কলিঙ্গ সুপার কাপের প্রি কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই তাঁর দল যে ভাবে ছিটকে গিয়েছে, তাতে বেশ ক্ষুব্ধ ইস্টবেঙ্গল এফসি-র কোচ অস্কার ব্রুজোন। রবিবার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে যে ভাবে কেরালা ব্লাস্টার্সের কাছে ০-২-এ হারে তাঁর দল, যে ভাবে প্রতিপক্ষের কাছে প্রায় আত্মসমর্পণ করেন লাল-হলুদ জার্সি গায়ে নামা ফুটবলাররা, তা ছিল অবাক করার মতো।

তাদের পারফরম্যান্সে পরিকল্পনার অভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। তিন সপ্তাহের প্রস্তুতির ছাপ দেখা যায়নি তাদের খেলায়। বিশেষ করে তাদের দুই বিদেশী ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস ও রাফায়েল মেসি বৌলিকে কার্যত খুঁজেই পাওয়া যায়নি সারা ম্যাচে। সারা ম্যাচে ১২টি শট নিলেও একটিও শট গোলে রাখতে পারেনি কলকাতার দল।

পূর্ণশক্তির দল নিয়ে নামা কেরালার আইএসএল দল রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে জয় ছিনিয়ে নেয়। শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করা দলকে প্রথমার্ধে পেনাল্টি থেকে পাওয়া গোলে এগিয়ে দেন তাদের স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড জেসুস জিমিনিজ। তার আগে যে সব সুযোগ হাতছাড়া করেন, সেগুলি কাজে লাগাতে পারলে আরও তিন গোল পেতে পারতেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান বাড়ান মার্কিন স্ট্রাইকার নোয়া সাদাউই।

এই পারফরম্যান্সের পর সাংবাদিক বৈঠকে এসে প্রায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন ব্রুজোন। বলেন, “খুবই হতাশাজনক ফল। আমাদের খেলোয়াড়দের খারাপ পারফরম্যান্সের ফল এটা। যা হয়েছে তার দায়িত্ব আমারই। তবে এই ইস্টবেঙ্গলকে আমরা কেউই দেখতে চাইনি। অনেক পরিবর্তন আনতে হবে। ভারতের সব প্রতিযোগিতায় সেরা হতে গেলে অনেক বদলাতে হবে নিজেদের”।

প্রতিপক্ষের প্রশংসা করে লাল-হলুদ কোচ বলেন, “কেরালা ব্লাস্টার্স সব বিভাগে আধিপত্য বিস্তার করেছে। ওদের খেলোয়াড়দের মধ্যে অনেক বেশি খিদে ছিল। প্রতিটা সেকেন্ড বল ওরা জিতেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মান, মানসিকতা, পারফরম্যান্স সব কিছুই ছিল হতাশাজনক”।

এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “সব কিছুতেই ওরা আমাদের পিছনে ফেলে দিয়েছে। সে সেকেন্ড বল হোক বা আমাদের ছেলেদের আটকানো, পাসিং, শুটিং, আক্রমণে ওঠা, সেট পিস—সব দিক থেকেই। এটা শুধু মানসিকতার ব্যাপার নয়। আমাদের অনেক পরিবর্তন আনতে হবে। এ মরশুমের শুরুর দিকের সমস্যা মিটিয়ে অনেক ভাল ভাল মুহূর্ত তৈরি করা সত্ত্বেও আমি খুব হতাশ ও বীতশ্রদ্ধ। কারণ, দেশের সেরা দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা আমাদের নেই”।

রবিবারের ম্যাচ বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, “গোল খাওয়ার পর তো তা শোধ করার চেষ্টা করতে হয়। গোল খাওয়ার আগে পর্যন্ত, প্রথম আধ ঘণ্টায় আমাদের দল ঠিকঠাকই খেলছিল। কিন্তু গোল খাওয়ার পরই দেখলাম, সবাই যেন কেমন দাঁড়িয়ে গেল, হাল ছেড়ে দিল। কেরালা ক্রমশ খেলায় আরও উন্নতি করে আর আমাদের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও উপায়ই যেন আমাদের জানা ছিল না!”

সারা মরশুমে দলের পারফরম্যান্স নিয়ে স্প্যানিশ কোচ বলেন, “ক্লাবের দুঃসময়ে আমি দলের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। ওই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো বেশ কঠিন ছিল। তাও ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি আমরা ক্রমশ আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছিলাম। এমনকী এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপেও আরকাদাগের চেয়ে আমরা খুব একটা পিছিয়ে ছিলাম না। প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলাম। কিন্তু আজ দেখা গেল না, এও যথেষ্ট নয়। এত পরিশ্রম করার পরও এই ফল দেখে হতাশ হওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। অনেক পরিবর্তন চাই দলে। ম্যানেজমেন্টকে সে রকমই জানাব আমি”।

দলে কী কী পরিবর্তন আনতে চান তিনি, জানতে চাইলে অস্কার বলেন, “আমাদের দলে কয়েকজন ভাল ভারতীয় ফুটবলার আছে। কিন্তু কয়েকটা পজিশনে কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন আমাদের। বাকি জায়গাগুলো নিয়েও অনেক ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন। আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। এই দলের মানসিকতা বদলানো, ছেলেদের মধ্যে জয়ের খিদে বাড়ানোর কাজটা আমার কাছে বেশ কঠিন কাজ ছিল”।

এ ভাবে মরশুম শেষ করা নিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমাদের ধারাবাহিকতার খুব অভাব ছিল। অনেক ভাল ভাল ম্যাচ খেলেছি আমরা, দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী দলগুলোকে হারাতে পারতাম। কিন্তু আজকের ইস্টবেঙ্গলকে দেখে মরশুমের শুরুর দিকের অবস্থার কথা মনে পড়ে গেল। এর চেয়ে খারাপ ভাবে মরশুম শেষ করা যায় না”।