মোহনবাগান সুপার জায়ান্টে খেলার সুযোগ পাওয়া ছিল কল্পনাতীত: সহাল
‘দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। ভাবছিলাম, (কেরালার) মানুষকে কীভাবে বলব, ওরা কীভাবে নেবে। কিন্তু যখন কলকাতায় পৌঁছলাম এবং সব কিছু নিজের চোখে দেখলাম, তখন শান্তি পেলাম’।

তিনি তাঁর দর্শনীয় স্কিল ও সৃষ্টিশীল ফুটবলে ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি সহাল আব্দুল সামাদ, নিঃসন্দেহে ভারতের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার।
ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) সহাল আত্মপ্রকাশ করেন ২০১৭-১৮ মরশুমে কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি-র হয়ে এবং তার পরের মরশুমেই জেতেন সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার। পরের প্রতিটি মরশুমেই তিনি নিজেকে উন্নত করেছেন, কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি-র তারকা হয়ে ওঠেন এবং তাঁর বর্তমান মোহনবাগান সুপার জায়ান্টেরও নির্ভরযোগ্য তারকা হয়ে ওঠেন।
ছ’বছর কেরালা ব্লাস্টার্সে কাটানোর পর সাহাল ২০২৩-২৪ মরশুমের আগে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টে যোগ দেন। সেই সময়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁর পক্ষে বেশ কঠিন ছিল। কেন কলকাতার ক্লাবে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? তা জানিয়ে সহাল সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমার কাছে দুটি ক্লাব থেকে প্রস্তাব এসেছিল। যাকে সবচেয়ে ভাল মনে হয়েছিল, সেই মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকেই বেছে নিয়েছিলাম। মন খারাপ ছিল, দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। ভাবছিলাম, (কেরালার) মানুষকে কীভাবে বলব, ওরা কীভাবে নেবে। কিন্তু যখন কলকাতায় পৌঁছলাম এবং সব কিছু নিজের চোখে দেখলাম, তখন শান্তি পেলাম”।
সবুজ-মেরুন বাহিনীর হয়ে প্রথম মরশুমেই ডুরান্ড কাপ ও আইএসএলের শিল্ড জেতেন সহাল। তবে ২০২৪-২৫ মরশুম জুড়ে চোট সমস্যায় ভুগতে হয় তাঁকে। ফলে জোড়া খেতাব জয়ের মরশুমে তিনি মাঠে মোটে ৮১৬ মিনিট খেলতে পেরেছিলেন।
তবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের হয়ে খেলার সুযোগ আসাটা যে তাঁর কাছে অকল্পনীয় ছিল, তা স্বীকার করে নেন সহাল। এক মালয়লাম ইউটিউব চ্যানেল the CUE-কে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “যখন মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের মতো একটি দল বলে যে তারা আমাকে চায়, তখন তা আমার কাছে ছিল কল্পনাতীত। যখন অনুভব করি যে, আমি ওখানে গিয়ে কিছু দিতে পারব, তখন খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। প্রথম মরশুমেই আমরা ডুরান্ড কাপ জিতি। আমি সেখানে ভাল খেলেছিলাম। যদিও চোটের জন্য মাঝে মাঝে বিরতি নিতে হয়েছিল। তবে চোট-আঘাত আমাকে ধৈর্য ধরতে শিখিয়েছে”।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর ক্লাব আল এতিহাদ অ্যাকাডেমিতে চার বছর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে ২০১৭-র সেপ্টেম্বরে কেরল ব্লাস্টার্সে যোগ দেন তিনি। সেখান থেকে তিনি সবুজ-মেরুন বাহিনীতে যোগ দেওয়ায় সেই দলের মাঝমাঠ ও আক্রমণে শক্তি অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। ২৩-২৪ মরশুমে মোট ১০৪৩ মিনিট মাঠে থেকে তিনি ১৯টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন। চারটি অ্যাসিস্ট করেন ও দু’টি গোল করেন। ২৭৬টি নিখুঁত পাস দেন তিনি। পাসিং অ্যাকিউরেসি ছিল ৭৭ শতাংশ।
