দু’দিন আগেই কালকাতা ডার্বি জিতে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছে ইস্টবেঙ্গল এফসিশিবির। পাশাপাশি ক্লান্তিও রয়েছে যথেষ্ট। একটা কলকাতা ডার্বির প্রস্তুতি ও ম্যাচ খেলার যে ধকল, সেই ধকল দু’দিনে কাটিয়ে আর একটা কঠিন ম্যাচে ভাল খেলা মোটেই সোজা কাজ নয়। তাই বুধবার ডুরান্ড কাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নামার আগে যথেষ্ট সাবধানী ও সচেতন লাল-হলুদ শিবির।

প্রতিপক্ষ কলকাতার আর এক উঠতি দল ডায়মন্ড হারবার এফসি, যারা এ বারেই যারা এ বারেই আই লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। আইএসএলে খেলা একাধিক দলকে হারিয়ে তারা ডুরান্ড কাপের শেষ চার পর্যন্ত পৌঁছেছে, এটাই তাদের আত্মবিশ্বাসের সবচেয়ে বড় কারণ। সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে জামশেদপুর এফসি-কে ইস্পাতনগরীর বুকে জোড়া গোলে হারিয়ে শেষ আটে ওঠাটা তাদের পক্ষে অবশ্যই বড় কৃতিত্ব। তাই তারাও বুধবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কম আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামবে না।

টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দাপুটে ফুটবল খেলে আসছে দুই দলই। তাই বুধবার এদের মধ্যে লড়াই রীতিমতো জমে উঠবে, এমন ধরে নেওয়াই যায়। ইস্টবেঙ্গল এখন পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে কোনও ম্যাচে হারেনি। তার ওপর চার ম্যাচে ১৪ গোল করেছে। গ্রুপ পর্বে বেঙ্গালুরুর সাউথ ইউনাইটেডকে ৫-০-য় ও এয়ার ফোর্সকে ৬-১-এ হারায় তারা। শেষে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের বিরুদ্ধে জয় অর্জন করে তারা।

লাল-হলুদ বাহিনীর মতো অপরাজিত না হলেও ডায়মন্ড হারবার এফসি-ও শেষ আটে ওঠার আগে বেশ বড় ব্যবধানে জয় পায়। বিএসএফ-কে তারা হারায় ৮-১-এর ব্যবধানে। মহমেডান এসসি-কেও ২-১-এ হারায়। তবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কাছে ৫-১-এ হেরে যায়। একমাত্র খামতি বলতে ওই একটা জায়গাতেই। তবে জামশেদপুরের জয় তাদের সেই হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে।

কিন্তু মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে হারানোর পরে আত্মতুষ্টির সমস্যা হবে না তো লাল-হলুদ শিবিরে? কলকাতার ফুটবলে কথিত আছে, যে দল বড় ম্যাচ জেতে, তারা তাদের পরের ম্যাচে হেরে যায়। সেই ধারা অব্যহত থাকলে ইস্টবেঙ্গলের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে পারে বুধবার।

আত্মতুষ্টির প্রবেশ নিষেধ লাল-হলুদ শিবিরে

তাদের কোচ অস্কার ব্রুজোন অবশ্য বলছেন আত্মতুষ্টির কোনও জায়গাই নেই তাঁর দলে। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমাদের শিবিরে আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। ডার্বির মতো কঠিন ম্যাচ খেলার দু’দিনের মধ্যে আরও একটা কঠিন ম্যাচ খেলতে নামতে হচ্ছে আমাদের। প্রতিপক্ষও কঠিন। কলকাতা লিগ ডুরান্ড কাপে ওদের খেলা দেখেছি। বুঝেছি, ম্যাচটা মোটেই সোজা হবে না”।

কলকাতা ডার্বির দু’দিন আগেই শিবিরে খবর আসে, প্যালেস্টাইনের মিডফিল্ডার মহম্মদ রশিদের পিতৃবিয়োগ হয়েছে। ফলে তাঁকে দেশে ফিরে যেতে হয়। রবিবার ম্যাচ শুরু হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যেই চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন মরক্কো থেকে আসা ফরোয়ার্ড হামিদ আহদাদ। তা সত্ত্বেও মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের মতো দলের বিরুদ্ধে জয় ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।

রশিদ, হামিদরা বুধবার মাঠে নামবেন কি না, তা স্পষ্ট করে না জানালেও কোচ অস্কার যে দলের অন্যান্য খেলোয়াড়দের ওপর যথেষ্ট আস্থাশীল, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন। বলেন, “ডায়মন্ড হারবার যেমন ভাল দল, তেমন আাদের দলও ভাল। না হলে তো এই পর্যন্ত পৌঁছতেই পারতাম না। ডার্বির পারফরম্যান্স আমাদের ধরে রাখতে হবে। দলে কী পরিবর্তন আসবে সে সব নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। পরিস্থিতি অনুযায়ী দল বাছাই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব”। হামিদকে শুরু থেকে খেলানোর ঝুঁকি নাও নিতে পারেন অস্কার। সেক্ষেত্রে ডার্বির জয়ের নায়ক, জোড়া গোলের স্কোরার গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসকে রেখেই প্রথম এগারো সাজাতে পারেন তিনি।

