চলতি আইএসএলের প্রথম জয় পেলেও এখনও দলের ভুলভ্রান্তি নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। শনিবার ম্যাচের পর তিনি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “আজ আমরা অনেক অনিচ্ছাকৃত ভুল করেছি। চাপের মুখে ছেলেরা ভুল পাস করছে। আক্রমণে ওঠার সময়ও এটা হচ্ছে। আমাদের এগুলো শোধরাতে হবে। এই ম্যাচে আমাদের সামনে বেশি সুযোগ আসেনি। তবে ফুটবলে এমন হয়েই থাকে। ড্রেসিংরুমে আমরা আলোচনা করছিলাম যে আমাদের আরও কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে হবে। গত মরশুমে ওদের বিরুদ্ধে এক গোলের ব্যবধানে হেরেছিলাম আমরা। তবে এখন আর সে রকম খেললে চলবে না। ম্যাচ একশো মিনিট পর্যন্ত গড়ালেও আমাদের সেই একশো মিনিটই ফোকাসড্ থাকতে হবে”।

এ দিন ব্রাজিলীয় তারকা ক্লেটন সিলভার জোড়া গোলে ম্যাচ জিতে নেয় ইস্টবেঙ্গল এফসি। আট মিনিটের মাথায় হীতেশ শর্মার গোলে হায়দরাবাদ এগিয়ে যাওয়ার দু’মিনিটের মধ্যে ক্লেটন তাঁর প্রথম গোল করে সমতা আনেন। ম্যাচের প্রায় শেষ পর্যন্ত ১-১ অবস্থাই ছিল। যখন সবাই প্রায় ধরেই নিয়েছেন যে চলতি লিগের দ্বিতীয় ড্র করে মাঠ ছাড়তে চলেছে লাল-হলুদ বাহিনী, তখনই প্রতিপক্ষের বক্সের সামনে থেকে নেওয়া ফ্রি কিক সোজা জালে জড়িয়ে দেন সেই ক্লেটন। যিনি গত মরশুমে ১৪টি গোল করেছিলেন।

শেষ পর্যন্ত যে সেট পিসই তাদের জেতাল, সে কথা স্বীকার করে নিয়ে কুয়াদ্রাত বলেন, “এটা ঠিকই যে একটা সেট পিস একটা ম্যাচের ফল তৈরি করে দিতে পারে। তাই সেট পিসে আমাদের আরও উন্নতি করতেই হবে। কিন্তু ওপেন প্লে-তেও আমাদের আরও সাবধান থাকতে হবে। আমরা জয়ের গোল করার পরেও কিন্তু ওরা ২-২ করে ফেলতে পারত। ভবিষ্যতে সে সুযোগ দিলে চলবে না। তবে আমি দলের ফলে খুশি। তিন পয়েন্টটা খুবই প্রয়োজন ছিল। এ মরশুমে আটটা ম্যাচ খেলে আমরা এখন পর্যন্ত একটা মাত্র হেরেছি। এ জন্যই আরও খুশি”।

আইএসএলে এই প্রথম হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে জয় পেল ইস্টবেঙ্গল এবং তা সম্ভব হল ক্লেটনের জোড়া গোলের জন্যই। পরিসংখ্যান বলছে এই প্রথম আইএসএলে ইস্টবেঙ্গল প্রথম দু’টি ম্যাচের মধ্যে একটিতে জয় পেল। গত তিন মরশুমে কোনওবারই প্রথম দুই ম্যাচে জিততে পারেনি তারা।

ক্লেটন সিলভা জোড়া করেছেন এবং ইস্টবেঙ্গল হেরেছে, এমনও কোনও দিন হয়নি। তাঁর জোড়া গোলে ইস্টবেঙ্গল ছ’বার জিতেছে ও একবার ড্র করেছে। এ মরশুমে তিনি সবচেয়ে দেরি করে দলের প্রাক মরশুম শিবিরে যোগ দেন। ফলে চেনা ছন্দে ফিরতে একটু বেশি সময়ই নিলেন। এর আগে পাঁচটি ম্যাচে ১৩৬ মিনিটের জন্য তাঁকে মাঠে নামান কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। একটিও গোল করতে পারেননি।

