সোমবার ঘরের মাঠে চেন্নাইন এফসি-কে হারিয়ে সেরা ছয়ের দৌড়ে দল ফের উজ্জ্বল হয়ে ওঠায় খুশি ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। তবে প্রথমার্ধে যে তাঁর দল মোটেই ভাল খেলেনি, তা স্বীকার করতে দ্বিধা করেননি।

সোমবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রথমার্ধের বেশিরভাগ সময় চেন্নাইন এফসি আধিপত্য বিস্তার করলেও দ্বিতীয়ার্ধে তিনটি পরিবর্তন করে আক্রমণে তীব্রতা বাড়ায় ইস্টবেঙ্গল এবং তারই ফল তারা পায় ৬৫ মিনিটের মাথায়। কর্নার থেকে জয়সূচক গোল এনে দেন নন্দকুমার শেখর, যা ছিল চলতি লিগে তাঁর পাঁচ নম্বর গোল। চলতি লিগে ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন।    

জয়ের পর কোচ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “আমরা প্রথমার্ধে খুবই খারাপ খেলেছি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ভাল খেলেছি। প্রথমার্ধে চেন্নাইনের গোল পাওয়া উচিত ছিল। ওরা যথেষ্ট ভাল দল। ওদের কোচ ওয়েন কোইলকে আমি শ্রদ্ধা করি। দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের পরিবর্ত খেলোয়াড় আনতে হয় নতুন করে শক্তি বাড়ানোর জন্য। এটাই আমাদের কাজ। দ্বিতীয়ার্ধের পারফরম্যান্সে আমি খুশি। কারণ, ম্যাচের শেষে ফলই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দলের লড়াকু মানসিকতাও আজ দলকে জিততে সাহায্য করেছে”।

পুরো ম্যাচে ভাল খেলতে না পারলেও দলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে সামগ্রিক ভাবে খুশি কোচ। বলেন, “দলের সব খেলোয়াড়কে নিয়েই আমি খুশি। মরশুমের মাঝখানে দলে একাধিক পরিবর্তন হয়েছে। নতুন ছেলেদের আমাদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে, আমাদের বুঝতে একটু সময় তো দিতেই হবে। তবু ওরা সব কিছু উজাড় করে দিচ্ছে। আমি যা চাইছি, তা-ই দিচ্ছে। ওদের কাছে এটা একটা বড় সুযোগ। ভবিষ্যতের জন্য এই সুযোগ ওরা কাজে লাগাতে পারে কি না দেখা যাক”।

মরশুমের মাঝখানে দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়া দুই বিদেশি ফুটবলারের অভাব টের পেয়ে কুয়াদ্রাত বলেন, “আমরা একটা দু’বছরের প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি। বোরহা ও সিভেরিও যখন আমাদের দলে ছিল, তখন ফাইনাল থার্ডে ওরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। ওদের জায়গায় যারা এসেছে, তাদের কাছে নিজেদের উপযোগিতা প্রমাণ করার এটা বড় সুযোগ। গোলের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে ভিক্টর ভাজকেদের পরিসংখ্যান খুবই ভাল। সেটপিসেও ও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আজও করেছে। গোলের সময় নন্দর কাছে যে বলটা আসে, সেটা ওটা ওঁর কাছ থেকেই আসে। ফেলিসিও-ও চেষ্টা করছে ছন্দে ফিরে দলকে সাহায্য করতে। আলেকজান্দারও পুরোটা বুঝতে একটু সময় নিচ্ছে। দলের ছেলেরা সবাই যে রকম পরিশ্রম করছে, যে ভাবে চেষ্টা করছে, তাতে আমি খুশি। নন্দর ফিনিশিং, অ্যাসিস্ট ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। এই মরশুমে এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে পরের মরশুমেরও প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। এই দলটাকে ভবিষ্যতের জন্যই তৈরি করছি”।

