জয়হীন পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পরীক্ষা ইস্টবেঙ্গলের
গত ম্যাচে যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে ইস্টবেঙ্গল, সে রকম পারফরম্যান্স শনিবারও দেখাতে পারলে তৃতীয় জয় আসাটা হয়তো কঠিন হবে না। তবে ইস্টবেঙ্গল এমন একটা দল, যাদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ তারা নিজেরাই। যারা আগে গোল করে অনেকক্ষণ এগিয়ে থেকেও ম্যাচ ড্র করতে পারে, এমনকী, হারতেও পারে।

চার ম্যাচ পরে জয়ে ফেরা, তাও আবার পাঁচ গোলের ব্যবধানে। চার দিন আগেই নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে এই জয়ের পর আত্মবিশ্বাসের স্তর হঠাৎ একলাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল এফসি শিবিরে। এ বার সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এগিয়ে যাওয়াই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। যার প্রথম ধাপেই তাদের সামনে এমন এক দল, যাদের আটটি ম্যাচ খেলা হয়ে গেলেও এখনও জয়ের মুখ দেখতে পায়নি, পাঞ্জাব এফসি। শনিবার ঘরের মাঠে এই পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পরীক্ষাতেই নামতে হবে লাল-হলুদ বাহিনীকে।
পাঞ্জাবের দলটি এখন পর্যন্ত জয়হীন বলে তাদের হালকা ভাবে নেওয়ার ভুল অবশ্যই করতে চাইবেন না ইস্টবেঙ্গলের অভিজ্ঞ স্প্যানিশ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। কারণ, এতদিন জিততে পারেনি বলে যে কখনওই জিততে পারবে না তারা, এর কোনও মানে নেই। গত ম্যাচেই সেই ইঙ্গিত দিয়েছে তারা। এই ধরনের দলগুলির সুবিধা হল কিছু হারানোর চাপ না থাকা। এতদিন ধরে জিততে না পারার যন্ত্রণাও ফুটে উঠতে পারে তাদের পারফরম্যান্সে। তাই একটু ঢিলেমি দিলে বা সুযোগ দিলে যে কোনও সময় অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে পাঞ্জাব এফসি।
তাদের গত ম্যাচে যেমন দিয়েছিল বেঙ্গালুরু এফসি। কান্তিরাভায় তাদের ৩-৩-এ আটকে দেওয়ার পর পাঞ্জাবের দলের গ্রিক কোচ স্টাইকস ভার্গেটিসকে খুব একটা হতাশ লাগেনি। বরং তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আমি খুশি আমার দলের ছেলেদের মরিয়া চেষ্টা দেখে। ওরা একেবারে পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলে বেঙ্গালুরুর মতো শক্তিশালী দলকে চাপে ফেলে দিয়েছিল। তবে পরের দুটো গোল খাওয়া এড়ানো যেত”। তিনি দলকে জেতার জন্য চাপ দেন না। চান, দলের পারফরম্যান্সে উন্নতি, যা তাদের ক্রমশ সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
গত ম্যাচে নর্থইস্টের বিরুদ্ধে যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা, সে রকম পারফরম্যান্স শনিবারও দেখাতে পারলে তৃতীয় জয় আসাটা হয়তো কঠিন হবে না। তবে ইস্টবেঙ্গল এমন একটা দল, যাদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ তারা নিজেরাই। যারা আগে গোল করে অনেকক্ষণ এগিয়ে থেকেও ম্যাচ ড্র করতে পারে, এমনকী, হারতেও পারে। তাই এমন দলের জয়ের নিশ্চয়তা কেউই দিতে চায় না। তবে গত ম্যাচের পর শনিবার তাদের অনেকে এগিয়ে রাখতে চাইছেন। বিশেষ করে সমর্থকেরা, যাঁরা এ বার মরশুমের শুরুর সাফল্য দেখে আশায় বুক বাঁধা শুরু করেছেন।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স