আইএসএলে এ পর্যন্ত ১২৬টি ম্যাচে ১২টি গোল ও ১৩টি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। ১১০টি সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি। ৪০টি শট গোলে রাখতে পেরেছেন। তবে তাঁর ৬৪টি শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে।
সহাল তাঁর কেরিয়ারের সেরা মরশুমটি কাটিয়েছিলেন ২০২১-২২-এ, কেরালা ব্লাস্টার্সে ইভান ভুকোমানোভিচের কোচিংয়ে। হলুদ বাহিনীর হয়ে তিনি সে বার ছ’টি গোল এবং একটি অ্যাসিস্ট করেন এবং সে মরশুমে দলের আইএসএল কাপ ফাইনালে পৌঁছনোয় তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
তাঁর ফুটবল জীবনে সার্বিয়ান কোচের অবদানের কথা স্বীকার করে সহাল বলেন, “ইভান (ভুকোমানোভিচ) কোচ হয়ে আসার পর আমাদের মতো তরুণ খেলোয়াড়রা আত্মবিশ্বাস পায়। উনি আমাদের ভয় কাটিয়ে উঠতে খুব সাহায্য করেছিলেন। উনি আমাকেও আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিলেন এবং সম্ভবত সেই কারণেই আমি ওই মরশুমে কয়েকটা গোল করতে পেরেছিলাম। দলটা ভাল ভাবে প্রস্তুত ছিল। লুনা দারুণ ফর্মে ছিল। আলভারো (ভাসকেজ) ও (জর্জ পেরেইরা) দিয়াজ-কে নিয়ে আমাদের দলটা অসাধারণ ছিল। ওই কোচের অধীনে আমি আমার অন্যতম সেরা মরশুম কাটিয়েছি”।
বিদেশের মাটিতে বেড়ে ওঠা কান্নুড়ের এই তরুণ মিডফিল্ডার মাঝমাঠ ছাড়াও খেলেন উইঙ্গার হিসেবেও। দু’বার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় দলের হয়ে খেলা এই তারকা মিডফিল্ডারের গোল করার দক্ষতায় অবশ্য এখনও অনেক শান দিতে হবে। কারণ, গোলের সুযোগ পেয়েও তা প্রায়ই হাতছাড়া করেন সহাল। এই জায়গায় তাঁকে আরও অনেক কাজ করতে হবে বলে জানান তাঁর কোচেরা।
যদিও আন্তর্জাতিক ফুটবলে গোল করেছেন তিনি, তবে তার সংখ্যা কম। ভারতের জার্সি গায়ে ৩৯টি ম্যাচে তিনটি গোল করেছেন সহাল। তবে গোল করার চেয়ে গোলের সুযোগ তৈরিতে তিনি বেশি পারদর্শী এবং কোচেরা সে জন্যই তাঁকে বেশি পছন্দ করে থাকেন।
ইগর স্টিমাচের অধীনে ২০১৯-এর জুনে কুরাসাওর বিরুদ্ধে জাতীয় দলে অভিষেক হয় সহাল আব্দুল সামাদের। ম্যাচের আগে উজ্জীবিত করার জন্য সুনীল ছেত্রীর কথাগুলো আজও মনে রেখেছেন তিনি। “জাতীয় দলের শিবিরে প্রথমবার যাওয়ার সময় ছেত্রী ভাইয়ের সঙ্গে আমার একবার কথোপকথন হয়। উনি আমাকে বলেছিলেন, ‘তোর ক্লাবের হয়ে যেমন খেলিস, ঠিক তেমনটাই এখানেও খেলিস — সেটাই যথেষ্ট। বাকি সবকিছু আপনাআপনিই ঠিক হয়ে যাবে।’ আমি কখনও ভুলতে পারব না সেই গোলটা, যেটা আমি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে করেছিলাম (২০২১-এ, নেপালের বিরুদ্ধে)। ওই টুর্নামেন্টে খুব বেশি সময় খেলার সুযোগ না পাওয়ার হতাশা একমাত্র ওই গোলেই দূর হয়ে গিয়েছিল”, বলেন সহাল।
তবে এখানেই থেমে যেতে চান না সাহাল। বলেন, “আমার লক্ষ্য, এমন একজনের পথ অনুসরণ করা, যেমন সুনীল ছেত্রী, যিনি এখনও ৪০ বছর বয়সে খেলে চলেছেন। আমি ওর মতো খেলে যেতে চাই এবং ক্রমাগত উন্নতি করে যেতে চাই। এটাই আমার মানসিকতা”।