তিন দিন পরেই লিগ টেবলে শীর্ষে থাকা ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে তাদের। সেই ম্যাচ যে বেশ কঠিন হতে চলেছে, তা মেনে নিয়ে স্প্যানিশ কোচ বলেন, “পরের ম্যাচ আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন হবে। ওরা লিগ টেবলে এক নম্বরে রয়েছে। তিন দিন পরেই এই ম্যাচটা খেলতে হবে আমাদের। খুবই কঠিন হতে চলেছে ম্যাচটা”।

এই ম্যাচে খেলতে পারবেন না রক্ষণের ভরসা হিজাজি মাহের। সোমবার ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে হলুদ কার্ড দেখায় তাঁকে পরের ম্যাচে মাঠের বাইরেই থাকতে হবে। তবে মহেশ সিংয়ের চোট গুরুতর নয় বলে জানালেন কোচ। সল ক্রেসপোও চোট সারিয়ে এই ম্যাচে ফিরে আসতে পারেন বলে জানান কোচ। বলেন, “মহেশের চোট গুরুতর নয়। পরের ম্যাচে খেলতে পারবে। সল ক্রেসপো চেষ্টা করছে পরের ম্যাচের আগে তৈরি হয়ে উঠতে”।

সামনেই ফিরতি কলকাতা ডার্বি। সেই ম্যাচ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী কুয়াদ্রাত বলেন, “লিগে বিভিন্ন ম্যাচে আমরা কখনও দুজন, কখনও তিনজন বিদেশি নিয়ে খেলেছি। সেই জায়গায় সুপার কাপে আমরা ছ’জন বিদেশী নিয়ে খেলতে পেরেছি। কয়েকজন খেলোয়াড় জাতীয় দলেও ছিল তখন। এখন আমাদের পরিস্থিতি একেবারে অন্যরকম। তবে ক্রমশ ছন্দে ফিরছি আমরা। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ফিরতি ডার্বিতে আমাদের জেতা উচিত। অন্য ম্যাচগুলোতেও আমাদের ভাল করা উচিত। যেমন জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ৮০ মিনিট পর্যন্ত আমরাই এগিয়ে ছিলাম। অনেক গোলের সুযোগও তৈরি করেছি। আজও এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরে অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করেছি”।

ম্যাচের একমাত্র গোলের নায়ক  নন্দকুমার শেখর অবশ্য তিনদিন পরেই সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলতে নামা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন। তিনি ব্যাপারটি কোচের ওপর ছেড়ে দিয়েই নিশ্চিন্ত রয়েছেন বলে মনে হল। বলেন, “তিন দিন পরেই আর একটা ম্যাচ খেলাটা নতুন কিছু নয়। আগেও আমাদের ক্ষেত্রে এটা হয়েছে। তবে কোচ আমাদের মাঠে নামানোর জন্য সুপরিকল্পিত ভাবে সব কিছু করছেন। আমাদের ঠিক সময়ে ম্যাচের জন্য প্রস্তুত করে তোলার জন্য যা যা করা দরকার, যাকে, যে ভাবে, যতটা খেলানো দরকার, তা-ই করছেন। সে জন্যই আমরা এই কঠিন সময়টা সামলাতে পারছি। আশা করি পরের ম্যাচেও পারব”।

নন্দকুমার শেখরই এখন চলতি লিগে ভারতীয় গোলদাতাদের তালিকায় এক নম্বরে। তাঁকে এএফসি এশিয়ান কাপে ভারতীয় দলে না দেখতে পেয়ে যে অবাকই হয়েছেন, তা এ দিন জানাতে দ্বিধা করেননি কুয়াদ্রাত। বলেন, “নন্দকে এএফসি এশিয়ান কাপে না খেলানোটা আমার মনে হয় ভুল সিদ্ধান্ত। ওর এখন যা ফর্ম, তাতে ওর জাতীয় দলে অবশ্যই থাকা উচিত ছিল। তবে আমরা সৌভাগ্যবান যে, আমরা ওকে সুপার কাপে পেয়েছি। তবে ওকে আরও ধারাবাহিক হতে হবে। ভারতীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে ওর গোলই এখন সবচেয়ে বেশি। এটা খুব ভাল খবর। এটা ধরে রাখতে হবে ওকে”।