শক্তিশালী দল নিয়ে আইএসএল জয়ই লক্ষ্য ইস্টবেঙ্গল কোচ কুয়াদ্রাতের
‘এ বার শুধু প্লে-অফে থেমে থাকতে চাই না। আইএসএল ট্রফি জিততে চাই। তবে আমাদের ধাপে ধাপে এগোতে হবে। প্রথমে ডুরান্ড কাপে ভাল খেলতে হবে’।

গত মরশুমে যে মানের দল তাঁর হাতে ছিল, এ বার তার চেয়ে ভাল ও শক্তিশালী দল তিনি পাচ্ছেন বলে মনে করেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। তাই তাঁর আশা, আসন্ন মরশুমে ফলও আগেরবারের তুলনায় অনেক ভাল হবে।
গত মরশুমে ডুরান্ড কাপে রানার্স আপ ট্রফি জেতার পর কলিঙ্গ সুপার কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। কিন্তু ইন্ডিয়ান সুপার লিগের প্লে অফে উঠতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল এফসি। ২০২৩-২৪ মরশুমে ১২ বছর পর কোনও জাতীয় স্তরের খেতাব (কলিঙ্গ সুপার কাপ) জেতে তারা, যার ফলে আসন্ন মরশুমে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর যোগ্যতা অর্জন পর্বে খেলতে পারবে ইস্টবেঙ্গল। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই দল নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। এতদিনের প্রস্তুতির পর বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে লাল-হলুদ কোচকে।
ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “গত এক বছরে পরিস্থিতি বদলে যেটা দাঁড়িয়েছে, তা হল, এখন আমরা অনেক আশাবাদী। আরও বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে। একটা শক্তিশালী দলে যতটা গভীরতা থাকা দরকার, গত বছর ততটা ছিল না দলে। তাই গত বার দলের একটা টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠা এবং একটা টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা আমাদের কাছে সারপ্রাইজ ছিল। এ বারও যদি সে রকম হয়, তা হলে আর সেটা সারপ্রাইজ থাকবে না। গতবার নিজেদের গোল বাঁচিয়ে পয়েন্ট জেতাটা ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। এ বার আমাদের হাতে বিকল্প আছে। তাই এ বার দল আরও আগ্রাসী এবং আক্রমণাত্মক খেলবে”।
ইস্টবেঙ্গল এফসি এ বার এক ঝাঁক নতুন ফুটবলারকে সই করিয়েছে তাদের দলে। বিদেশীদের মধ্যে পাঞ্জাব এফসি থেকে ফরাসি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মাদি তালাল ও গত আইএসএলে গোল্ডেন বুটজয়ী গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসকে কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি থেকে নিয়ে এসেছে তারা। জর্ডনিয়ান ডিফেন্ডার হিজাজি মাহের, ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড ক্লেটন সিলভা ও স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সল ক্রেসপোর চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে তারা।
আরও দু-একজন বিদেশী ফুটবলার নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়ে কুয়াদ্রাত বলেন, “আরও দু-একজন বিদেশীর খোঁজ চলছে অনেক দিন ধরেই। শুধু ভারত নয়, সারা দুনিয়াতেই ফুটবলের বাজার খুব জটিল। একজন খেলোয়াড়কে সই করানোর আগে অনেক কিছু বিবেচনা করতে হয়। আমরা গত কয়েক মাস ধরেই ফুটবলার বাছাই নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি, এএফসি-র ম্যাচের আগে পুরো দল তৈরি হয়ে যাবে। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। নতুন, তরুণ খেলোয়াড়দেরও দলে রাখতে চাই। সে জন্য কলকাতা লিগের ওপর নজর রেখেছি”।
চেন্নাইন এফসি থেকে গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার, জামশেদপুর এফসি থেকে ডিফেন্ডার প্রভাত লাকরা, কেরালা ব্লাস্টার্স থেকে ডিফেন্ডার নিশু কুমার, হায়দরাবাদ এফসি থেকে তরুণ মিডফিল্ডার ও ডিফেন্ডার মার্ক জোথানপুইয়া, মহমেডান এসসি থেকে তরুণ ফরোয়ার্ড ডেভিড লালনসাঙ্গা লাল-হলুদ বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া ভারতীয় ডিফেন্ডার মহম্মদ রকিপকেও দলে রেখে দিয়েছে লাল-হলুদ বাহিনী। সব মিলিয়ে ইস্টবেঙ্গল খাতায়-কলমে শক্তিশালী দলই তৈরি করেছে বলে মনে হচ্ছে।
