গত ইন্ডিয়ান সুপার লিগের গোল্ডেন বুটজয়ী তারকা ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসকে সই করিয়ে নিল ইস্টবেঙ্গল এফসি। গত মরশুমে কেরালা ব্লাস্টার্সের পক্ষে ১৩টি গোল করে সবচেয়ে বেশি গোলদাতার সন্মান অর্জন করে নেন এই গ্রিক ফরোয়ার্ড। শুক্রবার লাল-হলুদ শিবিরের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে এই খবর জানানো হয়। দু’বছরের জন্য ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেন তিনি।

গ্রিসের জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন এই সফল ফরোয়ার্ড। ২০১২-য় উয়েফা ইউরোপিয়ান অনূর্ধ্ব ১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্স আপ গ্রিক দলেরও সদস্য ছিলেন তিনি। নিজের দেশ ছাড়াও জার্মানি, ক্রোয়েশিয়া ও ইজরায়েলের ক্লাব ফুটবলেও খেলেছেন তিনি।

আইএসএলে তিনি কেরালা ব্লাস্টার্সে যোগ দেন ২০২২-এ এবং গত দুই মরশুমে ৩৮টি ম্যাচে ২৩টি গোল করেছেন দিয়ামান্তাকস। ছ’টি গোলে অ্যাসিস্টও করেছেন। আইএসএলে প্রথম মরশুমে দশটি গোল করে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আরও এক মরশুম থাকলে তিনি দলকে আরও সাফল্য এনে দিতে পারেন। মাঠের মধ্যে তাঁর ক্যারিশমা তো সারা দুনিয়া দেখেছে। কিন্তু মাঠের বাইরে, ড্রেসিংরুমে দলনেতা ও রোল মডেল হয়ে ওঠার যে ক্ষমতা দেখিয়েছেন দিয়ামান্তাকস, তা অভাবনীয়।

গত মরশুমের অনেকটা সময়ই ব্লাস্টার্সের হয়ে মাঠে নামতে পারেননি লুনা। অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। সেই সময়েও যে ভাবে দলকে বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন গ্রিক ফরোয়ার্ড, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। যে ভাবে প্রায় প্রতি ম্যাচে বিপক্ষের গোল এরিয়ায় সবচেয়ে বড় ত্রাস হয়ে ওঠেন তিনি, তার যত প্রশংসাই করা হোক, তা যথেষ্ট নয়।

নিজের জন্য যেমন জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন তিনি, তেমনই প্রতিপক্ষের গোলের সামনে সতীর্থদের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন বারবার। গোলের নিখুঁত পাসও বাড়িয়েছেন অনেক। মরশুমের শুরুতে অবশ্য চোট সারিয়ে মাঠে ফিরে ছন্দে ফিরতে সময় নেন দিয়ামান্তাকস। ঘরের মাঠে ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে কষ্টার্জিত ২-১ জয়ে ছন্দে ফেরেন তিনি। সেখান থেকে আর পিছন ফিরে তাকাননি গ্রিক তারকা।

পরের ম্যাচেই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জয়সূচক গোলটি তিনিই করেন। চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে প্রথম জোড়া গোল আসে তাঁর পা থেকে। জানুয়ারির অবকাশের আগে পরপর তিনটি ম্যাচে গোল করে ও একটি অ্যাসিস্ট দিয়ে দলকে লিগ টেবলের শীর্ষে থাকতেই সাহায্য করেন দিয়ামান্তাকস।

কিন্তু অবকাশের পরের সময়টায় দল ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে গেলেও নিয়মিত গোল করে যান দিয়ামান্তাকস। ওডিশার বিরুদ্ধে ফিরতি লেগে দল হারলেও তিনি গোল করেন। এফসি গোয়া ও মোহনবাগান এসজি-র বিরুদ্ধে দুই ম্যাচেই জোড়া গোল পান তিনি। জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধেও ১-১ ড্রয়ে একমাত্র গোলটি ছিল তাঁরই। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে পাওয়া চোটেই তাঁর এই মরশুম শেষ হয়ে যায়। সেই ইস্টবেঙ্গলেই এ বার যোগ দিচ্ছেন দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস।

লাল-হলুদ শিবিরে যোগ দিয়ে ইস্টবেঙ্গলের ‘দিমি’ বলেন, “এশিয়ায় ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরা অন্যতম সেরা ও বিশাল সংখ্যক। তাদের সামনে খেলতে নামার তর সইছে না। দলকে সাফল্য এনে দেওয়া ও সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানোই আমার কাজ। সে জন্য নিজের সেরাটা উজাড় করে দেব। কলকাতায় সবার সঙ্গে দেখা হবে!”

সফল ফরোয়ার্ডের ইস্টবেঙ্গলে যোগদান নিয়ে লাল-হলুদ শিবিরের স্প্যানিশ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত বলেন, “আইএসএলের সঙ্গে যে ভাবে মানিয়ে নিয়েছে দিয়ামান্তাকস, তা অসাধারণ। আমাদের দলে ও এসে যাওয়ায় আমাদের আক্রমণ আরও শক্তিশালী হতে চলেছে। আমাদের সঙ্গে খুব ইতিবাচক কথাবার্তা হয়েছে ওর, ফলে আমাদের শিবিরে যোগ দিতে রাজি হয়ে যায়। অনেক ক্লাব থেকেই ওর কাছে প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলকেই বেছে নেয় ও”।

কয়েক দিন আগেই তিন বিদেশী ভিক্টর ভাসকেজ, ফেলিসিও ব্রাউন ও আলেকজান্দার প্যানটিচকে অব্যহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় লাল-হলুদ ব্রিগেড। গত মরশুমে আইএসএলে নয় নম্বরে থেকে লিগ শেষ করে ইস্টবেঙ্গল এফসি। প্লে-অফের দোরগোড়ায় পৌঁছেও তারা শেষ পর্যন্ত পরপর ব্যর্থতার ফলে নয়ে নেমে যায়। তবে মরশুমের অন্য দুই টুর্নামেন্টে ভাল ফল করে। কলিঙ্গ সুপার কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা এবং ডুরান্ড কাপে রানার্স-আপ হয়। সম্প্রতি আগামী মরশুমের জন্য আরও ভাল দল গড়বেন বলে সমর্থকদের আশ্বাস দিয়েছেন তাদের স্প্যানিশ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। সম্ভবত তারই প্রথম ধাপ এই দিয়ামান্তাকসের নিয়োগ।