ডুরান্ড কাপ সেমিফাইনালে দুই অপরাজিতর লড়াই, মরিয়া নর্থইস্টের চ্যালেঞ্জের মুখে ইস্টবেঙ্গল
চার বছর আগে যা পারেনি তারা, এ বার তা পারবে? মঙ্গলবার ঐতিহ্যবাহী ডুরান্ড কাপ সেমিফাইনালে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে এই প্রশ্নের উত্তরে আর এক পাল্টা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল শিবিরে, কেন নয়? ডার্বি-জয় সহ টানা চার ম্যাচে অপরাজিত থাকা দলের মধ্যে যে এমন আত্মবিশ্বাসের বাতাবরণ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।


চার বছর আগে যা পারেনি তারা, এ বার তা পারবে? মঙ্গলবার ঐতিহ্যবাহী ডুরান্ড কাপ সেমিফাইনালে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে এই প্রশ্নের উত্তরে আর এক পাল্টা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল শিবিরে, কেন নয়? ডার্বি-জয় সহ টানা চার ম্যাচে অপরাজিত থাকা দলের মধ্যে যে এমন আত্মবিশ্বাসের বাতাবরণ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।
চার বছর আগে, ২০১৯-এ গোকুলাম কেরালা এফসি-র কাছে টাই ব্রেকারে হেরে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। এ বার সেই গোকুলামকে কোয়ার্টার ফাইনালে ছিটকে দিয়ে ফাইনাল থেকে আর এক ধাপ দূরে কলকাতার অন্যতম সেরা ফুটবল ক্লাব। নতুন মরশুমের শুরু থেকে অপরাজিত থাকা দলের সামনে এ বার এমন এক প্রতিদ্বন্দী, যারা হয়তো বিষাক্ত নয়, কিন্তু কখন কী করতে পারে, তা বোঝা বেশ কঠিন। ইস্টবেঙ্গলের মতো তারাও অপরাজিত হয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল এবং শেষ আটের লড়াইয়ে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে জিতেই সেমিফাইনালে উঠেছে। সুতরাং লড়াইটা সমানে সমানে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এ বারের ডুরান্ড কাপে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করার মতো। চার সেমিফাইনালিস্টের মধ্যে দু’টি দল গ্রুপ পর্বে ছিল ‘এ’ গ্রুপে এবং বাকি দুটি ছিল ‘ডি’ গ্রুপে। মঙ্গলবার ‘এ’ গ্রুপে থাকা ইস্টবেঙ্গল এফসি ও ‘ডি’ গ্রুপে থাকা নর্থইস্টের দ্বৈরথ হবে যেমন, তেমনই বুধবারও দুই গ্রুপের দুই দল মোহনবাগান এসজি-র লড়াই এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত ফাইনালেও দুই গ্রুপ থেকে উঠে আসা দুই দলই মুখোমুখি হবে, না একই গ্রুপের দুই দল ফের খেতাবী লড়াই লড়বে, এটা কিন্তু বেশ আকর্ষণীয় বিষয়।
লাল-হলুদ বাহিনীর স্প্যানিশ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত বলেই দিয়েছেন, “কোয়ার্টার ফাইনালে গোকুলামের বিরুদ্ধে তুমুল লড়াই করে সেমিফাইনালে উঠেছি আমরা। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত অপরাজিত রয়েছি। ওদের দলে তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার দারুন একটা মিশ্রণ রয়েছে। ফলে প্রতিপক্ষ হিসেবে ওরা বেশ কঠিন। আমাদের কাছে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ”।
বড় চ্যালেঞ্জ হওয়ারই কথা। কারণ, গত আইএসএলে তেমন ভাল ফল করতে না পারলেও নর্থইস্ট কিন্তু এ মরশুম শুরু করেছে দুর্দান্ত ভাবে। ঠিক ইস্টবেঙ্গলের মতোই ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারাও। ডুরান্ডের গ্রুপ পর্বে শিলং-লাজং এফসি-কে ৪-০-য় হারিয়ে রীতিমতো দাপুটে সূচনা করে তারা। অপর সেমিফাইনালিস্ট এফসি গোয়ার বিরুদ্ধেও ২-২ ড্র করে তারা এবং শেষে ডাউনটাউন হিরোজকে ৩-১-এ হারিয়ে শেষ আটে ওঠে তারা। শেষ আটে ভারতীয় সেনা দলকে ১-০-য় হারিয়ে মঙ্গলবার শেষ চারে ইস্টবেঙ্গলের মুখোমুখি। ফাইনালের হাতছানি যখন তাদের সামনে, তখন নিশ্চয়ই সহজে তাদের ছেড়ে দেবে না লড়াকু নর্থইস্ট।
এ পর্যন্ত ১০ গোল দিয়ে তিন গোল খেয়েছে স্প্যানিশ কোচ হুয়ান পেদ্রো বেনালির দল। ৪-২-৩-১-এ দল সাজিয়ে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলাতে পছন্দ করেন ৫৪ বছর বয়সী এই কোচ। এই মরশুমের জন্যই নর্থইস্ট ইউনাইটেড তাঁকে দায়িত্বে নিয়ে এসেছে একটা কঠিন লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য। এই ব্যাপারে কুয়াদ্রাতের সঙ্গে তাঁর বেশ মিল রয়েছে। দুই কোচের সামনেই কঠিন চ্যালেঞ্জ এবং দুই কোচই মরশুমের শুরুটা বেশ ভাল ভাবেই করেছেন।
