতি কাটিয়ে উঠে ফের দেখা যাবে তাদের।

এ বারই প্রথম সুপার কাপ ফাইনালে উঠেছিল জামশেদপুর এফসি। কিন্তু লক্ষ্য পূরণ হল না তাদের। ৩-০-য় তাদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের খেতাব জিতে নিল এফসি গোয়া। ২০১৯-এর পর ফের এই খেতাব জিতল তারা। সে বার যে স্টেডিয়ামে চেন্নাইন এফসি-কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সেই কলিঙ্গ স্টেডিয়ামেই শনিবার ফাইনালে রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করে ইস্পাতনগরীর দলের বিরুদ্ধে তিন গোল দিয়ে কাপ হাতে তুলে নেয়।
এই জয়ের ফলে ২০২৫-২৬ এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ ২-এর প্রাথমিক পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল তারা। মহাদেশীয় ফুটবলে চার বছরের অনুপস্থিতি কাটিয়ে উঠে ফের দেখা যাবে এফসি গোয়াকে। তাদের একমাত্র এশীয় অভিযান ছিল ২০২১ সালে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে। তার পর এ বারই ফের সেই মঞ্চে পৌঁছে গেল তারা।
শনিবার ম্যাচের ২৩ মিনিটের মাথায় বোরহার গোলে প্রথম এগিয়ে যায় এফসি গোয়া। এক গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় তারা। বিরতির পর, ম্যাচের ৫১ মিনিটের মাথায় ফের গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন তিনি। ৭২ মিনিটের মাথায় দেজান দ্রাজিচের গোলের পর আর খেলায় ফেরার সুযোগ পায়নি ইস্পাতনগরীর দল।
🏆 𝙁𝘾 𝙂𝙊𝘼 🏆
— Indian Football Team (@IndianFootball) May 3, 2025
𝐊𝐀𝐋𝐈𝐍𝐆𝐀 𝐒𝐔𝐏𝐄𝐑 𝐂𝐔𝐏 𝟐𝟎𝟐𝟓 𝐂𝐇𝐀𝐌𝐏𝐈𝐎𝐍𝐒 🧡#KalingaSuperCup #IndianFootball ⚽️ pic.twitter.com/VQQGKrN59I
৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলে, মার্কেজের জোড়া ফলা সাহিল তাভোরা ও কার্ল ম্যাকহিউ জামশেদপুর এফসির হাভিয়ে সিভেরিও এবং জর্ডন মারে-কে আটকে রাখতে সমর্থ হন। তাঁদের আক্রমণভাগকে কার্যকরী হয়েয় ওঠার কোনও সুযোগই দেননি ম্যাকহিউরা। এফসি গোয়ার ফুলব্যাক বরিস সিং থাংজাম এবং আকাশ সাঙ্গওয়ানকেও প্রতিপক্ষের অর্ধে বল নিয়ে গিয়ে ফরোয়ার্ডদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়।
এই ধরনের একটি আক্রমণেই জামশেদপুর এফসির রক্ষণভাগে টুর্নামেন্টে এই প্রথমবার ফাটল ধরে। ২২তম মিনিটে সাঙ্গওয়ান প্রতিপক্ষের অর্ধে বল পান এবং বক্সের মাথায় নিয়ে গিয়ে শট নেন, যা গোলকিপার আলবিনো গোমেজ সেভ করেন। বল ছিটকে বক্সের ভেতর বোরহার কাছে আসে, যাঁর প্রথম শট স্টিফেন এজে অসাধারণভাবে ব্লক করেন। তবে স্প্যানিয়ার্ডের ভাগ্য ভাল ছিল – বলটি আবারও তাঁর কাছে ফিরে আসে এবং এ বার তিনি কোনও ভুল না করে তা জালে জড়িয়ে দেন (১-০)। এই টুর্নামেন্টে এটি তাঁর তৃতীয় গোল।
এগিয়ে যাওয়ার পরও এফসি গোয়া আক্রমণের গতি কমায়নি এবং জামশেদপুরের রক্ষণভাগে চাপ বজায় রাখে। বরিস ও সাঙ্গওয়ান দুই দিক থেকেই ক্রস সরবরাহ করতে থাকেন। অন্যদিকে, আইএসএল মরশুমে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেট-পিস গোল করা জামশেদপুর ক্রমশ এফসি গোয়ার রক্ষণকে সমস্যায় ফেলতে শুরু করে। কয়েকটি কর্নার এবং মহম্মদ উভেয়সের কয়েকটি লম্বা থ্রো-ইন গোয়ার গোলকিপার ঋত্বিক তিওয়ারিকে পরীক্ষার মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়।
প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে সবচেয়ে ভাল সুযোগটি পায় জামমশেদপুর, যখন সন্দেশ ঝিঙ্গন সিভেরিওকে আটকে রাখতে ব্যর্থ হন। রেই তাচিকাওয়ার কর্নার ছ’গজ বক্সে হেড করে পাঠান, যা সার্বিয়ান সেন্টার-ব্যাক লাজার সিরকোভিচ হেড করেন, কিন্তু তা বারে লেগে ফিরে আসে এবং পরে সেখান থেকে বল ক্লিয়ার হয়ে যায়।
বোরহার প্রথম গোলে কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা থাকলেও তাঁর দ্বিতীয় গোলটিতে ছিল দক্ষতা ও নির্ভুলতার নিখুঁত প্রতিফলন। দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটে তিনি মাঢমাঠে বল পেয়ে সামনে এগিয়ে যান এবং বাঁ পায়ে একটি দুর্দান্ত শট নেন। গোমেজ পুরোপুরি স্ট্রেচ করেও কিছু করতে পারেননি। গোলের ওপরের ডান কোণ দিয়ে ঢুকে জালে জড়িয়ে যায় বল (২-০)।
মুম্বই সিটি এফসির বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের মতোই জামশেদপুর দ্বিতীয়ার্ধে উন্নত পারফরম্যান্স দেখায়। কোচ খালিদ জামিল বেঞ্চ থেকে উইঙ্গার মহম্মদ সনন ও ইমরান খানকে নামান। এই পরিবর্তনের ফলও মাঠে দেখা যায়। সনন-এর পাস থেকে কাছাকাছি দূরত্ব থেকে গোলও করে ফেলেন সিভেরিও। কিন্তু সহকারী রেফারি সঙ্গে সঙ্গে অফসাইডের পতাকা তোলার ফলে তা বাতিল হয়ে যায়।
জামশেদপুরের ডিফেন্স যখন আক্রমণের আশায় আরও ওপরে উঠে আসে, তখন ৭২তম মিনিটে শেষ গোলটি করে ফেলেন দ্রাজিচ (৩-০)। কার্ল ম্যাকহিউ দারুণ একটি থ্রু বাড়ান, যা নিয়ে গোলরক্ষক গোমেজকে ধোঁকা দিয়ে গোলে পাঠিয়ে দেন। এই গোলের পর জয় নিয়ে কোনও সন্দে ছিল না মানোলো মার্কেজের। তারা যখন ম্যাচ প্রায় নিশ্চিতভাবেই জিতে নিয়েছে, তখন মাঠে মুষলাধার বৃষ্টি নামে। ফাইনাল ম্যাচে যা ছিল এফসি গোয়ার পারফরম্যান্সের পরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।