লিজা মঙ্গলাদাসের সঙ্গে এক্সট্রা টাইম: স্পোর্টস প্রেসেন্টার হওয়ার স্বপ্নকে পূরণ করার জন্য নিজের কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন অনন্ত ত্যাগী।
পাঁচ বছর আগে, অনন্ত ত্যাগী লন্ডনে ভারতীয় ওয়াইএমসিএ-তে দুপুরের খাবার নিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে বসেছিলেন।
পিচ সাইড সাংবাদিক লিজা মঙ্গলাদাসকে অনুসরন করুন, তিনি আপনাদের জন্য হিরো আইএসএলের পিছনের ছবিটা তুলে ধরবেন। প্রতি সপ্তাহে থাকবে নতুন পোস্ট এক্সক্লিউসিভ খবর শুধুমাত্র indiansuperleague.com এ। লিজার সঙ্গে যুক্ত থাকুন @leezamangaldas এর টু্ইটার এবং ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে।
পাঁচ বছর আগে, অনন্ত ত্যাগী লন্ডনে ভারতীয় ওয়াইএমসিএ-তে দুপুরের খাবার নিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে বসেছিলেন। তিনি কিছুদিনের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট স্থানান্তর করার সময় সেখানে থাকতেন, এবং তার ক্যাফেটেরিয়া সুস্বাদু ঘরোয়া দেশি খাবার পচ্ছন্দ করতেন। সম্প্রতি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে একটি বিজনেস ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন এবং ব্রিটিশ গ্যাসের বিশ্লেষক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। এটা ঠিক সেটা তার স্বপ্নের কাজ ছিল না, কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে ক্রীড়া উপস্থাপক হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে সর্বদা ভাবতেন। এটাই ছিল তাঁর স্বপ্ন।
বড় হওয়ার সময়, তিনি ক্রিকেট, হকি, টেনিস, এবং ফুটবল প্রতিযোগিতামূলকভাবে খেলেছিলেন। তিনি নানা ডিবেটে অংশগ্রহন করতেন, বক্তব্য ও বিতর্কে বেশ কয়েকটি পুরস্কারও জিতেছিলেন। ডুন স্কুলে, তিনি তাঁর ফাইনালে ইয়ারে সেরা ছাত্র ছিলেন এবং ক্রীড়াবীদ হিসাবেও সেরা ছিলেন। ছাত্র জীবনে তাঁর পচ্ছন্দের তালিকায় ছিলেন প্রনয় রায়, অভিনব বিন্দ্রা, বিক্রম শেঠ এবং অমিতাভ ঘোষের মতো ব্যক্তিত্বরা। তিনিও ছোট থেকেই নিজের পচ্ছন্দের জায়গা থেকে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন-যেটা ছিল স্পোর্টস মিডিয়া সংক্রান্ত। তাই ইকোনমিক্স অনার্সে স্নাতকোত্তর করার পরেও তিনি দিল্লির থেকে মাস কমিউনিকেশনে মাস্টার্স করেন, তিনি স্পোর্টস সাংবাদিকতা কোর্সের জন্য ইউকে তে চলে যান, এবং সেখানে যুক্ত হন।
যাইহোক, দুর্ভাগ্যবশত, তিনি সেখানে প্রত্যাশিত শিক্ষাদানের পরিবেশ পাননি। তাঁর আগমনের পরে, তিনি আবিস্কার করেন যে এই ইনস্টিটিউট খুব রক্ষণশীল, জেনোফোবিক রাজনৈতিক জলবায়ু দ্বারা আবর্তিত। যারফলে, তার সহকর্মীদের তুলনায় তার বেশিরভাগ মিডিয়া প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও, তিনি যথেষ্ট সুযোগ বা স্বীকৃতি থেকে বঞ্ছিত ছিলেন। একটি ডিন অনন্তকে বলেছিলেন যে তার চামড়ার রঙ এবং উচ্চারণ, মিডিয়াতে ক্যারিয়ার গঠনের জন্য উপযুক্ত নয়।
অনন্তের আস্থা হ্রাস হয় এবং তার আত্মা ভেঙে পরেছিল, পরিবর্তে তিনি এলএসই তে একটি ডিপ্লোমা কোর্সে নথিভুক্ত করেন, তারপরে তিনি কর্মশালায় প্রবেশ করেন, যা তাঁকে আরও প্রথাগত কর্পোরেট ক্যারিয়ারে গঠনে ঠেলে দেয়।
কিন্তু ২০১৩ সালের একটি বিকেলে লন্ডনের ভারতীয় ওয়াইএমসিএতে তার জীবন আরেকটি অপ্রত্যাশিত পালা বদল ঘটে। তাঁর পাশেই ক্যাফেটেরিয়ায় ডাইনিং হলে স্টার স্পোর্টসের একটি দল বসেছিল, যারা তাদের প্রিমিয়ার লিগ কাভারেজের জন্য তাঁরা হিন্দি ভাষ্যকার খুঁজছিলেন। এবং এটাই ঘটেছিল যে এই ভদ্রলোকদের একজন অনন্তের বন্ধুর বন্ধু ছিলেন, তিনি তাঁকে আবার সেই সময় টেবিলে হ্যালো বলতে আসেন। বাকিটা, ইতিহাস।
এতিহাদ স্টেডিয়ামে ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বিতে অনন্ত ধারাভাষ্য করেছিলেন
"এটি একটি স্বপ্নের বিকেল ছিল," অনন্ত হাসলেন। "এক মিনিট আগে আমার আঙ্গুলের উপর ডাল এবং কাড়ি লেগে ছিল, এবং পরের মুহূর্তে আমি ভারতের বৃহত্তম ক্রীড়া চ্যানেলের সঙ্গে আলোচনা করছিলাম। আপনি এটিকে কখনই মূল্যায়ন করতে পারবেন না!"