গত কয়েকটি ম্যাচে দল হিসেবে ইস্টবেঙ্গল বেশ ভাল খেললেও, কয়েকটি জায়গায় তাদের সমস্যা এখনও রয়েছে, যেগুলো না মেটালে চলতি ডুরান্ডের শেষ দিকে সমস্যায় পড়তে পারে তারা। কুয়াদ্রাতের এখন সবচেয়ে বড় কাজ হল ক্লেটন সিলভাকে ছন্দে ফেরানো। গত বছরের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে গত দুই ম্যাচে দেখে মনে হয়েছে সাম্প্রতিককালে তিনি ফুটবল ছুঁয়েও দেখেননি। ফিটনেস নিয়েও অনেক কাজ করতে হবে তাঁকে। নক আউট পর্বের এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ক্লেটনকে পরিবর্ত হিসেবেও মাঠে নামাবেন কি না, তা ভেবে দেখতে হবে লাল-হলুদ কোচকে।
অবশ্য যে দলে বোরহা হেরেরা ও হাভিয়ে সিভেরিও-র মতো স্ট্রাইকার রয়েছেন, সেই দলকে গোল নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হবেই বা কেন? দুই স্প্যানিশ অ্যাটাকারকে গোলের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য সল ক্রেসপো, মহেশ সিংয়ের মতো মিডফিল্ডার রয়েছেন। এ ছাড়াও নন্দকুমার শেখরের মতো সুযোগসন্ধানী উইঙ্গার রয়েছেন কুয়াদ্রাতের হাতে। রয়েছেন সব মিলিয়ে আক্রমণাত্মক দল হিসেবে ইস্টবেঙ্গলকে এখন যথেষ্ট শক্তিশালীই মনে হচ্ছে।
লাল-হলুদ রক্ষণে হরমনজ্যোৎ খাবরার অভিজ্ঞতা ও লাল চুঙনুঙ্গার শক্তি কাজে লাগলেও অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার মন্দার রাও দেশাই চোট সারিয়ে দলে ফিরে এলে তাদের দূর্গ আরও সুরক্ষিত হয়ে উঠতে পারে। জর্ডন এলসি যদিও রক্ষণকে অনেকটাই ভরসা জোগাচ্ছেন। গত ম্যাচে গোলও করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার হয়তো উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে চাইবেন না কুয়াদ্রাত। কিন্তু অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার মন্দার রাও দেশাই যেহেতু চোট সারিয়ে অনুশীলনে ফিরেছেন, তাই তাঁকে প্রথম দলে ফেরাতে পারেন। তিন স্প্যানিশ অ্যাটাকার হাভিয়ে সিভেরিও, বোরহা হেরেরা ও সল ক্রেসপোর প্রথম এগারোয় থাকার সম্ভাবনা থাকলেও হয়তো এঁদের কাউকে রিজার্ভ বেঞ্চে রেখে হোসে পার্দোকে শুরু থেকে খেলানোর কথা ভাবতে পারেন কৌশলী কুয়াদ্রাত। প্রতি ম্যাচে ছক ও কৌশল পাল্টে দলকে খেলানোই পছন্দ তাঁর।
নর্থইস্টের পার্থিব গোগোই দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন। শিলং লাজংয়ের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। সেই ম্যাচে আরও একটি গোল করেন মিডফিল্ডার রোমেইন ফিলিপোতো। ডাউনটাউনের বিরুদ্ধেও পার্থিব ও ফিলিপোতো গোল পান। এই দুই ফরোয়ার্ডের মধ্যে বেশ ভাল বোঝাপড়া গড়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে, যা তাদের প্রতিপক্ষদের চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে গোলদাতা মনবীর সিং (অপর গোলটি ছিল সন্দেশ ঝিঙ্গনের নিজ গোল) এবং ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড ইবসন মেলোও গোল পেয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে কোনসাম ফাল্গুনী সিংয়ের গোলে জেতে তারা। অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে এই দলে স্কোরারের অভাব নেই।
ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ যেখানে মোহনবাগানের মতো শক্তিশালী আক্রমণ বিভাগকে সামলে সফল হয়েছে, সেখানে নর্থইস্টের আক্রমণ সামলানোও যে অসম্ভব হবে না, সে আশা করতেই পারেন সমর্থকেরা। কিন্তু অসমের দলের তারুণ্য ও ক্ষিপ্রতাকে বশে আনতে গেলে নিখুঁত কৌশলও প্রয়োজন, যা তৈরি করার ব্যাপারে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে কুয়াদ্রাতের। এই কৌশলেই মঙ্গলবার প্রতিপক্ষকে তিনি কাৎ করতে পারেন কি না, সেটাই দেখার।
টুর্নামেন্ট- ডুরান্ড কাপ, ২০২৩
ম্যাচ- সেমিফাইনাল, ইস্টবেঙ্গল এফসি বনাম নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি
ভেনু- যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, কলকাতা
কিক অফ- ২৯ অগাস্ট, বিকেল ৬.০০
সম্প্রচার- সোনি টেন ২, সোনি লিভ অ্যাপ