দু-দু’বার এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত জয় অধরাই রয়ে গেল এফসি গোয়ার। চলতি হিরো আইএসএলের প্রথম সেমিফাইনালের প্রথম লেগের ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে ২-২ ড্র করল তারা। শুক্রবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে উত্তেজনায় ভরা ম্যাচে দুই দলের মধ্যে যা লড়াই হয়, তাতে অবশ্য যে কেউ জিততে পারত। কিন্তু দুই দলের সমানে সমানে লড়াইয়ের ফল এই ড্র। অর্থাৎ, সোমবার দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে কোনও দলই এগিয়ে থেকে নামতে পারবে না।

এ দিন দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে এফসি গোয়ার পক্ষে গোল করেন ইগর অ্যাঙ্গুলো ও সেভিয়ার গামা। প্রথমবার সমতা আনেন হুগো বুমৌস ও দ্বিতীয় গোলটি করেন মুর্তাদা ফল। 

  • ২০ মিনিট: পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ইগর অ্যাঙ্গুলো। মান্দার রাও দেশাই বক্সের মধ্যে জর্জ অর্টিজকে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় এফসি গোয়া।
  • ৩৮ মিনিট: আহমেদ জাহুর ফ্রিকিক থেকে বল পেয়ে বুমৌস বিপক্ষের বক্সে ঢুকে সোজা গোলে জোরালো ভলি মারেন ও বল জালে জড়িয়ে যায়।
  • ৫৯ মিনিট: বাঁ দিকের উইং দিয়ে ওঠা গামা বল পেয়ে কোণাকুণি দৌড়ে যান ও বিপক্ষের বক্সের ঠিক বাইরে থেকে সোজা গোলে শট নেন।
  • ৬১ মিনিট: আহমেদ জাহুর ক্রসে হেড করেন অরক্ষিত মুর্তাদা ফল, যা ড্রপ খেয়ে গোলে ঢুকে পড়ে।

প্রথমার্ধ্বে দুই দলই একে অপরকে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। তবে দাপট ছিল এফসি গোয়ার, যারা বিপক্ষের চেয়ে বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু গোলের দিক থেকে প্রথম ৪৫ মিনিটে তারা সমান জায়গাতেই ছিল।    

২০ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ইগর অ্যাঙ্গুলো। মান্দার রাও দেশাই বক্সের মধ্যে গোলমুখী জর্জ অর্টিজকে অন্যায় ভাবে বাধা দেওয়ায় পেনাল্টি পায় এফসি গোয়া।

খেলা আধ ঘণ্টা পেরনোর পরেই চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্যে হন গোয়ার ডিফেন্ডার সেরিটন ফার্নান্ডেজ। তাঁর বদলে মাঠে নামেন তরুণ ডিফেন্ডার লিয়েন্ডার ডি’কুনহা।         

৩৮ মিনিটের মাথায় গোল শোধ করেন মুম্বইয়ের সেরা তারকা হুগো বুমৌস, যিনি চার ম্যাচের নির্বাসন কাটিয়ে এই ম্যাচেই ফেরেন। আহমেদ জাহুর ফ্রিকিক থেকে বল পেয়ে বুমৌস এডু বেদিয়াকে কাটিয়ে এগিয়ে যান। বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েও বিপক্ষের ডিফেন্ডার সেভিয়ার গামার গায়ে লেগে ফের বল এসে যায় তাঁর কাছে। এ বার সোজা গোলে জোরালো ভলি মারেন তিনি এবং বল জালে জড়িয়ে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেওয়া শুরু করে মুম্বই সিটি এফসি। তা সত্ত্বেও গামার নিজের উদ্যোগে করা অসাধারণ এক গোলে ফের এগিয়ে যায় এফসি গোয়া।

৫৯ মিনিটের মাথায় বাঁ দিকের উইং দিয়ে ওঠা গামা বল পেয়ে কোণাকুণি দৌড়ে যান ও বিপক্ষের বক্সের ঠিক বাইরে থেকে সোজা গোলে শট নেন। গামার গোলের দু’মিনিট পরেই ফের সমতা আনে মুম্বই। এ বার গোল করেন তাদের নিয়মিত স্কোরার-ডিফেন্ডার মুর্তাদা ফল। আহমেদ জাহুর ক্রসে হেড করেন অরক্ষিত ফল, যা ড্রপ খেয়ে গোলে ঢুকে পড়ে।

এর পরে দুই দল ব্যবধান বাড়ানোর মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে গেলেও গোলের মুখ খুলতে পারেনি। ফলে দ্বিতীয় লেগে ফাইনালে ওঠার জন্য দু’পক্ষকেই ফের শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।

ম্যাচের পরে এফসি গোয়ার কোচ হুয়ান ফেরান্দো বলেন, “আমরা ওদের চেয়ে বেশি ক্লিয়ার চান্স পেয়েছি। তবে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত আমাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে। আমরা মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে খেলতে পারি। কিন্তু ১৪ জনের বিরুদ্ধে খেলাটা কঠিন। আমাদের দলের ছ’জন খেলোয়াড় একশো শতাংশ ফিট ছিল। কিন্তু বাকিরা ছিল না। যেমন এডু বেদিয়া। ওর হাড়ে চিড় ধরেছে। ওকে ইঞ্জেকশন নিয়ে নামতে হয়েছিল। যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়ে নেমেছিল ও। আমরা জেতার জন্যই নেমেছিলাম। কিন্তু কখনও কখনও পরিস্থিতি এমন হয় যে, তা সম্ভব হয় না”।

অন্য দিকে, মুম্বই সিটি এফসি-র কোচ সের্খিও লোবেরাও দাবি করেন, “ম্যাচটা আমরা জিততে পারতাম। ওদের চেয়ে গোলের সুযোগ আমরা বেশি তৈরি করেছি। ম্যাচটাও বেশির ভাগ আমাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। তাই এই ফলে আমি খুশি নই। আমরা আজ আরও আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে চেয়েছিলাম। কারণ, ওদের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় খেলতে পারেনি। সেই সুযোগটা নিতে চেয়েছিলাম। পরের ম্যাচের আগে আমরা দু’দিন পাচ্ছি। এর মধ্যে আমাদের সমস্যাগুলো মিটিয়ে নিতে হবে। এই ফলের পরে ওদের আত্মবিশ্বাস হয়তো বাড়বে। তবে আমাদের ছেলেরা বরাবরই মানসিক ভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই আশা করি পরের ম্যাচে আমরাই জিতব ও ফাইনাল উঠব”।