পাঁচ গোলে জয় দিয়ে জাতীয় ক্লাব মরশুম শুরু করল ইস্টবেঙ্গল এফসি। বুধবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ডুরান্ড কাপের প্রথম ম্যাচে বেঙ্গালুরুর সাউথ ইউনাইটেড এফসি-কে ৫-০-য় হারাল তারা। এই ব্যবধান আরও বাড়তে পারত। তবে একাধিক গোলের সুযোগ অল্পের জন্য হাতছাড়া হওয়ায় তা হয়নি।

বুধবার থেকে শুরু হয় ১৩৪তম ডুরান্ড কাপ, যার উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয় লাল-হলুদ বাহিনী ও বেঙ্গালুরু এফসি। প্রথমার্ধেই দু’গোলে এগিয়ে যায় কলকাতার দল। বিরতিতে ২-০-য় এগিয়ে থেকেই সাজঘরে যায় তারা। দ্বিতীয়ার্ধে নির্ধারিত সময়ের শেষ দশ মিনিটের মধ্যে বাকি তিনটি গোল করে ম্যাচ শেষ করে তারা।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ মরশুমের ডুরান্ড কাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার পর ম্যাচ শুরু হলে এ দিন ১২ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ডিফেন্ডার লালচুঙনুঙ্গা। ৩৮ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান বাড়ান স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সউল ক্রেসপো। ম্যাচের শেষ দিকে ৮০ মিনিটের মাথায় উইঙ্গার বিপিন সিং, ৮৮ মিনিটে গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস ও শেষ মিনিটে নাওরেম মহেশ সিং গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন।

ইস্টবেঙ্গলের হেড কোচ অস্কার ব্রুজোন ৪-২-৩-১ ছকে এ দিন তাঁর প্রথম একাদশ নামান, যেখানে নবাগত মার্তন্ড রায়না ও মোহাম্মদ রশিদের অভিষেক হয়। ডেভিড লাললনসাঙ্গা সামনে থেকে শুরু করেন, দুই উইং থেকে তাঁকে সাহায্য করার জন্য ছিলেন পিভি বিষ্ণু ও নাওরেম মহেশ সিং। মাঝমাঠে ছিলেন ক্রেসপো ও এডমন্ড লালরিনডিকা।

রক্ষণ সামলান আনোয়ার আলি, লালচুঙনুঙ্গা ও মহম্মদ রকিপ এবং গোল সামলান অভিজ্ঞ গোলকিপার দেবজিত মজুমদার। সাউথ ইউনাইটেড এফসি ৪-৩-৩ ছকে মাঠে নামে। জুনিয়র আন্তর্জাতিক মাকাকমায়ুম দানিয়াল ছিলেন তাদের দলের আক্রমণে একমাত্র ফরোয়ার্ড।

প্রথমার্ধে কার্যত একতরফা ফুটবল দেখা যায়। বেঙ্গালুরুর তরুণ ও অনভিজ্ঞ দলটির বিরুদ্ধে রীতিমতো দাপুটে মেজাজে ছিল। ১৬ বারের ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়নরা বেশির ভাগ সময় বল নিজেদের দখলে রাখে। চাপ সামলাতে সাউথ ইউনাইটেড নিজেদের অর্ধে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে। ম্যাচের ১২ মিনিটের মাথায় লালচুঙনুঙ্গার গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। ইউনাইটেড অধিনায়ক নোয়েলের হেডের ক্লিয়ারেন্স লালচুঙনুঙ্গার পায়ে এসে পড়ে, যে সুযোগ তিনি দুর্দান্তভাবে কাজে লাগান গোলের ওপরের কোণ দিয়ে বল জালে জড়িয়ে (১-০)।

প্রথমার্ধের শেষ দিকে, ৩৬ মিনিটের মাথায় এডমন্ড লালরিনডিকাকে বক্সে ফাউল করেন ১৭ বছর বয়সী লেফট ব্যাক আব্দুল সালহা। ফলে পেনাল্টি পায় ইস্টবেঙ্গল। পেনাল্টি স্পট থেকে সফলভাবে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ক্রেসপো (২-০)।

প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গল যদি তাদের সুযোগগুলি কাজে লাগাতে পারত, ব্যবধান আরও বড় হতে পারত। দু’বার পিভি বিষ্ণুর শট পোস্টে লাগে এবং ক্রেসপোর তিনটি হেডার লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। সাউথ ইউনাইটেড রক্ষণে সাতজনকে নিজেদের গোল এরিয়ায় নামিয়ে এনে দূর্গ রক্ষা করে। ফলে প্রথমার্ধে দুই গোলের বেশি হজম করেনি তারা। ইউনাইটেড গোলকিপার নিশান্ত কয়েকটি ভাল সেভ করেও দলকে সাহায্য করেন।

দ্বিতীয়ার্ধেও আগ্রাসী মেজাজ বজায় রাখে ইস্টবেঙ্গল। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকে তারা। তবে তাদের দৃঢ় রক্ষণ বারবার লাল-হলুদ অ্যাটাকারদের জায়গা সীমিত করে দেয়। এই সময়ে ডেভিড, মোহাম্মদ রশিদ ও মহেশ কয়েকটি ভাল গোলের সুযোগ তৈরি করেন।

৮০ মিনিটের মাথায় দুই পরিবর্ত খেলোয়াড়ের দুর্দান্ত বোঝাপড়ায় তৃতীয় গোলটি পায় ইস্টবেঙ্গল। দিয়ামান্তাকসের বুদ্ধিদীপ্ত থ্রু দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে বিপিন সিংয়ের পায়ে পৌঁছয়, যিনি প্রথম টাচেই বক্সের বাইরে থেকে বাঁক খাওয়ানো শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন (৩-০)।

চতুর্থ গোলটি করেন দিয়ামান্তাকস নিজেই। বক্সের প্রান্ত থেকে ফ্রি কিক সরাসরি গোলের দিকে গেলেও গোলকিপার বল ধরে রাখতে ব্যর্থ হন এবং তা গড়িয়ে জালে ঢুকে যায় (৪-০)। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে অধিনায়ক মহেশ সিং তাঁর ডান পায়ের চমৎকার শটে বল পাঠান গোলে (৫-০) এবং ইস্টবেঙ্গলের দুর্দান্ত পাঁচ তারা জয় সুনিশ্চিত করেন।