ছন্দে ফেরার পর জয়ের নায়ক বলেন, “অনেক দিন পরে গোল করতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। এই জায়গায় আসার চেষ্টা করছিলাম অনেক দিন ধরেই। অবশেষে নিজের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে ও দলকে জেতাতে পেরে ভাল লাগছে”।

আইএসএলের অন্য সব দলের (নবাগত পাঞ্জাব এফসি ছাড়া) বিরুদ্ধে গোল পেলেও ক্লেটন এতদিন হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে কোনও গোল পাননি। শনিবারের ম্যাচেই নিজামের শহরের দলের বিরুদ্ধে প্রথম গোল পেলেন তিনি। এখন শুধু পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে গোল পাওয়াই বাকি আছে তাঁর। ইস্টবেঙ্গল চেন্নাইন এফসি ও মোহনবাগান এসজি ছাড়া আইএসএলের সব দলের বিরুদ্ধেই জয় পেয়েছে।

দলের উন্নত পারফরম্যান্স ও ভাল ফল নিয়ে ক্লেটন বলছেন, মানসিকতায় বদলই এর কারণ। তিনি মনে করেন, “দলের মানসিকতায় অনেক বদল এসেছে। গত মরশুমে যে মানসিকতা ছিল, এই মরশুমে তার চেয়ে অন্যরকম মানসিকতা নিয়ে খেলছি আমরা। নতুন কোচ ও সাপোর্ট স্টাফ আসায় এই পরিবর্তন এসেছে। এতে ভালই হয়েছে এবং আশা করি, আরও ভাল হবে”।

ক্লেটনের ছন্দে ফেরায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি কোচ কুয়াদ্রাত। বলেন, “ক্লেটনকে বেঙ্গালুরু এফসি-তে প্রথম আমি এনেছিলাম। আমি ভাগ্যবান যে ওকে ইস্টবেঙ্গলে এসে আবার পেয়েছি। গত মরশুমে ও দলের জন্য কী করেছে, তা আমরা সকলেই জানি। ও শুরুটা যে ভাবে করল, সেটাই দুর্দান্ত। আমার মনে হয় দল এখন ঠিক পথেই এগোচ্ছে এবং আমরা প্রতিপক্ষ হিসেবে ক্রমশ আরও কঠিন হয়ে উঠছি”।

শনিবার দ্বিতীয়ার্ধে কৌশল বদলে খেলেন তাঁরা। সে কথা স্বীকার করে কোচ বলেন, “বিভিন্ন ম্যাচে বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য আমাদের বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়। আজ যেমন প্রথমার্ধে এক রকম কৌশলে খেলছিলাম আমরা। কিন্তু যখন দেখি এই কৌশলে খেলে ঠিকমতো আক্রমণে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না, তখন দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়। প্রথমার্ধে বোরহা ও সলের মধ্যে ঠিকমতো যোগাযোগ হচ্ছিল না। দ্বিতীয়ার্ধে সেটা হওয়ার ফলে আমাদের খেলায় উন্নতি হয়। এভাবেই নিজেদের কৌশল, পরিকল্পনা পাল্টাতে হয় ভাল ফল পাওয়ার জন্য”।

সব মিলিয়ে দলের পারফরম্যান্সে যে তিনি খুশি, তা জানিয়ে লাল-হলুদের স্প্যানিশ কোচ বলেন, “আমি খুশি। আমাদের হাতে এখন অনেক বেশি বিকল্প রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করতে পারি আমরা। আমরা তা করছিও। দলের ছেলেদের এখন পুরো শক্তি নিংড়ে দিতে হবে প্রতি ম্যাচে। প্রতি পয়েন্টের জন্য লড়াই করতে ওরা খুবই আগ্রহী। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হাল না ছাড়ার মানসিকতা রয়েছে ওদের মধ্যে। সে জন্য আমি খুশি”।