গতবার আইএসএল শুরুর আগে কোচ বলেছিলেন, সেরা ছয়ের মধ্যে থেকে নক আউটে পৌঁছনোই প্রথম লক্ষ্য। কিন্তু এ বার সরাসরি আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে তাঁর মুখে। বললেন, “জানি পরের মরশুম নিয়ে সমর্থকেরা প্রত্যেকেই খুব আগ্রহী। আমাদের দলে ভাল ভাল ফুটবলার এসেছে। তাই এ বার শুধু প্লে-অফে থেমে থাকতে চাই না। আইএসএল ট্রফি জিততে চাই। তবে আমাদের ধাপে ধাপে এগোতে হবে। প্রথমে ডুরান্ড কাপে ভাল খেলতে হবে। যে প্রতিযোগিতাতেই খেলি, জেতার চেষ্টা করতে হবে। দীর্ঘ দিন বাদে ভাল একটা দল হয়েছে আমাদের। গতবার ক্লাব ট্রফি জেতায় সমর্থকেরাও খুশি। আমরা আরও শক্তিশালী হতে চাই।”
দেশের ক্লাব টুর্নামেন্ট ছাড়াও এ বার এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এও খেলবে তারা, যার অভিযান শুরু হবে অগাস্টের ১৪ তারিখে টুর্নামেন্টের বাছাই পর্বের প্লে অফ ম্যাচ দিয়ে। সে দিন ঘরের মাঠে তারা নামবে তুর্কমেনিস্তানের এফসি আল্টিন আসিরের বিরুদ্ধে। এই টুর্নামেন্টের বাড়তি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কুয়াদ্রাত বলেন, “এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আমরা ভারতের প্রতিনিধিত্ব করব। তাই এটা আমাদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ভারতীয় ফুটবলে আমি সাত বছর ধরে আছি। এই দলটা আমার হাতে পড়া অন্যতম সেরা দল। প্রত্যাশার চাপ থাকবে আমাদের ওপর। কিন্তু ফুটবলে এটা থাকেই। সেই চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে”।
গত মরশুমে ডুরান্ড কাপের গ্রুপ লিগে ডার্বি জয়ের পর কলিঙ্গ সুপার কাপেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারায় তারা। কিন্তু ইন্ডিয়ান সুপার লিগে কোনও ডার্বি জিততে পারেনি তারা। ডুরান্ড ফাইনালে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কাছে হেরেই রানার্স আপ হয় তারা। আইএসএলে প্রথমে ২-২ ড্র করার পর ১-৩-এ হেরে যায় ইস্টবেঙ্গল। এ বারও ডুরান্ড কাপের গ্রুপ লিগে মরশুমের প্রথম ডার্বি হতে চলেছে।
ডার্বির প্রসঙ্গ উঠলে কুয়াদ্রাত বলেন, “ডার্বির দিন যারা একে অপরের চেয়ে ভাল খেলে, তারাই জেতে। সে যে যেমনই দল তৈরি করুক বা প্রস্তুতি নিক না কেন। আমরা মোহনবাগানকে শ্রদ্ধা করি। আসলে, একটা বড় ক্লাব আর একটা বড় ক্লাবকে উন্নতি করতে সাহায্য করে। রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনাও একে অপরকে শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে। টানা আট ম্যাচে হারের পর গত মরশুমে দু’বার মোহনবাগানকে হারিয়েছি। এ বারও সেই ধারা বজায় রাখতে চাই”।
দীর্ঘ মরশুমে, চোট-আঘাত, কার্ড-সমস্যা, ক্লান্তি- এ সব থাকবেই। তা খুব ভাল করেই জানেন কোচ। এই সব কারণে গত মরশুমে অনেক ভুগতেও হয়েছে ইস্টবেঙ্গলকে। তাই যারা নিয়মিত মাঠে নামবে, শুধু সেই দলই নয়, রিজার্ভ বেঞ্চকেও সমান শক্তিশালী করে তোলার চেষ্টায় রয়েছেন কুয়াদ্রাত। এ বার রিজার্ভ বেঞ্চ তাঁর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা জানতে চাইলে স্প্যানিশ কোচ বলেন, “দলবদলের সময়সীমা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আমরা আরও কিছু খেলোয়াড়ের সঙ্গে যোগাযোগে আছি। চোট-আঘাত, সাসপেনশন এগুলো ফুটবলের অঙ্গ। এগুলো ফুটবলে হয়েই থাকে। এ সব যে হবে, জানি। গতবারের চেয়ে এ বারের দল আরও ভাল হয়েছে। এখন দলকে আরও শক্তিশালী করে তোলার প্রক্রিয়া চলছে”।