বিশ্বকাপ ২০২৬-এর বাছাই পর্বে দ্বিতীয় ম্যাচে কাতারের কাছে তিন গোলে হেরে গেলেও দলের ফুটবলারদের প্রশংসা শোনা গেল ভারতের কোচ ইগর স্টিমাচের মুখে। তাঁর দলের খেলোয়াড়দের দায়িত্ববোধের প্রশংসা করলেন তিনি। সঙ্গে এও জানালেন, এই ম্যাচের ফলকে তিনি কখনওই খুব একটা গুরুত্ব দেননি।

মঙ্গলবার রাতে বিশ্বের ৬১ নম্বর ফুটবলখেলিয়ে দেশের কাছে সুনীল ছেত্রীরা হারেন। চার বছর আগে ২০২২ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে দোহায় কাতারের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছিল ভারত, এ দিন তা পারেনি তারা। বরং দাপুটে ফুটবল খেলেই ৩-০-য় জেতে এশিয়ার সেরা দশে থাকা অন্যতম দলটি।

মঙ্গলবার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ভারতীয়রা ততটা উজ্জীবিত ফুটবল খেলতে পারেননি, যতটা উজ্জীবিত পারফরম্যান্স তারা দেখাতে পেরেছিল পাঁচ দিন আগে কুয়েতের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচের দলে পাঁচটি পরিবর্তন করে এই ম্যাচে প্রথম একাদশ নামান ভারতের কোচ।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, কাতারের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে কেন উইনিং কম্বিনেশন জানালেন না তিনি? এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে স্টিমাচ বলেন, “আজকের ম্যাচের ফল আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কোচ হিসেবে আমার কতগুলো প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট ভাবে পাওয়া খুব জরুরি ছিল। এশিয়ান কাপে কারা খেলবে বা খেলবে না, সেই সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ছবি আমার সামনে উঠে আসা খুব দরকার ছিল। এই ম্যাচের পর সেই ছবিটাই স্পষ্ট ভাবে পেয়ে গেলাম”।

জানুয়ারিতে আসন্ন এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে নামার আগে ভারতীয় ফুটবল দলের আর কোনও ম্যাচ নেই। ১৩ জানুয়ারি এশিয়ার এক নম্বর দল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নামার আগে অবশ্য প্রস্তুতি শিবির করবেন স্টিমাচ। এ ছাড়াও এশিয়ান কাপে ভারতের গ্রুপে রয়েছে উজবেকিস্তান (১৮ জানুয়ারি), ও সিরিয়া (২৩)।

তার আগে শেষ সরকারি ম্যাচে দলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স নিয়ে স্টিমাচ মন্তব্য করেন, “কাতার আমাদের চেয়ে ভাল দল। শারীরিক ভাবে, সাধারণ দক্ষতার দিক থেকে, পাসিংয়ের মান, আক্রমণের ধার—ওদের সবই ভাল। মনে হয় যেন, ওরা চাইলেই আমাদের গোলের সামনে একটা ক্রস পাঠিয়ে আমাদের ক্ষতি করতে পারে। তবে আমাদের ছেলেদের দায়িত্ববোধের প্রশংসা করতেই হবে”।

মুস্তাফা মাশাল, আলমোজ আলি ও ইউসেফ আব্দুরিসাগের গোলে জয় পায় গত বিশ্বকাপের আয়োজক তথা অংশগ্রহনকারী দেশ কাতার। চলতি বাছাই পর্বে গ্রুপ লিগের গত ম্যাচে তারা আফগানিস্তানকে ৮-১ গোলে হারিয়েছিল। এই ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে ততটা বিধ্বংসী পারফরম্যান্স দেখাতে না পারলেও ভারতকে তাদের পাল্টা চাপে ফেলার সুযোগ দেয়নি। প্রথমার্ধে কাতার যেখানে দশটি কর্নার আদায় করে, সেখানে ভারত একটিও কর্নার পায়নি।