ইস্টবেঙ্গল এফসি: মরশুমটা ভাল ভাবে শুরু হলেও আইএসএলের শুরুটা সে রকম ভাল করতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্রয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ক্লেটন সিলভা ফর্মে ফেরেন। দলও জয়ে ফেরে। ব্রাজিলীয় তারকার জোড়া গোলে চলতি লিগের প্রথম জয় পায় তারা। বেঙ্গালুরুতে ফের ছন্দপতন হয় তাদের। ২-১-এ তাদের হারিয়ে লিগের প্রথম জয় পায় সুনীল ছেত্রীর দল। সে দিন হারার মতো না খেলেও হারতে হয় ইস্টবেঙ্গলকে। এর পরে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ৭৩ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকার পরে দু’মিনিটের মধ্যে পরপর দু’টি গোল খেয়ে ১-২-এ হেরে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ফের ১-২-এ হারে লাল-হলুদ বাহিনী। এক গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় ৮৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন ক্লেটন সিলভা। চেন্নাইনের বিরুদ্ধেও ৮৫ মিনিট পর্যন্ত এক গোলে এগিয়ে থাকার পর গোল খেয়ে জেতা ম্যাচ ১-১ ড্র করে লাল-হলুদ বাহিনী। কিন্তু নর্থইস্টের বিরুদ্ধে তাদের ৫-০-য় জয় আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের। বিশেষ করে জোড়া গোলের জোড়া নায়ক ক্লেটন ও নন্দকুমার শেখর।
পাঞ্জাব এফসি: প্রথম আইএসএল খেলতে নামা পাঞ্জাব এফসি-র মধ্যে সম্ভাবনা দেখা যায় জামশেদপুর এফসি ও নর্থইস্টের সঙ্গে তারা ড্র করায়। এফসি গোয়ার কাছে অল্পের জন্য ০-১-এ হেরে যায় তারা। কিন্তু চেন্নাইন এফসি-র কাছে ১-৫-এ হার ও মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে ১-২-এ হার তাদের দেওয়ালে প্রায় পিঠ ঠেকিয়ে দেয়। এর পরেও তারা ঘুরে দাঁড়ায় হায়দরাবাদ (১-১) ও বেঙ্গালুরুর (৩-৩) বিরুদ্ধে। গত ম্যাচে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ম্যাচের আধ ঘণ্টার মধ্যে ৩-১-এ এগিয়ে যাওয়ার পরও প্রথমার্ধের একেবারে শেষে ও ৬৭ মিনিটের মাথায় গোল খায় পাঞ্জাব। আগের ম্যাচেই যে লড়াই করেছে পাঞ্জাব বাহিনী, সে রকম লড়াই যদি শনিবারও করে দেখাতে পারে তারা, তা হলে কিন্তু চাপে পড়ে যেতে পারে ইস্টবেঙ্গল এফসি।
দুই শিবিরের খবর
ইস্টবেঙ্গল এফসি: গত মরশুমের সেরা গোলদাতা ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার ক্লেটন সিলভা যেমন গত ম্যাচে গোলে ফিরেছেন, তেমনই জোড়া গোল করে ছন্দ ফিরে পেয়েছেন মরশুমের প্রথম ডার্বির একমাত্র গোলদাতা নন্দকুমার। গোলের সুযোগ তৈরিতে নাওরেম মহেশ সিং বড় ভরসা। চলতি লিগে ভারতীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (১৩) গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন তিনিই। সল ক্রেসপো, ক্লেটনরা দশটি করে সুযোগ তৈরি করেছেন। গোলে শটের সংখ্যার দিক থেকে ক্লেটন (৮) রয়েছেন ছয় নম্বরে। তবে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার বোরহা হেরেরা গঞ্জালেস চোটের জন্য একটি ম্যাচে না খেলার পর গত ম্যাচে ফিরে আসেন এবং গোলও করেন। কিন্তু স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড হাভিয়ে সিভেরিও এখন পর্যন্ত কোনও গোল করতে পারেনি। আইএসএল কেরিয়ারে তাঁর সবচেয়ে খারাপ সময় যাচ্ছে এখন। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার সল ক্রেসপোও সেরা ছন্দে নেই। তবে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হোসে পার্দো রক্ষণকে ভরসা জোগাচ্ছেন। সিনিয়র ডিফেন্ডার হরমনজ্যোৎ সিং খাবরা গত ম্যাচে হাঁটুতে চোট পাওয়ায় তিনি এই ম্যাচে খেলতে পারছেন না। তাঁর জায়গায় মহম্মদ রকিপ বা নিশু কুমারের মধ্যে কে প্রথম এগারোয় জায়গা পান, সেটাই দেখার।
