ভারতে ফুটবল জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা হয়েছে: টম অলড্রেড
‘যদি আমাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি ইউটিউব চ্যানেল করতাম, তাহলে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা আকাশ ছুঁয়ে ফেলত। আমরা যা কিছু দেখেছি, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য’।

ভারতে প্রথমবার এসে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টে যোগ দেওয়া এবং তাদের হয়ে খেলে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে জোড়া খেতাব জেতা—এই দুই অভিজ্ঞতাকে তাঁর ফুটবল জীবনের সেরা মুহূর্ত মনে করেন সবুজ-মেরুন বাহিনীর স্কটিশ সেন্টার ব্যাক টম অলড্রেড। তাঁর মতে, একজন ফুটবলারের জীবনে এর চেয়ে ভাল কিছুই হতে পারে না। সেই কারণেই দেশের ক্লাব ফুটবলের চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে আরও এক বছরের চুক্তিতে সই করতে কোনও দ্বিধা করেননি।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টে অলড্রেডের আগমন তাঁর কেরিয়ারে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। তিনি এ দেশে এসে যে ভূমিকা পালন করেন, তাতে কম চাপ ছিল না। নতুন দেশে পাড়ি জমানো, ভিন্ন মান ও সংস্কৃতির এক লিগে মানিয়ে নেওয়া এবং অপরিচিত এক ফুটবল আবহে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা—এর কোনওটিই সহজ ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই, এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগারই কথা ছিল।
কিন্তু প্রথম মরশুমেই দলের আর এক নতুন ডিফেন্ডার আলবার্তো রদ্রিগেজের সঙ্গে তিনি গড়ে তোলেন এক শক্তিশালী জুটি, যা মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের ঐতিহাসিক সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আইএসএলের লিগ শিল্ড ও কাপ—দুইই জেতে তারা।
এখন, তাঁর চুক্তির মেয়াদ বাড়ার পর অলড্রেড ফিরে তাকাতে চান সবুজ-মেরুন শিবিরে কাটানো দিনগুলির দিকে। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন আগামী মরশুমে তাঁর ও তাঁর দলের লক্ষ্যের কথা। বিশেষ করে যখন দল ফের এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টু-তে খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেই নিয়েও।
“সত্যি বলতে গেলে, গত মরশুমে যা হয়েছে, তার চেয়ে ভাল কিছু হতেই পারত না,” অলড্রেড সম্প্রতি তাঁর দেশের সংবাদপত্র ‘ব্ল্যাকপুল গেজেট’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কথাগুলি বলেছেন। তিনি বলেন, “কোনও নতুন ক্লাবে গেলে মনে হয়, সবাই আমাকে একজন চরিত্রবান এবং ভাল মানুষ হিসেবে দেখুক। এক অসাধারণ বছর কাটালাম। সম্ভবত আমার ফুটবল জীবনের অন্যতম সেরা”।
অলড্রেড ২০২৪–২৫ মরশুম শুরুর আগে এ-লিগ ক্লাব ব্রিসবেন রোর থেকে সবুজ-মেরুন বাহিনীতে যোগ দেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সমর্থকদের প্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁর মাঠের পারফরম্যান্স যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছে, মাঠের বাইরে দলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াও ছিল তাঁর সাফল্যের পক্ষে সমান গুরুত্বপূর্ণ। গত মরশুমের সবকটি প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩২টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন টম অলড্রেড এবং তাঁর রক্ষণভাগের দৃঢ়তার পাশাপাশি আক্রমণেও অবদান রাখেন। বিশেষ করে সেট-পিস থেকে তিনটি গোল ও একটি অ্যাসিস্টের মাধ্যমে।
ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় খেলার পর তিনি ভারতীয় ফুটবলে পা রাখেন। সতীর্থ এবং সাপোর্ট স্টাফদের সঙ্গে গড়ে ওঠা দৃঢ় সম্পর্ক এই মানিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের দলে কয়েকজন ভাল বিদেশি খেলোয়াড় ছিল। যদি আমাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি ইউটিউব চ্যানেল করতাম, তাহলে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা আকাশ ছুঁয়ে ফেলত। আমরা যা কিছু দেখেছি, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। এই দিক থেকে আমি ভাগ্যবান, কারণ আমি বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এই ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছি”।
তবে সাফল্যের চূড়ায় ওঠার পথ মোটেই সহজ ছিল না। মরশুম শুরু হয় ডুরান্ড কাপ ফাইনালে পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে, যা দলের জয়ের খিদে আরও বাড়িয়ে তোলে। ধাপে ধাপে নিজেদের ছন্দ খুঁজে পায় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। আত্মবিশ্বাস ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত এমন এক ফর্মে পৌঁছয় তারা, যা তাদের অপরাজেয় করে তোলে।
“আমি সব সময়ই মনে করতাম আমরা লিগ জিতব। আমরা যথেষ্ট স্বাচ্ছন্দ্যে সেরা দল হয়ে উঠি। এ ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। যত অভিজ্ঞতার কথাই বলি না কেন, শেষ পর্যন্ত সব কিছুই নেমে আসে ফুটবলে এবং নিজেকে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে। আমি সেই চাপটাই চেয়েছিলাম, যে চাপ জয় পাওয়ার জন্য এবং আমরা তা সামলাতে পেরেছি,” মন্তব্য করেন অলড্রেড।
আরও এক মরশুমের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন অলড্রেড। এই নতুন চুক্তির ফলে এই স্কটিশ ডিফেন্ডার ২০২৫–২৬ মরশুমের শেষ পর্যন্ত সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে খেলবেন। তাই এখন আরও বড় লক্ষ্যের দিকে এগোতে চান তিনি। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে আরও বড় সাফল্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার সংকল্প নিতে চান তিনি। এই নিয়ে অলড্রেড বলেন, “যখন কেউ সাফল্যের স্বাদ পায়, তখন মন আরও বেশি কিছু চায়। এক বছর খেলেই ক্লাব ছেড়ে দিলে সেটা ঠিক হত না। দৌড়ানোর আরও শক্তি আছে আমাদের,” তিনি বলেন।