মরশুমের শুরুতে ডুরান্ড কাপে তিন প্রধানের কাছে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ
এ বারও ইন্ডিয়ান সুপার লিগের দলগুলি মরশুমের প্রথম টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে। তবে এ বার সব দল নয়, ছ’টি দল অংশ নিচ্ছে মরশুমের প্রথম টুর্নামেন্টে।

রাত পোহালেই শুরু হতে চলেছে ভারতীয় ফুটবলের নতুন ক্লাব মরশুম। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ফুটবল টুর্নামেন্ট ডুরান্ড কাপ দিয়ে এ বারও শুরু হবে এই মরশুম। ঐতিহাসিক এই টুর্নামেন্টের এ বার ১৩৪তম মরশুম, যা সারা এশিয়ায় সবচেয়ে প্রাচীন। এমন এক ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্ট, যা শুরু হয়েছিল ভারত স্বাধীন হওয়ার অনেক আগে, ১৮৮৮ সালে, সেই ডুরান্ড কাপের ইতিহাস বলছে, কলকাতার ক্লাবগুলিই এই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশিবার সাফল্য পেয়েছে।
গত দু’বছরেও কলকাতার ক্লাবগুলিই আধিপত্য করেছে। ২০২৩-এ ইস্টবেঙ্গল এফসি-কে হারিয়ে খেতাব জয় করে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। ২০২৪-এও ফাইনালে ওঠে সবুজ-মেরুন বাহিনী। কিন্তু তাদের হারিয়ে সেবার চ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করে ডুরান্ড কাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি।
প্রতিবারের মতো এ বারও ইন্ডিয়ান সুপার লিগের দলগুলি এই ‘সিজন ওপেনার’-এ অংশ নিচ্ছে। তবে এ বার সব দল নয়, ছ’টি দল অংশ নিচ্ছে মরশুমের প্রথম টুর্নামেন্টে। কলকাতার তিন ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ছাড়াও গতবারের চ্যাম্পিয়ন নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি, জামশেদপুর এফসি ও পাঞ্জাব এফসি এ বার ডুরান্ড কাপে অংশ নেবে।
মোট ২৪টি দল খেলছে এই আসরে। যাদের ছ’টি গ্রুপে ভাগ করা হবে এবং গ্রুপ পর্বে প্রতি দল একে অপরের বিরুদ্ধে খেলবে। প্রতি গ্রুপের সেরা দলগুলি কোয়ার্টার ফাইনালে তো উঠবেই। দ্বিতীয় সেরা দলগুলির মধ্যে সেরা দু’পক্ষও নক আউট পর্বে যোগ্যতা অর্জন করবে।
কলকাতার তিন প্রধানের মধ্যে গতবারের ফাইনালিস্ট মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও মহমেডান এসসি রয়েছে ‘বি’ গ্রুপে। ইস্টবেঙ্গল এফসি রয়েছে ‘এ’ গ্রুপে। জামশেদপুর এফসি-কে রাখা হয়েছে ‘সি’ গ্রুপে, পাঞ্জাব এফসি ‘ডি’ গ্রুপে এবং নর্থইস্ট ইউনাইটেড রয়েছে ‘ই’ গ্রুপে।
গতবারের ডুরান্ড কাপ ফাইনালিস্ট ও আইএসএলের জোড়া খেতাবজয়ী মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের গ্রুপে মহমেডান এসসি ছাড়াও রয়েছে কলকাতার আর এক উদীয়মান দল সদ্য আই লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা ডায়মন্ড হারবার এফসি এবং বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স। এই গ্রুপকে অনেকেই টুর্নামেন্টের ‘গ্রুপ অফ ডেথ’ বলছে। তাই মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও মহমেডান এসসি, দুই ক্লাবের চ্যালেঞ্জই বেশ কঠিন।
পূর্ণশক্তির লাল-হলুদ বাহিনী!