অনন্ত গিগের জন্য উপযুক্ত ছিলেন। তিনি লন্ডনে অবস্থিত একজন ফুটবল প্রেমী ভারতীয় ছিলেন। পাশাপাশি, একদিকে একজন বিখ্যাত হিন্দি কবির নাতি, এবং অন্যদিকে একটি পুরস্কার বিজয়ী হিন্দি লেখক, তাঁর হিন্দি ছিল নিখুঁত। এবং সবার উপরে ছিল, তিনি ইতিমধ্যেই বেসিক মিডিয়া প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ছিলেন। এর আগে তিনি প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচ লাইভ দেখার জন্য অর্থ বাঁচাতেন। এখন তিনি অর্থ উপার্জন করছেন!
ভারতের বাড়িতে থাকার সময়ে কিশোর বয়স থেকেই অনন্ত ফুটবল অনুসরণ করতেন, তিনি চেলসিকে সমর্থন করতেন, যদিও সেই সময় তার অধিকাংশ সহপাঠী ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে সমর্থন করত। "আমি সর্বদা নিজেকে মোরক থেকে আলাদা করতে চেয়েছি, বাকিগুলো থেকে কিছুটা আলাদা করতে চাইতাম," তিনি হাসতে হাসতে ব্যাখ্যা করেছিলেন।
সুতরাং, সেই স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চেলসি বনাম হাল সিটি ম্যাচ ছিল তার জীবনে ধারাভাষ্যকার হিসাবে প্রথম ম্যাচ, যেটা ছিল নিখুঁত। তিনি আরও রোমাঞ্চিত হয়ে পরেছিলেন। লক্ষ লক্ষ ভারতীয় দর্শকদের জন্য প্রিমিয়ার লিগে নিজের কণ্ঠস্বর দিচ্ছিলেন, তিনি তাঁর পছন্দের দলের ঘরের বক্সে বসেই ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন। তার বিপরীতে তার ডিন বলেন, তাঁর ত্বকের রঙ এবং তাঁর উচ্চারণ ছিল শক্তিশালী, যেখানে কোনও সীমাবদ্ধতা ছিলনা, এবং তিনি তাদের গর্বিত করেছিলেন।
"আমি একদিন স্টক সিটি বনাম লিভারপুল ম্যাচ কভার করছিলাম, এবং আমার কয়েকটি সারির নিচেই আমি আমার ডিনকে দেখতে পাই, যিনি আমাকে বলেছিলেন যে, আমি যেভাবে দেখি ও কথা বলি তার জন্য আমি কখনই ধারাভাষ্যকার হতে পারব না", অনন্ত এই প্রসঙ্গটা আমাদের সঙ্গে ভাগ করেছিলেন। "এটা হ্যালো বলার জন্য আমার মনকে অতিক্রম করেছে, দেখানোর জন্য যে আমি তাঁকে ভুল প্রমাণ করেছি, কিন্তু আমি তা করিনি - কারণ খুব সন্ধ্যায় আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এই কাজটি আমাকে দিয়ে করানো হয়েছিল, এটিই আমার ডাক ছিল এবং আমি একমাত্র ব্যক্তি যে নিজেকে প্রমাণ করতে চাইছিলাম। "
শীঘ্রই অনন্ত তার ডেস্ক চাকরি ছেড়ে দেন যাতে তিনি সম্পূর্ণ সময় কমেন্ট্রি করতে পারেন। "আমি জানতাম এটি বিশ্বাসের জায়গা, কিন্তু আমি আমার হৃদয়কে অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিলাম"। ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে, তিনি ৭০ টিরও বেশি গেমস সম্পন্ন করে ফেলেছিলেন। হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগের উদ্বোধনী মরসুমের শুরুর প্রস্তুতি চলছিল এবং সম্প্রচারের জন্য হিন্দি উপস্থাপনা এবং ভাষ্যপাঠের জন্য অনন্তকে ভারত ফিরিয়ে আনা হয়।
গত ৪ বছর ধরে, অনন্ত ইংরেজি ও হিন্দি উভয়েই একাধিক খেলায় একজন উপস্থাপক এবং ভাষ্যকার হিসাবে নিজের পথকে আলোকিত করেছেন। তিনি উভয় ভাষায় আইএসএল এবং আইপিএলের শো উপস্থাপিত করেছেন, তিনি ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকের সঙ্গে অর্ধ ডজনেরও বেশি খেলাধুলার জন্য হিন্দি ভাষ্যপাঠ করেছেন এবং আইএসএল এর জন্য ইংরেজি ভাষায় ভাষ্য দেওয়ার প্রথম ভারতীয় ভাষ্যকার ছিলেন।
যখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তার প্রিয় মুহুর্তগুলো কী, তখন তিনি সবটা জানালেন, "ভারত যখন ম্যাচ জিতেছে তখন বক্সে বসে ভাষ্যপাঠ করার চেয়ে আর বড় রোমাঞ্চ কিছু হয়না!"