পাঞ্জাব এফসি: গোলের জন্য লুকা মাজেনের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পাঞ্জাব এফসি-কে। স্লোভেনিয়ার এই ফরোয়ার্ড আটটি ম্যাচে তিনটি গোল করেছেন। ন’টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি। পাঞ্জাবের আর কোনও ফুটবলারকেই তাঁর মতো এতটা আক্রমণাত্মক মনে হচ্ছে না। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে গত ম্যাচে ৩০ মিনিটের মধ্যেই তিনটি গোল দিয়ে দেয় তারা। নিখিল প্রভু দলকে এগিয়ে দেওয়ার পরে দিমিত্রিস চাতজিলসাইয়াস ও মাজেন গোল করেন। ২১ মিনিটে বেঙ্গালুরু সমতা আনার পরেও ৩-১-এ এগিয়ে যায় তারা। কিন্তু পরে বাকি দু’গোল শোধ করে তাদের প্রথম জয় আটকে দেয় বেঙ্গালুরু এফসি। এ জন্য দলের রক্ষণকেই দায়ী করেছেন তাদের কোচ। তবে তাদের দুই গোলকিপার কিরণ লিম্বু ও রবি পুনিয়া দুজনেই যথেষ্ট দক্ষ। কিরণ ১২টি ও রবি ১৪টি সেভ করেছেন এ পর্যন্ত। লিগে সবচেয়ে বেশি সেভের তালিকায় দু’নম্বরে রয়েছে তারা। মোট আটটি গোল দিয়েছে তারা। মাজেন ছাড়া আরও পাঁচজন গোলদাতা রয়েছেন তাঁদের শিবিরে। মেলরয় আসিসি, হুয়ান মেরার গোল করার প্রবণতা থাকলেও তেমন সফল হতে পারছেন না।
পরিসংখ্যান বলছে
এ বারের আইএসএলেই প্রথম সাত ম্যাচে আট পয়েন্ট অর্জন করেছে ইস্টবেঙ্গল এফসি। এর আগে আর কোনও মরশুমে তারা প্রথম সাত ম্যাচে এত পয়েন্ট অর্জন করতে পারেনি। সে দিক থেকে এটাই তাদের সেরা আইএসএল সূচনা। সাত ম্যাচের পর ইতিবাচক গোলপার্থক্যও (+৩) এ বারই তাদের প্রথম। চলতি মরশুমে ওপেন প্লে থেকে ৯৮টির মধ্যে ২৬টি ক্রস পূর্ণ করেছেন তাদের ফুটবলাররা। নিখুঁত ক্রসের হার ২৬.৫%। চলতি লিগে সবচেয়ে ভাল ক্রসের হার লাল-হলুদ বাহিনীরই। গত ম্যাচেও দুটি গোল তারা করে ওপেন প্লে ক্রস থেকেই।
ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডার শৌভিক চক্রবর্তী এ পর্যন্ত ১১টির মধ্যে ১০টি ট্যাকলে সফল হয়েছেন, যার শতকরা হার ৯১%। এই ব্যাপারে তিনিই এখন পর্যন্ত সবার সেরা। এ পর্যন্ত মোট ১৩টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন নাওরেম মহেশ সিং। চলতি লিগে ভারতীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুযোগ তৈরি তিনিই করেছেন। এই ১৩টি সুযোগের মধ্যে দু’টিতে গোল পেয়েছে তাঁর দল।
ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে এই প্রথম মাঠে নামতে চলেছে পাঞ্জাব এফসি। প্রথম মুখোমুখি হওয়ার আগেই ইস্টবেঙ্গলের একটি রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছে তারা। আইএসএলে প্রথম আটটি ম্যাচে জয়হীন থাকার রেকর্ড, যা ইস্টবেঙ্গলের ছিল ২০২০-২১ মরশুমে। শনিবারও হারলে এই বিষয়ে নতুন নজির গড়বে পাঞ্জাবের দলটি। এরিয়াল বল দখলের লড়াইয়ে তাদের সাফল্যের ৪০.৬%। এই তালিকায় শেষ থেকে দু’নম্বরে রয়েছে তারা, ওডিশা এফসি-র ওপরে।
ম্যাচ- ইস্টবেঙ্গল এফসি বনাম পাঞ্জাব এফসি
ভেনু- বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, কলকাতা
সময়- ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩, রাত ৮.০০
সরাসরি সম্প্রচার ও স্ট্রিমিং
টিভি চ্যানেল: ডিডি বাংলা ও কালার্স বাংলা সিনেমা- বাংলা, স্পোর্টস ১৮ খেল- হিন্দি, স্পোর্টস ১৮ ১ এসডি ও এইচডি- ইংলিশ, ভিএইচ ১ এসডি ও এইচডি- ইংলিশ
অ্যাপ: জিও সিনেমা ও ওয়ানফুটবল