তবে দলের হাফ ডজন খেলোয়াড়ের কার্ড সমস্যা নিশ্চয়ই চিন্তায় রেখেছে ইস্টবেঙ্গলের কোচকে। তিন বিদেশি সউল ক্রেসপো, দিয়ামান্তাকস, মিগুয়েল ফেরেইরা এবং লালচুঙনুঙ্গা, শৌভিক চক্রবর্তী ও মহম্মদ রকিপ—এরা প্রত্যেকেই সেমিফাইনালে আর একটা হলুদ কার্ড দেখলে দল ফাইনালে উঠলেও খেলতে পারবেন না। কিন্তু এ জন্য তো তাঁদের বাইরে রেখে দল গড়া যায় না। সেরা এগারোকেই মাঠে নামাতে হবে। কিন্তু এই ছয় ফুটবলার হয়তো একটু সাবাধানতা অবলম্বন করেই খেলবেন। যার প্রভাব পড়তে পারে দলের পারফরম্যান্সে।

অঘটনই লক্ষ্য ডায়মন্ড বাহিনীর

ডায়মন্ড হারাবার এফসি-র সে রকম সমস্যা না থাকলেও তাদের কোচ কিবু ভিকুনার চিন্তা অন্য জায়গায়। চোটের জন্য দলের ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড ক্লেটন সিলভেইরা খেলতে পারবেন না। তাই কিবুর দলে বিদেশি থাকছেন দু’জন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার মিকেল কোর্তাজার ও অভিজ্ঞ স্লোভেনিয়ান ফরোয়ার্ড লুকা মাজেন। এই দুই বিদেশিকে নিয়েই লড়তে হবে ডায়মন্ড বাহিনীকে।

কিবু স্বীকার করে নিলেন, “ইস্টবেঙ্গল ভাল দল। ওদের হাতে পুরো কোটার বিদেশি রয়েছে। সঙ্গে এক ঝাঁক প্রতিভাবান ভারতীয় ফুটবলার। তাই ওদের সমীহ করতেই হবে। ডার্বি জয়ে ওদের প্রত্যেকের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে ভাববেন না যে, আমরা মাঠে নামার আগেই হেরে বসে আছি। ফুটবলে ফেভারিটদের হেরে যাওয়া নতুন কোনও ঘটনা নয়। লড়াকু মানসিকতা ও বুদ্ধির জোরে অঘটন ঘটানো যায়। পোলিশ লিগে কোচ থাকাকালীন আমি এমন ঘটনা দেখেছিলাম। আমাদেরও সেরকম মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামতে হবে, যাতে ডুরান্ড কাপের ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়তে পারি”।

জামশেদপুরের বিরুদ্ধে যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছিল তাঁর দল, ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচেও সেই পারফরম্যান্সই চান ডায়মন্ড কোচ। বলেন, “জামশেদপুরের বিরুদ্ধে আমরা কয়েকটা ছোটখাটো জিনিসে সংশোধন করে খেলেছিলাম। বুধবারও সে রকমই খেলতে হবে আমাদের। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আইএসএলের দলকে হারিয়েছি আমরাই। সেই কথা মাথায় রেখেই মাঠে নামতে বলেছি দলের ছেলেদের”।

জবি জাস্টিন, মেলরয় আসিসি, কোয়ার্টার ফাইনালে জোড়া গোলের নায়ক রুয়াতকিমা, হালিচরন নারজারির মতো প্রতিভাবান ও অভিজ্ঞ ফুটবলাররা রয়েছেন ডায়মন্ড হারবার দলে। এই টুর্নামেন্টে দলীয় দক্ষতায় একের পর এক ম্যাচ জিতেছে তারা। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে সেই দলগত পারফরম্যান্স বজায় রাখতে পারলে লাল-হলুদ বাহিনীকে যে কড়া চ্যালেঞ্জ জানাবে সদ্য আই লিগে পা রাখা দলটি, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

জয়ীরা ফাইনালে নর্থইস্টের মুখোমুখি

মঙ্গলবার শিলংয়ে ডুরান্ড কাপের প্রথম সেমিফাইনালে শিলং লাজং এফসি-কে ১-০-য় হারিয়ে ফাইনালে উঠল গতবারের চ্যাম্পিয়ন নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি। মঙ্গলবার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৩৬তম মিনিটে রিডিম তলাংয়ের গোলে ফাইনালে যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করে ফেলে তারা। নর্থইস্ট ডার্বিতে এ দিন শিলং লাজং এফসি সমানে সমানে টক্কর দিলেও শেষরক্ষা করতে পারেনি। গত ডুরান্ড কাপের ফাইনালে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নর্থইস্ট ইউনাইটেড। এ বারও সেই খেতাব ধরে রাখার সুযোগ অর্জন করল তারা। আগামী শনিবার কলকাতায় ডুরান্ডের ফাইনালে বুধবারের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে জয়ী দলের মুখোমুখি হবে তারা।