২০১৫-১৬ সালের সাফ কাপ ফাইনালে তার সবচেয়ে স্মরণীয় স্মৃতিগুলির মধ্যে রয়েছে, সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে ভারত বনাম পুয়ের্তো রিকোর খেলাটি, যেটা আন্তর্জাতিক ফুটবলে ভারতের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছিল, এবং সম্ভবত সর্বোপরি, ২০১৭ সালের জুন মাসে ভারত বনাম কিরগিজ রিপাবলিকের খেলা, যেখানে ভারতীয় অধিনায়ক সুনিল ছেত্রী
"যখন ভারত জিতল এবং সুনিল গোল করল, সেটা ছিল খুবই বিশেষ মুহূর্ত," অনন্ত বলেন। "কিরেগিজ রিপাবলিকের বিরুদ্ধে, ছেত্রীর গোল করার পরে, আমি আমার সীটে বসতে পারিনি, এটা শুধুই এড্রেনালাইন ছিল!"
"আমি সুনিলের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ অনুভব করি- তার উত্থান ঘটেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় ফুটবলেরও উত্থান ঘটেছে। যখন ভারত পারফর্ম করে অথবা একটি হিরো আইএসএল দলটি পারফর্ম করে, আমরা তখন এটি নিয়ে কথা বলি। এবং প্রায়শই এই গল্পগুলির হৃদয় জুড়ে সুনিলই থাকেন - তাই অনেক উপায়ে আমার নিজের ক্যারিয়ারে জাতীয় দল এবং আইএসএল উভয় ক্ষেত্রে তাঁর অবিশ্বাস্য অবদান দ্বারা রূপায়িত হয়েছে, "তিনি ব্যাখ্যা করলেন।
আমি নিজেও অনন্তের সঙ্গে কাজ করার আনন্দ পেয়েছিলাম, আমি প্রথমে ফুটবলের জন্য তাঁর প্রশংসা করতাম না, তাঁর শান্ত কাজ নীতি, তার চরম পেশাদারিত্ব এবং শব্দ ও সংখ্যার সঙ্গে তার ব্যতিক্রমী বন্ধন দেখেছি। তিনি সর্বদা সহকর্মীদের পক্ষে অত্যন্ত সহায়ক ছিলেন- হিরো আইএসএল-এর দ্বিতীয় মরসুমে যখন আমি প্রথম সাংবাদিক হিসাবে যোগদান করি, সেই সময় তিনি অবশ্যই আমাকে আমার সীমা পরিধিটা শেখাতে সাহায্য করেছিলেন।
ক্রীড়া টেলিভিশনে দেশের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিমান গলা গুলির মধ্যে তিনি অন্যতম, তিনি ক্রমাগত বেড়ে উঠেছেন।
প্রকৃতপক্ষে, বছরের পর বছর ধরে, অনন্তের খেলাধুলা এবং ফুটবলের আবেগ তার জীবনে অনেক কিছু নিয়ে এসেছে, তিনি জীবনের জন্য কৃতজ্ঞ - প্রেম সহ।
২০১৫ সালে স্টার স্পোর্টসের জন্য প্রিমিয়ার লিগের প্রেজেন্টার জন ডাইকসের নেতৃত্বাধীন প্রতিভা প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি তাঁর রমণীয় স্ত্রী সাগরিকার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
অনন্ত ও সাগরিকারা খুব শীঘ্রই ডেটিং শুরু করেন এবং তার পরের বছরের আইএসএল মরসুমে, পর্যালোচনা অনুষ্ঠান গুলি হোস্টিং করেন। বিয়ে করার পরে ২০১৬ সালের শেষের দিকে তারা আইসিসির চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির একটি অনুষ্ঠান স্বামী এবং স্ত্রী হিসেবে যৌথভাবে উপস্থাপনা করেছিলেন।
" আমি যেটা ভালবাসি প্রতিদিন সেটা করতে পারি, এমন একজন সঙ্গী পেয়েছি যিনি আমাকে বোঝেন এবং আমার স্বপ্নকে পুরোপুরি বোঝেন এবং সমর্থন করেন, এই সবকিছু আমি পেয়েছি খেলাধুলার জন্যই-আমি জানি যে আমি কত ভাগ্যবান এবং আমি তাঁর জন্য কৃতজ্ঞ," অনন্ত বলেন। আমরা তখনই আমাদের আলাপচারিতা শেষ করছি ঠিক যখন পরের দিনের ম্যাচ কভারের জন্য আমাদের ফ্লাইট বোর্ড করতে হবে।