ব্রাজিলীয় তারকা ফরোয়ার্ড ও দলের অধিনায়ক ক্লেটন সিলভার সঙ্গে আরও এক বছরের চুক্তি করল ইস্টবেঙ্গল এফসি। বৃহস্পতিবার ক্লাবের পক্ষ থেকে এই খবর জানানো হয়। ২০২২-২৩ মরশুমে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্লেটন গত মরশুমেও ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। তাই তাঁকে রেখে দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিল ক্লাব।

কয়েক দিন আগেই গত আইএসএলের সর্বোচ্চ গোলদাতা দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসকে সই করিয়েছে। ডুরান্ড কাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ডেভিড লালনসাঙ্গাকেও এ মরশুমে দলে নিয়েছে লাল-হলুদ বাহিনী। এ বার কলিঙ্গ সুপার কাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্লেটন সিলভাকেও রেখে দিল তারা। অর্থাৎ, আক্রমণ বিভাগকে ক্রমশ শক্তিশালী করে তুলছে কার্লস কুয়াদ্রাতের দল।

ক্লেটনের চুক্তির মেয়াদবৃদ্ধি প্রসঙ্গে কুয়াদ্রাত বলেন, “গত দু’মরশুমে ক্লাবের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে ক্লেটন। দলকে দৃষ্টান্তমূলক নেতৃত্বও দিয়েছে। ওর গোলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ জিতেছি আমরা। সুপার কাপ ফাইনালের একস্ট্রা টাইমে ওর জয়সূচক গোলও নিশ্চয়ই মনে আছে সমর্থকদের। ওই গোলই ১২ বছর পর ক্লাবকে জাতীয় স্তরের খেতাব এনে দিয়েছিল। ওর মতো একজন চূড়ান্ত পেশদার ফুটবলারের সঙ্গে কাজ করতে পারার সুযোগ পেয়ে আমি খুশি”।

আইএসএলে গত দুই মরশুমে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ৪১টি ম্যাচে ২০টি গোল করেছেন ক্লেটন। চারটি গোলে অ্যাসিস্টও করেছেন এই দুই মরসুমে। অন্যান্য টুর্নামেন্ট মিলিয়ে লাল-হলুদ বাহিনীর হয়ে মোট ২৭টি গোল করেন তিনি। আটটি ম্যাচে জোড়া গোলও করেছেন তিনি। ২০২২-২৩ মরশুমে দলের ১৮টি গোলে অবদান ছিল তাঁর। গত মরশুমে ১৭টি গোলে অবদান রাখেন তিনি। ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে এ পর্যন্ত মোট ৪৬ গোল ও ১৮টি অ্যাসিস্ট রয়েছে তাঁর। এমন একজন কার্যকরী ফরোয়ার্ডকে তাই দলে বহাল রাখারই সিদ্ধান্ত নিল ইস্টবেঙ্গল এফসি। আইএসএলে তাঁর গোলসংখ্যা ৩৬।

ইস্টবেঙ্গলে আরও এক মরশুম খেলার সুযোগ পেয়ে ক্লেটন বলেন, “এই মহান ক্লাবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার সুযোগ পেয়ে আমি রোমাঞ্চিত। সমর্থকদের জন্য ও ক্লাবের জার্সির জন্য সবসময়ই নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ইস্টবেঙ্গলে সুপার কাপ জয় আমার ফুটবল জীবনের অন্যতম সেরা স্মৃতি হয়ে থাকবে। সামনে লম্বা মরশুম। বরাবরের মতো আমাদের পাশে থাকুন সবাই”।

হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে জোড়া গোল দিয়ে গত আইএসএলে অভিযান শুরু করেন ক্লেটন। এর পরে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধেও একটি গোল করেন। নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধেও জোড়া গোল করেন তিনি এবং মোহনবাগান এসজি-র বিরুদ্ধে ২-২ ড্রয়ে একটি গোল তাঁরই ছিল। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ফিরতি ম্যাচেও গোল পান তিনি এবং শেষ গোলটি করেন তাঁর প্রাক্তন ক্লাব বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে। তার আগে কলিঙ্গ সুপার কাপে দুরন্ত ফর্মে ছিলেন তিনি। হায়দরাবাদ এফসি ও মোহনবাগান এসজি-র বিরুদ্ধে জোড়া গোল করেন ও ফাইনালেও জয়সূচক গোল করেন।

গত মরশুমে কেরালা ব্লাস্টার্সের পক্ষে ১৩টি গোল করে গোল্ডেন বুটজয়ী তারকা ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসকে সম্প্রতি সই করায় লাল-হলুদ ব্রিগেড। ডুরান্ড কাপে মহমেডান এসসি-র হয়ে নেমে সবচেয়ে বেশি গোল পাওয়া ডেভিড লালনসাঙ্গাও যোগ দিয়েছেন কুয়াদ্রাতের শিবিরে। তাঁদের সঙ্গে ক্লেটনকে আবার নতুন করে মানিয়ে নিতে হবে আগামী মরশুমে।

চলতি মাসেই গত মরশুমের দলে থাকা তিন বিদেশী ভিক্টর ভাসকেজ, ফেলিসিও ব্রাউন ও আলেকজান্দার প্যানটিচকে অব্যহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় লাল-হলুদ ব্রিগেড। গত মরশুমে আইএসএলে নয় নম্বরে থেকে লিগ শেষ করে তারা। প্লে-অফের দোরগোড়ায় পৌঁছেও তারা শেষ পর্যন্ত পরপর ব্যর্থতার ফলে নয়ে নেমে যায়। তবে মরশুমের অন্য দুই টুর্নামেন্টে ভাল ফল করে। কলিঙ্গ সুপার কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা এবং ডুরান্ড কাপে রানার্স-আপ হয়। সম্প্রতি আগামী মরশুমের জন্য আরও ভাল দল গড়বেন বলে সমর্থকদের আশ্বাস দিয়েছেন তাদের স্প্যানিশ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। সম্ভবত সেই দিকেই এগোচ্ছে তারা।