কুয়েতের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে একদম খুশি না ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচ। খুশি হওয়ার কথাও না। কারণ, এই ড্র ভারতকে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে ওঠার দৌড়ে অনেকটা পিছিয়ে দিল। এই ম্যাচে জিতলে দেশের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবার এই ঘটনা ঘটত। এই ম্যাচের জন্য তিন সপ্তাহের প্রস্তুতি শিবির করার পর সে রকমই আশা করেছিলেন স্টিমাচ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হল না।

বৃহস্পতিবারের ম্যাচ দেখতে কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারিতে জমায়েত হয়েছিল প্রায় ৫৯ হাজার সমর্থক। সবাই মিলে ভারতের হয়ে গলা ফাটানো সত্ত্বেও সারা ম্যাচে একটিও শট গোলে রাখতে পারেননি ভারতীয় ফুটবলাররা। কুয়েত তিনবার গোলে শট নেয়, যা প্রতিবারই আটকে দিয়ে দলের হার বাঁচান গোলকিপার গুরপ্রীত সিং।

এই হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর স্টিমাচ বলেন, “এই ফলে আমি অবশ্যই হতাশ। প্রত্যাশামতোই ম্যাচটা কঠিন ছিল। বাস্তসম্মত ফলই হয়েছে। কুয়েত শুরুটা খুব ভাল ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করে। পাসিংয়ের গতি ও সার্বিক গতিতে ওরা এগিয়েই ছিল। আমাদের ছেলেদের খেলাটা ধরতে একটু সময় লাগে। ক্রমশ আমরা ঠিকমতো পাস দেওয়া ও আক্রমণের জায়গা তৈরি করা শুরু করি। তবে কুয়েতের মতো দলকে বিপদে ফেলার পক্ষে তা যথেষ্ট ছিল না। তাও কিছু কিছু সময়ে আমরা ওদের চাপে ফেলেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওদের হারানোর মতো খেলা আমরা খেলতে পারিনি”।

এ দিন দলকে হারের হাত থেকে বাঁচান গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু। তিনটি অবধারিত গোল বাঁচিয়ে ভারতের ক্ষীণ আশা বাঁচিয়ে রাখেন তিনি। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ গোলকিপারের প্রশংসা করে স্টিমাচ বলেন, “এই ম্যাচে গুরপ্রীতই দলের সেরা ফুটবলার। কিন্তু এটা ওর পক্ষে ভাল, দলের পক্ষে মোটেই ভাল ইঙ্গিত নয়। ওর মতো গোলকিপার পাওয়া দারুন ব্যাপার। ওকে দলে রাখা নিয়ে কারও মনে কোনও সন্দেহ নেই। এই ম্যাচে ও প্রমাণ করে দিল ও কতদূর কী করতে পারে”।

বৃহস্পতিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন সুনীল ছেত্রীর বিদায়ী ম্যাচের মঞ্চ হয়ে উঠলেও ভারতীয় ফুটবল দলের ইতিহাস গড়ার মঞ্চ হয়ে উঠতে পারেনি। এই ম্যাচেই তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল জীবন শেষ করেন ঠিকই। কিন্তু কুয়েতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের তৃতীয় রাউন্ডের দোরগোড়ায় পৌঁছনো হল না ভারতের।

এই ড্রয়ের ফলে এশীয় বাছাই পর্বে গ্রুপ ‘এ’ তে ভারত পাঁচ ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে দু’নম্বরে রয়ে গেল। পাঁচ ম্যাচে চার পয়েন্ট পেয়ে চার নম্বরে কুয়েত। গত রাতে কাতারের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে চার নম্বরে থাকা আফগানিস্তান পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে উঠে এসেছে। আগামী ১১ জুন একদিকে যখন ভারত ও কাতার মুখোমুখি হবে, তখন কুয়েত ও আফগানিস্তানও একে অপরের বিরুদ্ধে খেলবে। তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছতে হলে সে দিন ভারতের সামনে জয় ছাড়া কোনও উপায় নেই, যা বেশ কঠিন। ভারত হেরে গেলে অন্য ম্যাচের জয়ী দল পৌঁছে যাবে তৃতীয় রাউন্ডে। সেক্ষেত্রে আফগানিস্তান শেষ ম্যাচে ড্র করলেই তৃতীয় রাউন্ডে উঠে যাবে। কিন্তু দুই ম্যাচেই ড্র হলে গোলপার্থক্যের বিচারে ভারতই তৃতীয় রাউন্ডে উঠবে।

