দল এমন ভাবে জয়ে ফেরায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনা। গত ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-র কাছে তিন গোলে হারার পর যখন মহমেডান এসসি-র বিরুদ্ধে ডার্বিতে তাদের প্রিয় দল জয়ে ফিরতে পারবে কি না, এই আশঙ্কায় ছিলেন সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা, তখন অসাধারণ ও দাপুটে ফুটবল খেলে তিন গোল দিয়ে জয়ে ফিরে আসে বাগান-বাহিনী।

শনিবার যুবভারতীতে গ্রেগ স্টুয়ার্ট ও জেমি ম্যাকলারেনের বোঝাপড়ায় মোহনবাগানের আক্রমণে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আট মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত গোল করে দলকে এগিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার ম্যাকলারেন। ৩১ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়ান শুভাশিস বোস এবং ৩৬ মিনিটের মাথায় গোল করে জয় নিশ্চিত করে ফেলেন স্টুয়ার্ট।

এ দিন যে পরিমান গোলের সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান, সেগুলি কাজে লাগাতে পারলে অনেক বেশি ব্যবধানে জিততে পারত তারা। সবুজ-মেরুন কোচ মোলিনাও সে রকমই মনে করেন। শনিবার রাতে ম্যাচের পর সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “পুরো দলই খুব ভাল খেলেছে। ওরা আমাদের চাপে ফেলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু রক্ষণে দ্রুত বল রিকভার করতে পেরেছে আমাদের ছেলেরা। বল নিজেদের দখলে রেখে দ্রুত আক্রমণেও উঠেছি আমরা। তিন গোল করেছি। তবে আরও গোল করতে পারতাম। দুই দলের পক্ষেই খুব ভাল একটা ম্যাচ হয়েছে”।

এ দিন ১৮টি গোলের সুযোগ তৈরি করে ও প্রতিপক্ষের বক্সে ২৪বার বল ছোঁয় মোহনবাগান। সারা ম্যাচে ১২টি শট গোলে রাখে সবুজ-মেরুন বাহিনী। কিন্তু প্রতিপক্ষকে একটির বেশি শট গোলে রাখতে দেয়নি তারা। দ্বিতীয়ার্ধে কোনও গোল পায়নি তারা।

গোলের সুযোগ নষ্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠলে মোলিনা বলেন, “গোল করার সুযোগ তৈরি করাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছি। কারণ, আমরা আজকের ম্যাচে সত্যিই ভাল খেলেছি। সুযোগ তৈরি করলেও কখনও সাফল্য পাওয়া যায়, কখনও সাফল্য পাওয়া যায় না। আসল কথা হল আমরা খুবই ভাল খেলেছি। তবে আমার মনে হয়, এখনও আমাদের আরও ভাল খেলতে হবে। আমরা যতটা পারব, ততটাই উন্নতি করার চেষ্টা করব, যাতে দলকে আরও উন্নত করে তোলা যায়”।

অন্য দিকে, মহমেডান এসসি-র কোচ আন্দ্রেই চেরনিশভ মেনেই নিলেন, যোগ্য দলের কাছেই হেরেছে তারা এবং মানের দিক থেকে মোহনবাগানের চেয়ে তারা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। সাংবাদিকদের চেরনিশভ বলেন, “আইএসএলের আসল মান আজই বুঝিয়ে দিল মোহনবাগান। ওরা খুবই ভাল খেলেছে এবং ওদের অনেক ভাল ভাল খেলোয়াড় আছে। তবে আমার দল খারাপ, এ কথা বলব না। আমরা চেষ্টা করেছি। লড়াইও করেছি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে ওদের খেলোয়াড়দের মানের ফারাক অনেকটাই। ফুটবলে এমন হতেই পারে। মোহনবাগানের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামলে তো বটেই”।

শনিবারের ম্যাচ থেকে যে অনেক কিছু শিখলেনও তিনি ও তাঁর দলের ফুটবলাররা, তাও মেনে নিতে দ্বিধা নেই রাশিয়ান কোচের। বলেন, “সব দিক থেকেই আমাদের উন্নতি করতে হবে। আমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে এবং পারফরম্যান্সের মানও বাড়াতে হবে। বল নিয়ে আমাদের আরও দ্রুতগামী হতে হবে। আজকের ম্যাচে এগুলোই শিখলাম আমরা। ফিটনেসের দিক থেকে আরও উন্নতি করতে হবে আমাদের। আজ হয়তো শারীরিক দিক থেকে আমরা সঠিক জায়গায় ছিলাম না। হয়তো তিনটে ম্যাচ খেলার পরে ছেলেরা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে”।

তবে নিজের দলের পারফরম্যান্সে হতাশ নন সাদা-কালো ব্রিগেডের কোচ। এ দিন তাঁর দলের আর্জেন্টাইন তারকা অ্যালেক্সি গোমেজের পারফরম্যান্স এবং দল বাছাই নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তবে গোমেজের ভাল না খেলার জন্যই যে দল হেরেছে, এ কথা মানতে রাজি নন চেরনিশভ। রাশিয়ান কোচ বলেন, “প্রথম তিন ম্যাচে অ্যালেক্সি ভাল খেলেছিল। তবে আজ ওর পারফরম্যান্স ভাল না হওয়ার কারণেই যে আমরা হারলাম, তা নয়। হয়তো প্রথম কয়েকটা ম্যাচে আমাদের প্রতিপক্ষ নিজেদের সেরাটা দিতে পারেনি। হয়তো আমরা আইলিগ থেকে উঠে এসেছি বলে আমাদের ওরা তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এখন দলগুলো নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে, ওরা যা ভেবেছিল, তার চেয়ে মহমেডান ভাল দল। সেই জন্যই এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে আজ যা হয়েছে, তা মানের ফারাকের জন্যই হয়েছে। আমাদের এটা মানতেই হবে যে, আজ প্রতিপক্ষ খুবই ভাল ছিল। তা ছাড়া দল বাছাইয়ে কোনও ভুল হয়েছে বলে মনে হয় না। এই খেলোয়াড়রাই তো গত ম্যাচে জিতেছিল। আজ ছেলেরা ভালই খেলেছে। এই নিয়ে আমার কোনও অভিযোগ নেই”।