স্টিমাচ মনে করেন, প্রথমার্ধেই তাঁর দল সমতা আনতে পারত। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রথম ১০-১৫ মিনিট আমাদের খেলোয়াড়রা একটু নার্ভাস ছিল। যার ফলে ওরা চার-পাঁচটা কর্নার আদায় করে নেয়। ওদের কর্নারগুলো আমরা ঠিকমতো সামলাতে পারিনি। কারণ, ওদের ফরোয়ার্ডরা সব সময় এগিয়ে ছিল। এ ছাড়া সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল। আমরা ভালই এগোচ্ছিলাম এবং দু’বার সমতা আনার সুযোগও তৈরি করে নিয়েছিলাম। আমরা গোল করতে পারলে কাতার এতটা চাপমুক্ত হয়ে, এতটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারত না”।

এর আগে কাতারের বিরুদ্ধে গত দুই ম্যাচে মাত্র এক গোল খাওয়া ভারতীয় গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধুকে বসিয়ে অমরিন্দর সিংকে খেলান স্টিমাচ, যে সিদ্ধান্ত অনেককেই অবাক করেছে। এর কারণ জানতে চাইলে স্টিমাচ বলেন, “গুরপ্রীত গোলকিপার হিসেবে আমাদের প্রথম পছন্দ। অমরিন্দর যথেষ্ট শৃঙ্খলাবদ্ধ, দায়িত্ববোধসম্পন্ন এবং অনেক খিদে নিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সেই জন্যই ওকে সুযোগ দিয়েছি”।

অমরিন্দরের ভুল পাসের ফলে একটি গোল খেতে খেতে বেঁচে যায় ভারত। অবশ্য প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকার আক্রম আফিফি তাঁর বিরুদ্ধে ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে গোলে বল ঠেলার পরেও তা গোলের মুখে ব্লক করেন অমরিন্দর। তিনি অসাধারণ কিছু সেভও করেন। রক্ষণে সন্দেশ ঝিঙ্গন ও রাহুল ভেকেও এ দিন তৎপর ছিলেন। ফলে বিরতিতে ১-০-র বেশি ব্যবধান তৈরি করতে পারেনি কাতার।

সহাল আব্দুল সামাদ, মহেশ সিং নাওরেম-এর মতো প্রথম একাদশে অবধারিত ভাবে থাকার মতো খেলোয়াড়দেরও এই ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চে বসিয়ে রাখেন স্টিমাচ। তাঁর মনে হয়েছিল এঁদের বিশ্রামের প্রয়োজন। এই প্রসঙ্গে ক্রোয়েশিয়ান কোচ বলেন, “মে মাস থেকে ওরা দু’জন দেশ ও ক্লাবের হয়ে সব ম্যাচে খেলেছে। ওদের জন্য আমার একটু অন্য ধরনের গেমপ্ল্যান আছে, যেখানে বেঞ্চ থেকে নেমে দলের খেলায় প্রভাব ফেলতে পারে”।

এই সময়ে ভারতীয় দল তথা মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের পক্ষে খারাপ খবর হল, কুয়েতের বিরুদ্ধে ম্যাচের পরেই মনবীরের চোট লেগেছে। এই খবর দিয়ে স্টিমাচ নিজেই বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য যে মনবীরকে এই ম্যাচে পেলাম না। কুয়েত ম্যাচে ও একটু বেশিই চাপ নিয়ে ফেলেছিল, ফলে দু’দিন আগে থেকে ওর পেশীতে টান ধরে। এখন সাত থেকে ১৪ দিন বিশ্রামে থাকতে হবে ওকে। ওকে যদি আজ পেতাম, তা হলে সুনীলকে ৭০ মিনিট পর থেকে নামাতাম। ওকে (সুনীল ছেত্রী) ছাড়া দল কেমন খেলে, সেটা দেখার জন্য। কিন্তু সেটা করতে পারলাম না”।