সুনীল ভেবেছিলেন, জাতীয় দলকে ইতিহাসের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েই বিদায় নিতে চান তিনি। তাই সদ্য প্রাক্তন হওয়া অধিনায়কের জন্য খারাপ লাগছে স্টিমাচের। সুনীলের বিদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সুনীলের জন্য আমি খুবই দুঃখিত। দলের জয়ের স্মৃতি নিয়ে ও বিদায় নিতে পারল না বলে। তবে সত্যি বলতে, আমাদের এখন দুঃখিত হওয়ার সময় নেই। কারণ, এখনও আমরা সেরা দুইয়ের দৌড়ে টিকে আছি। ফলে আগামী পাঁচ দিনে কোচ হিসেবে আমাকে যা করার করতে হবে। দলের ছেলেদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হবে। না হলে আমরা শেষ ম্যাচে এশিয়ার চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে ভাল কিছু করতে পারব না।” গতরাতে কাতারের বিরুদ্ধে আফগানদের গোলশূন্য ড্র-ই ভারতের প্রেরণা হয়ে উঠতে পারে।

কাতারের বিরুদ্ধে আসন্ন ম্যাচ নিয়ে স্টিমাচ বলেন, “আমাদের ও ওদের দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়দেরই বয়স যে রকম, তাতে মনে হয় দুটো অনূর্ধ্ব ২৩ দলের মধ্যে ম্যাচ হতে চলেছে। ওই ম্যাচ থেকে অনেক কিছু পাওয়ার আশা করছি আমি”। যদিও ফিফা ক্রমতালিকায় কাতারের স্থান ৩৪, ভারতের চেয়ে ৮৭ ধাপ এগিয়ে এবং কাতারের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জিতেছে ও দু’টিতে ড্র করেছে ভারত।

বৃহস্পতিবার এফসি গোয়ার ডিফেন্ডার জয় গুপ্তাকে ভারতের জার্সি গায়ে প্রথম মাঠে নামার সুযোগ দেন স্টিমাচ। তাঁর পারফরম্যান্সে খুশি স্টিমাচ বলেন, “জয় এই ম্যাচে দারুন খেলেছে। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আরও এক খেলোয়াড়ের সফল অভিষেক হল”।

কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা ম্যাচের সারাক্ষণ ধরে ভারতীয় দলের জন্য গলা ফাটিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হতাশই হতে হয় তাদের। দর্শকদের প্রশংসা করে স্টিমাচ বলেন, “ওরা সারাক্ষণ আমাদের সমর্থন করে গিয়েছে। আমাদের ছেলেরা অনেক ভুল করলেও এক মুহূর্তেও সমর্থকেরা হতাশ হয়ে পড়েনি। তাই দলের পক্ষ থেকে ওদের অনেক ধন্যবাদ। আশা করি, শেষ ম্যাচে সবাইকে গর্বিত করতে পারব”।

শেষ ম্যাচে সুনীল ছেত্রীকে ছাড়াই মাঠে নামতে হবে ভারতকে। কিন্তু সেই ম্যাচে খেলবেন গুরপ্রীত। তিনিই সম্ভবত অধিনায়কের দায়িত্ব সামলাবেন। শেষ ম্যাচের লড়াই নিয়ে তিনি বলেন, “অন্যান্য ম্যাচগুলোর মতোই এই ম্যাচে খেলব আমরা। তবে সুনীল ভাইকে সঙ্গে পাব না। তবে আমাদের এই অবস্থা সামলে সামনের দিকে তাকাতে হবে। এই দুনিয়া তো কারও জন্য থেমে থাকে না। আর, কোচ যেমন বললেন, নিখুঁত ভাবে প্রস্তুত হতে হবে আমাদের। ম্যাচ শুরুর আগেই তো হা মানা যায় না। কাতারের বিরুদ্ধে আমরা তিন পয়েন্ট জেতার জন্যই নামব এবং নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দেব”।