ইস্টবেঙ্গল এফসি-র গ্রুপ অপেক্ষাকৃত সহজ। তাদের গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হতে হবে সাউথ ইউনাইটেড এফসি, ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স ও আই লিগের দল নামধারী এফসি। এ বার ডুরান্ড কাপে ভাল কিছু করার পরিকল্পনা নিয়েই নামছে লাল-হলুদ বাহিনী। সে জন্য তারা তাদের পূর্ণশক্তির দল নিয়েই ডুরান্ড কাপের মাঠে নামছে, জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
গতবারের দলে থাকা ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসকে এ বারও ডুরান্ড কাপে ইস্টবেঙ্গলের জার্সি গায়েই দেখা যাবে। এ ছাড়া মিডফিল্ডার সল ক্রেসপোও রয়েছেন দলে। এ ছাড়া এ বার তাদের দলে এসেছেন তিন বিদেশি ব্রাজিলীয় মিডফিল্ডার মিগুয়েল ফিগেরা, আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার কেভিন সিবিল ও প্যালেস্টাইনের মিডফিল্ডার মহম্মদ রশিদ। এই পাঁচ বিদেশিই ডুরান্ড কাপের স্কোয়াডে রয়েছেন।
এ ছাড়াও গত মরশুমের দলে থাকা গোলকিপার প্রভসুখন গিল ও দেবজিৎ মজুমদার, ডিফেন্ডার আনোয়ার আলি, লালচুঙনুঙ্গা, মিডফিল্ডার শৌভিক চক্রবর্তী, নাওরেম মহেশ সিং, ফরোয়ার্ড পিভি বিষ্ণু, নন্দকুমার শেখর এ বারও ডুরান্ড কাপে ইস্টবেঙ্গলের ভরসা। নবাগত ডিফেন্ডার মার্তন্ড রায়না ও বিপিন সিংও এই দলে আছেন। এদের নিয়েই এ বার এই টুর্নামেন্টে ভাল কিছু করার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন তাদের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন। গত ডুরান্ড কাপে কোয়ার্টার ফাইনালে শিলং লাজং এফসি-র কাছে হেরে ছিটকে গিয়েছিল লাল-হলুদ বাহিনী। এ বার সেই আক্ষেপ মেটাতে চায় তারা।
তারুণ্যে ভরসা সবুজ-মেরুনের
তবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এ বার ইস্টবেঙ্গলের মতো পূর্ণশক্তির দল নামাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। গত মরশুমের দলে বড়সড় কিছু পরিবর্তন হয়নি এ বারের দলে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বিশাল কয়েথ, শুভাশিস বোস, অনিরুদ্ধ থাপা, সহাল আব্দুল সামাদদের সঙ্গে হয়তো রিজার্ভ দলের খেলোয়াড়দের খেলতে দেখা যাবে, যারা চলতি কলকাতা ফুটবল লিগে খেলছেন।
টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে দলের বিদেশি তারকাদের হয়তো দেখা যাবে না। গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে ডায়মন্ড হারবার এফসি-র বিরুদ্ধে দিমিত্রিয়স পেট্রাটসরা মাঠে নামতে পারেন। হয়তো সেই ম্যাচেই মরশুমে প্রথম ডাগ আউটে দেখা যাবে কোচ হোসে মোলিনাকেও। সেরকমই খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আসলে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর ম্যাচ, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী কারা হবে, তা জানা যাবে ১৫ অগাস্ট টুর্নামেন্টের গ্রুপ ও সূচী ঘোষণার পর। তারই প্রস্তুতি হিসেবে ডুরান্ড কাপকে দেখছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। নক আউট পর্বে যোগ্যতা অর্জন করলে হয়তো পূর্ণশক্তির দল নিয়ে নেমে পড়বে সবুজ-মেরুন বাহিনী।
কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী মহমেডানের
চলতি কলকাতা ফুটবল লিগে মোহনবাগান আপাতত রয়েছে পয়েন্ট টেবলের তিন নম্বরে, তারা শেষ চারটি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। শেষ তিন ম্যাচে জয়হীন ইস্টবেঙ্গল রয়েছে আট নম্বরে এবং তিনটি ম্যাচের একটিতেও জয় না পেয়ে মহমেডান এসসি তাদের গ্রুপে রয়েছে দশ নম্বরে। গত মরশুমের মতো এই মরশুমেও এখনও নিজেদের দল গুছিয়ে উঠতে পারেনি মহমেডান। তাই ডুরান্ড কাপের লড়াই তাদের কাছে বেশ কঠিন হয়ে উঠতে পারে। মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট তাদের চেয়ে তুলনামুলক ভাবে ভাল ফর্মে রয়েছে যেমন, তেমনই ডায়মন্ড হারবার এফসি-ও ভাল ফর্মে আছে। তাদের দলে একাধিক বিদেশি রয়েছেন, যাঁরা জাতীয় ক্লাব ফুটবলে এই নবাগত দলকে সাফল্য এনে দিতে পারেন। এ রকম এক দলের বিরুদ্ধে পেরে ওঠা মহমেডানের পক্ষে কঠিন হতে পারে। কলকাতার তিন প্রধান নিজেদের শহরেই ডুরান্ড কাপের ম্যাচগুলি খেলবে।
আইএসএল দলগুলির পরীক্ষা
অন্যান্য আইএসএল দলগুলির মধ্যে জামশেদপুর এফসি এবং পাঞ্জাব এফসি যথাক্রমে গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-তে রাখা হয়েছে। ইস্পাতনগরীর দল তাদের তিনটি গ্রুপ-পর্বের ম্যাচই খেলবে জামশেদপুরের জেআরডি টাটা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে। ঘরের মাঠে তারা আইএসএল ২০২৪-২৫ মরশুমে যথেষ্ট ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়েছিল। অন্যদিকে, পাঞ্জাব এফসি-র গ্রুপ ডি-র খেলাগুলি হবে কোকরাঝাড়ে।
গত আইএসএল মরশুমে জামশেদপুর এফসি পাঞ্জাব এফসির বিরুদ্ধে দুই লেগেই জয় পেয়েছিল এবং এবারও হেড কোচ খালিদ জামিলের অধীনে সেই জয়ের ধারা ধরে রাখতে চাইবে তারা। অন্যদিকে, পাঞ্জাব এফসির লক্ষ্য থাকবে ২০২৪ ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কাছে টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ার দুঃখ ভুলে আরও ভাল ফল করা।
গতবারের চ্যাম্পিয়ন নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি তাদের গ্রুপ ম্যাচগুলি খেলবে শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে। গতবার ডুরান্ড কাপের আসরে তাদের প্রথম ক্লাব ট্রফি জয়ের পর হুয়ান পেদ্রো বেনালির দল ফের এই টুর্নামেন্টে নামতে মুখিয়ে আছে এবং ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে গতবারের মতোই পারফরম্যান্স দেখানোর লক্ষ্য নিয়ে নামবে।
এই গ্রুপে রংদাজিয়েদ ইউনাইটেড এফসি, শিলং লাজং এফসি এবং ফরেন সার্ভিসেস টিম-এর বিরুদ্ধে খেলতে হবে তাদের। নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি বনাম শিলং লাজং এফসির ম্যাচে রোমাঞ্চকর লড়াই হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এই ম্যাচ ফের উত্তর-পূর্বের ডার্বির উত্তাপ ফিরিয়ে আনবে। ২০২৪ সালের সেমিফাইনালেও এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল, যেখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর নর্থইস্ট ২-০-য় জেতে।
তিন প্রধানের ম্যাচ কবে, কখন, কোথায়
গ্রুপ ‘এ’-তে ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচগুলি হবে ২৩ জুলাই বনাম সাউথ ইউনাইটেড এফসি (সন্ধ্যা ৭.০০), ৬ অগাস্ট বনাম নামধারি এফসি (সন্ধ্যা ৭.০০), ১০ অগাস্ট বনাম ভারতীয় বায়ূসেনা (সন্ধ্যা ৭.০০)। ম্যাচগুলি হবে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন ও কিশোরভারতী ক্রীড়াঙ্গনে।
গ্রুপ ‘বি’-তে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের ম্যাচগুলি হবে ৩১ জুলাই বনাম মহমেডান এসসি (বিকেল ৪.০০), ৪ অগাস্ট বনাম বিএসএফ (সন্ধ্যা ৭.০০), ৯ অগাস্ট বনাম বনাম ডায়মন্ড হারবার এফসি (সন্ধ্যা ৭.০০)। ম্যাচগুলি হবে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন ও কিশোরভারতী ক্রীড়াঙ্গনে।
গ্রুপ ‘বি’-তে মহমেডানের ম্যাচগুলি হবে ২৮ জুলাই বনাম ডায়মন্ড হারবার এফসি (সন্ধ্যা ৭.০০), ৩১ জুলাই বনাম মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (বিকেল ৪.০০), ৭ অগাস্ট বনাম বিএসএফ (সন্ধ্যা ৭.০০)। ম্যাচগুলি হবে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন ও কিশোরভারতী ক্রীড়াঙ্গনে।